ঝিনুকের আদলে তৈরি হচ্ছে ছয়তলা রেলস্টেশন। এর মাধ্যমে তুলে ধরা হবে পর্যটননগরী কক্সবাজারের সৌন্দর্য। যাত্রীদের জন্য থাকবে নানা সুযোগ-সুবিধা। স্টেশনসহ রেললাইন উদ্বোধনের কথা বলা হচ্ছে আগামী সেপ্টেম্বরে। সম্প্রতি রেলমন্ত্রী নিজেই এই ঘোষণা দেন। তবে এ রুটে স্বাভাবিক গতিতে রেল চলাচলে বড় বাধা ঝুঁকিপূর্ণ কালুরঘাট সেতু। এই সেতুর সংস্কারকাজই এখনো শুরু হয়নি। এমনকি বিভিন্ন স্টেশনে মাস্টার ও পয়েন্টসম্যান পদে জনবল নিয়োগ দেওয়াও শুরু হয়নি। এই অবস্থায় সেপ্টেম্বরে এই রেলপথে ট্রেন চলাচল শুরু করা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় কাটছে না।
সম্প্রতি ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথের কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। এ সময় তিনি এই রুটে আগামী সেপ্টেম্বরে ট্রেন চলাচল শুরুর ঘোষণা দেন। তবে যে কালুরঘাট সেতুর ওপর দিয়ে কক্সবাজারগামী ট্রেন যাওয়ার কথা, তার বেহাল দশা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন রেলসংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা।
কালুরঘাট সেতুর ফোকাল পারসন ও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী (সেতু) গোলাম মোস্তফা বলেছেন, জুনে কালুরঘাট সেতুর সংস্কারকাজ শুরু হবে। শেষ হতে সময় লাগবে ছয় মাস (ডিসেম্বর পর্যন্ত)।
রেলওয়ের পরিবহন বিভাগ থেকে জানা যায়, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রুটে মোট আটটি স্টেশন তৈরি করা হচ্ছে। সেগুলো হলো চকরিয়া, ইসলামাবাদ, দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, হারবাং, ডুলাহাজারা ও কক্সবাজার। চকরিয়ার সাহারবিল এলাকার স্টেশনটি এখনো নির্মাণাধীন। আরও পাঁচটি স্টেশনের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি।
কক্সবাজার রেল প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ মুফিজুর রহমান বলেন, ট্রেন চলাচল চালুর আগেই এসব স্টেশনের কাজ শেষ হবে।
এদিকে ওই আট স্টেশনে ন্যূনতম ৪ জন করে স্টেশনমাস্টার ও একজন করে পয়েন্টসম্যান প্রয়োজন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলওয়ের পরিবহন বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, রেলওয়ের স্টেশনমাস্টার ও পয়েন্টসম্যান সংকট রয়েছে। অন্য স্টেশন থেকে কক্সবাজার রুটের স্টেশনে কোনো স্টেশনমাস্টার বা পয়েন্টসম্যান দিয়ে কাজ চালানো সম্ভব নয়। যদি অন্য কোনো স্টেশন থেকে স্টেশনমাস্টার আনা হয়, সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট স্টেশন বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ, বর্তমানে প্রায় ১৫০টি স্টেশনে চাহিদার তুলনায় অর্ধেক জনবল রয়েছে।
এই কর্মকর্তার ভাষ্য, এমন অবস্থায় নতুন নিয়োগ ছাড়া কক্সবাজার রুটের ট্রেন পরিচালনা করা সম্ভব নয়। আবার নতুন করে স্টেশনমাস্টার নিয়োগও সময়সাপেক্ষ। কারণ, স্টেশন সম্পর্কে বুঝতে ছয় মাসের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি দুই থেকে তিন বছর সময় লাগে। এখন একটি উপায় হলো, সম্প্রতি যেসব স্টেশনমাস্টার বা পয়েন্টসম্যান অবসরে গেছেন, তাঁদের অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা এস এম সলিমুল্লাহ বাহার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ইতিমধ্যে মন্ত্রীকে জনবল নিয়োগের বিষয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন হলে দ্রুতই জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে।
এদিকে কক্সবাজার রুটে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি দুটি করে ট্রেন চালানোর বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এ ছাড়া, এই রুটের কালুরঘাট সেতু সংস্কারে ২০২১ সালের অক্টোবরে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের পর্যবেক্ষক দল পরিদর্শন করে। এরপর এ সেতু দিয়ে মালবাহী ট্রেন চালানো যাবে কি না, গেলেও কীভাবে সংস্কার করতে হবে—সে পরামর্শ দিতে ১২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা চান বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও পর্যবেক্ষক দলের প্রধান এ এফ এম সাইফুল আমিন। এ নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক শেষে ৮ কোটি ৬০ লাখ টাকায় পরামর্শ দেওয়ার সমঝোতা হয়।
কালুরঘাট সেতুর ফোকাল পারসন গোলাম মোস্তফা বলেন, কালুরঘাট সেতুতে বর্তমানে যেসব ট্রেন চলে সেগুলোর এক্সেল লোড ১১ দশমিক ৯৬ টন। কক্সবাজারে সরাসরি যে ট্রেন চলবে, সেগুলোর ইঞ্জিন ১৫ এক্সেল লোডের। যেহেতু কর্ণফুলী নদীতে নতুন রেলসেতু করা অনেক সময়ের ব্যাপার, তাই পুরোনো সেতুটি বুয়েটের পরামর্শক দলের নকশা অনুযায়ী সংস্কার করে কক্সবাজার রুটে ট্রেন চালানো হবে।