ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ
বাংলাদেশে কর সংস্কৃতির সুরতহাল রিপোর্ট পর্যালোচনায় প্রথমেই যে বিষয়টি শনাক্ত হয় তা হলো, করযোগ্য আয় নির্ধারণ থেকে শুরু করে সব পর্যায়ে পরিপালনীয় বিধিবিধানের ভাষায় একধরনের কুটিল মনোভাবের প্রকাশ পেয়ে তা জটিল, দ্ব্যর্থ ও কূটার্থবোধক হয়ে ওঠে, প্রবর্তিত আয়করসংক্রান্ত সার্কুলারে জটিলতা যুগলবন্দী হয়ে ওঠে। ঔপনিবেশিক সরকারের তরফে করদাতাদের কল্যাণ নিশ্চিত করার বিষয়টি মুখ্য বিবেচনায় না এলেও কর আদায়ের ক্ষেত্রে জমিদার পাইক-পেয়াদাসুলভ যুদ্ধংদেহী মনোভাব প্রকাশ পায়। উদ্দেশ্য থেকে যায়, তোমার আয় হোক আর না হোক, অর্থাৎ বাঁচো-মরো রাজস্ব আমার চাই। এ ধরনের আইনগত দৃষ্টিভঙ্গির বদৌলতে কর আদায়কারী বিভাগের সঙ্গে করদাতাদের সম্পর্ক জবরদস্তিমূলক, পরস্পরকে এড়িয়ে চলার কৌশলাভিমুখী হয়ে পড়ে। অন্তরালে ব্রিটিশ প্রশাসনে বহুল কথিত একটা সাধারণ নির্দেশনা ছিল যেন এ রকম, ‘চোর তো চুরি করিবেই কিন্তু গৃহস্থকে সজাগ থাকিতে হইবেই।’ করদাতাদের এরূপ বিরূপ ধারণায়, বিবেচনা এবং তাদের ধরার ইন্ধন কর আইনের ভাষ্যে যেন স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এরূপ পরস্পর অবিশ্বাসের ও প্রতিদ্বন্দ্বী পরিবেশে কর নির্ধারণ ও পরিশোধের ক্ষেত্রে পরস্পরকে এড়িয়ে চলার এবং সেই লক্ষ্যে অনৈতিক আঁতাতের মাধ্যম রাজস্ব ফাঁকির সংস্কৃতির সূত্রপাত ঘটে। ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থায় দুর্নীতিগ্রস্ততার এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টিতে সেই সময়কার আয়কর আইনের ভাষার যেন ছিল পরোক্ষ প্রেরণা বা সুযোগ। এমন অনেক আইন আছে, যা বেআইনি আচরণকে উসকে দেয়। এ রকম একটা পরিবেশে করদাতাদের সঙ্গে আঁতাতের মাধ্যমে কর ফাঁকি কার্যক্রমে করদাতা আর আদায়কারীর মধ্যবর্তী সাহায্যকারীও যেন সহায়ক ভূমিকায় চলে আসে। এই জটিল, অনভিপ্রেত ব্যবস্থাদি আয়কর সার্কুলারের ভাষায় প্রতিফলিত হতে থাকে।
১৯২২ সালের ভারতীয় আয়কর আইন ১৯৪৭-এ ভারত বিভাগের পর যেখানে ‘ভারত’ লেখা, সেখানে ‘পাকিস্তান’ প্রতিস্থাপন করে পুরো পাকিস্তানে প্রবর্তিত হয়। শাসকের ও শাসিতের মধ্যকার হরিজেন্টাল ও ভার্টিক্যাল সম্পর্কের শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তন সত্ত্বেও আয়করসংক্রান্ত ধ্যান-ধারণা, মতিগতি, স্বভাবচরিত্র সবই সেই ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার আদলে থেকে যায়। আয়করব্যবস্থা যেখানে সামাজিক সুবিচার ব্যবস্থাপনায় রাষ্ট্র ও নাগরিকের মধ্যে পারস্পরিক-পরিপূরক দায়িত্ব পালনের বিষয়, ঔপনিবেশিক শাসনকাঠামোয় সংগত কারণেই যার যথার্থতা অনুসরণ ছিল অনুপস্থিত, পাকিস্তান প্রজাতন্ত্রেও সেই একই ঔপনিবেশিক দৃষ্টিভঙ্গি অব্যাহত থাকা বা অনুসরণ ছিল অত্যন্ত দুঃখজনক। স্মর্তব্য যে আজকের বাংলাদেশ তখন তদানীন্তন পাকিস্তানের অধীনে উপনিবেশসম একটি প্রদেশ হিসেবে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ তথা আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক দিক দিয়ে বিপুল বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার ছিল। আর আয়কর রাজস্ব আদায়ের পুরো প্রশাসনিক দায়িত্ব ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে। প্রসঙ্গত, ভারতীয় প্রজাতন্ত্র ১৯৬১ সালে ১৯২২ সালের আয়কর আইনকে নিজস্ব সমাজ ও সময়ের দাবির সঙ্গে সাযুজ্য রেখে পুনর্গঠনের মাধ্যমে নতুন আয়কর আইন প্রবর্তন করে।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর এক যুগের বেশি সময় সেই ১৯২২ সালের আয়কর আইন ভারতের স্থলে পাকিস্তান, পাকিস্তানের স্থলে বাংলাদেশ প্রতিস্থাপিত ও নামাঙ্কিত হওয়া ছাড়া একইভাবে বলবৎ ও প্রযোজ্য থাকে। আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ (১৯৮৪ সালের ৩৬ নম্বর অধ্যাদেশ) জারির মাধ্যমে বাংলাদেশে নিজস্ব আয়কর আইন প্রবর্তিত হয় ১৯৮৪ সালে। তবে তখন দেশে আইন পরিষদ বিদ্যমান না থাকায় রাষ্ট্র ও নাগরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট ও জনগুরুত্বপূর্ণ আয়কর আইনটি অধ্যাদেশ হিসেবে জারি হওয়ায় এর প্রণয়ন ও প্রয়োগযোগ্যতা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে। বারবার দাবি উঠেছে আয়কর অধ্যাদেশের স্থলে আয়কর আইন প্রণয়নের।
২০২৩ সালের ১২ নম্বর আইন হিসেবে খ্যাত ‘আয়কর আইন ২০২৩’-এর ভাষা ও গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণে গেলে এটা প্রতীয়মান হয় যে বছর বছর অর্থ আইনে যেসব ছিটেফোঁটা শব্দগত সংযোজন, বিয়োজন এবং মূল ধারণার আওতায় প্রয়োগযোগ্য মাপকাঠির পরিবর্তন বা পরিমার্জন অনুমোদিত হয়েছে তা বাংলা ভাষায় ধারণ করা ছাড়া ১৯২২-এর আইন তথা ১৯৮৪ সালের অধ্যাদেশের দৃষ্টিভঙ্গিতে তেমন কোনো পরিবর্তন বা সংস্কার দৃশ্যগোচর হয় না; বরং প্রতিবছর কর নির্ধারণ, শুনানি, বিচার-আচারে কর কর্মকর্তাদের ক্ষমতা বা এখতিয়ার, কর অবকাশ-নিষ্কৃতি-ছাড় কিংবা বিশেষ সুবিধাবলির ধারা-উপধারা সংযোজন-বিয়োজন করতে করতে অনেক ক্ষেত্রেই করারোপ, আদায় ও করদাতার অধিকার, কর অবকাশ-নিষ্কৃতি ও সুবিধাসংক্রান্ত মৌল দর্শন হয়ে রয়ে গেছে প্রায় একই সমতলে। পক্ষান্তরে যুগধর্মের সঙ্গে সংগতি রেখে কর নির্ধারণ ও আদায়সংক্রান্ত বিধানাবলি সহজীকরণ, সরলীকরণ তথা করদাতা বান্ধবকরণের প্রয়াস থাকলেও ক্ষেত্রবিশেষে আরও জটিল হয়েছে। বাংলাদেশ অর্থনীতির সমকালীন পরিবেশ-পরিস্থিতির আলোকে আয়করব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগসংবলিত সংশোধন সংযোজন-বিয়োজন প্রয়াস বারবার যেন উপেক্ষিতই থেকে গেছে।
একটি স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী দেশের অর্থনীতি মুক্তবাজার অর্থনীতিতে অবগাহন করে অধুনা মনস্ক হতে চাইলেও সে দেশের আয়কর আইনের ভাষা ও দৃষ্টিভঙ্গি এখনো যেন ঔপনিবেশিক আমলের পারস্পরিক অবিশ্বাসের, সংশয়-সন্দেহের, জটিলতার আবর্তে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের নামে বরং আইনের আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা পড়ার ভীতিপ্রদ পরিস্থিতির পথ পরিক্রমায়। স্বেচ্ছায় করদানে সক্ষম করদাতাকে উদ্বুদ্ধকরণের ক্ষেত্রে স্বতঃস্ফূর্ততায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়, নিরুৎসাহিতবোধের কারণ হয়ে দাঁড়ায় বিদ্যমান আইনের ভাষা ও দৃষ্টিভঙ্গি। সেই আইন প্রয়োগে অভ্যস্ত আয়কর বিভাগ এবং সেই আইনের আওতায় করদাতাকে সহায়তাদানকারী সমাজও তাদের মেধা ও বিজ্ঞ কৌশলেও সময়ের দাবির প্রেক্ষাপটে আন্তরিক হয়েও যথাসংস্কারে সফল অবস্থায় উত্তরণে গলদঘর্ম হয়। ১৯৮৭ সালে বাংলা ভাষা প্রয়োগ আইন পাসের পর দেশের সব আইন বাংলা ভাষায় প্রণয়নের বিধান থাকলেও আয়কর আইনটি এই প্রথম বাংলা ভাষায় প্রণীত হয়েছে। তবে এর হুবহু ইংরেজি ভার্সন এখনো আলোর মুখ দেখেনি। ইংরেজি ভাষায় দুর্বোধ্য ও দ্ব্যর্থবোধক প্রাকরণিক ও পদ্ধতি প্রক্রিয়ার সমাহার ঘটানো হলে যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক আবহাওয়া ও সংস্কৃতিতে বিদেশিদের মধ্যে এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সংগত প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। এ দেশের আয়কর আইন হবে এ দেশেরই আবহমান অর্থনীতির আবহে লালিত ধ্যান-ধারণার প্রতিফলক, তবেই বাড়বে এর গ্রহণযোগ্যতা এবং এর বাস্তবায়নযোগ্যতা।
এ কথা অনস্বীকার্য থেকে যাবে যে আয়কর আইনের ভাষা হওয়া আবশ্যক সহজবোধ্য, জটিলতা পরিহারি এবং এর প্রয়োগ হবে স্বাচ্ছন্দ্যে সর্বজনীন ব্যবহারের উপযোগী। করদাতা যেন নিজেই নিজের আয়কর ফরম পূরণ, কর নির্ধারণ এবং সরাসরি তা দাখিলে সক্ষম হন। অর্থনীতির বিভিন্ন পর্যায়ে অবস্থানরত আয়করদাতারা যেন অভিন্ন আচরণে আইনগতভাবে আয়কর দিতে দায়িত্বশীল হতে স্বতঃস্ফূর্ততা বোধ করেন। কর আদায় নয়, কর আহরণে করদাতা ও কর আহরণকারীর মধ্যকার দূরত্ব যত কমে আসবে, যত অধিক মাত্রায় করদাতা কর নেটের আওতায় আসবেন, তত কর রাজস্ব আহরণে সুষম, সহনশীল ও দায়িত্ববোধের বিকাশ ঘটবে। এরূপ পরিস্থিতিতে করদাতাকে তাড়া করে ফেরার স্পর্শকাতরতার অবসান ঘটবে।
ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ, সাবেক সচিব ও এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান
বাংলাদেশে কর সংস্কৃতির সুরতহাল রিপোর্ট পর্যালোচনায় প্রথমেই যে বিষয়টি শনাক্ত হয় তা হলো, করযোগ্য আয় নির্ধারণ থেকে শুরু করে সব পর্যায়ে পরিপালনীয় বিধিবিধানের ভাষায় একধরনের কুটিল মনোভাবের প্রকাশ পেয়ে তা জটিল, দ্ব্যর্থ ও কূটার্থবোধক হয়ে ওঠে, প্রবর্তিত আয়করসংক্রান্ত সার্কুলারে জটিলতা যুগলবন্দী হয়ে ওঠে। ঔপনিবেশিক সরকারের তরফে করদাতাদের কল্যাণ নিশ্চিত করার বিষয়টি মুখ্য বিবেচনায় না এলেও কর আদায়ের ক্ষেত্রে জমিদার পাইক-পেয়াদাসুলভ যুদ্ধংদেহী মনোভাব প্রকাশ পায়। উদ্দেশ্য থেকে যায়, তোমার আয় হোক আর না হোক, অর্থাৎ বাঁচো-মরো রাজস্ব আমার চাই। এ ধরনের আইনগত দৃষ্টিভঙ্গির বদৌলতে কর আদায়কারী বিভাগের সঙ্গে করদাতাদের সম্পর্ক জবরদস্তিমূলক, পরস্পরকে এড়িয়ে চলার কৌশলাভিমুখী হয়ে পড়ে। অন্তরালে ব্রিটিশ প্রশাসনে বহুল কথিত একটা সাধারণ নির্দেশনা ছিল যেন এ রকম, ‘চোর তো চুরি করিবেই কিন্তু গৃহস্থকে সজাগ থাকিতে হইবেই।’ করদাতাদের এরূপ বিরূপ ধারণায়, বিবেচনা এবং তাদের ধরার ইন্ধন কর আইনের ভাষ্যে যেন স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এরূপ পরস্পর অবিশ্বাসের ও প্রতিদ্বন্দ্বী পরিবেশে কর নির্ধারণ ও পরিশোধের ক্ষেত্রে পরস্পরকে এড়িয়ে চলার এবং সেই লক্ষ্যে অনৈতিক আঁতাতের মাধ্যম রাজস্ব ফাঁকির সংস্কৃতির সূত্রপাত ঘটে। ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থায় দুর্নীতিগ্রস্ততার এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টিতে সেই সময়কার আয়কর আইনের ভাষার যেন ছিল পরোক্ষ প্রেরণা বা সুযোগ। এমন অনেক আইন আছে, যা বেআইনি আচরণকে উসকে দেয়। এ রকম একটা পরিবেশে করদাতাদের সঙ্গে আঁতাতের মাধ্যমে কর ফাঁকি কার্যক্রমে করদাতা আর আদায়কারীর মধ্যবর্তী সাহায্যকারীও যেন সহায়ক ভূমিকায় চলে আসে। এই জটিল, অনভিপ্রেত ব্যবস্থাদি আয়কর সার্কুলারের ভাষায় প্রতিফলিত হতে থাকে।
১৯২২ সালের ভারতীয় আয়কর আইন ১৯৪৭-এ ভারত বিভাগের পর যেখানে ‘ভারত’ লেখা, সেখানে ‘পাকিস্তান’ প্রতিস্থাপন করে পুরো পাকিস্তানে প্রবর্তিত হয়। শাসকের ও শাসিতের মধ্যকার হরিজেন্টাল ও ভার্টিক্যাল সম্পর্কের শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তন সত্ত্বেও আয়করসংক্রান্ত ধ্যান-ধারণা, মতিগতি, স্বভাবচরিত্র সবই সেই ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার আদলে থেকে যায়। আয়করব্যবস্থা যেখানে সামাজিক সুবিচার ব্যবস্থাপনায় রাষ্ট্র ও নাগরিকের মধ্যে পারস্পরিক-পরিপূরক দায়িত্ব পালনের বিষয়, ঔপনিবেশিক শাসনকাঠামোয় সংগত কারণেই যার যথার্থতা অনুসরণ ছিল অনুপস্থিত, পাকিস্তান প্রজাতন্ত্রেও সেই একই ঔপনিবেশিক দৃষ্টিভঙ্গি অব্যাহত থাকা বা অনুসরণ ছিল অত্যন্ত দুঃখজনক। স্মর্তব্য যে আজকের বাংলাদেশ তখন তদানীন্তন পাকিস্তানের অধীনে উপনিবেশসম একটি প্রদেশ হিসেবে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ তথা আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক দিক দিয়ে বিপুল বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার ছিল। আর আয়কর রাজস্ব আদায়ের পুরো প্রশাসনিক দায়িত্ব ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে। প্রসঙ্গত, ভারতীয় প্রজাতন্ত্র ১৯৬১ সালে ১৯২২ সালের আয়কর আইনকে নিজস্ব সমাজ ও সময়ের দাবির সঙ্গে সাযুজ্য রেখে পুনর্গঠনের মাধ্যমে নতুন আয়কর আইন প্রবর্তন করে।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর এক যুগের বেশি সময় সেই ১৯২২ সালের আয়কর আইন ভারতের স্থলে পাকিস্তান, পাকিস্তানের স্থলে বাংলাদেশ প্রতিস্থাপিত ও নামাঙ্কিত হওয়া ছাড়া একইভাবে বলবৎ ও প্রযোজ্য থাকে। আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ (১৯৮৪ সালের ৩৬ নম্বর অধ্যাদেশ) জারির মাধ্যমে বাংলাদেশে নিজস্ব আয়কর আইন প্রবর্তিত হয় ১৯৮৪ সালে। তবে তখন দেশে আইন পরিষদ বিদ্যমান না থাকায় রাষ্ট্র ও নাগরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট ও জনগুরুত্বপূর্ণ আয়কর আইনটি অধ্যাদেশ হিসেবে জারি হওয়ায় এর প্রণয়ন ও প্রয়োগযোগ্যতা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে। বারবার দাবি উঠেছে আয়কর অধ্যাদেশের স্থলে আয়কর আইন প্রণয়নের।
২০২৩ সালের ১২ নম্বর আইন হিসেবে খ্যাত ‘আয়কর আইন ২০২৩’-এর ভাষা ও গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণে গেলে এটা প্রতীয়মান হয় যে বছর বছর অর্থ আইনে যেসব ছিটেফোঁটা শব্দগত সংযোজন, বিয়োজন এবং মূল ধারণার আওতায় প্রয়োগযোগ্য মাপকাঠির পরিবর্তন বা পরিমার্জন অনুমোদিত হয়েছে তা বাংলা ভাষায় ধারণ করা ছাড়া ১৯২২-এর আইন তথা ১৯৮৪ সালের অধ্যাদেশের দৃষ্টিভঙ্গিতে তেমন কোনো পরিবর্তন বা সংস্কার দৃশ্যগোচর হয় না; বরং প্রতিবছর কর নির্ধারণ, শুনানি, বিচার-আচারে কর কর্মকর্তাদের ক্ষমতা বা এখতিয়ার, কর অবকাশ-নিষ্কৃতি-ছাড় কিংবা বিশেষ সুবিধাবলির ধারা-উপধারা সংযোজন-বিয়োজন করতে করতে অনেক ক্ষেত্রেই করারোপ, আদায় ও করদাতার অধিকার, কর অবকাশ-নিষ্কৃতি ও সুবিধাসংক্রান্ত মৌল দর্শন হয়ে রয়ে গেছে প্রায় একই সমতলে। পক্ষান্তরে যুগধর্মের সঙ্গে সংগতি রেখে কর নির্ধারণ ও আদায়সংক্রান্ত বিধানাবলি সহজীকরণ, সরলীকরণ তথা করদাতা বান্ধবকরণের প্রয়াস থাকলেও ক্ষেত্রবিশেষে আরও জটিল হয়েছে। বাংলাদেশ অর্থনীতির সমকালীন পরিবেশ-পরিস্থিতির আলোকে আয়করব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগসংবলিত সংশোধন সংযোজন-বিয়োজন প্রয়াস বারবার যেন উপেক্ষিতই থেকে গেছে।
একটি স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী দেশের অর্থনীতি মুক্তবাজার অর্থনীতিতে অবগাহন করে অধুনা মনস্ক হতে চাইলেও সে দেশের আয়কর আইনের ভাষা ও দৃষ্টিভঙ্গি এখনো যেন ঔপনিবেশিক আমলের পারস্পরিক অবিশ্বাসের, সংশয়-সন্দেহের, জটিলতার আবর্তে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের নামে বরং আইনের আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা পড়ার ভীতিপ্রদ পরিস্থিতির পথ পরিক্রমায়। স্বেচ্ছায় করদানে সক্ষম করদাতাকে উদ্বুদ্ধকরণের ক্ষেত্রে স্বতঃস্ফূর্ততায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়, নিরুৎসাহিতবোধের কারণ হয়ে দাঁড়ায় বিদ্যমান আইনের ভাষা ও দৃষ্টিভঙ্গি। সেই আইন প্রয়োগে অভ্যস্ত আয়কর বিভাগ এবং সেই আইনের আওতায় করদাতাকে সহায়তাদানকারী সমাজও তাদের মেধা ও বিজ্ঞ কৌশলেও সময়ের দাবির প্রেক্ষাপটে আন্তরিক হয়েও যথাসংস্কারে সফল অবস্থায় উত্তরণে গলদঘর্ম হয়। ১৯৮৭ সালে বাংলা ভাষা প্রয়োগ আইন পাসের পর দেশের সব আইন বাংলা ভাষায় প্রণয়নের বিধান থাকলেও আয়কর আইনটি এই প্রথম বাংলা ভাষায় প্রণীত হয়েছে। তবে এর হুবহু ইংরেজি ভার্সন এখনো আলোর মুখ দেখেনি। ইংরেজি ভাষায় দুর্বোধ্য ও দ্ব্যর্থবোধক প্রাকরণিক ও পদ্ধতি প্রক্রিয়ার সমাহার ঘটানো হলে যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক আবহাওয়া ও সংস্কৃতিতে বিদেশিদের মধ্যে এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সংগত প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। এ দেশের আয়কর আইন হবে এ দেশেরই আবহমান অর্থনীতির আবহে লালিত ধ্যান-ধারণার প্রতিফলক, তবেই বাড়বে এর গ্রহণযোগ্যতা এবং এর বাস্তবায়নযোগ্যতা।
এ কথা অনস্বীকার্য থেকে যাবে যে আয়কর আইনের ভাষা হওয়া আবশ্যক সহজবোধ্য, জটিলতা পরিহারি এবং এর প্রয়োগ হবে স্বাচ্ছন্দ্যে সর্বজনীন ব্যবহারের উপযোগী। করদাতা যেন নিজেই নিজের আয়কর ফরম পূরণ, কর নির্ধারণ এবং সরাসরি তা দাখিলে সক্ষম হন। অর্থনীতির বিভিন্ন পর্যায়ে অবস্থানরত আয়করদাতারা যেন অভিন্ন আচরণে আইনগতভাবে আয়কর দিতে দায়িত্বশীল হতে স্বতঃস্ফূর্ততা বোধ করেন। কর আদায় নয়, কর আহরণে করদাতা ও কর আহরণকারীর মধ্যকার দূরত্ব যত কমে আসবে, যত অধিক মাত্রায় করদাতা কর নেটের আওতায় আসবেন, তত কর রাজস্ব আহরণে সুষম, সহনশীল ও দায়িত্ববোধের বিকাশ ঘটবে। এরূপ পরিস্থিতিতে করদাতাকে তাড়া করে ফেরার স্পর্শকাতরতার অবসান ঘটবে।
ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ, সাবেক সচিব ও এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
৪ ঘণ্টা আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৪ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৪ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৪ দিন আগে