‘হামার গ্রামে শনিবার থাকি কারেন্ট নাই, ফ্রিজোত মাংস থুবার পারি নাই’

শিপুল ইসলাম, রংপুর
প্রকাশ : ১৯ জুন ২০২৪, ২১: ৪৭

‘তুফান হইলেও এত দিন ধরি কারেন্ট বন্ধ থাকে নাই। শনিবার থাকি হামার গ্রাম, আশপাশের গ্রাম কোনোটে কারেন্ট নাই। ফ্রিজোত মাংস থুবার পারি নাই। আগোত যেগলা খাবার তরকারি আছলো তাক নষ্ট হয়া গেইছে। এর দায় পল্লী বিদ্যুতের নিতে হবে।’ লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে কথাগুলো বলছিলেন রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার মনোয়ার হোসেন। 

পল্লী বিদ্যুতের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে মনোয়ার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, চার দিন ধরে তাঁর গ্রামে বিদ্যুৎ নেই। কোরবানির পশুর মাংস ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে পারেননি। আগে থেকে যা সংরক্ষণ করা ছিল তাও পচে নষ্ট হয়ে গেছে। 

এদিকে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দারা। ইকরচালী গ্রামের কৃষক আনারুল হক বলেন, ‘কারেন্টও কি ছুটি নিছে বাহে, ঈদ-তাওয়ারেও থাকছে না। কারখানা, অফিস-আদালত সউগে তো বন্ধ, তাও সারা দিন কারেন্ট পাওছি না। মাসে মাসে বিল তো ঠিকই দেই, সউগ সময় কারেন্ট পাওছি না কেন? দ্যাশোত কি কারেন্টের মঙ্গা নাগিল?’

স্থানীয়রা বলেছেন, বিদ্যুৎ না থাকায় বদরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের বিক্ষুব্ধ গ্রাহকেরা বিদ্যুতের দাবিতে গত সোমবার রাতে দুই দফা মিরাপাড়া বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র লাঠি হাতে এবং গতকাল মঙ্গলবার রাতে চেংমারি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র ঘেরাও করেছিলেন। তবুও বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান পাননি তাঁরা। 

সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, তারাগঞ্জ উপজেলায় আটটি ফিডারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। গত রোববার থেকে ২৪ ঘণ্টায় মাত্র দুই ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়েছে। আর বদরগঞ্জে ১০টি ফিডারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও গত শনিবার মধ্যরাতের পর থেকে আটটি ফিডার বুধবার দুপুর পর্যন্ত চালু করা সম্ভব হয়নি। গত সোমবার ঈদের দিন মধ্যরাত থেকে পরদিন মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত স্থানীয় চেংমারি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রও বিদ্যুৎহীন ছিল। 

তারাগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে ইকরচালী বাজারের অবস্থান। বিদ্যুৎ না থাকায় বিকেল বেলায় পুরো বাজারে যেন অন্ধকার নেমেছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভোর থেকেই এ বাজারে বিদ্যুৎ নেই। দুপুরে একবার আসলেও তা ১০ মিনিটে পর চলে গেছে। 

সদর উপজেলার ইকরচালী বাজারের ব্যবসায়ী জুন মিয়া আজ বুধবার বলেন, ‘তিন দিন থাকি টানা কারেন্ট নাই। ১৫ হাজার টাকার আইসক্রিম নষ্ট হয়ে গেছে। কারেন্ট এবার ঈদের বাজারে ব্যবসায় লালবাতি জ্বালাল।’ এগুলো সব কারেন্টের লোকের কারসাজি। বলেও মন্তব্য করেন তিনি। একই ধরনের অভিযোগ করেন ওই বাজারের আরও কয়েকজন। 

তারাগঞ্জের প্রামাণিক পাড়া গ্রামের গৃহবধূ হাফিজা বেগম বলেন, ‘নেম্পো জ্বালে রাইত কাটাউছি। কোরবানির মাংস ফ্রিজোত থুচনো তাক কারেন্ট না থাকায় গন্ধ বেরাইছে। তাকে বের করি সিদ্ধ করছি। তাও গন্ধ যাওছে না। কারেন্ট থাকলে এমন হইল না হয়।’ 

তারাগঞ্জের ফকিরপাড়া গ্রামের ইজিবাইকচালক মাহামুদুল হাসান বলেন, ‘ঈদের সময় দ্বিগুণ কামাই। কিন্তু দুদিন থাকি গাড়ি বের কইরার পাওছি না। সারা দিনে এক ঘণ্টাও কারেন্ট থাকোছে না। কারেন্ট কোনা থাকলে দুই দিনে চার হাজার কামাই হইল হয়, অ্যালা তাক সউগ লস। ঘরোত বসি আছি।’ 

ওই গ্রামের দিনমজুর মশিয়ার রহমান বলেন, ‘খুব যন্ত্রণায় আছি এই কারেন্ট নিয়া। এটে দ্যাওয়া নাগাইলেও কারেন্ট যায়, রইদ উঠালেইও কারেন্ট যায়। কারেন্ট খালি অল্প সময় থাকে। না পাই ঠিক মতোন ফ্যানের বাতাস খাবার, না পাই রাইতো লাইট জ্বলার।’ 

রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর জি এম মো. খুরশীদ আলম বলেন, ‘বৃষ্টি-বাদলের কারণে ট্রান্সফরমার জ্বলে যাওয়া ও বৈদ্যুতিক তারে গাছপালা পড়ায় গ্রাহক পর্যায়ে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের লোকজন মাঠে কাজ করছে। আশা করছি দ্রুত সব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিক হয়ে যাবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত