উত্তরাধিকার কর আরোপ করলে আম্বানি-আদানিরা চলে যাবে দুবাই: গৌতম সেন

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ০৯ মে ২০২৪, ১৮: ৪৩
আপডেট : ০৯ মে ২০২৪, ১৮: ৫৭

ভারতে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পদের ওপর কর আরোপের প্রস্তাবের ফলে আম্বানি এবং আদানিরা নিজেদের ঘাঁটি দুবাইয়ের মতো দেশে সরিয়ে নিয়ে যেতে পারে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছেন বিজেপিঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ গৌতম সেন। তিনি ব্যাখ্যা করে আরও বলেছেন, ভারতের আম্বানি, আদানি এবং টাটা দুবাই চলে গেলে ভারতের যথেষ্ট ক্ষতি হবে। 

সম্প্রতি কংগ্রেস নেতা স্যাম পিত্রোদা ভারতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুরূপ উত্তরাধিকার কর চালু করার পরামর্শ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতেই গৌতম সেন অর্থনীতির এমন বিশ্লেষণ করলেন। 

গৌতম সেন লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। এর আগে তিনি একজন ভারত-যুক্তরাজ্যবিষয়ক গোলটেবিলের সদস্য এবং ইউএনডিপির সিনিয়র কনসালট্যান্ট ছিলেন। পাশাপাশি তিনি ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশন অব হিন্দু অ্যাকাডেমিশিয়ানের সভাপতি ও ধার্মিক আইডিয়াস অ্যান্ড পলিসি ফাউন্ডেশনের সহপরিচালক।

ভারতের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা এএনআইয়ের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো ভারতে উত্তরাধিকার কর আরোপের প্রস্তাব সম্পর্কে নিজের মতামত তুলে ধরেছেন। 

একান্ত সাক্ষাৎকারে ড. সেন বলেন, আম্বানি, আদানি, মাহিন্দ্রা এবং টাটাসহ ৫ শতাধিক অতি ধনী (বিলিয়নিয়ার) শ্রেণি ভারত থেকে দুবাইতে চলে যাবে। এরই মধ্যে যেসব ভারতীয় মিলিয়নিয়ার দেশ ছেড়েছেন তাঁদের ৭০ শতাংশই দুবাই চলে গেছেন, কারণ দুবাইতে কোনো আয়কর নেই। তাঁরা সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিজেদের ব্যবসা পুনরায় নিবন্ধন করবে, তখন ভারত তাঁদের কাছ থেকে কেবল করপোরেট কর সংগ্রহ করতে সক্ষম হবে কারণ তাদের ব্যবসা ভারতেই থাকবে। 

সেন আরও বলেন, ‘তাই ভারতের সম্পদের বিশাল ক্ষতি হবে। এখন, যদি আপনি অন্যান্য দেশ সম্পর্কে ভাবেন তাহলে সেটা সুইডেনে। দেশটিতে আগে উত্তরাধিকার কর কঠোর ছিল এবং সুইডেন ইতিহাসে বিশ্বের সর্বোচ্চ কর আদায়কারী দেশগুলোর মধ্যে একটি ছিল। কিন্তু আপনি জানেন কি, সুইডেন উত্তরাধিকার কর প্রত্যাহার করেছে কারণ অনেক ধনী দেশ ছেড়ে পালাচ্ছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, আইকেইএর মালিক সুইডেন থেকে চলে গেছেন।’ 

এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, ‘উত্তরাধিকার কর অপসারণের পরে দেখা গেছে, দেশে প্রচুর সম্পদ ফিরে এসেছে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর আদায় বেড়েছে। যদিও অতিরিক্ত কর আদায় করে সুইডেন কম সচ্ছলদের মধ্যে বিতরণ করতে পারত। তবুও আমি প্রকৃতপক্ষে, উত্তরাধিকার কর বা সম্পদ কর না রাখা সুইডেনের জন্য উপকারী বলব। এখন ভারতের ক্ষেত্রে আপনি একই কাজ করেন তবে আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, একটি কৃষিভিত্তিক দেশে আপনি এটি করতে পারবেন না।’ 

কংগ্রেস নেতা স্যাম পিত্রোদা সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুরূপ উত্তরাধিকার কর ভারতে চালু করার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে সেন বলছেন, এটি ভারতের মোটেই ভালো উপমা নয়। তাঁর কথায়, সব সমাজে অর্থের পুনর্বণ্টন ঘটে এবং গত এক দশকে ভারতের গ্রামীণ এলাকার সমাজের দরিদ্রতম অংশে উল্লেখযোগ্য উন্নতির নজির রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, গত ১ বছরে ভারতে যে পুনর্বণ্টন ঘটেছে তা এক হাজার বছরেও ঘটেনি। 

গৌতম সেন বলেন, ‘মার্কিন উদাহরণটি ভারতের জন্য মোটেই ভালো উপমা নয়। উল্টো এক রকম সমস্যা। পুনর্বণ্টন এমন একটি বিষয় যা সমস্ত অর্থনীতি এবং সমস্ত সমাজে ঘটে। আসলে, গত ১০ বছরে ভারতে যে পুনর্বণ্টন ঘটেছে, গ্রামীণ ভারতের কল্যাণে গত এক হাজার বছরে এমনটি হয়নি। তাই ভারত আসলেই ভালো করছে। প্রশ্ন হলো, আপনি কীভাবে এটি অর্জন করবেন। তাই কর আরোপের প্রস্তাবটি সমস্ত পরিবার এবং ব্যবসার জরিপের ক্ষেত্রে অনেক কারণেই অবাস্তব।’ 

উত্তরাধিকারী কর প্রয়োগের বাস্তবতা সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করে ও কংগ্রেসের সমস্ত পরিবার ও ব্যবসার সমীক্ষা তুলে ধরার প্রস্তাব সম্পর্কে সেন বলেন, ভারতে মাত্র অল্প শতাংশ লোক ব্যক্তিগত আয়কর দেন এবং এই গোষ্ঠী থেকে সম্পদ পুনর্বণ্টন করার প্রচেষ্টা কার্যকরী হবে না। 

সুইডেনের উত্তরাধিকার করের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে সেন বলেন, ‘ভারতে ২ দশমিক ৪ শতাংশ বা তারও সামান্য কিছু লোক আয়কর দেন। যেটা ব্যক্তিগত কর। আমি মনে করি, সেই গোষ্ঠী ১২ লাখের বেশি নয়, সম্ভবত একটু বেশি। তাঁরা বাসস্থানেই রাখেন নিজেদের ৭৭ শতাংশ সম্পদ। এসবের মধ্যে রয়েছে স্বর্ণ, মোটরসাইকেল, ফ্যান, আলমারি। আপনি আয়কর আরোপের মাধ্যমে সমতা চাইলে এই সমস্ত লোকের সম্পদের তালিকা করতে হবে এবং সেসব তাঁদের থেকে নিয়ে নিতে হবে। এরপর এসব মানুষকে রাস্তায় নামিয়ে দিতে হবে। তবে ভারতের বাকি অংশের তুলনায় আপনি তাঁদের থেকে খুব কম পরিমাণ কর আদায় করতে পারবেন।’ 

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর প্রস্তাবিত সম্পদের পুনর্বণ্টন প্রস্তাব সম্পর্কে সেন যুক্তি দিয়ে বলেন, এই জাতীয় নীতির বাস্তবায়ন অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং হবে। তাঁর কথায়, ধনী ব্যক্তিদের কাছ থেকে সম্পদ নিয়ে নিলে অর্থনীতি ব্যাহত হবে। কারণ তারাই ব্যবসায় বিনিয়োগ করে, তাঁরাই অর্থনীতির চালিকাশক্তি। শুধু তাই নয়, এটি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। 

সেন বলেন, তাঁদের অর্থের পুরোটাই ব্যবসায় বিনিয়োগ করা হয়। সুতরাং তাঁদের সম্পদ কেড়ে নেওয়ার জন্য আপনাকে তাদের ব্যবসাহীন করতে হবে। এতে অর্থনীতি বিকল হয়ে পড়বে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত