কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীদের গলার কাঁটা বিদ্রোহী প্রার্থী। ১৩ ইউপির মধ্যে ৯টিতে রয়েছে বিদ্রোহী প্রার্থী। চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়নে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের চাওয়া উপেক্ষা করায় বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। এ ছাড়া বিএনপির স্বতন্ত্র ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা নৌকার বিজয়ে বড় বাধা বলে মনে করছেন অনেকেই।

উপজেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, স্বজনপ্রীতি ও মনোনয়ন বাণিজ্যের কারণে তুলনামূলক কম জনপ্রিয় ব্যক্তিদের প্রার্থী করায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে দলের সহযোগী সংগঠনের নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তবে বিষয়টি মানতে নারাজ কুড়িগ্রাম-৩ আসনের সাংসদ অধ্যাপক এম এ মতিন। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে যাঁদের মনোনয়ন দিয়েছে, তাঁরা সবাই যোগ্য প্রার্থী। ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি যৌথভাবে কাজ করলে নৌকার প্রার্থীরা বিজয়ী হবেন। তবে বিভিন্ন কারণে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ মাঠে কাজ করছে না, এটি দুঃখজনক। আমরা চেষ্টা করছি সবাইকে নিয়েই নৌকা প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে।’

সূত্রে জানা গেছে, তবকপুর ইউপিতে নৌকার প্রার্থী করা হয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মোখলেছুর রহমানকে। এই ইউপিতে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে লড়ছেন সাবেক জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা কৃষক লীগের সদস্য এবং বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান ওয়াদুদ হোসেন মুকুল। গুনাইগাছ ইউপিতে নৌকার প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রউফ রিজু, বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন সাবেক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান।

থেতরাই ইউপিতে নৌকার প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল জলিল সরকার। এই ইউপিতে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ বদিয়ুজ্জামান।

ধামশ্রেনী ইউপিতে নৌকার প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল হক সরদার। এই ইউপিতে নৌকার বিপক্ষে নির্বাচন করছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য কবীর উদ্দিন সরকার।

ধরনীবাড়ী ইউপিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল গফফার সরকার। এই ইউপিতে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে লড়ছেন উপজেলা কৃষক লীগের সদস্য এরশাদুল হক।

দুর্গাপুর ইউপিতে নৌকার প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি খাইরুল ইসলাম বাবলু সরকার। এই ইউপিতে নৌকার বিপক্ষে নির্বাচন করছেন উপজেলা কৃষক লীগের সদস্য ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম সাঈদ।

বজরা ইউপিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য ও বর্তমান চেয়ারম্যান রেজাউল করিম আমিন। তাঁর বিপক্ষে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন বজরা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুল কাইয়ুম সরদার।

দলদলিয়া ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে নৌকার প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের মৌজা কমিটির সদস্য লিয়াকত আলী সরকার। দল থেকে মনোনয়ন না পেলে নৌকার বিপক্ষে প্রার্থী হয়েছেন ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি কামরুজ্জামান মুন্সী রানা।

বুড়াবুড়ি ইউপিতে নৌকার প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান খন্দকার। এই ইউপিতে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন ওই ইউনিয়নের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক চেয়ারম্যান আবু তালেব।

বাকি তিন ইউপিতে আওয়ামী লীগের কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী নেই। আলগা, বেগমগঞ্জ, হাতিয়া ও পান্ডুল ইউপিতে আওয়ামী লীগ একক চেয়ারম্যান প্রার্থী দিতে সক্ষম হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় পাটি ৯টিতে, বিএনপিপন্থী স্বতন্ত্র প্রার্থী ৯টিতে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ৮টিতে, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ২টিতে ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পাটি ১টিতে চেয়ারম্যান প্রার্থী দিয়েছে। ২৬ ডিসেম্বর উলিপুর উপজেলার ১৩টি ইউপিতে ভোট।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম হোসেন মন্টু বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে যাঁরা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের নামের তালিকা কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটি ব্যবস্থা নেবে। তবে তৃণমূলের ভোটে যাঁরা জয়ী হয়েছিলেন, তাঁদের নামের তালিকা কেন্দ্রে জমা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তৃণমূলের মতামতকে উপেক্ষা করে একাধিক ইউপিতে প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে। এতে নেতা-কর্মীরা হতাশ। ভোটের মাঠে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।’