শাবিপ্রবির প্রযুক্তি প্রকল্প: ‘পিপীলিকা’ থমকে আছে অর্থাভাবে

ইয়াহ্ইয়া মারুফ, সিলেট
প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০৮: ৩৭

অর্থের অভাবে বন্ধ রয়েছে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উদ্ভাবিত চারটি তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য। এর মধ্যে তিন বছর ধরে বন্ধ দেশের প্রথম বাংলা সার্চ ইঞ্জিন ‘পিপীলিকা’। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ‘একুশে বাংলা কি-বোর্ড’ প্লে-স্টোরে থাকলেও নিষ্ক্রিয়। অর্থায়ন সংকটে আটকে গেছে দ্রুত ক্যানসার শনাক্তের ‘ননলিনিয়ার অপটিকস’ ডিভাইসের কাজ। করোনা ও অর্থ-জনবলের অভাবে এগোতে পারেনি বাংলায় কথা বলতে পারা রোবট ‘রিবো’।

২০১৩ সালে ১১ জন ডেভেলপার বাংলা সার্চ ইঞ্জিন পিপীলিকা তৈরি করেন। প্রকল্পটির পরিচালনায় ছিলেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল এবং মুখ্য গবেষক ও টিম লিডার হিসেবে কাজ করেছেন মো. রুহুল আমীন সজীব। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি বিভাগ জানায়, বাংলা সার্চ ইঞ্জিন পিপীলিকাসংক্রান্ত কিছু সেবা গ্রহণের বিনিময়ে সরকারের সমাপ্ত এটুআই (অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন) কর্মসূচি থেকে জুলাই ২০১৭ থেকে অক্টোবর ২০২০ পর্যন্ত ৮ কিস্তিতে ১ কোটি ৭১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৬৬ টাকা দেওয়া হয়। এরপর থেকে অর্থসংকটে পিপীলিকা বন্ধ রয়েছে।

অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রামের তৎকালীন (পিডি) অতিরিক্ত সচিব দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যতটুকু মনে পড়ে “পিপীলিকা” সার্চ ইঞ্জিনটা যেইরকম প্রত্যাশা করা হয়েছিল, সেই মানের হয়নি। এ জন্য ফান্ডিং বন্ধ করা হয়। বর্তমান পিডি ভালো বলতে পারবেন।’

সরকারের এসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) কর্মসূচির প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. মামুনুর রশীদ ভূঁইয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আপনি এখন বলার পরে বুঝতে পারলাম যে এ রকম একটা বিষয় ছিল। যেহেতু ওটা টোটালি আমার নলেজে নাই।’

‘ননলিনিয়ার অপটিকস’
রক্তের নমুনা পরীক্ষা করার মাধ্যমে ক্যানসার শনাক্তকরণ পদ্ধতি উদ্ভাবনেও রয়েছে শাবিপ্রবির সাফল্য। অল্প খরচে ও কম সময়ে ‘ননলিনিয়ার অপটিকস’ নামের উদ্ভাবিত এ পদ্ধতিতে রক্তের একটি পরীক্ষার মাধ্যমে মাত্র ১০ থেকে ২০ মিনিটেই ক্যানসার শনাক্ত করা সম্ভব হবে। হায়ার এডুকেশন কোয়ালিটি এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্টের (হেকেপ) আওতায় ২০১৯ সালে তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ইয়াসমিন হকের নেতৃত্বে একদল গবেষক এ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেন। প্রকল্পটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শরীফ মো. শরাফ উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ফান্ডিংসহ অনেক সমস্যা আছে। মূলত ফান্ডিংয়ের জন্য আমরা আটকে গেছি।’

রোবট ‘রিবো’
 ২০১১ সাল থেকে মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও শিক্ষার্থী নওশাদ সজীবের উদ্যোগে ১১ জনের একটি টিম রোবট নিয়ে কাজ শুরু করে। ২০১৫ সালে বার্ষিক সায়েন্স ফিকশন ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শনের জন্য বাংলাদেশ সায়েন্স ফিকশন সোসাইটি মানবসদৃশ এই রোবট তৈরির জন্য ১ লাখ টাকা দেয়। এই অর্থায়নে দলটি রোবট ‘রিবো’ তৈরি করে। রোবটটি ২৪ ডিগ্রি কোণে স্বাধীনভাবে ঘুরতে, নাচ করা, মুখের অঙ্গভঙ্গির প্রকাশ, হ্যান্ডশেক, হাত ওপর-নিচে তোলা, বাংলায় কথা বলা এবং নিজের নামও বলতে পারত। এই প্রকল্পেও অর্থায়ন হয়নি। রোবট তৈরির দলে ছিলেন মেহেদী হাসান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা ঢাকায় প্রোগ্রাম করেছিলাম, আইসিটি প্রতিমন্ত্রীও ছিলেন। তিনি বলেছিলেন ফান্ডিং করবেন। আমরা তখন ওনাকে একটা অ্যাপলিকেশনও দিয়েছিলাম। পরে করোনা ও জনবল সংকটে আর এগোতে পারিনি।’ 

‘একুশে বাংলা কি-বোর্ড’
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ‘একুশে বাংলা কি-বোর্ড’ নিজেই বুঝে ফেলবে গ্রাহক কী লিখতে চাইছেন। ২০১৮ সালে নির্ভুল বাংলা লিখতে এ কি-বোর্ডের যাত্রা শুরু হয়। ২০২০ সালে কি-বোর্ডটির উদ্ভাবক তৎকালীন শাবিপ্রবির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বিশ্বপ্রিয় চক্রবর্তী বিদেশে চলে গেছেন। প্লে-স্টোরে অ্যাপটি থাকলেও নিষ্ক্রিয় রয়েছে। প্রজেক্টটির বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে বিশ্বপ্রিয় চক্রবর্তী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত আমাদের কাছে এই প্রজেক্টের কোনো আপডেট নেই। আমাদের প্রজেক্টটা আমি দেশের বাইরে চলে যাওয়ার পর আর কোনো কাজ করা হয়নি।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. কবির হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়গুলোর আমি খোঁজখবর নেব। প্রয়োজনে সরকারের উচ্চপর্যায়েও আমরা কথা বলব। উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত