নোংরা পরিবেশে তৈরি খাবারে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

হারুনুর রশিদ, রায়পুরা
প্রকাশ : ৩০ ডিসেম্বর ২০২১, ০৪: ৩০
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২১, ১২: ৩৪

নরসিংদীর রায়পুরায় বিভিন্ন বেকারিতে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে তৈরি খাবার খোলা বাজারে দেদার বিক্রি হচ্ছে। না জেনেই এ সব অস্বাস্থ্যকর খাবার কিনছেন ক্রেতারা। স্থানীয় সচেতন নাগরিকেরা বলছেন, স্থানীয় বেকারিগুলোতে তৈরি পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সেই সঙ্গে খোলা বাজার থেকে খাদ্যদ্রব্য কেনার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের সতর্ক থাকা দরকার।

উপজেলার বেশ কয়েকটি বেকারিতে সরেজমিনে দেখা যায়, অধিকাংশ বেকারির মেঝে পাকা করা নেই। বেশির ভাগ কারখানায় কর্মচারীরা হাতে গ্লাভস পরা ছাড়াই ময়দা পিষছেন। অনেককে দেখা যায়, খালি গায়ে আটা-ময়দার স্তূপে দাঁড়িয়ে ময়দা মাখতে। কারও শরীর থেকে ঘাম ঝরছে। কেউ এক হাতে সিগারেট ফুঁকছেন, অন্য হাত দিয়ে কাজ করছেন। খোলা তেলভর্তি ড্রামের ওপর দেখা যায়, মাছি ভনভন করছে। অধিকাংশ কারাখানায় দেখা যায় যেখানে-সেখানে ইঁদুর ও তেলাপোকার বিষ্ঠা ছড়িয়ে আছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এ সব পণ্যই বাহারি মোড়কে বাজারজাত করা হচ্ছে। পণ্যের প্যাকেটে বিএসটিআই সিল ও লাইসেন্স নম্বর দেওয়া থাকলেও, অধিকাংশ বেকারিতে এগুলোর প্রমাণপত্র নেই।

এ সব পণ্য উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খোলা বাজারে খুচরা ও পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। গতকাল বুধবার উপজেলার শ্রীরামপুর বাজারে গেলে দেখা যায়, বিভিন্ন দোকানে বিক্রি হচ্ছে খোলা বিস্কুট, সেমাইসহ নানা বেকারি পণ্য। প্রতিটি দোকানে রয়েছে ক্রেতাদের ভিড়।

এ সময় কথা কয়েকজন ক্রেতা ও বিক্রেতার সঙ্গে। অধিকাংশ ক্রেতাই জানেন না কেমন পরিবেশে তৈরি খাবার কিনছেন। বিক্রেতারা বলছেন, তাঁরা বেকারি থেকে কিনছেন ঠিকই, কিন্তু তাঁরাও জানেন না এসব খাবার মানবদেহের জন্য কতটুকু ক্ষতিকর।

জামাল উদ্দিন নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘আমরা তো এত কিছু জানি না। সস্তায় বিস্কুট ও চানাচুর পাওয়া যায়। তাই কিনি।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ক্রেতা বলেন, উপজেলার অধিকাংশ বেকারির নেই ট্রেড লাইসেন্স, বিএসটিআইয়ের অনুমোদন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠছে বেকারিগুলো। এতে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে তৈরি খাবার যেমন জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে, তেমনি সরকারও হারাচ্ছে রাজস্ব। এ সব নিয়ন্ত্রণের জন্য ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও বিএসটিআই বা প্রশাসনের তেমন উদ্যোগ চোখে পড়ে না।

এ সব খাবারের মান ও অনুমোদনের বিষয়ে জানতে চাইলে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিক্রেতা বলেন, ‘আমরা পাইকারি দরে কিনে আনি বেকারি থেকে। কিন্তু বেকারিতে কেমনে বানায় তা তো আমরা জানি না।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবু সাঈদ মুহাম্মাদ ফারুক বলেন, ‘অস্বাস্থ্যকর খাবার সাধারণ মানুষ না জেনেই খাচ্ছে। এ সব খাবার খেয়ে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। নিয়মিত মনিটরিং করা হলেও আমাদের সবার সচেতন হওয়া দরকার।’

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আজগর হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনো লিখিত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ‘আমি সম্প্রতি এখানে কাজে যোগ দিয়েছি। দ্রুত বিষয়গুলো খতিয়ে দেখব। পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালাব।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত