দুই বিচারক হাইকোর্টকে শিক্ষা দিয়েছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০: ৫৯
আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১১: ৫৫

চিত্রনায়িকা পরীমণিকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় রিমান্ডে পাঠানো নিম্ন আদালতের দুই বিচারকের ব্যাখ্যায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, লিখিত ব্যাখ্যায় তাঁরা হাইকোর্টকে শিক্ষা দিয়েছেন। হাইকোর্ট এ ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন। বিচারকদের ব্যাখ্যায় হাইকোর্টকে আন্ডারমাইন (হেয়) করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।

আদালত এই মামলার পরবর্তী আদেশের জন্য ২৯ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন। ওই দিন পরীমণির মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে আবারও আদালতে হাজির হতে হবে।

আদালতে পরীমণির পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবু ইয়াহিয়া দুলাল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মিজানুর রহমান।

গত ৪ আগস্ট পরীমণির বনানীর বাসায় অভিযান চালায় র‍্যাব। অভিযানের পর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে তাঁর বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা হয়। এ মামলায় পরীমণিকে প্রথমে চার দিন, দ্বিতীয় দফায় দুই দিন, তৃতীয় দফায় এক দিনসহ মোট সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

মামলায় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবব্রত বিশ্বাস দ্বিতীয় দফায় পরীমণির দুই দিন এবং ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুল ইসলাম তৃতীয় দফায় এক দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন।

নিম্ন আদালতে জামিন না পেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন পরীমণি। সেখানে শুনানিতে তাঁকে দফায় দফায় রিমান্ড নেওয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট ওই দুই বিচারককে ব্যাখ্যা দিতে এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোলাম মোস্তাফাকে নিজের অবস্থান ও কারণ ব্যাখ্যা করতে ১৫ সেপ্টেম্বর (আজ) আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন। এর ধারাবাহিকতায় দুই বিচারকের ব্যাখ্যা আদালতে দাখিল করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তাও আদালতে উপস্থিত হন।

গতকাল বেলা সোয়া ১১টার দিকে ক্রম অনুসারে বিষয়টি উঠলে হাইকোর্ট বলেন, ‘দুজন ম্যাজিস্ট্রেটকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছিল। তাঁরা উত্তর দিয়েছেন। অংশবিশেষ পড়ে শোনাতে চাই।’

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্নার উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘লার্নেড ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টকে শিক্ষা দিয়েছেন কিছু। এই অংশটুকু পড়ছি। রাষ্ট্র মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। এই মামলার আসামি পরীমণি বিদেশি মদ, এলএসডি, আইসসহ গ্রেপ্তার হন। প্রশ্ন হচ্ছে, এলএসডি ও বিদেশি মদ পেলে শাস্তি কী?’

তখন জেড আই খান পান্না বলেন, ‘পাঁচ বছর হতে পারে।’

আদালত বলেন, ‘এটি পরিষ্কার করতে হবে। যে পরিমাণ এলএসডি ও আইস পাওয়া গেছে, তাতে শাস্তির পরিমাণ কত?’

তখন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মিজানুর রহমান বলেন, ‘ইয়াবা বড়ির ক্ষেত্রে যে সাজা, এলএসডির ক্ষেত্রেও তা-ই হবে।’

আদালত বলেন, ‘তাহলে দুই থেকে পাঁচ বছর হতে পারে।’ জেড আই খান পান্না বলেন, ‘পাঁচ বছর হবে, মাই লর্ড।’

বিচারকের লিখিত ব্যাখ্যা তুলে ধরে আদালত বলেন, ‘এলএসডি মাদক যে কত ভয়ানক, তা পুরো দেশবাসী অবগত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে। এলএসডিকে ভ্রম উৎপাদক মাদক হিসেবেও বলা হয়। ওই ছাত্র এলএসডি গ্রহণের পর একজন ডাব বিক্রেতার কাছ থেকে ছুরি নিয়ে নিজের গলায় পোঁচ মেরে আত্মহননের পথ বেছে নেন।’

আদালত বলেন, ‘আমরা তাঁদের (বিচারক) কারণ দর্শাতে বলেছি, কেন দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে? এখানে তাঁরা বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র এলএসডি গ্রহণের পর একজন ডাব বিক্রেতার কাছ থেকে ছুরি নিয়ে নিজের গলায় পোঁচ মেরেছেন। এখানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নির্দেশনা ও প্রচলিত আইনের বিরুদ্ধে তিনি (বিচারক)। এ কারণে তাঁদের জবাবে আমরা সন্তুষ্ট নই। এ জন্য ২৯ সেপ্টেম্বর পরবর্তী আদেশের জন্য রাখছি।’

আদালত বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা সিডি (মামলার নথিপত্র) উপস্থাপন করেছেন। ২৯ সেপ্টেম্বর পরবর্তী আদেশের জন্য রাখা হচ্ছে। ওই দিন তদন্ত কর্মকর্তাকে আসতে হবে। এ সময় আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, ‘বিচারকদের ব্যাখ্যার কপি পেতে পারি?’

আদালত বলেন, ‘বিষয়টি বিচারাধীন। তাই অংশবিশেষ পড়ে শোনানো হলো। আরেকটু পড়ছি।’

আদালত বলেন, ‘উপযুক্ত বিষয়ে সার্বিক বিবেচনায় আমি (মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবব্রত বিশ্বাস) দুই দিন রিমান্ড মঞ্জুর করার আদেশ প্রদান করি। ওই আদেশ প্রদানে কোনোরূপ ত্রুটিবিচ্যুতি নিতান্তই আমার অনিচ্ছাকৃত এবং সরল বিশ্বাসে করা ভুল।’

ত্রুটি হয়েছে যে তা তাঁরা (বিচারক) বিশ্বাস করেন না উল্লেখ করে আদালত বলেন, ‘হাইকোর্টকে আন্ডারমাইন করা হয়েছে।’

আদালতে হাজির ছিলেন পরীমণি

এদিকে পরীমণি গতকাল ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির হন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য আগামী ১০ অক্টোবর দিন ধার্য করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর হাকিম সত্যব্রত শিকদার এই তারিখ ধার্য করেন।

পরীমণিকে তাঁর বনানীর বাসা থেকে যেদিন গ্রেপ্তার করা হয়, সেদিন জব্দকৃত আইপ্যাড ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং তাঁর ব্যবহৃত গাড়ি জিম্মায় দেওয়ার আবেদন করেন। আদালত পরীমণির মালামাল সম্পর্কে তদন্ত কর্মকর্তাকে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন। সিআইডির পরিদর্শক কাজী গোলাম মোস্তফা এই প্রতিবেদন দেবেন।

পরীমণি আদালতকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজন তাঁকে আটকের দিন ছয় ঘণ্টা ধরে তাঁর বাসা তছনছ করেন। অনেক মালামাল তাঁর বাসা থেকে নিয়ে যান। তাঁর গাড়ি নিয়ে যান। এমনকি তিনি অসুস্থ। প্রতিদিন তাঁর ওষুধ খেতে হয়। ওষুধগুলো তিনি আর খুঁজে পাননি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত