আজকের পত্রিকা: এবার বর্ষাকালে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব কেমন হতে পারে?
কবিরুল বাশার: আমরা ঢাকার বিভিন্ন এলাকার এডিস মশা নিয়ে গবেষণা করছি। শুধু ঢাকা নয়, এর বাইরেও আমরা কাজ করছি। যেমন চট্টগ্রাম, বরিশাল, বরগুনা, কক্সবাজার, গাজীপুর, চাঁদপুর, নরসিংদী ও মানিকগঞ্জ। শুধু ঢাকা নয়, বাইরেও এডিস মশার ঘনত্ব বাড়ছে। মাঠপর্যায়ে ডেঙ্গুর বাহক মশার যে ঘনত্ব পাচ্ছি, অন্যান্য বছরের তুলনায় তা বেশি। অন্যদিকে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। এ বছর ডেঙ্গু রোগীর ও এডিস মশা বাড়ার সংখ্যা গতবারের তুলনায় বেশি।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল ২০২৩ সালে। সরকারি হিসাবে, এক বছরে ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। ২০০০ সালে বাংলাদেশে ডেঙ্গু শুরু হওয়ার পর থেকে এটাই সর্বোচ্চ আক্রান্ত। কিন্তু ২০২৪ সালে এসে সেই সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। আমরা বৃষ্টিপাত, আর্দ্রতা, তাপমাত্রা, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা এবং এডিস মশার ঘনত্ব—এ কয়েকটি প্যারামিটার দিয়ে মাল্টিভেরিয়েন্ট অ্যানালাইসিস করে যে ফোর কাস্টিং মডেল তৈরি করি, তাতে দেখা যাচ্ছে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এ বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হবে।
আজকের পত্রিকা: একসময় ডেঙ্গু পরিস্থিতি শুধু ঢাকা শহরেই সীমাবদ্ধ ছিল। এখন সেটা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ার কারণ কী?
কবিরুল বাশার: এখন গ্রামগুলো আর সেই অর্থে গ্রাম নেই। সব গ্রামই কম-বেশি নগরায়ণ হয়েছে। যখনই অপরিকল্পিত নগরায়ণ হয় এবং নিরবচ্ছিন্ন পানির সরবরাহ না থাকে, তখন মানুষ বালতিসহ বিভিন্ন জায়গায় পানি জমিয়ে রাখে আর এই জমানো পানিতে এডিস মশার প্রজনন হয়। এডিস মশা এক শহর থেকে আরেক শহর বা গ্রামে বাস, স্টিমারসহ বিভিন্ন যানবাহনের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। আর সেই জায়গায় যদি তারা প্রজননের পাত্র পায়, তাহলে এর বংশ বৃদ্ধি হতে থাকে।
আজকের পত্রিকা: দুই যুগের বেশি সময় ধরে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কোনো কাজ করা হয়নি কেন?
কবিরুল বাশার: আসলে ২০০০ সাল থেকে ডেঙ্গুর ভয়াবহ সংক্রমণ শুরু হলেও সেই সময় একে নিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণাটা পর্যাপ্ত ছিল না। এখন গবেষণা হচ্ছে। গবেষণালব্ধ ফলাফল যদি সঠিকভাবে ব্যবহার ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আমি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের একটা কেবি মডেল প্রস্তাব করেছি। এই মডেল নিয়ে দেশের বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ ও ফিচার প্রকাশিত হয়েছে। এই মডেল যদি বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
আজকের পত্রিকা: আপনার প্রস্তাবিত মডেলের বিষয়ে জানতে চাই।
কবিরুল বাশার: পদ্ধতিটা যদি আমি সংক্ষিপ্তভাবে ব্যাখ্যা করি তাহলে দাঁড়ায়, একজন স্বাস্থ্যকর্মী বা একজন কীটতত্ত্ববিদ যিনি মশা সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন, তিনি কিছু কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেবেন। উদাহরণস্বরূপ, একজন কর্মীর অধীনে ১ হাজার বাড়ি থাকবে। তিনি নিয়মিত সেসব ভিজিট করবেন। সেই বাড়িতে যদি এডিস মশা পাওয়া যায়, সেই মশার পাত্রগুলো ধ্বংস করবেন। যে পাত্রগুলো ধ্বংস করা যাবে না, সেগুলোয় কীটনাশক প্রয়োগ করবেন। এটি তিনি নিয়মিত, মানে ১৫ দিন অন্তর করবেন। তিনি প্রতি বাড়ি ভিজিট করবেন এবং এই ভিজিট রেকর্ড সিটি করপোরেশন বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবেন। এভাবে আমরা যদি কোনো পুরো শহরে কাজ করতে পারি, তাহলে এডিস মশা নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে থাকবে। কোনো বাড়িতে ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেলে সেই বাড়িকে কেন্দ্র করে ক্রাশ প্রোগ্রাম করে উড়ন্ত মশা মেরে দেবেন, যাতে সেই বাড়ির মশা নতুনভাবে আক্রমণ করতে না পারে। মডেলটি বিস্তারিত জানতে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কবিরুল বাশারের প্রস্তাবিত মডেল দিয়ে গুগলে সার্চ করতে পারেন।
আজকের পত্রিকা: সিটি করপোরেশনের ব্যবহৃত কীটনাশক কতটা কার্যকর?
কবিরুল বাশার: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন যে তিনটি কীটনাশক ব্যবহার করে, যেমন মেলাথিয়ন, টেমিফস ও নোভালিওরন—আমি এগুলো পরীক্ষা করে দেখেছি, এ তিনটি কীটনাশকই মশা মারার জন্য কার্যকরী। সেগুলো ল্যাবরেটরি পর্যায়ে কার্যকরী। তবে যে ফগিং বা ধোঁয়া দেওয়া হয়, সেটির ল্যাবরেটরি পর্যায়ে কার্যকারিতা থাকলেও মাঠপর্যায়ে নানা সীমাবদ্ধতার কারণে কার্যকারিতা কম।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, যদি কীটনাশক কার্যকর হয়, তাহলে মশা নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না কেন? এ প্রশ্নের উত্তর হলো, আপনার অস্ত্র যত ভালো থাকুক, যদি অস্ত্রটির ব্যবহার সঠিক সময়, সঠিক জায়গায় এবং সঠিক মাত্রায় না করা হয়, তাহলে সেটি ফলাফল না-ও দিতে পারে। এখন অস্ত্রটি সঠিক সময়, সঠিক জায়গায় এবং সঠিক মাত্রায় ব্যবহার হয়েছে কি না, সেটির মনিটরিং ও ইভাল্যুয়েশন হওয়া দরকার। তার রিপোর্টও থাকা দরকার। একটি প্রোগ্রামের মূল্যায়ন প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে সেই প্রোগ্রামটি নতুন করে সাজাতে হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। মূল্যায়ন প্রতিবেদন নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজন হলে মশা নিয়ন্ত্রণে নতুন কৌশল প্রণয়ন করা যেতে পারে।
আজকের পত্রিকা: কলকাতার তাপমাত্রা, জনসংখ্যা, অবকাঠামো অনেকটা ঢাকার কাছাকাছি। তারা ডেঙ্গু মোকাবিলায় সফলতা দেখাতে পারলেও আমরা পারছি না কেন?
কবিরুল বাশার: কলকাতায় আমি বেশ কয়েকবার গিয়েছি। সেখানকার মশা নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে জড়িত অফিসার ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। কলকাতার যিনি কীটতত্ত্ববিদ, তাঁর সঙ্গেও দেখা হয়েছে। তাঁরা কিন্তু উড়ন্ত মশা মারার জন্য ফগিং করে না। সিটি করপোরেশনের কর্মীরা প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে সেই বাড়ির এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করেন। প্রতিটি বাড়িতে তাঁরা ১৫ দিন পর পর ভিজিট করেন। সেসব বাড়ির প্রজননস্থল ধ্বংস এবং সেখানে কোনো ডেঙ্গু রোগী থাকলে তার খোঁজখবর রাখেন, চিকিৎসা এবং হটস্পট ম্যানেজমেন্ট করেন। এ কাজটি তাঁরা পাঁচ বছর ধরে করছেন। মশার লার্ভা নিয়ন্ত্রণের জন্য বিটিআই ব্যবহার করেন। এ জন্য আমাদের দেশের মতো আবহাওয়া হওয়ার কারণে তারা ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে থাকার পরেও সফল। একইভাবে সিঙ্গাপুরও এতে সফলতা দেখাতে পেরেছে।
আমি যে মডেলটি দিয়েছি, সেখানে সবকিছু বিস্তারিতভাবে দেওয়া আছে। কলকাতার মডেলেরও কিছুটা ছাপ এখানে আছে। এ মডেলটি বাস্তবায়ন করলে আমরাও সফল হতে পারি।
আজকের পত্রিকা: গত বছর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। আপনি কী বলবেন?
কবিরুল বাশার: সরকারের কোনো উদ্যোগ ছিল না—ব্যাপারটি সে রকম নয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় অনেকগুলো মিটিং করেছিল। সেই সব মিটিংয়ে আমার উপস্থিত থাকার সুযোগ হয়েছিল। দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী এবং দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রদের এ বিষয়ে যথেষ্ট সক্রিয় থাকতে দেখেছি। তাঁরা সক্রিয় আছেন, কিন্তু এই সক্রিয়তা মাঠপর্যায়ে কতটা বাস্তবায়ন হচ্ছে, সেটা আসলে দেখা দরকার। যদি এই প্রোগ্রামকে যথাযথভাবে মনিটরিং করা যায়, তাহলে আমরা ভবিষ্যতে মশা নিয়ন্ত্রণে সফলতা অর্জন করতে পারব।
আজকের পত্রিকা: সাধারণ জনগণের করণীয় কী?
কবিরুল বাশার: ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে জনগণের ভূমিকা অপরিসীম। আমরা যখন মাঠপর্যায়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও গবেষণায় যাই, তখন দেখতে পাই ঢাকার অভিজাত এলাকার ভবনের বেসমেন্টে গাড়ি রাখার জায়গায় এডিস মশার ঘনত্ব অনেক। বাড়িতে টায়ার, ভাঙা কমোড, বিভিন্ন পাত্র ফেলে রাখলে সেখানে এডিস মশা পাচ্ছি। কুকুরের খাবারের সঙ্গে একটা পানির পাত্র রাখা হলে সেখানেও আমরা এডিস মশা পেয়েছি। এসব জিনিস কিন্তু আমাদের বাড়ি বা এর আশপাশে থাকে। তাই বাড়ি বা এর আশপাশে কোনো পাত্রে যেন পানি জমা না থাকে।
যদি এমন কোনো পাত্র থাকে, তাহলে সেটি উল্টে রাখতে হবে, যাতে সেখানে পানি জমে এডিস মশার প্রজনন না হতে পারে। কয়েল ও অ্যারোসলের মতো মশার লার্ভা নিধনে ব্যবহৃত ‘রেডি ফর ইউজ’ কীটনাশক সাধারণ জনগণের ক্রয়সীমার মধ্যে আনা দরকার। তাহলে তারা নিজেরাই কিনে এগুলো প্রয়োগ করতে পারবে।এভাবে যদি প্রতিটি বাড়ির মালিক নিশ্চিত করেন, তাহলে অর্ধেকের বেশি এডিস মশা কমে যাবে। নাগরিকদের পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে রাস্তাঘাট, উন্মুক্ত স্থাপনা, সরকারি-বেসরকারি অফিস এলাকায় মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, তাহলে সম্মিলিতভাবে মশা নিয়ন্ত্রণ করা কোনো অসম্ভব ব্যাপার নয়।
আজকের পত্রিকা: এবার বর্ষাকালে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব কেমন হতে পারে?
কবিরুল বাশার: আমরা ঢাকার বিভিন্ন এলাকার এডিস মশা নিয়ে গবেষণা করছি। শুধু ঢাকা নয়, এর বাইরেও আমরা কাজ করছি। যেমন চট্টগ্রাম, বরিশাল, বরগুনা, কক্সবাজার, গাজীপুর, চাঁদপুর, নরসিংদী ও মানিকগঞ্জ। শুধু ঢাকা নয়, বাইরেও এডিস মশার ঘনত্ব বাড়ছে। মাঠপর্যায়ে ডেঙ্গুর বাহক মশার যে ঘনত্ব পাচ্ছি, অন্যান্য বছরের তুলনায় তা বেশি। অন্যদিকে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। এ বছর ডেঙ্গু রোগীর ও এডিস মশা বাড়ার সংখ্যা গতবারের তুলনায় বেশি।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল ২০২৩ সালে। সরকারি হিসাবে, এক বছরে ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। ২০০০ সালে বাংলাদেশে ডেঙ্গু শুরু হওয়ার পর থেকে এটাই সর্বোচ্চ আক্রান্ত। কিন্তু ২০২৪ সালে এসে সেই সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। আমরা বৃষ্টিপাত, আর্দ্রতা, তাপমাত্রা, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা এবং এডিস মশার ঘনত্ব—এ কয়েকটি প্যারামিটার দিয়ে মাল্টিভেরিয়েন্ট অ্যানালাইসিস করে যে ফোর কাস্টিং মডেল তৈরি করি, তাতে দেখা যাচ্ছে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এ বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হবে।
আজকের পত্রিকা: একসময় ডেঙ্গু পরিস্থিতি শুধু ঢাকা শহরেই সীমাবদ্ধ ছিল। এখন সেটা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ার কারণ কী?
কবিরুল বাশার: এখন গ্রামগুলো আর সেই অর্থে গ্রাম নেই। সব গ্রামই কম-বেশি নগরায়ণ হয়েছে। যখনই অপরিকল্পিত নগরায়ণ হয় এবং নিরবচ্ছিন্ন পানির সরবরাহ না থাকে, তখন মানুষ বালতিসহ বিভিন্ন জায়গায় পানি জমিয়ে রাখে আর এই জমানো পানিতে এডিস মশার প্রজনন হয়। এডিস মশা এক শহর থেকে আরেক শহর বা গ্রামে বাস, স্টিমারসহ বিভিন্ন যানবাহনের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। আর সেই জায়গায় যদি তারা প্রজননের পাত্র পায়, তাহলে এর বংশ বৃদ্ধি হতে থাকে।
আজকের পত্রিকা: দুই যুগের বেশি সময় ধরে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কোনো কাজ করা হয়নি কেন?
কবিরুল বাশার: আসলে ২০০০ সাল থেকে ডেঙ্গুর ভয়াবহ সংক্রমণ শুরু হলেও সেই সময় একে নিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণাটা পর্যাপ্ত ছিল না। এখন গবেষণা হচ্ছে। গবেষণালব্ধ ফলাফল যদি সঠিকভাবে ব্যবহার ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আমি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের একটা কেবি মডেল প্রস্তাব করেছি। এই মডেল নিয়ে দেশের বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ ও ফিচার প্রকাশিত হয়েছে। এই মডেল যদি বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
আজকের পত্রিকা: আপনার প্রস্তাবিত মডেলের বিষয়ে জানতে চাই।
কবিরুল বাশার: পদ্ধতিটা যদি আমি সংক্ষিপ্তভাবে ব্যাখ্যা করি তাহলে দাঁড়ায়, একজন স্বাস্থ্যকর্মী বা একজন কীটতত্ত্ববিদ যিনি মশা সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন, তিনি কিছু কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেবেন। উদাহরণস্বরূপ, একজন কর্মীর অধীনে ১ হাজার বাড়ি থাকবে। তিনি নিয়মিত সেসব ভিজিট করবেন। সেই বাড়িতে যদি এডিস মশা পাওয়া যায়, সেই মশার পাত্রগুলো ধ্বংস করবেন। যে পাত্রগুলো ধ্বংস করা যাবে না, সেগুলোয় কীটনাশক প্রয়োগ করবেন। এটি তিনি নিয়মিত, মানে ১৫ দিন অন্তর করবেন। তিনি প্রতি বাড়ি ভিজিট করবেন এবং এই ভিজিট রেকর্ড সিটি করপোরেশন বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবেন। এভাবে আমরা যদি কোনো পুরো শহরে কাজ করতে পারি, তাহলে এডিস মশা নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে থাকবে। কোনো বাড়িতে ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেলে সেই বাড়িকে কেন্দ্র করে ক্রাশ প্রোগ্রাম করে উড়ন্ত মশা মেরে দেবেন, যাতে সেই বাড়ির মশা নতুনভাবে আক্রমণ করতে না পারে। মডেলটি বিস্তারিত জানতে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কবিরুল বাশারের প্রস্তাবিত মডেল দিয়ে গুগলে সার্চ করতে পারেন।
আজকের পত্রিকা: সিটি করপোরেশনের ব্যবহৃত কীটনাশক কতটা কার্যকর?
কবিরুল বাশার: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন যে তিনটি কীটনাশক ব্যবহার করে, যেমন মেলাথিয়ন, টেমিফস ও নোভালিওরন—আমি এগুলো পরীক্ষা করে দেখেছি, এ তিনটি কীটনাশকই মশা মারার জন্য কার্যকরী। সেগুলো ল্যাবরেটরি পর্যায়ে কার্যকরী। তবে যে ফগিং বা ধোঁয়া দেওয়া হয়, সেটির ল্যাবরেটরি পর্যায়ে কার্যকারিতা থাকলেও মাঠপর্যায়ে নানা সীমাবদ্ধতার কারণে কার্যকারিতা কম।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, যদি কীটনাশক কার্যকর হয়, তাহলে মশা নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না কেন? এ প্রশ্নের উত্তর হলো, আপনার অস্ত্র যত ভালো থাকুক, যদি অস্ত্রটির ব্যবহার সঠিক সময়, সঠিক জায়গায় এবং সঠিক মাত্রায় না করা হয়, তাহলে সেটি ফলাফল না-ও দিতে পারে। এখন অস্ত্রটি সঠিক সময়, সঠিক জায়গায় এবং সঠিক মাত্রায় ব্যবহার হয়েছে কি না, সেটির মনিটরিং ও ইভাল্যুয়েশন হওয়া দরকার। তার রিপোর্টও থাকা দরকার। একটি প্রোগ্রামের মূল্যায়ন প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে সেই প্রোগ্রামটি নতুন করে সাজাতে হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। মূল্যায়ন প্রতিবেদন নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজন হলে মশা নিয়ন্ত্রণে নতুন কৌশল প্রণয়ন করা যেতে পারে।
আজকের পত্রিকা: কলকাতার তাপমাত্রা, জনসংখ্যা, অবকাঠামো অনেকটা ঢাকার কাছাকাছি। তারা ডেঙ্গু মোকাবিলায় সফলতা দেখাতে পারলেও আমরা পারছি না কেন?
কবিরুল বাশার: কলকাতায় আমি বেশ কয়েকবার গিয়েছি। সেখানকার মশা নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে জড়িত অফিসার ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। কলকাতার যিনি কীটতত্ত্ববিদ, তাঁর সঙ্গেও দেখা হয়েছে। তাঁরা কিন্তু উড়ন্ত মশা মারার জন্য ফগিং করে না। সিটি করপোরেশনের কর্মীরা প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে সেই বাড়ির এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করেন। প্রতিটি বাড়িতে তাঁরা ১৫ দিন পর পর ভিজিট করেন। সেসব বাড়ির প্রজননস্থল ধ্বংস এবং সেখানে কোনো ডেঙ্গু রোগী থাকলে তার খোঁজখবর রাখেন, চিকিৎসা এবং হটস্পট ম্যানেজমেন্ট করেন। এ কাজটি তাঁরা পাঁচ বছর ধরে করছেন। মশার লার্ভা নিয়ন্ত্রণের জন্য বিটিআই ব্যবহার করেন। এ জন্য আমাদের দেশের মতো আবহাওয়া হওয়ার কারণে তারা ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে থাকার পরেও সফল। একইভাবে সিঙ্গাপুরও এতে সফলতা দেখাতে পেরেছে।
আমি যে মডেলটি দিয়েছি, সেখানে সবকিছু বিস্তারিতভাবে দেওয়া আছে। কলকাতার মডেলেরও কিছুটা ছাপ এখানে আছে। এ মডেলটি বাস্তবায়ন করলে আমরাও সফল হতে পারি।
আজকের পত্রিকা: গত বছর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। আপনি কী বলবেন?
কবিরুল বাশার: সরকারের কোনো উদ্যোগ ছিল না—ব্যাপারটি সে রকম নয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় অনেকগুলো মিটিং করেছিল। সেই সব মিটিংয়ে আমার উপস্থিত থাকার সুযোগ হয়েছিল। দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী এবং দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রদের এ বিষয়ে যথেষ্ট সক্রিয় থাকতে দেখেছি। তাঁরা সক্রিয় আছেন, কিন্তু এই সক্রিয়তা মাঠপর্যায়ে কতটা বাস্তবায়ন হচ্ছে, সেটা আসলে দেখা দরকার। যদি এই প্রোগ্রামকে যথাযথভাবে মনিটরিং করা যায়, তাহলে আমরা ভবিষ্যতে মশা নিয়ন্ত্রণে সফলতা অর্জন করতে পারব।
আজকের পত্রিকা: সাধারণ জনগণের করণীয় কী?
কবিরুল বাশার: ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে জনগণের ভূমিকা অপরিসীম। আমরা যখন মাঠপর্যায়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও গবেষণায় যাই, তখন দেখতে পাই ঢাকার অভিজাত এলাকার ভবনের বেসমেন্টে গাড়ি রাখার জায়গায় এডিস মশার ঘনত্ব অনেক। বাড়িতে টায়ার, ভাঙা কমোড, বিভিন্ন পাত্র ফেলে রাখলে সেখানে এডিস মশা পাচ্ছি। কুকুরের খাবারের সঙ্গে একটা পানির পাত্র রাখা হলে সেখানেও আমরা এডিস মশা পেয়েছি। এসব জিনিস কিন্তু আমাদের বাড়ি বা এর আশপাশে থাকে। তাই বাড়ি বা এর আশপাশে কোনো পাত্রে যেন পানি জমা না থাকে।
যদি এমন কোনো পাত্র থাকে, তাহলে সেটি উল্টে রাখতে হবে, যাতে সেখানে পানি জমে এডিস মশার প্রজনন না হতে পারে। কয়েল ও অ্যারোসলের মতো মশার লার্ভা নিধনে ব্যবহৃত ‘রেডি ফর ইউজ’ কীটনাশক সাধারণ জনগণের ক্রয়সীমার মধ্যে আনা দরকার। তাহলে তারা নিজেরাই কিনে এগুলো প্রয়োগ করতে পারবে।এভাবে যদি প্রতিটি বাড়ির মালিক নিশ্চিত করেন, তাহলে অর্ধেকের বেশি এডিস মশা কমে যাবে। নাগরিকদের পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে রাস্তাঘাট, উন্মুক্ত স্থাপনা, সরকারি-বেসরকারি অফিস এলাকায় মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, তাহলে সম্মিলিতভাবে মশা নিয়ন্ত্রণ করা কোনো অসম্ভব ব্যাপার নয়।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৪ দিন আগে