ডিজিটাল ঋণ ও সঞ্চয়ে আগ্রহ বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৮ মে ২০২২, ১৮: ৩১
Thumbnail image

মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) দিন দিনই ঋণ ও সঞ্চয়ে আগ্রহ বাড়ছে। গ্রাহকেরা ডিজিটাল পদ্ধতিতে ঋণ নিচ্ছেন, কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করছেন। এর পাশাপাশি সঞ্চয়ের অর্থও জমা রাখছেন। পুরো প্রক্রিয়াটি ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন হওয়ায় ঋণগ্রহীতা ও দাতার কোনো শারীরিক উপস্থিতির দরকার পড়ে না। তাই ডিজিটাল ঋণের চাহিদাও বাড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র জানায়, গত বছরের ডিসেম্বরে বিকাশের ১৫ হাজার গ্রাহকের মধ্যে প্রায় ৫ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল। পুরো ঋণের অর্থ সিটি ব্যাংক সরবরাহ করেছিল। জানুয়ারিতে এসে এ সেবার আওতায় ৪৫ হাজার বিকাশ গ্রাহকের কাছে প্রায় ৭ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়। পরের মাস ফেব্রুয়ারিতে ৮০ হাজার গ্রাহকের মাঝে বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি টাকা। একইভাবে ঋণের পাশাপাশি সঞ্চয়ী আমানত সেবাও চালু করেছে বিকাশ। আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসির সঙ্গে যুক্ত হয়ে এ সেবা চালু করা হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে এ সেবার আওতায় ৯০ হাজার গ্রাহক প্রায় ১৪ কোটি টাকা সঞ্চয় করেছেন। এসব গ্রাহকের মধ্যে ৬৪ শতাংশ ভবিষ্যতের প্রয়োজনে, ২৫ শতাংশ আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে, ৬ শতাংশ সঞ্চয় শিক্ষা খরচ মেটাতে এবং বাকি ৫ শতাংশ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে সঞ্চয় করছেন।

এমএফএস মাধ্যমে ঋণের বিষয়ে সিটি ব্যাংকের এমডি ও সিইও মাসরুর আরেফিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আফ্রিকার দেশ কেনিয়া, তানজানিয়া ও নাইজেরিয়াতে এই সেবাটি আগে থেকে চালু ছিল। এ সেবার আওতায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ গতানুগতিক ঋণের তুলনায় কম। আমরা গত ডিসেম্বরে সেবাটি চালু করেছি। ঋণের ক্ষেত্রে প্রতিদিনই সুদের হিসাব হচ্ছে। একজন ঋণগ্রহীতা মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন এবং এ ক্ষেত্রে যত দিন পর্যন্ত ঋণটি অপরিশোধিত ছিল, ঠিক ওই সময়ের জন্যই কেবল সুদ প্রযোজ্য।’

মাসরুর আরেফিন আরও বলেন, ‘সিটি ব্যাংক ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে কোনো প্রসেসিং ফি নেয় না। তবে পরবর্তী সময়ে গ্রাহকের ঋণের বিপরীতে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ প্রসেসিং ফি হতে পারে। আর ঝামেলা না থাকায় গ্রাহকদের এবং খেলাপির হার কম হওয়ায় ব্যাংকের আগ্রহ বাড়ছে।’

জানা গেছে, এমএফএসভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রাহকেরা অ্যাপসের মাধ্যমে সিটি ব্যাংকের তিন মাস মেয়াদি ঋণ নিচ্ছেন ও আইডিএলসির আমানত সেবার আওতায় বিভিন্ন মেয়াদি সঞ্চয় করছেন। এ ক্ষেত্রে ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ ও আমানতের সুদহার সরকার-নির্ধারিত ৬ শতাংশ। বিকাশের মতো অন্যান্য এমএফএস সেবাকে জনপ্রিয় করতে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস বিধিমালা ২০২২ জারি করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দেশে ১৩টি এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শুধু বিকাশ ডিজিটাল ঋণ ও সঞ্চয় সেবায় যুক্ত হয়েছে। আর নগদের অনুমোদন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এ ছাড়া অন্য তিনটি প্রতিষ্ঠান সেবা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগে আবেদন করেছে। এমএফএসের মাধ্যমে ডিজিটাল ঋণ বৃদ্ধি পাওয়ার নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, বিকাশ গ্রাহকেরা নির্দিষ্ট অ্যাপের মাধ্যমেই প্রথম দিকে ৫০০ থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ নেওয়ার সুযোগ পেত। ঋণের আবেদন করার পরপরই তারা অর্থ পেতেন। পরে তারা তিনটি সমপরিমাণ মাসিক কিস্তিতে এই ঋণ পরিশোধ করত। এ ক্ষেত্রে সুদের হার বছরে ৯ শতাংশ। একইভাবে গ্রাহকেরা মাসিক ভিত্তিতে সঞ্চয় করতে পারত। সে ক্ষেত্রে ঋণের সুদের হার ৬ শতাংশ। তবে সম্প্রতি জারি করা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ঋণের সীমা ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশে বর্তমানে ১৩টি প্রতিষ্ঠান এমএফএস সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের অধীন মোট হিসাবের সংখ্যা ১১ কোটি ৬১ লাখ ৩৭ হাজার ৮০৪টি। প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ৬৮ হাজার ১৬২ কোটি ৮০ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে সুবিধা দিতে বদ্ধপরিকর বাংলাদেশ ব্যাংক। তারই অংশ হিসেবে এমএফএসের মাধ্যমে ডিজিটাল ঋণ ও সঞ্চয় পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। ব্যাংক ও এমএফএসের মধ্যে আন্তলেনদেন সেবার কল্যাণে অনেক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। বিকাশ ও নগদের মতো বিশাল গ্রাহকের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এ সুযোগকে আরও বেশি কাজে লাগাতে পারে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক নীতিগত সুবিধা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সহায়তা দিতে প্রস্তুত। যাতে প্রান্তিক পর্যায়ের গ্রাহকের কাছে সহজে ঋণসুবিধা পৌঁছানো সম্ভব হয়। আর ডিজিটাল ঋণে লাভবান হবে ব্যাংক ও গ্রাহক উভয়ই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত