এক রাস্তার পেটে ৫ পাহাড়

সবুর শুভ, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ১১ এপ্রিল ২০২৩, ০৯: ৪৯

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে রাস্তা নির্মাণের নামে অন্তত পাঁচটি পাহাড় কাটার পথ পরিষ্কারের চেষ্টা করছেন স্থানীয় কাউন্সিলর মো. জহুরুল আলম জসিম।

চট্টগ্রাম নগরীর আকবর শাহ থানার বেলতলী ঘোনা এলাকায় গত শুক্রবার সন্ধ্যায় পাহাড়ধসে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। সেই স্থান থেকে একটু সামনেই রয়েছে বিস্তীর্ণ পাঁচটি পাহাড়। একটু দূরেই লেকসিটি এলাকার কাছে কালিরছড়া ভরাট করে স্থানীয় কাউন্সিলর মো. জহুরুল আলম জসিমের তত্ত্বাবধানে গড়ে উঠেছে আবাসিক এলাকা। আর সেই আবাসিক এলাকার সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থা তৈরি করতে বেলতলী ঘোনা এলাকায় রাস্তা নির্মাণ করছে সিটি করপোরেশন। ওই রাস্তা নির্মাণে পাহাড় কাটতে গিয়েই একজনের মৃত্যু হয়।

এরপর ঘটনাস্থলে গিয়ে চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, সিটি করপোরেশনের অধীনে এডিবির অর্থায়নে ২ কোটি ৬৭ লাখ টাকায় প্রতিরোধ দেয়ালসহ নির্মাণকাজ চলছে।

চট্টগ্রাম নগরীর কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ ওমর ফারুকের বক্তব্য ও সরেজমিনে পাওয়া তথ্যমতে, বেলতলী ঘোনার যেখানে পাহাড়ধস হয়েছে, তার সামনে অন্তত পাঁচটি পাহাড় রয়েছে। স্থানীয় সরকার, রেলওয়ে ও শিপিং করপোরেশনের মালিকানাধীন এসব পাহাড়। বেলতলী ঘোনা সমাজ কল্যাণ পরিষদের সভাপতি শফিকুল ইসলাম মানিক জানান, ওই সব পাহাড়ে যাওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখেই পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। যাতে পাহাড় কেটে বসতি এবং মাটি বিক্রি করা যায়।

এ বিষয়ে পাহাড় খেকোদের আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর কথা বললেন সীতাকুণ্ড (বেলতলী ঘোনা তাঁর নির্বাচনী এলাকার অংশ) থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ দিদারুল আলম।

আকবরশাহ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী আলতাফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘সংসদ সদস্য মোহাম্মদ দিদারুল আলমের নেতৃত্বে আমরা পাহাড় খেকোদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাব।’

বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আলিউর রহমান বলেন, ‘বেলতলী ঘোনার মাঝখান দিয়ে রাস্তা নির্মাণের অর্থ হচ্ছে এর সামনে থাকা অন্তত পাঁচটি পাহাড়কে শায়েস্তা করা। আরও পাহাড় কেটে কাউন্সিলর জমিসের সাম্রাজ্য বাড়ানোর অংশ হিসেবে রাস্তা করা হচ্ছে। এই জসিমের বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনেই তিনটি মামলা ও বেশ কয়েকটি নোটিশ রয়েছে।’

জানা গেছে, যে পাহাড় কেটে রাস্তা বানানো হচ্ছে, সেই পাহাড়ের মালিক অগ্রণী ব্যাংক অফিসার্স কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি। পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে একাধিক আবেদন জমা পড়েছে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে। অগ্রণী ব্যাংক অফিসার্স কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি এসব আবেদন দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতা মোহাম্মদ আবুল কালাম। এর মধ্যে গত ১২ জানুয়ারি স্থানীয় কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ওমর ফারুকের কাছে একটি আবেদন দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে কাউন্সিলর মোহাম্মদ জহুরুল আলম জসিম বলেন, ‘পাহাড় কাটছি না। সিটি করপোরেশনের প্রকল্প বাস্তবায়নে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের জন্য সামান্য মাটি খোঁড়া হচ্ছে। এটা ২ কোটি ৬৭ লাখ টাকার সিটি করপোরেশনের একটি প্রকল্প।’

এর আগে ২৬ ফেব্রুয়ারি পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণ এবং খালের ওপর নির্মিত কাউন্সিলর জসিমের খামার পরিদর্শনে গেলে বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান হামলার শিকার হন।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘কিছুই হয়নি জসিমের। দেশের আইন এত দুর্বল নয় যে, একজন পাহাড়খেকো কাউন্সিলরকে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যাবে না। দুর্বলতা হচ্ছে প্রশাসনের।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত