ভাষাসৈনিক চুন্নু মিয়ার স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেই

ভোলা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৫: ৫৮
আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৫: ২০

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। ভোর থেকে ছাত্রনেতাদের পরামর্শে ৮-১০ জনের খণ্ড মিছিল শুরু হয়। ঢাকা কলেজের তৃতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মিছিলে যোগ দেন রেজা-এ-করিম চৌধুরী চুন্নু মিয়া।

মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের কাছে পৌঁছালে তাঁকেসহ অনেককে আটক করে পুলিশ ফাঁড়িতে নেওয়া হয়। সকালে আদালতে হাজির না করে তাঁদের পাঠানো হয় কেন্দ্রীয় কারাগারে। এক মাস কারাভোগের পর ২১ মার্চ মুক্ত হন তিনি। কিন্তু ভাষাসৈনিকের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না পেয়েই ২০০৭ সালের মারা যান চুন্নু মিয়া। তাঁর স্মৃতি সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন স্বজন ও এলাকাবাসী।

চুন্নু মিয়ার বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার কুতুবা ইউনিয়নের কুতুবা গ্রামে। তিনি ১৯৭০ সালের নির্বাচনে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (এমপিএ) ছিলেন। তা ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্যও ছিলেন তিনি।

চুন্নু মিয়া ঢাকা কলেজে পড়ার সময় ১৯ বছর বয়সে ভাষা আন্দোলনে অংশ নেন। সহপাঠীদের নিয়ে ঢাকা কলেজের তৎকালীন ভিপি ইকবাল আনসার হেনরীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁর পরামর্শে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদে যোগ দেন।

পাকিস্তান সরকারে জারি করা ১৪৪ ধারা ভেঙে মিছিলে গেলে নিশ্চিত গুলি হবে তা তাঁরা উপলব্ধি করেছিলেন। এ জন্য মিছিলে যাওয়ার আগের দিন নিজের পুরো নাম ঠিকানা সাদা কাগজে লিখে পকেটে রেখেছিলেন চুন্নু মিয়া। যাতে ওই ঠিকানায় প্রয়োজনে তাঁর লাশ পাঠানো সম্ভব হয়। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভোর থেকে খণ্ড মিছিল শুরু হয়। ঢাকা কলেজের তৃতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মিছিলে যোগ দেন তিনি। পুলিশ তাঁদের আটক করে। পরে কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠায়। এক মাস পর মুক্তি পান চুন্নু মিয়া।

স্বজন ও এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কয়েক বছর আগে তৎকালীন জেলা প্রশাসক বেলায়েত হোসেন ভাষা আন্দোলনের সৈনিক চুন্নু মিয়ার স্মৃতি সংরক্ষণের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু আজও তা বাস্তবায়িত হয়নি।

এ বিষয়ে চুন্নু মিয়ার ছোট ছেলে লেখক মাহাবুব-উল-আলম চৌধুরী বলেন, দুঃখের বিষয়, ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছরেও এই ভাষাসৈনিকের স্মৃতি সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে গতকাল শুক্রবার আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন বোরহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইফুর রহমান।

ভোলা-২ আসনের সাংসদ আলী আজম মুকুল বলেন, ‘তাঁর (চুন্নু মিয়া) স্মৃতি সংরক্ষণ করা দরকার। তাঁর নামে বোরহানউদ্দিন উপজেলার প্রবেশদ্বারে একটি তোরণ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ভোলা-চরফ্যাশন সড়ক প্রশস্তকরণ পরিকল্পনার পর ওই উদ্যোগ স্থগিত করা হয়।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত