মাস ছয়েকের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। এমন সময়ে বৈষম্যমুক্ত পে স্কেল ঘোষণা, টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহালের দাবিসহ বিভিন্ন দাবিতে রাজপথে নামতে যাচ্ছে এক ডজনের বেশি কর্মচারী সংগঠন। বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা অনুযায়ী ১০ ধাপে বেতন-ভাতা নির্ধারণ, সব দপ্তর ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের পদ-পদবি সচিবালয়ের মতো করা, অভিন্ন নিয়োগবিধি প্রণয়নসহ ৭ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে ১২ সংগঠনের (আগের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি) সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদ। আগামীকাল রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই মহাসমাবেশ হবে। সংগঠনগুলোর নেতারা বলছেন, সরকারি নিয়ম মেনেই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তাঁরা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা বৈষম্যের শিকার। ১৯ বছর চাকরি করছি। ৮ বছরে একটি উচ্চতর গ্রেড পেয়েছি। কর্মকর্তারা কিন্তু নবম গ্রেডে যোগদান করে সচিব পর্যন্ত হচ্ছেন। তাঁরা ১০টা পর্যন্ত পদোন্নতি পাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধু ১০ ধাপে বেতন স্কেল নির্ধারণ করেছিলেন। সেটা মানা হয়নি। এ বৈষম্য দীর্ঘদিনের। নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন জ্বলছে। পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাই টাইম স্কেল, সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহালসহ ৭ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে ২৬ মে (আগামীকাল) শহীদ মিনারে মহাসমাবেশ ডেকেছি। সরকারি কর্মচারী হয়ে সরকারের শৃঙ্খলা মেনেই দাবি আদায়ে কর্মসূচি চালিয়ে যাব।’
বাড়তে পারে ইনক্রিমেন্ট-ভাতা
তবে এ মুহূর্তে সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন পে স্কেল বা মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীও বলেছেন, নতুন পে স্কেল নয়, চিকিৎসা, শিক্ষা ও টিফিন ভাতা গ্রেড অনুসারে বাড়তে পারে। সর্বশেষ ১৫ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার পরিকল্পনা নেই। তবে বেতন বাড়ানো হবে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা যায়, মূল্যস্ফীতি বেশি হওয়ায় ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের স্থলে ১৫ শতাংশ কিংবা মূল্যস্ফীতির হার অনুসারে ভাতা যোগ করার বিধান যোগ হতে পারে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানান, গ্রেড অনুযায়ী চিকিৎসা ভাতা ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা, শিক্ষা ভাতা এক সন্তানের জন্য ৫০০ টাকা এবং দুই সন্তানের জন্য ১ হাজার টাকা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা এবং টিফিন ভাতা গ্রেড অনুসারে ২০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি চাকরিজীবীর সংখ্যা ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭। তবে সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারী, এমপিওভুক্ত শিক্ষকসহ এ সংখ্যা প্রায় ২২ লাখ। ২০১৫ সালে সরকারি কর্মচারীদের জন্য সর্বশেষ জাতীয় বেতনকাঠামো ঘোষণা করে সরকার। তুলে দেওয়া হয় টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড। এরপর প্রতিবছরের জুলাই মাসে ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট পাচ্ছেন সরকারি চাকুরেরা।
আরও যত দাবি
স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে গ্র্যাচুইটির পরিবর্তে পেনশন প্রবর্তনসহ বিদ্যমান গ্র্যাচুইটির হার ৯০ শতাংশের পরিবর্তে শতভাগ ও পেনশন গ্র্যাচুইটি ১ টাকা থেকে ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা; সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের ক্ষেত্রে আপিল বিভাগের রায় বাস্তবায়নসহ সহকারী শিক্ষকদের বেতন দশম গ্রেডে উন্নীত করা; আউটসোর্সিং পদ্ধতি বাতিল করে ওই পদ্ধতিতে নিয়োগপ্রাপ্ত ও উন্নয়ন খাতের কর্মচারীদের রাজস্ব খাতে নেওয়া; ব্লক পোস্টে কর্মরত কর্মচারীসহ সব পদের কর্মচারীদের পদোন্নতি বা ৫ বছর পরপর উচ্চতর গ্রেড দেওয়া; টেকনিক্যাল কাজে নিয়োজিত কর্মচারীদের টেকনিক্যাল পদমর্যাদা দেওয়া; জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে সমন্বয় করে সব ভাতা পুনর্নির্ধারণসহ চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর এবং অবসরের বয়সসীমা ৬২ বছর করা।
বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া মিলন বলেন, টাইম স্কেল, সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহালসহ ৭ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুখ্য সচিব ও জনপ্রশাসনসচিবকে একাধিকবার স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সাড়া মিলছে না।
এদিকে সচিবালয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতি বিভিন্ন বাহিনীর মতো রেশন সুবিধা চেয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি দিয়েছে। সমিতির সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামাল জানান, সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে আর্থিক সুবিধার বৈষম্য দূর করতে ন্যায্যমূল্যে রেশন সুবিধা প্রদানসহ টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহাল করতে হবে।