আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৮: ৫২
আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯: ৪৮

২০০৬ সালের পর আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র সূচকে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে বাংলাদেশ। সে বছরেই প্রথম গণতন্ত্র সূচক প্রকাশ করে যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সাপ্তাহিক ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ)। ২০০৬ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৬ দশমিক ১১। এরপর সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামলে স্কোর হয় ৫ দশমিক ৫২ পয়েন্ট। নানা হিসাব-নিকাশে ২০২০ সালে বাংলাদেশ পেয়েছে ৫ দশমিক ৯৯ পয়েন্ট। ১৬৫টি দেশ ও দুটি অঞ্চল নিয়ে তৈরি করা ২০২০ সালের গণতন্ত্র সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৭৬তম।

তবে ইআইইউ বলছে, ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশ রয়েছে মিশ্রশাসন ব্যবস্থায় (হাইব্রিড রেজিম)। যাকে বলা হয় ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র ও কর্তৃত্ববাদী শাসনের মধ্যকার অবস্থা। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে ভালো অবস্থায় আছে ভারত ও শ্রীলঙ্কা।

জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক তোফায়েল আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান কোথায়? এটা দিয়ে কোনো কিছু পরিমাপ করা সম্ভব নয়। আমরা মনে করি, গণতন্ত্র একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা, কিংবা ক্ষমতায় থাকার বিষয়। আসলে সেটি জীবনযাপন, সংস্কৃতি, দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করে। গণতন্ত্রের একটা পোশাকি আবরণ নিয়ে বসবাস করছি আমরা, ভেতরে কিছু নেই। বাংলাদেশের ইতিহাস বলে, প্রতিবারই আমরা মুখে গণতন্ত্র দিয়ে শুরু করি, কিন্তু বারবারই ফিরে গেছি সেই একই জায়গায়।’

ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের মাত্র ৮ দশমিক ৪ ভাগ মানুষ পূর্ণ গণতন্ত্র ভোগ করে, যা বিদ্যমান ২৩টি দেশে। সূচকের ২৪তম স্থান থেকে ৭৫তম স্থান পর্যন্ত ৫২টি দেশে আছে ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র।

সূচকের ৭৬তম স্থানে থাকা বাংলাদেশ থেকেই শুরু হয়েছে হাইব্রিড শাসনব্যবস্থা, এ তালিকায় দেশ আছে ৩৫টি। আরও আছে কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা। যেসব দেশের স্কোর ৪-এর নিচে, তারা কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার তালিকায় পড়েছে। মোট ৫৭টি দেশ আছে সে তালিকায়। এবারও উত্তর কোরিয়া সূচকের সর্বনিম্ন স্থানে, স্কোর মোট ১ দশমিক ০৮।

মোট পাঁচটি মানদণ্ডে ইআইইউ বিভিন্ন দেশের গণতন্ত্রকে মূল্যায়ন করে। তা হলো নির্বাচনী ব্যবস্থা ও বহুদলীয় অবস্থান, নাগরিক অধিকার, সরকার পরিচালনা, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতি। প্রতিটি মানদণ্ডকে শূন্য থেকে ১০ স্কোরের মধ্যে হিসাব করে গড় করা হয়। প্রাপ্ত স্কোরের ভিত্তিতে দেশগুলোকে চার ভাগ করা হয়—পূর্ণ গণতন্ত্র, ত্রুটিপূর্ণ, গণতন্ত্র হাইব্রিড রেজিম ও কর্তৃত্ববাদী শাসন।

ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট তাদের বর্ণনায় হাইব্রিড শাসনব্যবস্থা বলতে বোঝায়, যেখানে প্রায়ই অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হয়। এ ধরনের শাসনব্যবস্থায় বিরোধী দল ও বিরোধী প্রার্থীদের ওপর সরকার চাপ প্রয়োগ করে। দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার ও দুর্বল আইনের শাসন এবং দুর্বল নাগরিক সমাজ এ ধরনের শাসনব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য। এ বিভাগে থাকা দেশগুলোতে বিচারব্যবস্থা স্বাধীনতা ভোগ করে না এবং সংবাদকর্মীরা হয়রানির শিকার হন।

স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে গণতান্ত্রিক যাত্রায় বাংলাদেশের অবস্থান স্বস্তিকর নয়, হতাশার বলে মন্তব্য ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি)। ১৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা এখনো ‘হাইব্রিড রেজিমে’ অবস্থান করছি, যাকে পূর্ণাঙ্গ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বলা যাবে না। দেশের রাজনৈতিক কাঠামোয় গণতান্ত্রিক চর্চার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটেনি বলেই শুধু বাংলাদেশের এই স্কোর নয়; বরং আমাদের শক্তিশালী বেশ কিছু আইনি কাঠামো থাকলেও সেগুলো পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত