জাহাঙ্গীর আলম
হিন্দির আধিপত্য ঠেকাতে তামিলনাড়ুর মানুষের আন্দোলন ও ত্যাগ সম্ভবত অন্য অনেক ভাষা আন্দোলন থেকে আলাদা করেই উল্লেখ করার দাবি রাখে। ভাষার প্রশ্নে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ এবং চাপিয়ে দেওয়ার নীতির সঙ্গে তামিলদের আরেকটি কঠিন ও নিষ্ঠুর বেড়াও ভাঙতে হয়েছিল, সেটি ধর্মীয়। ভাষার অধিকার আদায়ে নানা ফ্রন্টে আন্দোলন করেছিল তামিলরা। এর মধ্যে সবচেয়ে কঠিন সংগ্রামটি হয়েছে সংগীতের মতো একটি বিশ্বশিল্পে।
দক্ষিণ ভারতে তখন কর্ণাটকি সংগীত বলতেই বোঝায় মূলত তেলেগু। সেই সংগীতে আবার ব্রাহ্মণ, তথা উচ্চবর্ণের হিন্দুদের আধিপত্য। আর নিম্নবর্ণের দ্রাবিড় তামিলরা তাদের কাছে অস্পৃশ্য। ফলে ভাষার ব্যাপারেও ব্রাহ্মণদের ছুতমার্গ ভয়ানক রকমের বৈষম্যমূলক ছিল। অবশ্য পণ্ডিতেরা মুখ ফুটে সে কথা কখনো বলেননি।
কিন্তু পরবর্তীতে বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে তামিল ভাষার মর্যাদা ও সংগীতে এ ভাষার উপযুক্ততা প্রমাণ হওয়ায় বোঝা যায়, ব্রাহ্মণ পণ্ডিতেরা আসলে এই অনার্য ভাষাকে জাতে তুলতে রাজি হননি। তাঁদের এই বর্ণবাদী জাত্যাভিমান একটি বৃহৎ সমৃদ্ধ জাতিগোষ্ঠীকে মুখের ভাষার মর্যাদা রক্ষার আন্দোলনের দিকে ঠেলে দেয়।
পণ্ডিতেরা ১৯৪০-এর দশক পর্যন্তও মনে করতেন, তামিল ভাষায় গান হয় না। এ ভাষা তেলেগু মতো ছন্দময় নয়। বহু উচ্চবর্ণীয় কর্ণাটকি সংগীতজ্ঞ যুক্তি হিসেবে বলতেন, তামিল ভাষার শব্দগুলো ‘ইক’, ‘ইপ’, ‘ইচ’-এর মতো ব্যঞ্জনবর্ণে শেষ হয়। এমন ভাষা সংগীতের জন্য মোটেও উপযুক্ত নয়। তামিলকে কখনোই তেলেগু, সংস্কৃত ও কন্নড়ের সমকক্ষ ভাবতেন না তাঁরা।
পণ্ডিতদের খপ্পরে পড়েছিলেন অনেক তামিল শিল্পী, সংগীতজ্ঞও। তাঁরা মাতৃভাষায় সংগীতচর্চা করতে সংকোচ বোধ করতেন। অবশ্য এখনো যে প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের অনেকে সংকোচ করেন না, এমন নয়।
এই বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গিকে চ্যালেঞ্জ করতেই তামিলকে সংগীতের ভাষা হিসেবে প্রচার ও প্রতিষ্ঠার জন্য রাজ্যে একটি সংগঠিত আন্দোলন দানা বাঁধে। অথচ এই তামিলনাড়ুই থিরুভাল্লুভার, ইলাঙ্গো আদিগাল এবং সুব্রাহ্মনিয়া ভারতীর মতো কিংবদন্তি কবির জন্ম দিয়েছে।
ভারতে ভাষাভিত্তিক বর্ণবাদ এবং এর প্রতিক্রিয়া স্বরূপ ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটে মূলত ১৯৩৭ সালে। ওই সময় একজাতীয় আদেশে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিন্দি বাধ্যতামূলক করা হয়। হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে তামিলনাড়ু রাজ্য। তামিল ভাষা, সাহিত্য ও পরিচয় সংরক্ষণ তখন রাজনৈতিক মতাদর্শের পাশাপাশি সরকারি নীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।
সংগীতে তামিল ভাষার স্থান করে নেওয়ার সংগ্রামের ইতিহাসটা সংক্ষেপে এ রকম—
থেভারাম, নালাইরা দিব্য প্রবান্ধামের মতো ভক্তিমূলক সংগীত এবং ভারতীর কবিতা বুঝে থাকলে মনে হতে পারে কর্ণাটকি সংগীতে তামিল ভাষা এবং সাহিত্যের একটা উচ্চ মর্যাদা আছে।
প্রকৃতপক্ষে তামিল ইসাই আন্দোলন শুরু হওয়ার আগে, অধিকাংশ কর্ণাটকি সংগীতজ্ঞ এবং শ্রোতারা বলতেন, তামিল ভাষার শব্দগুলো ‘ইক’, ‘ইপ’, ‘ইচ’-এর মতো ব্যঞ্জনবর্ণে শেষ হয়। এটা সংগীতের জন্য মোটেও উপযুক্ত নয়। কনসার্টে তামিল গান খুব কমই গাওয়া হতো। এমনকি কর্ণাটকি সংগীত সংকলন ‘সংগীতা পারিজাতাম’ এবং ‘গায়াকা লোচনাম’-এর মতো বইয়ে শেষের দিকে তামিল গানগুলো রাখা হয়েছে। আবার সেই অধ্যায়ের নামটাও দেওয়া হয়েছে ‘চিল্লারাই’। এটার তামিল অনুবাদ দাঁড়ায় ‘তুক্কাদা’, যার অর্থ বিবিধ, গৌণ বা তুচ্ছ।
তামিলরা মনে করেন, কর্ণাটকি গান রচনা ও গাওয়াতে তেলেগু ভাষার যে আভিজাত্য, সেটি বজায় রাখতেই সংকলনে ইচ্ছাকৃতভাবে এমনটি করা হয়েছে। পনেরো শতকে বিজয়নগর সাম্রাজ্যের কৃষ্ণদেবরায় তেলেগু গানের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। পরে স্বাধীন শাসকেরা, যারা পূর্ববর্তী বিজয়নগর সাম্রাজ্য দখল করেছিলেন, যেমন মাদুরাই, তাঞ্জোর এবং জিঞ্জির নায়েকরা কর্ণাটকি সংগীতের ক্ষেত্রে অন্যান্য ভাষার তুলনায় তেলুগু গানকেই প্রাধান্য ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিলেন।
এ ছাড়া আঠারো শতকের কৃতি ত্রয়ী হিসেবে বিখ্যাত তিন সংগীতজ্ঞ—তিয়াগরাজা, মুথুস্বামী দীক্ষিতার এবং শ্যামা শাস্ত্রী; তাঁরা খ্যাতি পেয়েছেন মূলত তেলেগু সংগীতে। তাঁদের কিছু সংস্কৃত কম্পোজিশনও বেশ জনপ্রিয়। যদিও তামিল মহাকাব্য ‘সিলপ্পাদিকারম’, যেটি তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যে রচিত বলে ধারণা করা হয়, সেখানে তামিল সংগীত নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা রয়েছে। এরপরও কর্ণাটকি সংগীতের জগতে ভাষাটি অস্পৃশ্য থেকে যায়।
তামিল ইসাই আন্দোলন
তামিল ইসাই আন্দোলনের সূচনা ১৯৩৯ সালে। ১৯৩৭ সালের সরকারি আদেশের বিরোধিতা করে সংগঠিত হয়েছিল জাস্টিস পার্টি। এই সংগঠনকে দ্রাবিড় আন্দোলনের পথিকৃৎ বলা হয়। সি রাজাগোপালাচারীর নেতৃত্বে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে ভারতের জাতীয় সরকার ওই সময় সমস্ত স্কুলে বাধ্যতামূলকভাবে হিন্দি পড়ানোর নির্দেশ দেয়। এই পটভূমিতে তামিল ইসাই আন্দোলনের নেতৃত্বে চলে আসেন রাজা স্যার আন্নামালাই চেত্তিয়ার। তিনি তৎকালীন তামিলনাড়ুর একজন সুপরিচিত শিল্পপতি এবং জনহিতৈষী ছিলেন। আন্নামালাই বিশেষ করে কর্ণাটকি সংগীতে তামিল ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেমেছিলেন।
পরের বছরগুলোতে চিদাম্বরমে প্রথম তামিল ইসাই সম্মেলন ডাকেন আন্নামালাই। এর পর আন্দোলনের বার্তা ছড়িয়ে দিতে তৎকালীন মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির কারাইকুডি এবং মাদুরাইয়ের মতো বড় শহরগুলোতে সম্মেলন আয়োজনের জন্য অর্থ সাহায্য করেন।
ভারতের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টিও প্রতিষ্ঠা করেন আন্নামালাই চেট্টিয়ার। তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত আন্নামালাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগকে শুধু তামিল সংগীতের প্রচার ও উন্নয়নের জন্য উৎসর্গ করার পদক্ষেপ নেন। বিভাগে শুধু তামিল কম্পোজারদের বই রাখার ব্যবস্থা করেন। আন্নামালাইয়ের এ উদ্যোগকে তামিল সংগীতের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট মনে করা হয়।
১৯৪১ সালে আন্নামালাই বিশ্ববিদ্যালয়ে তামিল ইসাই সম্মেলনের উদ্বোধনীতে আন্নামালাই চেত্তিয়ার বলেন, সংগীত পরিবেশনা শুরু হবে তামিল গান দিয়ে, শেষও হবে তামিল গানেই। কনসার্টের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ তামিল ভাষায় হওয়া উচিত। ‘তামিল ইসাই অ্যাজ এ চ্যালেঞ্জ টু ব্রাহ্মানিক্যাল মিউজিক কালচার ইন সাউথ ইন্ডিয়া’ শীর্ষক একটি গবেষণায় এমনটিই বলেছেন গবেষক ইয়োশিতাকা তেরাদা। তিনি জাপানের ওসাকায় ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব এথনোলজির একাডেমিক এবং অধ্যাপক।
আন্নামালাই চেত্তিয়ারের জেদের কারণেই সম্মেলনে একটি রেজুলেশন পাস করা হয়। সেটি কর্ণাটকি সংগীতজনদের মধ্যে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। ব্রাহ্মণ্যবাদী সংগীতকারদের প্রতি এটি ছিল একটি শক্ত বার্তা।
তৎকালীন কর্ণাটকি সংগীতের হর্তাকর্তারা বেশ ভড়কে গিয়েছিলেন এতে। তাঁদের আশঙ্কা ছিল এমন উদ্যোগে তামিল সংগীতের চাপে তেলেগু রচনাগুলোর ভবিষ্যৎ সংকটে পড়বে। মিউজিক অ্যাকাডেমি এবং সাউথ ইন্ডিয়ান ফাইন আর্টস অ্যাসোসিয়েশনের মতো প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনগুলো তামিল ইসাই আন্দোলনের বিরোধিতা করতে শুরু করে। ফলে ইস্যুটি কর্ণাটকি সংগীত জগতের ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বকে দ্বিধাবিভক্ত করে দেয়।
এই আন্দোলনে পরে যুক্ত হন কল্কি কৃষ্ণমূর্তি, মুসিরি সুব্রাহ্মনিয়াম আইয়ার এবং সেমাংগুদি শ্রীনিবাস আইয়ারের মতো শিল্পীরা। এ ছাড়া কেবি সুন্দরম্বল, এনসি বসন্তকোকিলাম, এম এস সুব্বুলক্ষ্মী এবং ডি কে পাট্টম্মলের মতো গায়িকাদের ভূমিকা তামিল ইসাই আন্দোলনের প্রচারে সহায়ক ছিল।
মিউজিক অ্যাকাডেমি এবং সভাগুলোর সঙ্গে যুক্ত সংগীতজ্ঞদের সমালোচনার গভীরে গিয়ে ইয়োশিতাকা তাঁর গবেষণাপত্রে লিখেছেন, তামিল ইসাই আন্দোলনের বিরুদ্ধে যুক্তিগুলো ‘শাস্ত্রীয় সংগীতের মান’ রক্ষার প্রতি কেন্দ্রীভূত ছিল। কোনো ভাষাকে প্রশ্রয় দিতে গিয়ে সেটির মান যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে তাঁরা সজাগ থাকার কথা বলতেন। কারণ তাঁরা বুঝেছিলেন, কনসার্টে যদি অন্য ভাষার সঙ্গে তামিল গান গাওয়ার আনুপাতিক সুযোগ থাকে, তাহলে তেলেগু এবং সংস্কৃতের ‘যোগ্য’ বা ‘প্রাচীন’ রচনাগুলোর মর্ম ও গুরুত্ব সময়ের সঙ্গে হারিয়ে যাবে।
তবে সংগীত একাডেমি এবং অন্যান্য সভা সমর্থনকারী সংগীতজ্ঞদের মধ্যে যে বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গিও প্রবলভাবে ছিল, সেটি উপেক্ষা করা যায় না। ইয়োশিতাকা তেরাদা সেনরি এথনোলজিক্যাল স্টাডিজ জার্নালে প্রকাশিত তাঁর গবেষণাপত্রে লিখেছেন, তামিল ইসাই আন্দোলনের অনেক সমর্থক কর্ণাটকি সংগীতে ব্রাহ্মণ্য আধিপত্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। মক্কল কালাই ইল্লাকিয়া কালাহাম এবং তান্ডাই পেরিয়ার তামিল ইসাই মানরামের মতো সংগঠন, যারা তামিল ইসাই আন্দোলনের সমর্থক ছিল, তারা বলছিল, ‘তামিল ইসাই সঙ্গম’ বিদ্যমান অবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে যথেষ্ট কাজ করছে না। অ-ব্রাহ্মণ শিল্পীরা যে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন, সে বিষয়ে তাঁরা সোচ্চার নন।
প্রথম তামিল ইসাই কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৩ সালে। সেখানে গান পরিবেশন করেন এম এস সুব্বলক্ষ্মী। তিনি শ্রোতাদের কাছ থেকে ব্যাপক ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছিলেন।
এম এস সুব্বলক্ষ্মীর সহশিল্পী রামনারায়ণ ২০১৬ সালে টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ নিয়ে কথা বলেন। ১৬ বছর একসঙ্গে কাজ করেছেন তাঁরা। তিনি বলেন, ‘এমএস আম্মা ছিলেন (ইসাই) আন্দোলনের অন্যতম শক্তিশালী কণ্ঠস্বর। অন্য লাজুক এবং নিরীহ শিল্পী নিজের গুরু এবং জ্যেষ্ঠদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন।’
১৯৪৯ সালে রাজা আন্নামালাই মান্দ্রামের কাজ শুরু হয়। এটিই পরে তামিল ইসাই সঙ্গমের সূতিকাগার হয়ে ওঠে। তত দিনে রাজা আন্নামালাই চেত্তিয়ার মারা গেছেন। কিন্তু তাঁর ছেলে রাজা স্যার এম এ মুথিয়া চেত্তিয়ার এবং এম এ চিদাম্বরম আন্দোলনের কাজ চালিয়ে যান। ১৯৫২ সালে কর্ণাটকি সংগীত সেশনের জন্য চেন্নাইয়ের এসপ্ল্যানেডের কোণে ২০ হাজার বর্গফুটের মিলনায়তন নির্মাণ করা হয়। তামিল ভাষায় মাসিক ও বার্ষিক কনসার্ট আয়োজনের পাশাপাশি, তামিল ইসাই সঙ্গম কলেজকে সহযোগিতা এবং একটি বাদ্যযন্ত্রের জাদুঘর করা হয়। ১৯৫৭ সাল থেকে তামিল ইসাই সঙ্গমের তরফে শিল্পীদের ‘ইসাই পেরারিগনার’ খেতাব দেওয়া হচ্ছে। বিশিষ্ট কর্ণাটকি কণ্ঠশিল্পীদের পাশাপাশি ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালামের মতো জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বও এ উদ্যোগকে সমর্থন করেছিলেন। তামিল ইসাই সঙ্গমের সংগীত উৎসবের ৬০ তম আয়োজনে এ পি জে কালাম একটি তামিল কম্পোজিশন গেয়েছিলেন।
অবশ্য পরিস্থিতির যে আমূল পরিবর্তন হয়েছে এমন নয়। নতুন প্রজন্মের অনেকে তো ইসাই আন্দোলনের খবরই জানেন না। তাঁদের জন্যই আন্নামালাই বিশ্ববিদ্যালয়ে তামিল সংগীতের ঐতিহ্যের সমাহার নিয়ে জাদুঘর স্থাপন করা হয়েছে।
যেমনটি বলেন আন্নামালাই চেত্তিয়ারের নাতনি সীতা চিদাম্বরম—‘তামিল গানকে এখনো কর্ণাটকি কণ্ঠশিল্পী এবং সংগীতজ্ঞরা নিকৃষ্ট বলে মনে করে। এখনো এমন গায়ক খুঁজে পাই, যারা তেলেগু গানের অর্থ না বুঝে গাইতে পারছেন। কিন্তু মাতৃভাষা তামিলে কম্পোজিশন শিখতে এবং গাইতে অনিচ্ছুক।’
তবুও, সীতা আশাবাদী যে তামিল ইসাই আন্দোলন সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির জন্য তাঁদের প্রচেষ্টা মানুষের ধারণা বদলে দেবে।
তথ্যসূত্র:
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নিয়ে আরও পড়ুন
হিন্দির আধিপত্য ঠেকাতে তামিলনাড়ুর মানুষের আন্দোলন ও ত্যাগ সম্ভবত অন্য অনেক ভাষা আন্দোলন থেকে আলাদা করেই উল্লেখ করার দাবি রাখে। ভাষার প্রশ্নে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ এবং চাপিয়ে দেওয়ার নীতির সঙ্গে তামিলদের আরেকটি কঠিন ও নিষ্ঠুর বেড়াও ভাঙতে হয়েছিল, সেটি ধর্মীয়। ভাষার অধিকার আদায়ে নানা ফ্রন্টে আন্দোলন করেছিল তামিলরা। এর মধ্যে সবচেয়ে কঠিন সংগ্রামটি হয়েছে সংগীতের মতো একটি বিশ্বশিল্পে।
দক্ষিণ ভারতে তখন কর্ণাটকি সংগীত বলতেই বোঝায় মূলত তেলেগু। সেই সংগীতে আবার ব্রাহ্মণ, তথা উচ্চবর্ণের হিন্দুদের আধিপত্য। আর নিম্নবর্ণের দ্রাবিড় তামিলরা তাদের কাছে অস্পৃশ্য। ফলে ভাষার ব্যাপারেও ব্রাহ্মণদের ছুতমার্গ ভয়ানক রকমের বৈষম্যমূলক ছিল। অবশ্য পণ্ডিতেরা মুখ ফুটে সে কথা কখনো বলেননি।
কিন্তু পরবর্তীতে বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে তামিল ভাষার মর্যাদা ও সংগীতে এ ভাষার উপযুক্ততা প্রমাণ হওয়ায় বোঝা যায়, ব্রাহ্মণ পণ্ডিতেরা আসলে এই অনার্য ভাষাকে জাতে তুলতে রাজি হননি। তাঁদের এই বর্ণবাদী জাত্যাভিমান একটি বৃহৎ সমৃদ্ধ জাতিগোষ্ঠীকে মুখের ভাষার মর্যাদা রক্ষার আন্দোলনের দিকে ঠেলে দেয়।
পণ্ডিতেরা ১৯৪০-এর দশক পর্যন্তও মনে করতেন, তামিল ভাষায় গান হয় না। এ ভাষা তেলেগু মতো ছন্দময় নয়। বহু উচ্চবর্ণীয় কর্ণাটকি সংগীতজ্ঞ যুক্তি হিসেবে বলতেন, তামিল ভাষার শব্দগুলো ‘ইক’, ‘ইপ’, ‘ইচ’-এর মতো ব্যঞ্জনবর্ণে শেষ হয়। এমন ভাষা সংগীতের জন্য মোটেও উপযুক্ত নয়। তামিলকে কখনোই তেলেগু, সংস্কৃত ও কন্নড়ের সমকক্ষ ভাবতেন না তাঁরা।
পণ্ডিতদের খপ্পরে পড়েছিলেন অনেক তামিল শিল্পী, সংগীতজ্ঞও। তাঁরা মাতৃভাষায় সংগীতচর্চা করতে সংকোচ বোধ করতেন। অবশ্য এখনো যে প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের অনেকে সংকোচ করেন না, এমন নয়।
এই বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গিকে চ্যালেঞ্জ করতেই তামিলকে সংগীতের ভাষা হিসেবে প্রচার ও প্রতিষ্ঠার জন্য রাজ্যে একটি সংগঠিত আন্দোলন দানা বাঁধে। অথচ এই তামিলনাড়ুই থিরুভাল্লুভার, ইলাঙ্গো আদিগাল এবং সুব্রাহ্মনিয়া ভারতীর মতো কিংবদন্তি কবির জন্ম দিয়েছে।
ভারতে ভাষাভিত্তিক বর্ণবাদ এবং এর প্রতিক্রিয়া স্বরূপ ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটে মূলত ১৯৩৭ সালে। ওই সময় একজাতীয় আদেশে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিন্দি বাধ্যতামূলক করা হয়। হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে তামিলনাড়ু রাজ্য। তামিল ভাষা, সাহিত্য ও পরিচয় সংরক্ষণ তখন রাজনৈতিক মতাদর্শের পাশাপাশি সরকারি নীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।
সংগীতে তামিল ভাষার স্থান করে নেওয়ার সংগ্রামের ইতিহাসটা সংক্ষেপে এ রকম—
থেভারাম, নালাইরা দিব্য প্রবান্ধামের মতো ভক্তিমূলক সংগীত এবং ভারতীর কবিতা বুঝে থাকলে মনে হতে পারে কর্ণাটকি সংগীতে তামিল ভাষা এবং সাহিত্যের একটা উচ্চ মর্যাদা আছে।
প্রকৃতপক্ষে তামিল ইসাই আন্দোলন শুরু হওয়ার আগে, অধিকাংশ কর্ণাটকি সংগীতজ্ঞ এবং শ্রোতারা বলতেন, তামিল ভাষার শব্দগুলো ‘ইক’, ‘ইপ’, ‘ইচ’-এর মতো ব্যঞ্জনবর্ণে শেষ হয়। এটা সংগীতের জন্য মোটেও উপযুক্ত নয়। কনসার্টে তামিল গান খুব কমই গাওয়া হতো। এমনকি কর্ণাটকি সংগীত সংকলন ‘সংগীতা পারিজাতাম’ এবং ‘গায়াকা লোচনাম’-এর মতো বইয়ে শেষের দিকে তামিল গানগুলো রাখা হয়েছে। আবার সেই অধ্যায়ের নামটাও দেওয়া হয়েছে ‘চিল্লারাই’। এটার তামিল অনুবাদ দাঁড়ায় ‘তুক্কাদা’, যার অর্থ বিবিধ, গৌণ বা তুচ্ছ।
তামিলরা মনে করেন, কর্ণাটকি গান রচনা ও গাওয়াতে তেলেগু ভাষার যে আভিজাত্য, সেটি বজায় রাখতেই সংকলনে ইচ্ছাকৃতভাবে এমনটি করা হয়েছে। পনেরো শতকে বিজয়নগর সাম্রাজ্যের কৃষ্ণদেবরায় তেলেগু গানের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। পরে স্বাধীন শাসকেরা, যারা পূর্ববর্তী বিজয়নগর সাম্রাজ্য দখল করেছিলেন, যেমন মাদুরাই, তাঞ্জোর এবং জিঞ্জির নায়েকরা কর্ণাটকি সংগীতের ক্ষেত্রে অন্যান্য ভাষার তুলনায় তেলুগু গানকেই প্রাধান্য ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিলেন।
এ ছাড়া আঠারো শতকের কৃতি ত্রয়ী হিসেবে বিখ্যাত তিন সংগীতজ্ঞ—তিয়াগরাজা, মুথুস্বামী দীক্ষিতার এবং শ্যামা শাস্ত্রী; তাঁরা খ্যাতি পেয়েছেন মূলত তেলেগু সংগীতে। তাঁদের কিছু সংস্কৃত কম্পোজিশনও বেশ জনপ্রিয়। যদিও তামিল মহাকাব্য ‘সিলপ্পাদিকারম’, যেটি তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যে রচিত বলে ধারণা করা হয়, সেখানে তামিল সংগীত নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা রয়েছে। এরপরও কর্ণাটকি সংগীতের জগতে ভাষাটি অস্পৃশ্য থেকে যায়।
তামিল ইসাই আন্দোলন
তামিল ইসাই আন্দোলনের সূচনা ১৯৩৯ সালে। ১৯৩৭ সালের সরকারি আদেশের বিরোধিতা করে সংগঠিত হয়েছিল জাস্টিস পার্টি। এই সংগঠনকে দ্রাবিড় আন্দোলনের পথিকৃৎ বলা হয়। সি রাজাগোপালাচারীর নেতৃত্বে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে ভারতের জাতীয় সরকার ওই সময় সমস্ত স্কুলে বাধ্যতামূলকভাবে হিন্দি পড়ানোর নির্দেশ দেয়। এই পটভূমিতে তামিল ইসাই আন্দোলনের নেতৃত্বে চলে আসেন রাজা স্যার আন্নামালাই চেত্তিয়ার। তিনি তৎকালীন তামিলনাড়ুর একজন সুপরিচিত শিল্পপতি এবং জনহিতৈষী ছিলেন। আন্নামালাই বিশেষ করে কর্ণাটকি সংগীতে তামিল ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেমেছিলেন।
পরের বছরগুলোতে চিদাম্বরমে প্রথম তামিল ইসাই সম্মেলন ডাকেন আন্নামালাই। এর পর আন্দোলনের বার্তা ছড়িয়ে দিতে তৎকালীন মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির কারাইকুডি এবং মাদুরাইয়ের মতো বড় শহরগুলোতে সম্মেলন আয়োজনের জন্য অর্থ সাহায্য করেন।
ভারতের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টিও প্রতিষ্ঠা করেন আন্নামালাই চেট্টিয়ার। তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত আন্নামালাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগকে শুধু তামিল সংগীতের প্রচার ও উন্নয়নের জন্য উৎসর্গ করার পদক্ষেপ নেন। বিভাগে শুধু তামিল কম্পোজারদের বই রাখার ব্যবস্থা করেন। আন্নামালাইয়ের এ উদ্যোগকে তামিল সংগীতের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট মনে করা হয়।
১৯৪১ সালে আন্নামালাই বিশ্ববিদ্যালয়ে তামিল ইসাই সম্মেলনের উদ্বোধনীতে আন্নামালাই চেত্তিয়ার বলেন, সংগীত পরিবেশনা শুরু হবে তামিল গান দিয়ে, শেষও হবে তামিল গানেই। কনসার্টের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ তামিল ভাষায় হওয়া উচিত। ‘তামিল ইসাই অ্যাজ এ চ্যালেঞ্জ টু ব্রাহ্মানিক্যাল মিউজিক কালচার ইন সাউথ ইন্ডিয়া’ শীর্ষক একটি গবেষণায় এমনটিই বলেছেন গবেষক ইয়োশিতাকা তেরাদা। তিনি জাপানের ওসাকায় ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব এথনোলজির একাডেমিক এবং অধ্যাপক।
আন্নামালাই চেত্তিয়ারের জেদের কারণেই সম্মেলনে একটি রেজুলেশন পাস করা হয়। সেটি কর্ণাটকি সংগীতজনদের মধ্যে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। ব্রাহ্মণ্যবাদী সংগীতকারদের প্রতি এটি ছিল একটি শক্ত বার্তা।
তৎকালীন কর্ণাটকি সংগীতের হর্তাকর্তারা বেশ ভড়কে গিয়েছিলেন এতে। তাঁদের আশঙ্কা ছিল এমন উদ্যোগে তামিল সংগীতের চাপে তেলেগু রচনাগুলোর ভবিষ্যৎ সংকটে পড়বে। মিউজিক অ্যাকাডেমি এবং সাউথ ইন্ডিয়ান ফাইন আর্টস অ্যাসোসিয়েশনের মতো প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনগুলো তামিল ইসাই আন্দোলনের বিরোধিতা করতে শুরু করে। ফলে ইস্যুটি কর্ণাটকি সংগীত জগতের ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বকে দ্বিধাবিভক্ত করে দেয়।
এই আন্দোলনে পরে যুক্ত হন কল্কি কৃষ্ণমূর্তি, মুসিরি সুব্রাহ্মনিয়াম আইয়ার এবং সেমাংগুদি শ্রীনিবাস আইয়ারের মতো শিল্পীরা। এ ছাড়া কেবি সুন্দরম্বল, এনসি বসন্তকোকিলাম, এম এস সুব্বুলক্ষ্মী এবং ডি কে পাট্টম্মলের মতো গায়িকাদের ভূমিকা তামিল ইসাই আন্দোলনের প্রচারে সহায়ক ছিল।
মিউজিক অ্যাকাডেমি এবং সভাগুলোর সঙ্গে যুক্ত সংগীতজ্ঞদের সমালোচনার গভীরে গিয়ে ইয়োশিতাকা তাঁর গবেষণাপত্রে লিখেছেন, তামিল ইসাই আন্দোলনের বিরুদ্ধে যুক্তিগুলো ‘শাস্ত্রীয় সংগীতের মান’ রক্ষার প্রতি কেন্দ্রীভূত ছিল। কোনো ভাষাকে প্রশ্রয় দিতে গিয়ে সেটির মান যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে তাঁরা সজাগ থাকার কথা বলতেন। কারণ তাঁরা বুঝেছিলেন, কনসার্টে যদি অন্য ভাষার সঙ্গে তামিল গান গাওয়ার আনুপাতিক সুযোগ থাকে, তাহলে তেলেগু এবং সংস্কৃতের ‘যোগ্য’ বা ‘প্রাচীন’ রচনাগুলোর মর্ম ও গুরুত্ব সময়ের সঙ্গে হারিয়ে যাবে।
তবে সংগীত একাডেমি এবং অন্যান্য সভা সমর্থনকারী সংগীতজ্ঞদের মধ্যে যে বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গিও প্রবলভাবে ছিল, সেটি উপেক্ষা করা যায় না। ইয়োশিতাকা তেরাদা সেনরি এথনোলজিক্যাল স্টাডিজ জার্নালে প্রকাশিত তাঁর গবেষণাপত্রে লিখেছেন, তামিল ইসাই আন্দোলনের অনেক সমর্থক কর্ণাটকি সংগীতে ব্রাহ্মণ্য আধিপত্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। মক্কল কালাই ইল্লাকিয়া কালাহাম এবং তান্ডাই পেরিয়ার তামিল ইসাই মানরামের মতো সংগঠন, যারা তামিল ইসাই আন্দোলনের সমর্থক ছিল, তারা বলছিল, ‘তামিল ইসাই সঙ্গম’ বিদ্যমান অবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে যথেষ্ট কাজ করছে না। অ-ব্রাহ্মণ শিল্পীরা যে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন, সে বিষয়ে তাঁরা সোচ্চার নন।
প্রথম তামিল ইসাই কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৩ সালে। সেখানে গান পরিবেশন করেন এম এস সুব্বলক্ষ্মী। তিনি শ্রোতাদের কাছ থেকে ব্যাপক ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছিলেন।
এম এস সুব্বলক্ষ্মীর সহশিল্পী রামনারায়ণ ২০১৬ সালে টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ নিয়ে কথা বলেন। ১৬ বছর একসঙ্গে কাজ করেছেন তাঁরা। তিনি বলেন, ‘এমএস আম্মা ছিলেন (ইসাই) আন্দোলনের অন্যতম শক্তিশালী কণ্ঠস্বর। অন্য লাজুক এবং নিরীহ শিল্পী নিজের গুরু এবং জ্যেষ্ঠদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন।’
১৯৪৯ সালে রাজা আন্নামালাই মান্দ্রামের কাজ শুরু হয়। এটিই পরে তামিল ইসাই সঙ্গমের সূতিকাগার হয়ে ওঠে। তত দিনে রাজা আন্নামালাই চেত্তিয়ার মারা গেছেন। কিন্তু তাঁর ছেলে রাজা স্যার এম এ মুথিয়া চেত্তিয়ার এবং এম এ চিদাম্বরম আন্দোলনের কাজ চালিয়ে যান। ১৯৫২ সালে কর্ণাটকি সংগীত সেশনের জন্য চেন্নাইয়ের এসপ্ল্যানেডের কোণে ২০ হাজার বর্গফুটের মিলনায়তন নির্মাণ করা হয়। তামিল ভাষায় মাসিক ও বার্ষিক কনসার্ট আয়োজনের পাশাপাশি, তামিল ইসাই সঙ্গম কলেজকে সহযোগিতা এবং একটি বাদ্যযন্ত্রের জাদুঘর করা হয়। ১৯৫৭ সাল থেকে তামিল ইসাই সঙ্গমের তরফে শিল্পীদের ‘ইসাই পেরারিগনার’ খেতাব দেওয়া হচ্ছে। বিশিষ্ট কর্ণাটকি কণ্ঠশিল্পীদের পাশাপাশি ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালামের মতো জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বও এ উদ্যোগকে সমর্থন করেছিলেন। তামিল ইসাই সঙ্গমের সংগীত উৎসবের ৬০ তম আয়োজনে এ পি জে কালাম একটি তামিল কম্পোজিশন গেয়েছিলেন।
অবশ্য পরিস্থিতির যে আমূল পরিবর্তন হয়েছে এমন নয়। নতুন প্রজন্মের অনেকে তো ইসাই আন্দোলনের খবরই জানেন না। তাঁদের জন্যই আন্নামালাই বিশ্ববিদ্যালয়ে তামিল সংগীতের ঐতিহ্যের সমাহার নিয়ে জাদুঘর স্থাপন করা হয়েছে।
যেমনটি বলেন আন্নামালাই চেত্তিয়ারের নাতনি সীতা চিদাম্বরম—‘তামিল গানকে এখনো কর্ণাটকি কণ্ঠশিল্পী এবং সংগীতজ্ঞরা নিকৃষ্ট বলে মনে করে। এখনো এমন গায়ক খুঁজে পাই, যারা তেলেগু গানের অর্থ না বুঝে গাইতে পারছেন। কিন্তু মাতৃভাষা তামিলে কম্পোজিশন শিখতে এবং গাইতে অনিচ্ছুক।’
তবুও, সীতা আশাবাদী যে তামিল ইসাই আন্দোলন সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির জন্য তাঁদের প্রচেষ্টা মানুষের ধারণা বদলে দেবে।
তথ্যসূত্র:
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নিয়ে আরও পড়ুন
প্রতি সপ্তাহেই নতুন সিনেমা বা ওয়েব সিরিজের জন্য দর্শকের নজর থাকে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে। সপ্তাহজুড়ে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পাবে নানা দেশের, নানা ভাষার কনটেন্ট। বাছাই করা এমন কিছু কনটেন্টের খবর থাকছে এই প্রতিবেদনে।
৮ ঘণ্টা আগেবিচ্ছেদের পর একাই পালন করছেন মা-বাবার দায়িত্ব। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবার ব্যবসায় নামছেন অভিনেত্রী। মা এবং নবজাতকের দরকারি পণ্যের ব্র্যান্ডশপ দিচ্ছেন পরীমনি।
৮ ঘণ্টা আগেপরদিনই কাকতালীয়ভাবে প্রকাশ্যে আসে বেজিস্ট মোহিনী দের বিবাহবিচ্ছেদের খবর। অনেকে দুইয়ে দুইয়ে চার মেলানো শুরু করেন। কেউ কেউ তো আগবাড়িয়ে এটাও বলে দিয়েছেন, মোহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক থাকার কারণেই নাকি বিচ্ছেদ হয়েছে রাহমান-সায়রার!
৮ ঘণ্টা আগেআগামী ৪ ডিসেম্বর শুরু হবে ৩০তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। এবারের উৎসবে অংশ নেবে বিভিন্ন দেশের ২০০টির বেশি সিনেমা। তবে রাখা হয়নি না বাংলাদেশের কোনো সিনেমা।
১৪ ঘণ্টা আগে