দুই ঘণ্টার বেশি খোলা থাকে না ক্লিনিক, মেলে না ওষুধও

চারঘাট প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০১ জানুয়ারি ২০২২, ০৭: ৪০
আপডেট : ০১ জানুয়ারি ২০২২, ১৯: ০১

চারঘাট উপজেলায় ২৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। কিন্তু ক্লিনিকগুলো বেশির ভাগ সময় বন্ধ থাকায় কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। মাঝেমধ্যে খোলা থাকলেও ২৭ ধরনের সরকারি ওষুধের বেশির ভাগই পাওয়া যায় না।

উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে বর্তমান সরকার সারা দেশে কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করে। ক্লিনিকে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, টিকাদান কর্মসূচি, পরামর্শসহ বিভিন্ন সেবা প্রদান করার কথা। কিন্তু অদক্ষ জনবল ও নিয়মিত তদারকির অভাবে এর মূল উদ্দেশ্য সফল হচ্ছে না।

সরেজমিনে উপজেলার কয়েকটি কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। অধিকাংশ ক্লিনিক সকাল ১০টার পরে খুলে বেলা ১২টার আগেই বন্ধ হয়ে যায়। অথচ সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী এসব ক্লিনিক সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত খোলা থাকার কথা।

গত বুধবার সরেজমিনে গেলে ভায়ালক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের বনকিশোর কমিউনিটি ক্লিনিকটি বন্ধ পাওয়া যায়। সরকারি ছুটি না থাকা সত্ত্বেও ক্লিনিক খোলেননি কর্তব্যরত চিকিৎসক। বেলা ১২টার দিকে সেবা নিতে অপেক্ষা করতে দেখা যায় ৪০-৫০ জন নারী-শিশুকে।

একই অবস্থা সরদহ ইউনিয়নের খোর্দগোবিন্দপুর কমিউনিটি ক্লিনিকেরও। গত বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে গিয়ে ক্লিনিকটি তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। সেবাপ্রার্থীরা অপেক্ষা করে বাড়ি ফিরছেন। সঠিক সময়ে খোলা পাওয়া যায়নি উপজেলার বাটিকামারী, বাসুদেবপুর, পুঠিমারী ও অনুপামপুর কমিউনিটি ক্লিনিকও।

বনকিশোর কমিউনিটি ক্লিনিকের পাশের বাসিন্দা সুলেখা বেগম অভিযোগ করে জানান, ডাক্তার ঠিকমতো ওষুধ দেয় না। নিয়মিত ক্লিনিকে আসেন না। বেলা ১১টায় আসলেও দুপুর ১২টার আগেই চলে যায়। রোগীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করার অভিযোগও করেন তিনি।

বাসুদেবপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের পাশের বাসিন্দা আজমিরা খাতুন বলেন, ‘নামেই ক্লিনিক। প্রয়োজনের সময় সেবা পাওয়া যায় না। বেশির ভাগ সময়ই থাকে বন্ধ। ২৭ ধরনের ওষুধের কথা বলা হলেও দুই এক প্রকার ওষুধ ছাড়া কিছুই পাওয়া যায় না।’

নাম গোপন রাখার শর্তে এক কমিউনিটি ক্লিনিক পরিদর্শক জানান, যে পরিমাণ ওষুধ সরকারিভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়, প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে তা দুই বছর টানা ৪০ জনের মাঝে বিতরণ করলেও শেষ হবে না। এখানকার কর্মকর্তাদের বেতন কখনো বিলম্ব বা আটকে থাকে না। অথচ নিজেদের খেয়াল খুশিমতো ক্লিনিকে আসেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা।

কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে বনকিশোর কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) ময়েন উদ্দীন বলেন, ‘ক্লিনিক খোলা ছাড়াও আমাদের অনেক কাজ থাকে। এ জন্য মাঝে মধ্যে বন্ধ থাকে। রোগীদের সব সময় জানিয়ে তো ক্লিনিক বন্ধ রাখা যায় না।’

কথা হয় বাটিকামারী কমিউনিটি ক্লিনিকের রবিউল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে ৩টা পর্যন্ত থাকি। মাঝে মাঝে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নানা ধরনের কাজে যাই, সে জন্য বন্ধ থাকতে পারে।’

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আশিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা নিয়মিত ক্লিনিকগুলো তদারকি করি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টিকা কার্যক্রমে সিএইচসিপিরা সহযোগিতা করছেন। এ জন্য কিছু সময়ের জন্য বন্ধ থাকতে পারে। নিয়ম মেনে ক্লিনিক খুলতে সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত