Ajker Patrika

‘একটা গুলি আমার সাজানো সংসার তছনছ করে দিল, এখন আমি কোথায় যাব’

রংপুর ও বদরগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ৩১ জুলাই ২০২৪, ২১: ০১
‘একটা গুলি আমার সাজানো সংসার তছনছ করে দিল, এখন আমি কোথায় যাব’

‘অল্প আয়ের সংসার হলেও আমাদের মাঝে আনন্দের শেষ ছিল না। দুই ছেলেকে নিয়ে আমাদের সুখের সংসার। বড় ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু একটা গুলি আমার সাজানো সংসারটা তছনছ করে দিল। এখন আমি দুই সন্তান নিয়ে কোথায় যাব? কে চালাবে আমার সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি যদি স্বজন হারানোর বেদনা বুঝে থাকেন, তাহলে ১৩ দিনেও আমাদের খোঁজ নিলেন না কেন?’

রংপুর সিটি বাজারের একটি দোকানের কর্মচারী ছিলেন মিরাজুল ইসলাম (৩৬)। ১৯ জুলাই শুক্রবার গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। স্বামীকে হারিয়ে মেহরাব হোসেন নাজিল (১৫) ও হানিফ হোসেন (৩) নামের দুই সন্তান নিয়ে দিশেহারা নাজমিম ইসলাম।

মিরাজুল ইসলাম রংপুর নগরীর জুম্মাপাড়া গ্রামের মৃত সামছুল ইসলামের ছেলে। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। তিনি নগরীর সিটি বাজার এলাকায় পাইকারি কলার দোকানের কর্মচারী ছিলেন। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আড়াই শতক জমির ওপর টিনের চালের বাড়িতে বসবাস করতেন তিনি।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ১৯ জুলাই শুক্রবার মিরাজুল ইসলামের বিবাহবার্ষিকী ছিল। সেদিন দুপুরে মুরগি, পোলাওয়ের চাল ও আলু নিয়ে বাড়ি যান। বিকেলে কলার মহাজনকে টাকা দিতে মিরাজুল বাড়ি থেকে দোকানের দিকে যাচ্ছিলেন। বিকেল ৫টার দিকে দোকানের কাছাকাছি পৌঁছালে আন্দোলনকারী ও পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে যান। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন মিরাজুল। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি মারা যান।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে নিহত মিরাজুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পুরো বাড়ি সুনসান। তাঁর স্ত্রী নাজমিম ইসলাম বাড়ির উঠানে চুপচাপ বসে আছেন। তিন বছরের ভাই হানিফকে কোলে নিয়ে বড় ভাই নাজিল। নাজিলও বাবার জন্য কাঁদছে। একপর্যায়ে বড় ভাইয়ের চোখের পানি হাত নিয়ে মুছে দিতে দেখা যায় শিশু হানিফকে। এ সময় মিরাজুলের মা আম্বিয়া বেগমকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তিনি আরবি পড়াতে বাইরে গেছেন।

দুই সন্তানসহ নাজমিম ইসলাম। ছবি: আজকের পত্রিকাস্ত্রী নাজমিম ইসলাম বলেন, ‘স্বামী মারা যাওয়ার আগের রাতে তাঁর সঙ্গে বিবাহবার্ষিকী নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। দুপুরে বাজার থেকে মুরগি, পোলার চাল ও আলু নিয়ে বাসায় আসেন।’ কাঁদতে কাঁদতে নাজমিম বলেন, ‘স্বামী বিকেলে বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় বলল, “তুমি রান্না করো, আমি মহাজনকে দোকানে টাকাটা দিয়ে আসছি। রাতে একসঙ্গে খাবার খাব।” কিন্তু তা আর হলো না। তিনি এলেন লাশ হয়ে।’

ভাইয়ের চোখের পানি মুছে দেয় ছোট ভাই। ছবি: আজকের পত্রিকামিরাজুলের বড় বোন রাবেয়া বেগম বলেন, ‘আমার ভাইয়ের পাঁজরে গুলি লাগে। কিন্তু কী অপরাধ ছিল তাঁর যে গুলি করে হত্যা করতে হবে? তিনি তো কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।’

মেরাজুলের কর্মস্থলের মহাজন জসিম উদ্দিন বলেন, ‘মিরাজুল অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন। তাঁর এভাবে চলে যাওয়াটা বারবার আমার হৃদয়কে নাড়া দিচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত