অরুণ কর্মকার
বাঙালির কাছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি চিরায়ত নাম। জাতির পিতা হয়ে ওঠার দীর্ঘ সংগ্রামের প্রক্রিয়ায় দেশকে স্বনির্ভর সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে সারা জীবন তিনি যা করেছেন, যে পথ দেখিয়েছেন, তা তাঁকে নিত্যস্মরণীয় করেছে। যত দিন বাংলাদেশ এবং বাঙালি জাতি থাকবে তত দিন একইভাবে স্মরণীয় ও বরণীয় হবেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এই বাঙালি।
স্বাধীন বাংলাদেশবিরোধী রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র এবং কতিপয় কুলাঙ্গার বাংলাদেশির জিঘাংসার শিকার বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার জন্য খুব কম সময়ই পেয়েছেন। কিন্তু তার মধ্যেই তিনি এমন কিছু মৌলিক কাজ করে গেছেন, যা বাংলাদেশের ভিত্তি শক্ত করেছে।
২০১০ সাল থেকে ৯ আগস্ট পালিত হচ্ছে জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস। সেই সুবাদে এখন সবাই জানে যে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট, তাঁর সপরিবার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মাত্র ছয় দিন আগে শেল অয়েল কোম্পানির কাছ থেকে ৫টি গ্যাসক্ষেত্রের শতভাগ মালিকানা কিনে রেখেছিলেন ৪৫ লাখ (সাড়ে চার মিলিয়ন) ব্রিটিশ পাউন্ডে।
দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা তখন খুবই দুর্বল। প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহারও ছিল সীমিত। সেই পরিস্থিতিতেও তিনি যে ওই গ্যাসক্ষেত্রগুলো কেনার সাহসী ও যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেটা তাঁর দূরদৃষ্টির পরিচায়ক হিসেবে ইতিহাসে স্বীকৃত। তিনি বুঝেছিলেন, জ্বালানি ছাড়া উন্নয়নের চাকা ঘুরবে না। আর নিজেদের জ্বালানিসম্পদের ভান্ডার সমৃদ্ধ না হলে এবং তার আহরণ ও ব্যবহার বাড়ানো না গেলে জ্বালানিনিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হবে।
সেদিন বঙ্গবন্ধু যে ৫টি গ্যাসক্ষেত্র কিনে নিয়েছিলেন (তিতাস, বাখরাবাদ, হবিগঞ্জ, কৈলাসটিলা ও রশিদপুর) সেগুলোতে গ্যাসের মোট মজুত (গ্যাস ইন প্লেস) ছিল প্রায় ২১ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ)। এর মধ্যে উত্তোলনযোগ্য মজুত ছিল সাড়ে ১৫ টিসিএফ। এখনো প্রতিদিন দেশে যে পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে, তার প্রায় ৩৫ শতাংশ আসে এই ৫টি ক্ষেত্র থেকে। ক্ষেত্রগুলোতে এখনো প্রায় ৬ টিসিএফ গ্যাস মজুত আছে, যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। অর্থনৈতিক মূল্য আরও কয়েক গুণ বেশি।
তবে খুব সহজে বঙ্গবন্ধু এই গ্যাসক্ষেত্রগুলোর মালিকানা পাননি। বঙ্গবন্ধুর তৎকালীন একান্ত সচিব ড. ফরাসউদ্দিনের স্মৃতিচারণা এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট ছিল শনিবার। বঙ্গবন্ধু অফিসে এসে বললেন, আজ আমি বাঙালির একটি মুক্তির সনদে সই করব। তার কিছুক্ষণ পরেই ওই ৫টি গ্যাসক্ষেত্রের মালিকানাসংক্রান্ত দলিলপত্রে স্বাক্ষর করেন তিনি।’
ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘গ্যাসক্ষেত্রগুলোর মালিকানা ছাড়তে শেল কোম্পানি রাজি হচ্ছিল না। তখন বঙ্গবন্ধু তাঁদের প্রতিনিধিকে ডেকে এনে বলেছিলেন, তোমরা যদি মালিকানা হস্তান্তর করতে রাজি না হও তাহলে আমরা দেশের নতুন আইন অনুযায়ী ক্ষেত্রগুলো বাজেয়াপ্ত করতে পারি। বাংলাদেশের সংবিধানের ১৬ এবং ৪৩ অনুচ্ছেদ আমাদেরকে সেই অধিকার দিয়েছে। এরপর শেল কোম্পানি মালিকানা হস্তান্তরে রাজি হয়।’
বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান পেট্রোলিয়ামের মালিকানাধীন সিলেট অঞ্চলের দুটি গ্যাসক্ষেত্র জাতীয়করণ করেছিলেন। তিনি এই সিদ্ধান্তগুলো না নিলে দেশের জ্বালানি খাতের অবস্থা কী হতো, আজ তা সহজেই অনুমান করা যায়।
গ্যাস খাতকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু স্থলভাগে এবং বঙ্গোপসাগরে জ্বালানি অনুসন্ধানের পদক্ষেপ নেন। নিজেদের সামর্থ্য সীমিত হওয়ায় স্থলভাগে অনুসন্ধানের জন্য তিনি তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে চুক্তি করেন। তৎকালীন সমাজতান্ত্রিক পশ্চিম জার্মানির কাছেও তিনি সহায়তা চেয়েছিলেন। পশ্চিম জার্মানি বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে দীর্ঘদিন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরও বাংলাদেশে কাজ করেছে।
সদ্য স্বাধীন দেশের জ্বালানি খাতকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু তেল, গ্যাস ও খনিজ করপোরেশন (বর্তমান পেট্রোবাংলা) প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠা করেন মিনারেল এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন নামে আরও একটি প্রতিষ্ঠান।
দেশে জ্বালানি তেলের সুষ্ঠু সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য তিনি তেল বিপণনকারী তিনটি কোম্পানি—পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা জাতীয়করণ করেন। ফলে ওই সময়ের প্রধান এবং বলতে গেলে একমাত্র বাণিজ্যিক জ্বালানি পণ্যের সুষ্ঠু সরবরাহ ও বিপণন নিশ্চিত হয়। বঙ্গবন্ধুর ওই পদক্ষেপে একইসঙ্গে আজকের বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) ভিত্তি স্থাপিত হয়, যার ওপর দাঁড়িয়ে বিপিসি আজ অনেক বড় একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে।
বঙ্গবন্ধু পেট্রোলিয়াম আইন সংশোধন করে যুগোপযোগী করেন, যা তাঁর হত্যাকাণ্ডের পর অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয় এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে, ২০১৬ সালে জাতীয় সংসদে সেটি আইন হিসেবে পাস হয়। জ্বালানি খাতে দক্ষ জনবল গড়ে তোলার জন্য বঙ্গবন্ধু এই খাতের কর্মকর্তাদের জ্বালানিসম্পদে সমৃদ্ধ ইন্দোনেশিয়া ও আলজেরিয়ায় প্রশিক্ষণে পাঠাতে শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফেরা অনেক ছাত্রকে তিনি জ্বালানি বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন।
বঙ্গবন্ধু ভূতাত্ত্বিক জরিপের কাজ বেগবান করার লক্ষ্যে ভারতের সহায়তায় জামালগঞ্জ কয়লাখনি উন্নয়নের পদক্ষেপ নেন। জয়পুরহাটের চুনাপাথর খনি উন্নয়নেরও উদ্যোগ নেন। মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি উন্নয়নের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য ১৯৭৫ সালের জুলাই মাসে একটি বিদেশি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেন।
দেশের সমুদ্রসীমায় জ্বালানি সম্পদ আহরণের জন্য বঙ্গবন্ধু জাতীয় সংসদে মেরিটাইম অ্যাক্ট বিল পাস করেন। তখন পর্যন্ত পৃথিবীর খুব কম দেশেই এমন আইন ছিল। গভীর সমুদ্রে জ্বালানি অনুসন্ধানের জন্য ‘প্রোডাকশন শেয়ারিং কনট্রাক্ট (পিএসসি) ফর ডিপ সি এক্সপ্লোরেশন’ প্রণয়ন করেন। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু ৮টি বিদেশি কোম্পানির মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে মোট ৩১ হাজার ৬০০ লাইন কিলোমিটার ভূকম্পন জরিপ করান। এর অংশ হিসেবে তখন অগভীর সমুদ্রবক্ষে ৭টি অনুসন্ধান কূপ খনন করা হয়। তখনই কুতুবদিয়া গ্যাসক্ষেত্রটি আবিষ্কৃত হয়। সাঙ্গু গ্যাসক্ষেত্রেরও আভাস পাওয়া যায়।
এই সব উদ্যোগ ও পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশকে জ্বালানি খাতে স্বনির্ভর হওয়ার পথ দেখিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু তাঁর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর দেশের উন্নয়নমুখী সব উদ্যোগের পাশাপাশি জ্বালানি খাতের অগ্রযাত্রাও থেমে যায়। রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা, সামরিক অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানে ক্ষমতা দখলের লড়াই বঙ্গবন্ধুহীন বাংলাদেশকে একটি বিভ্রান্ত ও লক্ষ্যহীন রাষ্ট্রে পরিণত করে। বাংলাদেশ স্বাধীনতার চেতনার বিপরীতে চলতে শুরু করে।
এরপর বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে ওঠে ২০০৯ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর। ওই সময় প্রায় সব ক্ষেত্রে নতুন উদ্যমে অগ্রযাত্রা সূচিত হয়, যা অব্যাহতভাবে চলছে। জ্বালানি খাতও এগিয়ে চলেছে। গত ১০-১২ বছরে দেশের কৃষি, শিল্প, অবকাঠামো খাতে ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। অর্থনীতির আকার বড় হয়েছে। মাথাপিছু আয় বেড়েছে। ফলে দেশের জ্বালানি দিয়ে পুরো চাহিদা মিটানো যাচ্ছে না। তাই গ্যাস-কয়লা আমদানিও করতে হচ্ছে।
তবে এই প্রক্রিয়ায় আমাদের নিজস্ব জ্বালানি সম্পদের অনুসন্ধান ও আহরণ অবহেলিত হচ্ছে কি না এবং আমরা ক্রমাগতভাবে আমদানিনির্ভরতার বিপজ্জনক পথে এগোচ্ছি কি না, তা ভেবে দেখার সময় হয়েছে।
বাঙালির কাছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি চিরায়ত নাম। জাতির পিতা হয়ে ওঠার দীর্ঘ সংগ্রামের প্রক্রিয়ায় দেশকে স্বনির্ভর সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে সারা জীবন তিনি যা করেছেন, যে পথ দেখিয়েছেন, তা তাঁকে নিত্যস্মরণীয় করেছে। যত দিন বাংলাদেশ এবং বাঙালি জাতি থাকবে তত দিন একইভাবে স্মরণীয় ও বরণীয় হবেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এই বাঙালি।
স্বাধীন বাংলাদেশবিরোধী রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র এবং কতিপয় কুলাঙ্গার বাংলাদেশির জিঘাংসার শিকার বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার জন্য খুব কম সময়ই পেয়েছেন। কিন্তু তার মধ্যেই তিনি এমন কিছু মৌলিক কাজ করে গেছেন, যা বাংলাদেশের ভিত্তি শক্ত করেছে।
২০১০ সাল থেকে ৯ আগস্ট পালিত হচ্ছে জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস। সেই সুবাদে এখন সবাই জানে যে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট, তাঁর সপরিবার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মাত্র ছয় দিন আগে শেল অয়েল কোম্পানির কাছ থেকে ৫টি গ্যাসক্ষেত্রের শতভাগ মালিকানা কিনে রেখেছিলেন ৪৫ লাখ (সাড়ে চার মিলিয়ন) ব্রিটিশ পাউন্ডে।
দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা তখন খুবই দুর্বল। প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহারও ছিল সীমিত। সেই পরিস্থিতিতেও তিনি যে ওই গ্যাসক্ষেত্রগুলো কেনার সাহসী ও যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেটা তাঁর দূরদৃষ্টির পরিচায়ক হিসেবে ইতিহাসে স্বীকৃত। তিনি বুঝেছিলেন, জ্বালানি ছাড়া উন্নয়নের চাকা ঘুরবে না। আর নিজেদের জ্বালানিসম্পদের ভান্ডার সমৃদ্ধ না হলে এবং তার আহরণ ও ব্যবহার বাড়ানো না গেলে জ্বালানিনিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হবে।
সেদিন বঙ্গবন্ধু যে ৫টি গ্যাসক্ষেত্র কিনে নিয়েছিলেন (তিতাস, বাখরাবাদ, হবিগঞ্জ, কৈলাসটিলা ও রশিদপুর) সেগুলোতে গ্যাসের মোট মজুত (গ্যাস ইন প্লেস) ছিল প্রায় ২১ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ)। এর মধ্যে উত্তোলনযোগ্য মজুত ছিল সাড়ে ১৫ টিসিএফ। এখনো প্রতিদিন দেশে যে পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে, তার প্রায় ৩৫ শতাংশ আসে এই ৫টি ক্ষেত্র থেকে। ক্ষেত্রগুলোতে এখনো প্রায় ৬ টিসিএফ গ্যাস মজুত আছে, যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। অর্থনৈতিক মূল্য আরও কয়েক গুণ বেশি।
তবে খুব সহজে বঙ্গবন্ধু এই গ্যাসক্ষেত্রগুলোর মালিকানা পাননি। বঙ্গবন্ধুর তৎকালীন একান্ত সচিব ড. ফরাসউদ্দিনের স্মৃতিচারণা এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট ছিল শনিবার। বঙ্গবন্ধু অফিসে এসে বললেন, আজ আমি বাঙালির একটি মুক্তির সনদে সই করব। তার কিছুক্ষণ পরেই ওই ৫টি গ্যাসক্ষেত্রের মালিকানাসংক্রান্ত দলিলপত্রে স্বাক্ষর করেন তিনি।’
ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘গ্যাসক্ষেত্রগুলোর মালিকানা ছাড়তে শেল কোম্পানি রাজি হচ্ছিল না। তখন বঙ্গবন্ধু তাঁদের প্রতিনিধিকে ডেকে এনে বলেছিলেন, তোমরা যদি মালিকানা হস্তান্তর করতে রাজি না হও তাহলে আমরা দেশের নতুন আইন অনুযায়ী ক্ষেত্রগুলো বাজেয়াপ্ত করতে পারি। বাংলাদেশের সংবিধানের ১৬ এবং ৪৩ অনুচ্ছেদ আমাদেরকে সেই অধিকার দিয়েছে। এরপর শেল কোম্পানি মালিকানা হস্তান্তরে রাজি হয়।’
বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান পেট্রোলিয়ামের মালিকানাধীন সিলেট অঞ্চলের দুটি গ্যাসক্ষেত্র জাতীয়করণ করেছিলেন। তিনি এই সিদ্ধান্তগুলো না নিলে দেশের জ্বালানি খাতের অবস্থা কী হতো, আজ তা সহজেই অনুমান করা যায়।
গ্যাস খাতকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু স্থলভাগে এবং বঙ্গোপসাগরে জ্বালানি অনুসন্ধানের পদক্ষেপ নেন। নিজেদের সামর্থ্য সীমিত হওয়ায় স্থলভাগে অনুসন্ধানের জন্য তিনি তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে চুক্তি করেন। তৎকালীন সমাজতান্ত্রিক পশ্চিম জার্মানির কাছেও তিনি সহায়তা চেয়েছিলেন। পশ্চিম জার্মানি বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে দীর্ঘদিন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরও বাংলাদেশে কাজ করেছে।
সদ্য স্বাধীন দেশের জ্বালানি খাতকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু তেল, গ্যাস ও খনিজ করপোরেশন (বর্তমান পেট্রোবাংলা) প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠা করেন মিনারেল এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন নামে আরও একটি প্রতিষ্ঠান।
দেশে জ্বালানি তেলের সুষ্ঠু সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য তিনি তেল বিপণনকারী তিনটি কোম্পানি—পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা জাতীয়করণ করেন। ফলে ওই সময়ের প্রধান এবং বলতে গেলে একমাত্র বাণিজ্যিক জ্বালানি পণ্যের সুষ্ঠু সরবরাহ ও বিপণন নিশ্চিত হয়। বঙ্গবন্ধুর ওই পদক্ষেপে একইসঙ্গে আজকের বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) ভিত্তি স্থাপিত হয়, যার ওপর দাঁড়িয়ে বিপিসি আজ অনেক বড় একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে।
বঙ্গবন্ধু পেট্রোলিয়াম আইন সংশোধন করে যুগোপযোগী করেন, যা তাঁর হত্যাকাণ্ডের পর অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয় এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে, ২০১৬ সালে জাতীয় সংসদে সেটি আইন হিসেবে পাস হয়। জ্বালানি খাতে দক্ষ জনবল গড়ে তোলার জন্য বঙ্গবন্ধু এই খাতের কর্মকর্তাদের জ্বালানিসম্পদে সমৃদ্ধ ইন্দোনেশিয়া ও আলজেরিয়ায় প্রশিক্ষণে পাঠাতে শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফেরা অনেক ছাত্রকে তিনি জ্বালানি বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন।
বঙ্গবন্ধু ভূতাত্ত্বিক জরিপের কাজ বেগবান করার লক্ষ্যে ভারতের সহায়তায় জামালগঞ্জ কয়লাখনি উন্নয়নের পদক্ষেপ নেন। জয়পুরহাটের চুনাপাথর খনি উন্নয়নেরও উদ্যোগ নেন। মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি উন্নয়নের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য ১৯৭৫ সালের জুলাই মাসে একটি বিদেশি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেন।
দেশের সমুদ্রসীমায় জ্বালানি সম্পদ আহরণের জন্য বঙ্গবন্ধু জাতীয় সংসদে মেরিটাইম অ্যাক্ট বিল পাস করেন। তখন পর্যন্ত পৃথিবীর খুব কম দেশেই এমন আইন ছিল। গভীর সমুদ্রে জ্বালানি অনুসন্ধানের জন্য ‘প্রোডাকশন শেয়ারিং কনট্রাক্ট (পিএসসি) ফর ডিপ সি এক্সপ্লোরেশন’ প্রণয়ন করেন। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু ৮টি বিদেশি কোম্পানির মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে মোট ৩১ হাজার ৬০০ লাইন কিলোমিটার ভূকম্পন জরিপ করান। এর অংশ হিসেবে তখন অগভীর সমুদ্রবক্ষে ৭টি অনুসন্ধান কূপ খনন করা হয়। তখনই কুতুবদিয়া গ্যাসক্ষেত্রটি আবিষ্কৃত হয়। সাঙ্গু গ্যাসক্ষেত্রেরও আভাস পাওয়া যায়।
এই সব উদ্যোগ ও পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশকে জ্বালানি খাতে স্বনির্ভর হওয়ার পথ দেখিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু তাঁর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর দেশের উন্নয়নমুখী সব উদ্যোগের পাশাপাশি জ্বালানি খাতের অগ্রযাত্রাও থেমে যায়। রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা, সামরিক অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানে ক্ষমতা দখলের লড়াই বঙ্গবন্ধুহীন বাংলাদেশকে একটি বিভ্রান্ত ও লক্ষ্যহীন রাষ্ট্রে পরিণত করে। বাংলাদেশ স্বাধীনতার চেতনার বিপরীতে চলতে শুরু করে।
এরপর বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে ওঠে ২০০৯ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর। ওই সময় প্রায় সব ক্ষেত্রে নতুন উদ্যমে অগ্রযাত্রা সূচিত হয়, যা অব্যাহতভাবে চলছে। জ্বালানি খাতও এগিয়ে চলেছে। গত ১০-১২ বছরে দেশের কৃষি, শিল্প, অবকাঠামো খাতে ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। অর্থনীতির আকার বড় হয়েছে। মাথাপিছু আয় বেড়েছে। ফলে দেশের জ্বালানি দিয়ে পুরো চাহিদা মিটানো যাচ্ছে না। তাই গ্যাস-কয়লা আমদানিও করতে হচ্ছে।
তবে এই প্রক্রিয়ায় আমাদের নিজস্ব জ্বালানি সম্পদের অনুসন্ধান ও আহরণ অবহেলিত হচ্ছে কি না এবং আমরা ক্রমাগতভাবে আমদানিনির্ভরতার বিপজ্জনক পথে এগোচ্ছি কি না, তা ভেবে দেখার সময় হয়েছে।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে