Ajker Patrika

আবাসন নয়, মুস্তাফিজের ‘মূল ব্যবসা’ প্রতারণা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আবাসন নয়, মুস্তাফিজের ‘মূল ব্যবসা’ প্রতারণা

নাম মুস্তাফিজুর রহমান। এক যুগ আগে রাজশাহী শহরে পড়াশোনা করতে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন এক নিঃসন্তান দম্পতির বাসায়। এখন এ শহরে একটি হ্যারিয়ার গাড়ি হাঁকান। আয়ের উৎস আবাসন ব্যবসা। তবে ব্যবসার চেয়ে প্রতারণার অভিযোগই বেশি তাঁর নামে। প্রতারণার অভিযোগে গতকাল মঙ্গলবার ভোরে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি। আবার মুক্তিও পেয়েছেন বিকেলে।

মুস্তাফিজুরের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে। রাজশাহীতে মুস্তাফিজ নামে পরিচিত তিনি। দরিদ্র পরিবারের সন্তান মুস্তাফিজ ২০১০ সালে এসএসসি পাস করে রাজশাহী চলে আসেন। এরপর ভর্তি হন পলিটেকনিকে। আশ্রয় নেন নগরীর রাজারহাতা এলাকার ব্যাংক কর্মকর্তা মাইনুল হাসানের বাড়িতে। কিছুদিন পর মাইনুল হাসান মারা যান। তাঁর স্ত্রী নাসরিন সুলতানা মুস্তাফিজকে ছেলের মতোই দেখে রাখেন। ডিপ্লোমা সম্পন্ন করার পর নাসরিনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন মুস্তাফিজ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতারণার শুরু এই বাড়ি থেকেই। নাসরিনের বাড়ির জমিটি মুস্তাফিজ হাতিয়ে নিয়ে আবাসন ব্যবসা শুরু করেন। এরপর নাসরিনকে বাড়ি থেকে বের করে দেন মুস্তাফিজ।

নাসরিনের ভাই ওয়ালিউর রহমান বাবু বলেন, ‘আমার বোনের কাছ থেকে অনেক টাকা নিয়ে এই ব্যবসা শুরু করেছিল মুস্তাফিজ। সে টাকার কোনো হিসাব নাই। আমাদের একটা জমিও ডেভেলপার হিসেবে নিয়েছে তিন বছর আগে। কাজ শুরু করতে পারেনি। আমরা এখন ভাড়া থাকি। মুস্তাফিজের কারণে আমার বোন এখন অসুস্থ হয়ে পড়েছে।’

আলাদিনের চেরাগ পেলেন যেভাবে
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৯ সালের শেষের দিকে আবাসন ব্যবসায় শুরু করেন মুস্তাফিজ। নিজে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হয়ে ‘গ্রিন প্লাজা রিয়েল এস্টেট’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানও দাঁড় করান। এরপর শহরের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তুলে নিজেকেও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে প্রচার করতে থাকেন। আর ফ্ল্যাট বিক্রির নামে চলতে থাকে একের পর এক প্রতারণা। এ আবাসন ব্যবসায় নেমে পাঁচ বছরের মধ্যেই বিপুল অর্থের মালিক বনে যান মুস্তাফিজ। ফ্ল্যাটের ক্রেতাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতেন। একই ফ্ল্যাট একাধিক ব্যক্তির কাছে বিক্রি, নানা শর্তের ফাঁদে ফেলে গ্রাহকদের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

এ প্রসঙ্গে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক চিকিৎসক মহিবুল হাসান বলেন, ‘আমার একটি জমি মুস্তাফিজকে দিয়েছিলাম। কিন্তু সে কোনো শর্তই মানেনি। এরপর আমি চুক্তি বাতিল করেছি। তাই ১০ লাখ টাকা দিতে বাধ্য হয়েছি। প্রতারণাই তাঁর মূল কাজ।’

নগরীর রেশমপট্টি এলাকার বাসিন্দা ওমর ফারুক ফ্ল্যাট কিনতে মুস্তাফিজকে দিয়েছিলেন ২৭ লাখ টাকা। কিন্তু শর্ত না মানার কারণে মুস্তাফিজ পরে ফ্ল্যাট নিতে চাননি। টাকা ফেরত চাইলে দেড় বছর ঘুরিয়েছেন। ওমর ফারুক জানান, নানা দেন-দরবার আর সালিসের পর তিনি ২৪ লাখ টাকা পেয়েছেন। মুস্তাফিজের কাছে এখনো ৩ লাখ টাকা পাবেন তিনি।

প্রতারক থেকে ব্যবসায়ী নেতা
মুস্তাফিজের প্রতিষ্ঠান ‘গ্রিন প্লাজা রিয়েল এস্টেট’ রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) নিবন্ধিত নয়। বিষয়টি জানতে পেরে গত বৃহস্পতিবার মুস্তাফিজকে কারণ দর্শানোর দুটি নোটিশ দিয়েছে আরডিএ। এদিকে এই অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠান দিয়েই রাজশাহীর আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড ডেভেলপার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হয়েছেন তিনি। এ ছাড়া রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালকও হয়েছিলেন।

এ প্রসঙ্গে চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু বলেন, ‘মুস্তাফিজ একসময় চেম্বারের পরিচালক পদও বাগিয়েছিলেন। এরপর আমাদের কাছে তাঁর প্রতারণার তিনটি অভিযোগ আসে। একটির মীমাংসা করেছি। দুটি পারিনি। নানা অভিযোগ থাকার কারণে চেম্বারের নতুন পর্ষদে তাঁকে আর পরিচালক করা হয়নি।’

এসব প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর গতকাল মুস্তাফিজকে আদালতে তোলা হয়। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের আদালতের দায়িত্বে থাকা এটিএসআই মিজানুর রহমান বলেন, বিকেলে মুস্তাফিজুরকে আদালতে তোলা হয়। রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১-এর বিচারক মহিদুল ইসলাম জামিন মঞ্জুর করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চূড়ান্ত হচ্ছে সাত কলেজের নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম, শিগগির ঘোষণা

প্রবাসীর স্ত্রীর ঘরে ধরা পড়া সেই নেতাকে বহিষ্কার করল ছাত্রশিবির

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ডিজির অপসারণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

ফ্রিতে নৌকা না পেয়ে ভূমি অফিস সহকারীকে মারধর এসপির

এশিয়ার ১০টিসহ ৪৩ দেশের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছেন ট্রাম্প

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত