সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) বিকাশ শুধু প্রযুক্তি খাতে বিপ্লব ঘটায়নি বরং সাইবার নিরাপত্তা ও নির্বাচনী স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জও সৃষ্টি করেছে। এআই টুল বিশেষত চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করেছে সাইবার অপরাধীরা। গত বুধবার নতুন এক প্রতিবদেন এমন কিছু উদ্বেগজনক ঘটনা তুলে ধরেছে ওপেনএআই। এ ধরনের ঘটনাগুলো মিথ্যা তথ্যের প্রচারণা, প্রতারণা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য উদ্বেগ তৈরি করছে।

সাইবার অপরাধীরা বুঝতে পেরেছে যে, চ্যাটজিপিটির মতো এআই মডেলগুলো বৃহৎ পরিসরে সুসংগত ও প্রভাবশালী টেক্সট তৈরি করতে পারে। ভোটারদের বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা ভুয়া খবরের প্রতিবেদন, সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট, এমনকি প্রতারণামূলক প্রচারণা কনটেন্ট তৈরি করে।

বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ওপেনএআই জানিয়েছে, তাদের এআই মডেলগুলো ভুয়া কনটেন্ট তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়েছে। দীর্ঘ আকারের প্রতিবেদন ও সোশ্যাল মিডিয়া মন্তব্য এসব কনটেন্টের অন্তর্ভুক্ত। এগুলো নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। বৈধ সংবাদমাধ্যমের শৈলী অনুকরণ করে এআই বার্তাগুলো তৈরি করতে পারে। এর ফলে সাধারণ জনগণের জন্য সত্যি আর মিথ্যা তথ্য আলাদা করা দিনে দিনে আরও কঠিন হয়ে উঠছে।

এই প্রবণতার সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিকগুলোর একটি হলো—চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করে নির্দিষ্ট জনগণের জন্য বার্তা কাস্টমাইজ করতে পারে সাইবার অপরাধীরা। ডেটা মাইনিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা ভোটারদের আচরণ এবং পছন্দ বিশ্লেষণ করতে পারে। ফলে নির্বাচিত ব্যক্তিদের জন্য প্রাসঙ্গিক মেসেজ তৈরি করতে পারে সাইবার অপরাধীরা। এ ধরনের ব্যক্তিগতকরণ মিথ্যা তথ্য আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা যায়। তাই অপপ্রচারকারীরা রাজনৈতিক বিভাজন কাজে লাগিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা আরও বাড়ানোর সুযোগ পায়।

এ বছর চ্যাটজিপিটির অপব্যবহার করে প্রভাব বিস্তারের ২০টির মতো চেষ্টা থামিয়েছে ওপেনএআই। গত আগস্টে কোম্পানিটি নির্বাচন-সংক্রান্ত প্রতিবেদন তৈরির অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। এ ছাড়া গত জুলাই মাসে রুয়ান্ডার কিছু অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়, যা সেই দেশের নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে ব্যবহার করা হতো। অ্যাকাউন্টগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন পোস্টের কমেন্ট তৈরিতে ব্যবহার করা হতো।

এ ছাড়া এআই দ্রুত গতিতে কনটেন্ট তৈরি করতে পারে। ফলে মিথ্যা তথ্য দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। প্রচলিত ফ্যাক্টচেকিং প্রক্রিয়াগুলো এই মিথ্যা তথ্যের প্রবাহ মোকাবিলা করতে হিমশিম খাচ্ছে। এই পরিস্থিতি এমন এক পরিবেশ সৃষ্টি করে, যেখানে ভোটাররা বিবিধ বিভ্রান্তিকর তথ্যের চাপে বিপর্যস্ত হয়ে যায়। মিথ্যা তথ্যগুলো তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তোলে।

ওপেনএআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রচারণায় চ্যাটজিপিটি ব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে। এই শক্তিশালী কৌশল জনমতের ধারণাকে পক্ষপাতমূলকভাবে প্রভাবিত করতে পারে, বিশেষ করে নির্বাচন-পূর্ব মুহূর্তে ভোটারের অনুভূতিতে পরিবর্তন আনার জন্য।

তবে ওপেনএআইয়ের মতে, চ্যাটজিপিটি দ্বারা তৈরি কনটেন্ট দিয়ে বৈশ্বিক নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা এখনো বড় কোনো সাফল্য পায়নি। কারণ এ ধরনের প্রচেষ্টা বড়সংখ্যক পাঠক বা দর্শকের কাছে তুলে ধরতে পারেনি। তবে এটি একটি উদ্বেগজনক বিষয় হিসেবে রয়ে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ রাশিয়া, ইরান ও চীন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে মিথ্যা তথ্য তৈরি করে নভেম্বর মাসের আসন্ন মার্কিন নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ তোলে সংস্থাটি।

দেশগুলো এআই ব্যবহার করে মিথ্যা বা বিভাজনমূলক তথ্য ছড়াচ্ছে, যা নির্বাচনী স্বচ্ছতার জন্য একটি গুরুতর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তথ্যসূত্র: রয়টার্স ও ইন্ডিয়া টুডে