ড. আদনান আবু আমির
৫ এপ্রিল অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের আল আকসা মসজিদে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর নির্দয়ভাবে ফিলিস্তিনি মুসল্লিদের পেটানোর এক ভিডিও ফুটেজ প্রকাশিত
হয়েছে। নৃশংস এই সহিংসতায় ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম স্থানে কমপক্ষে ১২ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। আর এ ঘটনা ফিলিস্তিনি জনগণের ক্ষোভকে আরও উসকে দিয়েছে।
এ ধরনের সহিংসতা আর যাতে না হয়, সে জন্য গাজা এবং লেবানন থেকে ইসরায়েলে রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছিল, কিন্তু ইসরায়েল তা আমলে নেয়নি। পরের দিন আল হারাম আল শরিফে যেখানে আল আকসা মসজিদ অবস্থিত, সেখানে ফের সহিংসতা ঘটায় এবং গাজা ও লেবাননে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল।
এখন এটা স্পষ্ট যে ফিলিস্তিনে আরেকটি উত্তেজনাকর পরিস্থিতি ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের চেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছে এবং ফিলিস্তিনিরা কোনোভাবেই এ জন্য দায়ী নয়। উত্তেজনা প্রশমনে ওয়াশিংটন আগ্রহী হলেও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার মরিয়া চেষ্টার কাছে তা সফল হচ্ছে না। আর এ কারণেই অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়েছে এবং অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছে।
মার্কিন কূটনীতি ব্যর্থ
এক বছরের বেশি সময় ধরে অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনী যখন ফিলিস্তিনের শহর ও গ্রামগুলোতে অবিরাম সহিংস অভিযান চালিয়েছে; তখন সশস্ত্র ফিলিস্তিনিরা প্রতিরোধে সক্রিয় হয়েছে, বিশেষ করে জেনিন ও নাবলুসে।
জাতিসংঘ ২০২২ সালকে ১৬ বছরের মধ্যে অধিকৃত পশ্চিম তীরের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ বছর বলে অভিহিত করেছে। কারণ ওই বছর ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হামলায় ৩০ শিশুসহ কমপক্ষে ১৭০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ৯ হাজার মানুষ। ২০০০ সালের পর এই বছরের প্রথম দুই মাসে সবচেয়ে বেশি সহিংসতা হয়েছে। ইসরায়েলি হামলায় ১৩ শিশুসহ ৬৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
এ বছর মুসলমানদের পবিত্র রমজান মাস ইহুদিদের পাসওভারের ছুটির সঙ্গে মিলে যায়। সুতরাং এটি স্পষ্ট ছিল যে বছরের এই সময়ে সহিংসতার জন্য আরেকটি সম্ভাব্য ফ্ল্যাশপয়েন্ট হবে। ইউক্রেনের যুদ্ধ থেকে মনোযোগ সরিয়ে আনবে এমন বড় সহিংসতা এড়ানোর আশায়, পরিস্থিতি শান্ত করার উপায় নিয়ে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে দুটি আঞ্চলিক বৈঠক হয়।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ফিলিস্তিনি, ইসরায়েলি, জর্ডানীয়, মিসরীয় ও মার্কিন কর্মকর্তারা জর্ডানের বন্দরনগরী আকাবায় আলোচনায় বসেন। বৈঠকের পর জারি করা যৌথ বিবৃতিতে ‘ফের সহিংসতা প্রতিরোধে ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডে হামলা হ্রাস করার প্রতিশ্রুতি’ এবং ছয় মাসের জন্য ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে নতুন অবৈধ বসতি স্থাপনের অনুমোদন বন্ধ করার জন্য ইসরায়েলি অঙ্গীকারের ওপর জোর দেওয়া হয়।
গত ১৯ মার্চ মিসরের শারম আল শেখে আরেকটি বৈঠক হয়, যেখানে ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জেরুজালেমের পবিত্র স্থানগুলোর স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতি দেয় ‘কথায় এবং বাস্তবে উভয়ই’ এবং আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে এসব স্থানের পবিত্রতা নষ্ট হয়, এমন কোনো কর্মকাণ্ড না করতে। কিন্তু নেতানিয়াহুর সরকার এসব স্থানের স্থিতিশীলতা না কথায় না কাজে বজায় রেখেছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী দূর-ডান এবং অতি-ধর্মীয় শক্তির সঙ্গে জোট করেছেন, যাঁরা কিনা প্রকাশ্যে বলেছেন, জর্ডানের অভিভাবকত্বে পবিত্র স্থানগুলোর ইসরায়েলি স্বীকৃতি ছিল একটি ঐতিহাসিক ভুল, যা তাঁরা সংশোধন করতে বাধ্য।
প্রকৃতপক্ষে, ২০২৩ সালটি শুরু হয়েছে চরম ডানপন্থী হিসেবে পরিচিত ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরের আল হারাম আল শরিফে প্রবেশের মধ্য দিয়ে, যা কিনা ফিলিস্তিনজুড়ে জনগণের ক্ষোভকে উসকে দেয়। তাঁর নজরদারিতে, ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর তত্ত্বাবধানে মুসলিমদের পবিত্র স্থানে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের অভিযান আরও জোরদার হয়েছে।
সরকারের বন্ধু বেন-গভির ও অন্যান্য চরমপন্থী নেতারা এখন নেতানিয়াহুর ক্ষমতায় থাকার এবং দুর্নীতির জন্য জেলে যাওয়া এড়ানোর একমাত্র সহায়ক। তাঁরা তা জানেন এবং এর সুযোগ ভালোমতো নিয়ে পশ্চিম তীরের অধিকৃত এলাকায় যেকোনো মূল্যে সহিংসতা ছড়িয়ে ফিলিস্তিনিদের উৎখাত করে যাতে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের জায়গা নিশ্চিত করা যায়। এসব সহিংসতা নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে সরকারবিরোধীদের বিক্ষোভ থেকে জনগণের মনোযোগ সরিয়ে দিতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে।
‘একটি ধর্মযুদ্ধ’
এটা বেশ স্পষ্ট যে এই যুদ্ধ ইসরায়েলের স্বার্থে নয়। ইসরায়েল বর্তমানে পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ নিয়ে ব্যস্ত। এই অঞ্চলে ইরানের সামরিক উপস্থিতি এবং কূটনৈতিক সাফল্য নিয়ে দেশটি চিন্তিত। তারা ইরানের প্রভাব রোধ করতে এবং লেবাননের সীমান্তের কাছে সাম্প্রতিক রাস্তার ধারে বোমা বিস্ফোরণে হিজবুল্লাহর ভূমিকা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে সিরিয়ায় নিয়মিত হামলা করছে।
নেতানিয়াহু ইসরায়েলি নিরাপত্তা সংস্থার কথা শুনবেন কি না, সেটা অন্য প্রশ্ন। অন্যদিকে, গাজার হামাস গোষ্ঠী ইসরায়েলি এসব সহিংসতার প্রতিক্রিয়া জানানোর চেষ্টা করেছে। এটি আল আকসায় আরও অভিযানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে সতর্ক করেছে। হামাস সহিংসতা বাড়তে দিতে চায় না। কারণ এটি পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ থেকে মনোযোগ সরিয়ে নিতে পারে, যা তারা ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘর্ষের প্রধান ক্ষেত্র হিসেবে দেখে। অধিকৃত অঞ্চলে সশস্ত্র হামলা ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকে গাজার সঙ্গে সংঘর্ষের চেয়ে অনেক বেশি উদ্বিগ্ন
করে তোলে।
হামাসের কৌশল এখন পশ্চিম তীর, জেরুজালেম ও ইসরায়েলে একটি জনপ্রিয় ফিলিস্তিনি সংঘবদ্ধকরণকে উৎসাহিত করা, যাতে আল আকসা মসজিদে আরও হামলার বাধা হিসেবে কাজ করা যায়।
ফিলিস্তিনি মুসল্লিদের বিরুদ্ধে যদি ইসরায়েলের নৃশংস সহিংসতা অব্যাহত থাকে, তাহলে হামাসও সিদ্ধান্ত নিয়ে সে কাজ করার জন্য চাপের মুখে পড়তে পারে। ফিলিস্তিনি জনগণ ইতিমধ্যে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের জারি করা দুর্বল নিন্দা এবং নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। হামাস নেতৃত্ব নিজেদের নিষ্ক্রিয় হিসেবে বিবেচনা করতে চাইবে না এবং জনপ্রিয় দাবি মেনে চলতে তারা কঠোর অবস্থান নেওয়ার জন্য ইসরায়েলে রকেট হামলা জোরদার করতে পারে। এভাবে গাজায় ২০২১ সালের মতো যুদ্ধের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে, যা আল আকসা মসজিদে ইসরায়েলের অভিযানের কারণেই শুরু হয়েছিল।
জেরুজালেমের ধর্মীয় স্থানগুলোর স্থিতাবস্থা পরিবর্তনে ইসরায়েলি চেষ্টা আঞ্চলিক দ্বন্দ্বের সূত্রপাত ঘটাতে পারে। পবিত্র স্থানগুলোতে ইসরায়েলের হামলার কারণে ‘ধর্মীয় যুদ্ধ’ শুরু হতে পারে বলে অনেকে সতর্ক করেছেন। গত জানুয়ারি মাসে ইসরায়েলে নিযুক্ত জর্ডানের রাষ্ট্রদূত মাহমুদ দাইফাল্লাহ হামুদ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বলেছেন, আল হারাম আল শরিফের ওপর ইসরায়েলি হামলা প্রায় ২০০ কোটি মুসলমানের অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে এবং এতে করে একটি ‘ধর্মীয় সংঘাতের’ সৃষ্টি হতে পারে।
আল আকসায় ইসরায়েলের আগ্রাসী কর্মকাণ্ডে এমন উদ্বেগও বাড়ছে যে নেতানিয়াহুর সরকার পবিত্র স্থানে ফিলিস্তিনিদের প্রবেশাধিকারের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে চাইছে, যেমনটি হেবরনের ইব্রাহিমি মসজিদে করা হয়েছিল। ১৯৯৪ সালে একজন ইহুদি বসতি স্থাপনকারী ইব্রাহিমি মসজিদে মুসলিম মুসল্লিদের ওপর গুলি চালালে ২৯ জন নিহত হয়। এরপর ওই মসজিদকে দুটি অংশে ভাগ করা হয়। একটি অংশ মুসলমানদের জন্য এবং অপর অংশ ইহুদিদের জন্য। আল আকসা প্রাঙ্গণে এই ব্যবস্থাগুলো আরোপ করা হলে তা হবে স্থিতাবস্থার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, যার অধীনে অমুসলিমদের শুধু নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মসজিদে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে এবং ভেতরে প্রার্থনা করার অনুমতি থাকবে না।
এখন পর্যন্ত আরব রাষ্ট্রগুলো, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলি হামলার নিন্দা করেছে। আরব এবং পশ্চিমা রাজধানীগুলো যা বোঝে না তা হলো, এখন ইসরায়েলি পদক্ষেপের কঠোর প্রতিক্রিয়া না পাওয়া পর্যন্ত, নেতানিয়াহুর অতি-ডান মিত্ররা মুসলিম এবং খ্রিষ্টানদের পবিত্র স্থানগুলো দখল করার এবং বসতি স্থাপনের চেষ্টায় আরও এগিয়ে যেতে সাহসী হবে। আল হারাম আল শরিফে ইসরায়েলের এই আগ্রাসন ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডকে একটি বিস্ফোরকে পরিণত করছে, যা শিগগিরই পুরো অঞ্চলকে উড়িয়ে দেবে।
লেখক: বিভাগীয় প্রধান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, উম্মাহ ইউনিভার্সিটি, গাজা
(আল জাজিরার অনলাইনে প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন সাংবাদিক ও কলাম লেখক রোকেয়া রহমান)
৫ এপ্রিল অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের আল আকসা মসজিদে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর নির্দয়ভাবে ফিলিস্তিনি মুসল্লিদের পেটানোর এক ভিডিও ফুটেজ প্রকাশিত
হয়েছে। নৃশংস এই সহিংসতায় ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম স্থানে কমপক্ষে ১২ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। আর এ ঘটনা ফিলিস্তিনি জনগণের ক্ষোভকে আরও উসকে দিয়েছে।
এ ধরনের সহিংসতা আর যাতে না হয়, সে জন্য গাজা এবং লেবানন থেকে ইসরায়েলে রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছিল, কিন্তু ইসরায়েল তা আমলে নেয়নি। পরের দিন আল হারাম আল শরিফে যেখানে আল আকসা মসজিদ অবস্থিত, সেখানে ফের সহিংসতা ঘটায় এবং গাজা ও লেবাননে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল।
এখন এটা স্পষ্ট যে ফিলিস্তিনে আরেকটি উত্তেজনাকর পরিস্থিতি ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের চেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছে এবং ফিলিস্তিনিরা কোনোভাবেই এ জন্য দায়ী নয়। উত্তেজনা প্রশমনে ওয়াশিংটন আগ্রহী হলেও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার মরিয়া চেষ্টার কাছে তা সফল হচ্ছে না। আর এ কারণেই অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়েছে এবং অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছে।
মার্কিন কূটনীতি ব্যর্থ
এক বছরের বেশি সময় ধরে অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনী যখন ফিলিস্তিনের শহর ও গ্রামগুলোতে অবিরাম সহিংস অভিযান চালিয়েছে; তখন সশস্ত্র ফিলিস্তিনিরা প্রতিরোধে সক্রিয় হয়েছে, বিশেষ করে জেনিন ও নাবলুসে।
জাতিসংঘ ২০২২ সালকে ১৬ বছরের মধ্যে অধিকৃত পশ্চিম তীরের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ বছর বলে অভিহিত করেছে। কারণ ওই বছর ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হামলায় ৩০ শিশুসহ কমপক্ষে ১৭০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ৯ হাজার মানুষ। ২০০০ সালের পর এই বছরের প্রথম দুই মাসে সবচেয়ে বেশি সহিংসতা হয়েছে। ইসরায়েলি হামলায় ১৩ শিশুসহ ৬৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
এ বছর মুসলমানদের পবিত্র রমজান মাস ইহুদিদের পাসওভারের ছুটির সঙ্গে মিলে যায়। সুতরাং এটি স্পষ্ট ছিল যে বছরের এই সময়ে সহিংসতার জন্য আরেকটি সম্ভাব্য ফ্ল্যাশপয়েন্ট হবে। ইউক্রেনের যুদ্ধ থেকে মনোযোগ সরিয়ে আনবে এমন বড় সহিংসতা এড়ানোর আশায়, পরিস্থিতি শান্ত করার উপায় নিয়ে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে দুটি আঞ্চলিক বৈঠক হয়।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ফিলিস্তিনি, ইসরায়েলি, জর্ডানীয়, মিসরীয় ও মার্কিন কর্মকর্তারা জর্ডানের বন্দরনগরী আকাবায় আলোচনায় বসেন। বৈঠকের পর জারি করা যৌথ বিবৃতিতে ‘ফের সহিংসতা প্রতিরোধে ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডে হামলা হ্রাস করার প্রতিশ্রুতি’ এবং ছয় মাসের জন্য ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে নতুন অবৈধ বসতি স্থাপনের অনুমোদন বন্ধ করার জন্য ইসরায়েলি অঙ্গীকারের ওপর জোর দেওয়া হয়।
গত ১৯ মার্চ মিসরের শারম আল শেখে আরেকটি বৈঠক হয়, যেখানে ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জেরুজালেমের পবিত্র স্থানগুলোর স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতি দেয় ‘কথায় এবং বাস্তবে উভয়ই’ এবং আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে এসব স্থানের পবিত্রতা নষ্ট হয়, এমন কোনো কর্মকাণ্ড না করতে। কিন্তু নেতানিয়াহুর সরকার এসব স্থানের স্থিতিশীলতা না কথায় না কাজে বজায় রেখেছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী দূর-ডান এবং অতি-ধর্মীয় শক্তির সঙ্গে জোট করেছেন, যাঁরা কিনা প্রকাশ্যে বলেছেন, জর্ডানের অভিভাবকত্বে পবিত্র স্থানগুলোর ইসরায়েলি স্বীকৃতি ছিল একটি ঐতিহাসিক ভুল, যা তাঁরা সংশোধন করতে বাধ্য।
প্রকৃতপক্ষে, ২০২৩ সালটি শুরু হয়েছে চরম ডানপন্থী হিসেবে পরিচিত ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরের আল হারাম আল শরিফে প্রবেশের মধ্য দিয়ে, যা কিনা ফিলিস্তিনজুড়ে জনগণের ক্ষোভকে উসকে দেয়। তাঁর নজরদারিতে, ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর তত্ত্বাবধানে মুসলিমদের পবিত্র স্থানে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের অভিযান আরও জোরদার হয়েছে।
সরকারের বন্ধু বেন-গভির ও অন্যান্য চরমপন্থী নেতারা এখন নেতানিয়াহুর ক্ষমতায় থাকার এবং দুর্নীতির জন্য জেলে যাওয়া এড়ানোর একমাত্র সহায়ক। তাঁরা তা জানেন এবং এর সুযোগ ভালোমতো নিয়ে পশ্চিম তীরের অধিকৃত এলাকায় যেকোনো মূল্যে সহিংসতা ছড়িয়ে ফিলিস্তিনিদের উৎখাত করে যাতে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের জায়গা নিশ্চিত করা যায়। এসব সহিংসতা নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে সরকারবিরোধীদের বিক্ষোভ থেকে জনগণের মনোযোগ সরিয়ে দিতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে।
‘একটি ধর্মযুদ্ধ’
এটা বেশ স্পষ্ট যে এই যুদ্ধ ইসরায়েলের স্বার্থে নয়। ইসরায়েল বর্তমানে পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ নিয়ে ব্যস্ত। এই অঞ্চলে ইরানের সামরিক উপস্থিতি এবং কূটনৈতিক সাফল্য নিয়ে দেশটি চিন্তিত। তারা ইরানের প্রভাব রোধ করতে এবং লেবাননের সীমান্তের কাছে সাম্প্রতিক রাস্তার ধারে বোমা বিস্ফোরণে হিজবুল্লাহর ভূমিকা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে সিরিয়ায় নিয়মিত হামলা করছে।
নেতানিয়াহু ইসরায়েলি নিরাপত্তা সংস্থার কথা শুনবেন কি না, সেটা অন্য প্রশ্ন। অন্যদিকে, গাজার হামাস গোষ্ঠী ইসরায়েলি এসব সহিংসতার প্রতিক্রিয়া জানানোর চেষ্টা করেছে। এটি আল আকসায় আরও অভিযানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে সতর্ক করেছে। হামাস সহিংসতা বাড়তে দিতে চায় না। কারণ এটি পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ থেকে মনোযোগ সরিয়ে নিতে পারে, যা তারা ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘর্ষের প্রধান ক্ষেত্র হিসেবে দেখে। অধিকৃত অঞ্চলে সশস্ত্র হামলা ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকে গাজার সঙ্গে সংঘর্ষের চেয়ে অনেক বেশি উদ্বিগ্ন
করে তোলে।
হামাসের কৌশল এখন পশ্চিম তীর, জেরুজালেম ও ইসরায়েলে একটি জনপ্রিয় ফিলিস্তিনি সংঘবদ্ধকরণকে উৎসাহিত করা, যাতে আল আকসা মসজিদে আরও হামলার বাধা হিসেবে কাজ করা যায়।
ফিলিস্তিনি মুসল্লিদের বিরুদ্ধে যদি ইসরায়েলের নৃশংস সহিংসতা অব্যাহত থাকে, তাহলে হামাসও সিদ্ধান্ত নিয়ে সে কাজ করার জন্য চাপের মুখে পড়তে পারে। ফিলিস্তিনি জনগণ ইতিমধ্যে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের জারি করা দুর্বল নিন্দা এবং নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। হামাস নেতৃত্ব নিজেদের নিষ্ক্রিয় হিসেবে বিবেচনা করতে চাইবে না এবং জনপ্রিয় দাবি মেনে চলতে তারা কঠোর অবস্থান নেওয়ার জন্য ইসরায়েলে রকেট হামলা জোরদার করতে পারে। এভাবে গাজায় ২০২১ সালের মতো যুদ্ধের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে, যা আল আকসা মসজিদে ইসরায়েলের অভিযানের কারণেই শুরু হয়েছিল।
জেরুজালেমের ধর্মীয় স্থানগুলোর স্থিতাবস্থা পরিবর্তনে ইসরায়েলি চেষ্টা আঞ্চলিক দ্বন্দ্বের সূত্রপাত ঘটাতে পারে। পবিত্র স্থানগুলোতে ইসরায়েলের হামলার কারণে ‘ধর্মীয় যুদ্ধ’ শুরু হতে পারে বলে অনেকে সতর্ক করেছেন। গত জানুয়ারি মাসে ইসরায়েলে নিযুক্ত জর্ডানের রাষ্ট্রদূত মাহমুদ দাইফাল্লাহ হামুদ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বলেছেন, আল হারাম আল শরিফের ওপর ইসরায়েলি হামলা প্রায় ২০০ কোটি মুসলমানের অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে এবং এতে করে একটি ‘ধর্মীয় সংঘাতের’ সৃষ্টি হতে পারে।
আল আকসায় ইসরায়েলের আগ্রাসী কর্মকাণ্ডে এমন উদ্বেগও বাড়ছে যে নেতানিয়াহুর সরকার পবিত্র স্থানে ফিলিস্তিনিদের প্রবেশাধিকারের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে চাইছে, যেমনটি হেবরনের ইব্রাহিমি মসজিদে করা হয়েছিল। ১৯৯৪ সালে একজন ইহুদি বসতি স্থাপনকারী ইব্রাহিমি মসজিদে মুসলিম মুসল্লিদের ওপর গুলি চালালে ২৯ জন নিহত হয়। এরপর ওই মসজিদকে দুটি অংশে ভাগ করা হয়। একটি অংশ মুসলমানদের জন্য এবং অপর অংশ ইহুদিদের জন্য। আল আকসা প্রাঙ্গণে এই ব্যবস্থাগুলো আরোপ করা হলে তা হবে স্থিতাবস্থার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, যার অধীনে অমুসলিমদের শুধু নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মসজিদে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে এবং ভেতরে প্রার্থনা করার অনুমতি থাকবে না।
এখন পর্যন্ত আরব রাষ্ট্রগুলো, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলি হামলার নিন্দা করেছে। আরব এবং পশ্চিমা রাজধানীগুলো যা বোঝে না তা হলো, এখন ইসরায়েলি পদক্ষেপের কঠোর প্রতিক্রিয়া না পাওয়া পর্যন্ত, নেতানিয়াহুর অতি-ডান মিত্ররা মুসলিম এবং খ্রিষ্টানদের পবিত্র স্থানগুলো দখল করার এবং বসতি স্থাপনের চেষ্টায় আরও এগিয়ে যেতে সাহসী হবে। আল হারাম আল শরিফে ইসরায়েলের এই আগ্রাসন ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডকে একটি বিস্ফোরকে পরিণত করছে, যা শিগগিরই পুরো অঞ্চলকে উড়িয়ে দেবে।
লেখক: বিভাগীয় প্রধান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, উম্মাহ ইউনিভার্সিটি, গাজা
(আল জাজিরার অনলাইনে প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন সাংবাদিক ও কলাম লেখক রোকেয়া রহমান)
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে