Ajker Patrika

দামে নাকাল পাঠক-প্রকাশক

সাখাওয়াত ফাহাদ, ঢাকা
দামে নাকাল পাঠক-প্রকাশক

ধীরে ধীরে বাড়ছে বইমেলার উত্তাপ। সেই সঙ্গে আশঙ্কা বাড়ছে প্রকাশক ও পাঠকদের মধ্যে। এর প্রধান কারণ—বইয়ের দাম। বইয়ের দাম আগের তুলনায় বেশ বেড়েছে। ফলে পাঠকেরা যেমন বেশি নতুন বই কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন, তেমনি প্রকাশকেরাও জানিয়েছেন, আগ্রহ থাকলেও অতিরিক্ত নতুন বই প্রকাশ করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।

গাইবান্ধা থেকে মেলায় বই কিনতে এসেছিলেন সাব্বির রহমান। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন বইয়ের তালিকা। কিন্তু তালিকার অর্ধেক বই কিনেই এবার ফিরতে হচ্ছে তাঁকে। সাব্বির জানিয়েছেন, বইয়ের দাম বেড়েছে। তাই অনেকগুলো বই কেনা হলো না। আবার এলে হয়তো কিনতে পারব।

নক্ষত্র প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী মাহমুদা দীপা জানান, অনেক ক্রেতা বই কিনতে এসে দামের বিষয়ে অভিযোগ করছেন। কয়টি বই বিক্রি হয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি হতাশ কণ্ঠে বলেন, আজকে একটি বইও বিক্রি হয়নি। কয়েকজন এসেছিলেন। কিন্তু বইয়ের দাম বেশি বলে না কিনে চলে গেছেন। দাম কিছুটা কম হলে হয়তো কিছু বেশি বই বিক্রি হতো।

প্রকাশনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, কাগজের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বইয়ের দাম কিছুটা বেড়েছে। এ ছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে বই প্রকাশের আনুষঙ্গিক খরচও বেড়েছে। তাই আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও বেশিসংখ্যক নতুন বই প্রকাশ সম্ভব হচ্ছে না।

মাওলা ব্রাদার্সের ডিজিটাল প্রধান নিহাল মাহমুদ বলেছেন, ‘করোনার প্রভাব সবখানেই পড়েছে। কাগজের দাম, বাইন্ডিং ও পরিবহন খরচ—সবই বেড়েছে। এর ফলে আমাদের পরিকল্পনায় থাকা বইয়ের মধ্যে শতভাগ প্রকাশ সম্ভব না হলেও ৯০ ভাগ নতুন বই আসবে।’

বড় বড় প্রকাশনী দামের এই ধাক্কা সামলে নিলেও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ছোট প্রকাশনীগুলো। শ্রাবণ প্রকাশনীর প্রকাশক রবিন আহসান জানান, এ বছর ৪০টি নতুন বই প্রকাশের ইচ্ছা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হয়তো ২৫ নতুন বই তিনি এবার মেলায় আনতে পারবেন। তিনি বলেন, ‘প্রকাশক হিসেবে ব্যাপক ক্ষতি। নতুন বই কম এলে বিক্রি কম হবে। পাঠকও কম বই পড়বে। ফলে বই পড়ার অভ্যাসটাই কমে যেতে পারে। সামাজিকভাবে অবক্ষয়ের মধ্যে পড়ে যেতে পারি আমরা।’

অনেক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত টাকা হাতে নিয়েও চাহিদা অনুযায়ী বাজারে কাগজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন রবিন। তিনি বলেন, ‘বাজারে ভালো মানের কাগজ নেই। বিদেশ থেকে কাগজ আমদানির ক্ষেত্রেও নানান জটিলতা রয়েছে। ফলে পরিকল্পনা অনুযায়ী বই ছাপানো যাচ্ছে না। একজন প্রকাশক বইমেলার জন্য সারা বছর অপেক্ষা করেন। মেলায় নতুন বই প্রকাশ অন্য রকম ব্যাপার।’

তবে চড়া দামের বাজারেও মেলার ষষ্ঠ দিনে গতকাল নতুন বই এসেছে ১২১টি। এটি এ বছরের মেলায় এ পর্যন্ত এক দিনে সবচেয়ে বেশি নতুন বই আসার রেকর্ড। এগুলোর মধ্যে ৩২টি কবিতা, ২৪টি উপন্যাস এবং ১৬টি গল্পের বই রয়েছে।

নতুন আসা বইয়ের মধ্যে পাঠকসমাবেশ প্রকাশিত মোজাফফর হোসেনের গল্পসংগ্রহ ‘বানোয়াট জীবনের গল্পগুলো’, নবান্ন প্রকাশনী প্রকাশিত মুমিত আল রশিদের লোকসংস্কৃতিবিষয়ক বই ‘পারস্যের লোকজ সংস্কৃতি ও উৎসব’, অনুপম প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত তরুণ বিজ্ঞান লেখক সৌমেন সাহার ‘বিশ্বভরা রহস্য-১ ও ২’ এবং নাগরী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ফয়েজ আলমের কবিতার বই ‘আমারে উড়াও ধুলা’ উল্লেখযোগ্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত