কৃষিজমিতে লবণ প্রয়োগ হুমকির মুখে চাষাবাদ

মিজান মাহী, দুর্গাপুর
প্রকাশ : ০২ মার্চ ২০২২, ০৬: ৩৩
আপডেট : ০২ মার্চ ২০২২, ১২: ৪১

দুর্গাপুর উপজেলায় এখন আলু ও পেঁয়াজের ভরা মৌসুম। এ দুই ফসল পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। কৃষি খাত আধুনিকায়নের ফলে কয়েক বছর ধরে এ অঞ্চলে কৃষিজমিগুলোতে আবাদ বেড়েছে দ্বিগুণ। এক যুগ আগের তুলনায় এখন ফসল উৎপাদনও বেড়েছে। তবে জৈব সারসংকটে অধিক ফলনের আশায় এই অঞ্চলের চাষিরা উর্বর কৃষিজমিগুলোতে অধিক পরিমাণে লবণ প্রয়োগ করছেন। এতে উৎপাদন সাময়িক বাড়লেও এই অঞ্চলের উর্বর জমিগুলো ধীরে ধীরে লবণাক্ত হয়ে পড়ায় উল্টো ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষিবিদরা।

সরেজমিন দেখা গেছে, চলতি মৌসুমে চাষিরা অধিক ফলনের আশায় আলু ও পেঁয়াজের জমিতে ব্যাপক হারে লবণ প্রয়োগ করছেন। কেউ সারের সঙ্গে, কেউ আবার জমি সেচ দেওয়ার আগে লবণ ছিটিয়ে জমিতে পানি দিচ্ছেন। ফলে এসব উর্বর ফসলি জমিগুলো ধীরে ধীরে লবণাক্ততায় জীবনীশক্তি হারাবে। লবণের ব্যবহারের ফলে জমিতে ধীরে ধীরে সেচ ধারণক্ষমতাও কমে যাচ্ছে বলে জানালেন খোদ চাষিরাই।

জানা গেছে, উপজেলার দাওকান্দি, হাটকানপাড়া, জয়নগর, উজানখলসী, হরিরামপুর, দেবীপুর, রাতুগ্রাম, নান্দিগ্রাম, ধরমপুর, শানপুকুরিয়া, বেলঘরিয়া, শ্রীধরপুর, বখতিয়ারপুর, আমগ্রাম, শ্রীপুরসহ বিভিন্ন এলাকার জমিগুলোতে মাঠজুড়ে প্রচুর পরিমাণ আলু ও পেঁয়াজসহ অন্যান্য ফসলের আবাদ হয়ে থাকে। চাষিরা জমিতে জৈব সার ব্যবহার করেন না। জৈব সারসংকটে চাষিরা শুধু রাসায়নিক সার ব্যবহার করে বছরের পর বছর আলু-পেয়াঁজসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করে আসছেন। জৈব সার ব্যবহার না করে অতিরিক্ত মাত্রায় রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে ফসলের উৎপাদন কমে গেছে। ফলে এলাকায় চাষিরা অধিক ফলনের আশায় উর্বর জমিগুলোতে লবণ প্রয়োগ করছেন।

জমিতে লবণ ব্যবহারকারী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, আলু ও পেঁয়াজ চাষে প্রচুর টাকা খরচ হয়। তারপরও আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায় না। কিন্তু জমিগুলোতে লবণ প্রয়োগ করলে উল্টো ফল দেয়। আলু ও পেঁয়াজ চাষে প্রথমে লবণ ব্যবহার করলে গাছ খুব তরতাজা দেখায়, আবার ফলনও ভালো হয়।

কৃষিবিদদের মতে, লবণ প্রয়োগ করা হলে দুই থেকে তিন বছর ফসলের উৎপাদন ভালো হলেও ভবিষ্যতে জমিতে অতিরিক্ত লবণাক্ততা দেখা দেয়। তখন উৎপাদন বিপর্যয় ঘটে।

ধরমপুর মহাবিদ্যালয়ের কৃষিবিষয়ক প্রভাষক ও কৃষিবিদ দুর্গাদাস প্রামাণিক বলেন, রাজশাহী অঞ্চলের জমি অত্যন্ত উর্বর। এখনকার চাষিরা সংকট বা যেকোনো কারণেই হোক বছরের পর বছর জৈব সার ব্যবহার করেন না। অতিরিক্ত মাত্রায় রাসায়নিক সার ব্যবহার করেন। ফলে উর্বর জমিগুলো ক্রমান্বয়ে দুর্বল পড়ছে। তখন চাষিরা না বুঝে ভালো উৎপাদনের আশায় ক্ষতিকর লবণ প্রয়োগ শুরু করেছেন। চাষিরা এখনই সচেতন না হলে পরিবেশ ও কৃষি খাতে ভবিষ্যতে বিপর্যয় ঘটতে পারে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজিয়া সুলতানা বলেন, ‘শুধু এ উপজেলা নয়, পুরো রাজশাহী অঞ্চলের মাটি খুবই উর্বর। চাষিরা যদি ভুলক্রমে লবণের ব্যবহার করেন, তাহলে তা খুবই দুঃখজনক। লবণ প্রয়োগে জমিতে কোনো উপকার নেই। লবণের ব্যবহারের ফলে জমির প্রাণ নষ্ট হয়ে যায়। জমি ধীরে ধীরে লবণাক্ত হয়ে পড়ে। আর জমিগুলো লবণাক্ত হয়ে পড়লে তা পরিবেশ ও আগামী প্রজন্মের জন্য হুমকিস্বরূপ।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, জমিতে চাষিরা যদি লবণ প্রয়োগ করেন, তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই সঙ্গে জমিতে অধিক হারে জৈব সার ব্যবহার করার জন্য চাষিদের তাগিদ দেন তিনি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত