অর্ধকোটি টাকার চাঁদাবাজি

অরূপ রায়, সাভার থেকে
প্রকাশ : ১৮ ডিসেম্বর ২০২১, ০৪: ৫৮
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১০: ২২

ঢাকার সাভারের হেমায়েতপুর থেকে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর হয়ে সদর উপজেলার বেউথা পর্যন্ত চলে ৩৫০টি অটোরিকশা। নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য এসব যানবাহনের মালিক ও চালককে প্রতি মাসে ১৪ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হয়। শ্রমিকদের কল্যাণ ও পুলিশের কথা বলে এই চাঁদা আদায় করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

শুধু হেমায়েতপুর-মানিকগঞ্জ সড়কেই নয়, হেমায়েতপুর থেকে নবাবগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ ও দোহারের মধ্যে চলাচলকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ইজিবাইকসহ পণ্যবাহী ট্রাক থেকে একইভাবে চাঁদা আদায় করা হয়। সব পথ মিলিয়ে মাসে চাঁদা আদায় করা হয় ৫৬ লাখ টাকার বেশি।

পরিবহনমালিক ও চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিঙ্গাইর ও হেমায়েতপুরে প্রতিদিন ৬০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়। এ ছাড়া পুলিশের কথা বলে প্রতিটি অটোরিকশা থেকে সিঙ্গাইরে প্রতি মাসে ১০০ টাকা এবং হেমায়েতপুরে প্রতি মাসে ৩৫০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়। এই হিসাব অনুযায়ী হেমায়েতপুর-মানিকগঞ্জ সড়কে ৩৫০টি অটোরিকশা থেকে প্রতি মাসে ১৪ লাখ ১৭ হাজার ৫০০ টাকা চাঁদা আদায় হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হেমায়েতপুর-মানিকগঞ্জ সড়কে সিঙ্গাইর থেকে চাঁদা আদায় করেন নজর আলী নামের এক ব্যক্তি ও তাঁর লোকজন। হেমায়েতপুর চাঁদা আদায় করেন ইমন শেখ ও তাঁর লোকজন।

হেমায়েতপুর-নবাবগঞ্জ সড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলে ৫০টি। এসব অটোরিকশা থেকে হেমায়েতপুরে প্রতিদিন ১০০ টাকা এবং নবাবগঞ্জে ১০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়। এ ছাড়া পুলিশের কথা বলে প্রতি মাসে প্রতিটি অটোরিকশা থেকে আদায় করা হয় ৩৫০ টাকা। এভাবে প্রতি মাসে আদায় করা চাঁদার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ লাখ ১৭ হাজার ৫০০ টাকা। আজিবর নামে এক ব্যক্তি ও তাঁর সহযোগীরা হেমায়েতপুরে এসব অটোরিকশা থেকে চাঁদা আদায় করেন।

হেমায়েতপুর-কলাতিয়া (কেরানীগঞ্জ) সড়কে প্রতিটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে প্রতিদিন হেমায়েতপুরে নেওয়া হয় ৫০ টাকা এবং কলাতিয়াতে নেওয়া হয় আরও ৫০ টাকা। পুলিশের কথা বলে প্রতিটি অটোরিকশা থেকে মাসে আরও ৩৫০ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। এই হিসাব অনুযায়ী এই সড়কে প্রতি মাসে আদায়কৃত চাঁদার পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৬৭ হাজার ৫০০ টাকা। শাহীন নামের এক ব্যক্তি ও তাঁর সহযোগীরা হেমায়েতপুরে এই সড়কে চলাচলকারী অটোরিকশা থেকে চাঁদা আদায় করেন।

হেমায়েতপুর হয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন কারখানার কয়েক শ পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করে। হেমায়েতপুর বাঘবাড়ী চৌরাস্তায় এসব ট্রাক থেকে ৫০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়। প্রতিদিন এখান থেকে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা চাঁদা আদায় হয়। এভাবে প্রতি মাসে ট্রাক থেকে গড়ে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় হয়। বাংলাদেশ আন্তজেলা ট্রাকচালক ইউনিয়নের কথা বলে আফাজ উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি এই চাঁদা আদায় করে থাকেন।

এ ছাড়া হেমায়েতপুর ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকার মধ্যে চলাচলকারী প্রায় ২ হাজার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলে। এসব অটোরিকশা থেকে প্রতিদিন ৬০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয় বলে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। এই হিসাব অনুযায়ী ২ হাজার অটোরিকশা থেকে প্রতি মাসে চাঁদা আদায় হয় ৩৬ লাখ টাকা।

গত বৃহস্পতিবার হেমায়েতপুর ও সিঙ্গাইরে গিয়ে কতিপয় ব্যক্তিকে বিভিন্ন যানবাহন থেকে চাঁদা নিতে দেখা যায়। তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তাঁরা কথা না বলে দ্রুত সটকে পড়েন।

সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘চাঁদাবাজেরা স্ট্যান্ডের আশপাশেই ঘাপটি মেরে থাকে। যেকোনো সময় এসে তারা চাঁদা নিয়ে যায়। একেক দিন একেকজন এসে চাঁদা নেয়। তাদের সবাইকে আমরা চিনি না।’

চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় না নিয়ে নীরবে চাঁদা দেওয়ার কারণ হিসেবে কয়েকজন চালক বলেন, সিএনজিচালিত অটোরিকশার কাগজ থাকলেও ট্যাক্সের টাকা বাঁচাতে তা নবায়ন করা হয় না। এ ছাড়া অনেক গাড়ির কোনো কাগজই নেই। তাই চাঁদা দিয়ে ঝামেলামুক্ত থাকেন তাঁরা।

বাংলাদেশ আন্তজেলা ট্রাকচালক ইউনিয়নের হেমায়েতপুর শাখার সভাপতি ইমান আলী বলেন, শ্রমিকদের কল্যাণের জন্য প্রতিটি পণ্যবাহী ট্রাক থেকে ৫০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়। এই টাকা অসহায় শ্রমিকদের সহায়তায় ব্যয় করা হয়।

হেমায়েতপুর চামড়াশিল্প নগর পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এর আগে অভিযান চালিয়ে চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বর্তমানে চাঁদা আদায় হচ্ছে কি না, তা জানা নেই।’

ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, ‘এ রকম অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত