শাপলা খন্দকার, বগুড়া
চারপাশে শত শত অপরাধের মধ্যে যৌন হয়রানি নৈমিত্তিক ঘটনা। ভিড়ের মধ্যে অমনোযোগিতার সুযোগে স্পর্শ-ধাক্কা, গণপরিবহনে গাঘেঁষে বসা, প্রেমের ছলে জোরজবরদস্তি, আপত্তিকর ভিডিওধারণ করে যৌনসম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করা, এমনকি মাদকের নেশায় আসক্ত করেও চলে নারীর যৌন নিপীড়ন। এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটছে জেলার কোনো না কোনো প্রান্তে। এর মধ্যে সব অভিযোগ থানায় আসে না। এলে হয়তো তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। তবু এধরনের অপরাধ ঘটেই চলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যৌনশিক্ষার অভাবে ছোট বয়সেই এমন নিপীড়নের প্রবণতা বাসা বাঁধছে কিশোর মনে। তার সঙ্গে এক্ষেত্রে আইনি প্রতিকার জোরদার না হওয়ায় এগুলো স্বাভাবিক আচরণে পরিণত হচ্ছে।
ধুনট উপজেলার অষ্টম শ্রেণির স্কুলছাত্রীকে ফুসলিয়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে রাসেল (২১)। এরপর কৌশলে ওই স্কুলছাত্রীর গোসলের নগ্ন ভিডিওধারণ করে। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে স্কুলছাত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করে সে। কিন্তু ওই স্কুলছাত্রী রাজি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ রাসেল গোসলের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় গত ১৪ নভেম্বর। এ কাজে তাকে সহায়তা করেন তার বন্ধু জিয়াম সরদার (২০) ও সজিব মণ্ডল (১৯)।
চলতি বছর জুন মাসে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলায় ঘটে একটি রোমহর্ষক ঘটনা। ১৪ বছরের এক কিশোর তার সমবয়সী আরেক কিশোর নওফেলকে খুন করে। কারণ অনুসন্ধানে পুলিশ খুঁজে পায়, টাকার বিনিময়ে নারীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে চেয়েছিল ওই কিশোর। কিন্তু তার কাছে টাকা না থাকায় সে বন্ধু নওফেলকে খুন করে তার মোবাইল ফোন ছিনতাই করে নেয়। তারপর সেই মোবাইল ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে ২ হাজার টাকা দিয়ে ভাড়া করে একটি হোটেল রুম। সেখানে মেয়েটির সঙ্গে মিলিত হয় সে। মেয়েটিকে ভাড়া দেয় ১ হাজার ৫০০ টাকা। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর এসব বর্ণনা দেয় ১৪ বছরের ওই কিশোর।
মে মাসে ঘটে আরেকটি কিশোর অপরাধের ঘটনা। টাকার বিনিময়ে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য এক মেয়েকে ভাড়া করে গাইবান্ধার তিন কিশোর। মেয়েটিকে নিয়ে যাওয়া হয় বগুড়ার সোনাতলার এক নির্জন মাঠে। তারপর রাতে সবাই সেখানে পৌঁছে কে আগে মেয়েটির সঙ্গে মিলিত হবে-এই নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয় তাদের মধ্যে। এরই একপর্যায়ে ১৪ বছরের কিশোর রাকিব হোসেনকে খুন করে আহসান হাবিব সজীব (২০) নামের অপর কিশোর। মাসুম বিল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে সেই লাশ টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে এক ডোবায় ফেলে দেয়। পিবিআই এর অনুসন্ধানে উঠে আসে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য।
বগুড়া পিবিআই পুলিশ সুপার আকরামুল হোসেন বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ড ঘটনা যতটা না ফৌজদারি অপরাধ তার চেয়ে বেশি সামাজিক অবক্ষয়ের নমুনা। সামাজিক, ধর্মীয় এবং পারিবারিক শিক্ষার অভাবে কিশোররা অতিআগ্রহী হয়ে খারাপ কাজে যুক্ত হচ্ছে এবং একপর্যায়ে বড় বড় অপরাধ ঘটাচ্ছে।’
শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের (শজিমেক) মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. শাহরিয়ার ফারুক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের দেশে একদিকে যৌনতাবিষয়ক অসচেতনতা আছে, অপরদিকে আছে অপশিক্ষা। যৌনশিক্ষার পরিবর্তে যৌন কুশিক্ষা লাভ করছে কিশোররা। অনিয়ন্ত্রিত ইন্টারনেট ব্যবহার, নেশা এই কুশিক্ষার খোরাক জোগাচ্ছে। এসব মানুষের কুচিন্তাকে প্রভাবিত করছে এবং মানসিক বৈকল্য তৈরি করছে। অসুস্থ, অস্বাভাবিক যৌনতা এক ধরনের মানসিক রোগ যা সারতে কাউন্সেলিং এবং চিকিৎসা প্রয়োজন ৷ সেই সাথে সার্বিকভাবে প্রয়োজন শিক্ষা, সংস্কৃতির উন্নয়ন।’
আজকের পত্রিকার এই প্রতিবেদক ১৪-১৭ বছর বয়সী ৫ জন কিশোর, ১৮-২১ বছর বয়সী ৫ জন তরুণ এবং ২২-৪২ বছর বয়সী ৫ জন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেন। এদের মধ্যে ১২ জন জানান, বয়ঃসন্ধিকালে নারীদেহের প্রতি তীব্র আকর্ষণ এবং কৌতূহল ছিল তাদের। আর এরই জেরে ৮ জন কৈশোরে নানা ছলে বিভিন্ন বয়সের নারীর শরীরে অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ করে। ৪ জন জানায়, তারা তাদের নিকট আত্মীয়দের শরীরে স্পর্শ করে এক ধরনের পুলক অনুভব করে।
আজকের পত্রিকার এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় ২১ বছর বয়সী তরুণ জুলফিকারের (ছদ্মনাম)। তিনি বলেন, ‘বয়ঃসন্ধিকালে আমার খুব কৌতূহল তৈরি হয় নারী শরীরের প্রতি, শারীরিক ইচ্ছাও বেড়ে যায় অনেক। একদিন কৌশলে আমার এক কাজিনের শরীরে বাজেভাবে স্পর্শ করি। পরবর্তীতে এটা ভেবে আমি ভীষণ অনুতপ্ত হই। কয়েক বছর পর হিউম্যান বডি এবং যৌনতা বিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে স্টাডি করি নিজ উদ্যোগে। এরপর আমার মধ্যে আর কখনো এমন আগ্রহ জন্মায়নি।’
বগুড়ার ১২টি থানায় ২০২১ ও ২০২২ সালের দায়ের করা অভিযোগ বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুই বছরে ৭৩৮টি মামলা দায়ের হয়েছে ধর্ষণ, কিশোরী অপহরণ, নারী নিপীড়ন, পর্নোগ্রাফি এবং যৌন হয়রানি বিষয়ে। এর মধ্যে ১৩৫টি মামলাই যৌন হয়রানি বিষয়ক।
২০২১ সালে জেলায় ১২২টি ধর্ষণ, ১২৯টি অপহরণ, ৪৬টি যৌতুকের জন্য নিপীড়ন এবং ৬২টি যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটে। ২০২২ সালে জানুয়ারি থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ১১২টি ধর্ষণ, ১৩৭ টি অপহরণ, ৫৭টি যৌতুক এবং ৭৩টি যৌন হয়রানির মামলা লিপিবদ্ধ হয়।
জেলা পুলিশ জানায়, এসব অভিযোগের আসামিরা বেশির ভাগই একাধিকবার যৌন হয়রানি-নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছেন তারা।
বগুড়া সদর থানার নারী ও শিশু হেল্প ডেস্কে দায়িত্বরত পুলিশ উপপরিদর্শক (এসআই) জেবুন্নেসা জানান, চলতি বছরে তার ডেস্কে ২১৬৩ জন নারী ভিকটিমের অভিযোগ রেকর্ড হয়েছে। এর মধ্যে যৌন হয়রানির অভিযোগ ১৬৮টি। তিনি বলেন, যৌন হয়রানির অভিযোগ বেশির ভাগই এসেছে কিশোরদের বিরুদ্ধে। করোনাকালে মুঠোফোনে আসক্ত হওয়ায় যৌন হয়রানির মাত্রা বেড়েছে বলে মন্তব্য করেন জেবুন্নেসা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শ্যামলী শীল বলেন, ‘আমাদের দেশে যথাযথ যৌন শিক্ষার অভাবে যৌন হয়রানি, যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। ছোটবেলা থেকে মানুষের শারীরিক শিক্ষা এবং যৌনতার ক্ষেত্রে সঠিক নৈতিক দর্শন শিখতে হবে। শারীরিক প্রয়োজনীয়তাকে নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমেই পশু এবং মানুষের পার্থক্য তৈরি হয়। এই শিক্ষাটা পাঠ্যপুস্তকে এবং দেশের সংস্কৃতিতে চর্চা করতে হবে ৷ আমি মনে করি, শুধু কিশোর-কিশোরীদের জন্য নয়, সমগ্র জাতিকেই যৌনতা বিষয়ক একটি পাঠ নেওয়া প্রয়োজন যেন শরীরকে কেবলমাত্র সেক্স অবজেক্ট মনে করা না হয়।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. অশোক কুমার সাহা বলেন, ‘অস্বাভাবিক যৌন আচরণ এক ধরনের মানসিক বৈকল্য। শিক্ষার অভাবে এটা কিশোর মনে গেঁথে যায়। যৌনতা সম্পর্কে স্বাভাবিক ধারণা না থাকায় মানুষ বিকৃত আচরণ করে। যত দিন যৌনশিক্ষাকে গোপনীয় বিষয় হিসেবে রাখা হবে তত দিন এর অপব্যবহার চলতে থাকবে। যৌনশিক্ষাকে উন্মুক্ত শিক্ষার বিষয় করতে হবে।’
জাতিসংঘের ইউএনএফপিএ এর জেন্ডার বিশেষজ্ঞ মাসুদা ইসলাম বলেন, ‘যৌন হয়রানি কমাতে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার চেয়েও বেশি জরুরি সামাজিক এবং পারিবারিক মূল্যবোধ। বাংলাদেশে সাধারণত পরিবারগুলো একজন মেয়ে সন্তানকে যেভাবে মূল্যবোধ শেখায়, শাসন করে ছেলে সন্তানদের সেভাবে শেখায় না, শাসনে রাখে না। ফলে, ছেলেরা পরিবার এবং সমাজ থেকে এটা শিখে বড় হয় যে তারা চাইলেই নারীর সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে পারে।’
বগুড়া পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা আইনের ভাষায় অপরাধকে অপরাধই মনে করি। এটাকে মানসিক রোগ বিবেচনা করে আসামির প্রতি নমনীয়তা দেখানোর সুযোগ নেই। তবে একজন অপরাধী তৈরি হয়ে ওঠার পেছনে পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক নানামুখী ভূমিকা থাকে। শুধু আইন প্রয়োগ করে অপরাধ কমানো সম্ভব হলেও নির্মূল করা সম্ভব নয়৷’
চারপাশে শত শত অপরাধের মধ্যে যৌন হয়রানি নৈমিত্তিক ঘটনা। ভিড়ের মধ্যে অমনোযোগিতার সুযোগে স্পর্শ-ধাক্কা, গণপরিবহনে গাঘেঁষে বসা, প্রেমের ছলে জোরজবরদস্তি, আপত্তিকর ভিডিওধারণ করে যৌনসম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করা, এমনকি মাদকের নেশায় আসক্ত করেও চলে নারীর যৌন নিপীড়ন। এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটছে জেলার কোনো না কোনো প্রান্তে। এর মধ্যে সব অভিযোগ থানায় আসে না। এলে হয়তো তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। তবু এধরনের অপরাধ ঘটেই চলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যৌনশিক্ষার অভাবে ছোট বয়সেই এমন নিপীড়নের প্রবণতা বাসা বাঁধছে কিশোর মনে। তার সঙ্গে এক্ষেত্রে আইনি প্রতিকার জোরদার না হওয়ায় এগুলো স্বাভাবিক আচরণে পরিণত হচ্ছে।
ধুনট উপজেলার অষ্টম শ্রেণির স্কুলছাত্রীকে ফুসলিয়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে রাসেল (২১)। এরপর কৌশলে ওই স্কুলছাত্রীর গোসলের নগ্ন ভিডিওধারণ করে। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে স্কুলছাত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করে সে। কিন্তু ওই স্কুলছাত্রী রাজি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ রাসেল গোসলের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় গত ১৪ নভেম্বর। এ কাজে তাকে সহায়তা করেন তার বন্ধু জিয়াম সরদার (২০) ও সজিব মণ্ডল (১৯)।
চলতি বছর জুন মাসে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলায় ঘটে একটি রোমহর্ষক ঘটনা। ১৪ বছরের এক কিশোর তার সমবয়সী আরেক কিশোর নওফেলকে খুন করে। কারণ অনুসন্ধানে পুলিশ খুঁজে পায়, টাকার বিনিময়ে নারীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে চেয়েছিল ওই কিশোর। কিন্তু তার কাছে টাকা না থাকায় সে বন্ধু নওফেলকে খুন করে তার মোবাইল ফোন ছিনতাই করে নেয়। তারপর সেই মোবাইল ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে ২ হাজার টাকা দিয়ে ভাড়া করে একটি হোটেল রুম। সেখানে মেয়েটির সঙ্গে মিলিত হয় সে। মেয়েটিকে ভাড়া দেয় ১ হাজার ৫০০ টাকা। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর এসব বর্ণনা দেয় ১৪ বছরের ওই কিশোর।
মে মাসে ঘটে আরেকটি কিশোর অপরাধের ঘটনা। টাকার বিনিময়ে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য এক মেয়েকে ভাড়া করে গাইবান্ধার তিন কিশোর। মেয়েটিকে নিয়ে যাওয়া হয় বগুড়ার সোনাতলার এক নির্জন মাঠে। তারপর রাতে সবাই সেখানে পৌঁছে কে আগে মেয়েটির সঙ্গে মিলিত হবে-এই নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয় তাদের মধ্যে। এরই একপর্যায়ে ১৪ বছরের কিশোর রাকিব হোসেনকে খুন করে আহসান হাবিব সজীব (২০) নামের অপর কিশোর। মাসুম বিল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে সেই লাশ টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে এক ডোবায় ফেলে দেয়। পিবিআই এর অনুসন্ধানে উঠে আসে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য।
বগুড়া পিবিআই পুলিশ সুপার আকরামুল হোসেন বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ড ঘটনা যতটা না ফৌজদারি অপরাধ তার চেয়ে বেশি সামাজিক অবক্ষয়ের নমুনা। সামাজিক, ধর্মীয় এবং পারিবারিক শিক্ষার অভাবে কিশোররা অতিআগ্রহী হয়ে খারাপ কাজে যুক্ত হচ্ছে এবং একপর্যায়ে বড় বড় অপরাধ ঘটাচ্ছে।’
শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের (শজিমেক) মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. শাহরিয়ার ফারুক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের দেশে একদিকে যৌনতাবিষয়ক অসচেতনতা আছে, অপরদিকে আছে অপশিক্ষা। যৌনশিক্ষার পরিবর্তে যৌন কুশিক্ষা লাভ করছে কিশোররা। অনিয়ন্ত্রিত ইন্টারনেট ব্যবহার, নেশা এই কুশিক্ষার খোরাক জোগাচ্ছে। এসব মানুষের কুচিন্তাকে প্রভাবিত করছে এবং মানসিক বৈকল্য তৈরি করছে। অসুস্থ, অস্বাভাবিক যৌনতা এক ধরনের মানসিক রোগ যা সারতে কাউন্সেলিং এবং চিকিৎসা প্রয়োজন ৷ সেই সাথে সার্বিকভাবে প্রয়োজন শিক্ষা, সংস্কৃতির উন্নয়ন।’
আজকের পত্রিকার এই প্রতিবেদক ১৪-১৭ বছর বয়সী ৫ জন কিশোর, ১৮-২১ বছর বয়সী ৫ জন তরুণ এবং ২২-৪২ বছর বয়সী ৫ জন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেন। এদের মধ্যে ১২ জন জানান, বয়ঃসন্ধিকালে নারীদেহের প্রতি তীব্র আকর্ষণ এবং কৌতূহল ছিল তাদের। আর এরই জেরে ৮ জন কৈশোরে নানা ছলে বিভিন্ন বয়সের নারীর শরীরে অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ করে। ৪ জন জানায়, তারা তাদের নিকট আত্মীয়দের শরীরে স্পর্শ করে এক ধরনের পুলক অনুভব করে।
আজকের পত্রিকার এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় ২১ বছর বয়সী তরুণ জুলফিকারের (ছদ্মনাম)। তিনি বলেন, ‘বয়ঃসন্ধিকালে আমার খুব কৌতূহল তৈরি হয় নারী শরীরের প্রতি, শারীরিক ইচ্ছাও বেড়ে যায় অনেক। একদিন কৌশলে আমার এক কাজিনের শরীরে বাজেভাবে স্পর্শ করি। পরবর্তীতে এটা ভেবে আমি ভীষণ অনুতপ্ত হই। কয়েক বছর পর হিউম্যান বডি এবং যৌনতা বিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে স্টাডি করি নিজ উদ্যোগে। এরপর আমার মধ্যে আর কখনো এমন আগ্রহ জন্মায়নি।’
বগুড়ার ১২টি থানায় ২০২১ ও ২০২২ সালের দায়ের করা অভিযোগ বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুই বছরে ৭৩৮টি মামলা দায়ের হয়েছে ধর্ষণ, কিশোরী অপহরণ, নারী নিপীড়ন, পর্নোগ্রাফি এবং যৌন হয়রানি বিষয়ে। এর মধ্যে ১৩৫টি মামলাই যৌন হয়রানি বিষয়ক।
২০২১ সালে জেলায় ১২২টি ধর্ষণ, ১২৯টি অপহরণ, ৪৬টি যৌতুকের জন্য নিপীড়ন এবং ৬২টি যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটে। ২০২২ সালে জানুয়ারি থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ১১২টি ধর্ষণ, ১৩৭ টি অপহরণ, ৫৭টি যৌতুক এবং ৭৩টি যৌন হয়রানির মামলা লিপিবদ্ধ হয়।
জেলা পুলিশ জানায়, এসব অভিযোগের আসামিরা বেশির ভাগই একাধিকবার যৌন হয়রানি-নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছেন তারা।
বগুড়া সদর থানার নারী ও শিশু হেল্প ডেস্কে দায়িত্বরত পুলিশ উপপরিদর্শক (এসআই) জেবুন্নেসা জানান, চলতি বছরে তার ডেস্কে ২১৬৩ জন নারী ভিকটিমের অভিযোগ রেকর্ড হয়েছে। এর মধ্যে যৌন হয়রানির অভিযোগ ১৬৮টি। তিনি বলেন, যৌন হয়রানির অভিযোগ বেশির ভাগই এসেছে কিশোরদের বিরুদ্ধে। করোনাকালে মুঠোফোনে আসক্ত হওয়ায় যৌন হয়রানির মাত্রা বেড়েছে বলে মন্তব্য করেন জেবুন্নেসা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শ্যামলী শীল বলেন, ‘আমাদের দেশে যথাযথ যৌন শিক্ষার অভাবে যৌন হয়রানি, যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। ছোটবেলা থেকে মানুষের শারীরিক শিক্ষা এবং যৌনতার ক্ষেত্রে সঠিক নৈতিক দর্শন শিখতে হবে। শারীরিক প্রয়োজনীয়তাকে নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমেই পশু এবং মানুষের পার্থক্য তৈরি হয়। এই শিক্ষাটা পাঠ্যপুস্তকে এবং দেশের সংস্কৃতিতে চর্চা করতে হবে ৷ আমি মনে করি, শুধু কিশোর-কিশোরীদের জন্য নয়, সমগ্র জাতিকেই যৌনতা বিষয়ক একটি পাঠ নেওয়া প্রয়োজন যেন শরীরকে কেবলমাত্র সেক্স অবজেক্ট মনে করা না হয়।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. অশোক কুমার সাহা বলেন, ‘অস্বাভাবিক যৌন আচরণ এক ধরনের মানসিক বৈকল্য। শিক্ষার অভাবে এটা কিশোর মনে গেঁথে যায়। যৌনতা সম্পর্কে স্বাভাবিক ধারণা না থাকায় মানুষ বিকৃত আচরণ করে। যত দিন যৌনশিক্ষাকে গোপনীয় বিষয় হিসেবে রাখা হবে তত দিন এর অপব্যবহার চলতে থাকবে। যৌনশিক্ষাকে উন্মুক্ত শিক্ষার বিষয় করতে হবে।’
জাতিসংঘের ইউএনএফপিএ এর জেন্ডার বিশেষজ্ঞ মাসুদা ইসলাম বলেন, ‘যৌন হয়রানি কমাতে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার চেয়েও বেশি জরুরি সামাজিক এবং পারিবারিক মূল্যবোধ। বাংলাদেশে সাধারণত পরিবারগুলো একজন মেয়ে সন্তানকে যেভাবে মূল্যবোধ শেখায়, শাসন করে ছেলে সন্তানদের সেভাবে শেখায় না, শাসনে রাখে না। ফলে, ছেলেরা পরিবার এবং সমাজ থেকে এটা শিখে বড় হয় যে তারা চাইলেই নারীর সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে পারে।’
বগুড়া পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা আইনের ভাষায় অপরাধকে অপরাধই মনে করি। এটাকে মানসিক রোগ বিবেচনা করে আসামির প্রতি নমনীয়তা দেখানোর সুযোগ নেই। তবে একজন অপরাধী তৈরি হয়ে ওঠার পেছনে পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক নানামুখী ভূমিকা থাকে। শুধু আইন প্রয়োগ করে অপরাধ কমানো সম্ভব হলেও নির্মূল করা সম্ভব নয়৷’
গাজীপুরের শ্রীপুরে মামা শ্বশুরের বাড়ি থেকে স্মৃতি রানী সরকার নামে এক গৃহবধূর গলা কাটা রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে একটি ধারালো দা ও এক জোড়া জুতাও উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের স্বামী কাব্য সরকারকে আটক করেছে পুলিশ। শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়ন
২ দিন আগেসাত দিন আগে বিয়ে হয় সৌদি আরব প্রবাসী যুবক সোহান আহমদের (২৩)। হাত থেকে মেহেদির রং মোছার আগেই ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন এ যুবক। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় নবীগঞ্জ উপজেলা ও সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার সীমান্তে অবস্থিত ইনাতগঞ্জ বাজারে প্রতিপক্ষের হামলায় মৃত্যু হয় সোহান আহমদের। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন দুজন।
২ দিন আগেঅপরাধের বিরুদ্ধে চলমান বিশেষ অভিযান জোরদারে নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম। আজ সোমবার এক বার্তায় পুলিশের সকল ইউনিট প্রধানকে এ নির্দেশ দেন তিনি। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
২ দিন আগেরাজধানীর মিরপুর ডিওএইচএস এলাকার একটি বাসা থেকে বিমানবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তার স্ত্রীর হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করেছে পল্লবী থানা-পুলিশ। গতকাল রোববার দুপুরে ওই নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত ওই নারীর নাম ফারাহ দীবা। সোমবার সন্ধ্যায় আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য জানান পল্লবী থানার পরির্দশক (তদন্ত) আদ
২ দিন আগে