গলে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আইসবার্গ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১২: ০৬
আপডেট : ১৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১২: ১৪

বিশ্বের সবচেয়ে বড় আইসবার্গ বলা হয় এ২৩ এ-কে। ১৯৮৬ সালে এই আইসবার্গ অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের উপকূল থেকে আলাদা হয়ে যায়। কিন্তু তারপর দীর্ঘ সময় এই আইসবার্গ বলা চলে একপ্রকার স্থিরই ছিল। কিন্তু সম্প্রতি এটি চলতে শুরু করেছে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, মূলত এই আইসবার্গে ক্ষয় শুরু হওয়ার কারণেই এই চলাচল শুরু হয়েছে এবং এটি বজায় থাকতে পারে নিঃশেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত। 

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আয়োজ এক্সপিডিশন নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের একটি জাহাজ গত রোববার এ২৩ এ-এর কাছে পৌঁছেছিল। জাহাজটির গবেষকেরা আইসবার্গের দেওয়ালে বিভিন্ন গুহা ও খিলানের মতো আকৃতি দেখতে পেয়েছেন। অথচ বেশ কয়েক মাস আগেও এই জায়গাগুলো ভরাট ছিল বলে দেখা গেছে স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবি থেকে। 

বিজ্ঞানীরা বলছেন, মূলত উষ্ণ বায়ু ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণ পানির প্রবাহের কারণে এই আইসবার্গ অ্যান্টার্কটিকা থেকে যত দূরে সরছে ততই এটি দ্রুত গলে যাচ্ছে। তাঁরা বলছেন, চূড়ান্ত বিচারে আসলে গলে গিয়ে নিঃশেষ হয়ে যাওয়াটাই এর নিয়তি। 

আয়োজের এক্সপিডিশন দলের নেতা ইয়ান স্ট্রাচান বলেন, ‘আমরা দেখেছি প্রায় ৩ থেকে ৪ মিটার উঁচু উঁচু ঢেউ আইসবার্গটির গায়ে আছড়ে পড়ছে। যার ফলে ক্রমাগত বার্গটির গা থেকে বরফ ক্ষয়ে ক্ষয়ে পড়ছে, যা মূলত বার্গটি ধারাবাহিক ক্ষয়ই নির্দেশ করে।’ 

প্রায় ৪ হাজার বর্গকিলোমিটার (১ হাজার ৫০০ বর্গমাইল) আয়তনের হিমশৈলটির অবস্থান ওয়েডেল সাগরে। এর আয়তন নিউইয়র্ক সিটির প্রায় তিন গুণ। পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকার ফিলচনার-রোনে আইসশেলফ থেকে ১৯৮৬ সালে ভেঙে যাওয়ার পর থেকে ওয়েডেল সাগরের তলায় নিচের অংশ লেগে আটকে যায় হিমশৈলটি। তারপর থেকে সেটা ওই জায়গাতেই অবস্থান করছিল। 

সাম্প্রতিক স্যাটেলাইট চিত্রগুলো থেকে জানা যায়, প্রায় ১ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ কোটি টন ওজনের হিমশৈলটি এখন দ্রুত বাতাস ও স্রোতের সাহায্যে অ্যান্টার্কটিকা উপদ্বীপের উত্তরের প্রান্ত অতিক্রম করে যাচ্ছে। ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভের হিমবাহ বিশেষজ্ঞ অলিভার মার্শ জানান, এই আকারের একটি হিমশৈলকে জায়গা বদল করতে দেখার ঘটনা সচরাচর ঘটে না। কাজেই এর চলাটা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন বিজ্ঞানীরা। 

একপর্যায়ে এটি স্রোতের কারণে ‘আইসবার্গ অ্যালি’ নামে পরিচিত একটি পথে দক্ষিণ মহাসাগরের দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে, যেখানে অন্ধকার জলে এ ধরনের আরও হিমশৈলের দেখা মেলে। মার্শ বলেন, ‘সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি সম্ভবত সামান্য পাতলা হয়ে গেছে এবং কিছুটা অতিরিক্ত প্লবতা পেয়েছে, যা এটিকে সমুদ্রের তল থেকে মুক্ত হতে এবং সমুদ্রের স্রোতের ধাক্কায় চলা শুরুর সুযোগ করে দিয়েছে।’ 

মৃদু বাতাসের সঙ্গে আসা তাপমাত্রার কারণে এই আইসবার্গের পৃষ্ঠের বরফ আস্তে আস্তে গলতে শুরু করবে এবং একপর্যায়ে পুকুর বা হ্রদের মতো কাঠামো তৈরি করবে, যা আইসবার্গের মধ্য দিয়ে পানির চুঁইয়ে পড়ার পথ বা ফাটল তৈরি করতে পারে। গুহা ও খিলান আকৃতির বরফের কথা উল্লেখ করে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এগুলো খুব শিগগিরই ধসে পড়বে। কারণ পানির নিচে আইসবার্গে যে অংশ এই কাঠামোগুলো টিকিয়ে রেখেছে তা শিগগিরই নিঃশেষ হয়ে যাবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত