বাঁশের মতো কারুকাজ করা খুঁটি। আর ওপরের অংশে প্রজাপতির মতো ডানা মেলা দুটি অংশ। সেখানে দুটি করে এলইডি বাতি। এমন দৃষ্টিনন্দন সড়কবাতি বসানো হয়েছিল পদ্মাপাড়ের শহর রাজশাহীতে। তখন এগুলো ‘প্রজাপতি বাতি’ নামে ব্যাপক পরিচিতি পায়। তবে বেশি দিন শোভা ছড়ায়নি বাতিগুলো। উদ্বোধনের মাত্র ৫২ দিনের মাথায় ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে যায় খুঁটিগুলো। দিনটা ছিল ৪ এপ্রিল। তখন ভরা বসন্তকাল। ঠিকাদার বলেছিলেন, দুই রাতের মধ্যেই সব মেরামত করে দেওয়া হবে। কিন্তু তা আর হয়নি। অবশেষে গত বৃহস্পতিবার থেকে সড়কবাতিগুলো লাগানো হচ্ছে। এখন হেমন্ত।

কেন এত দেরি? সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাকালে ক্রেন সংকটের কারণেই সড়কবাতিগুলো লাগানো যায়নি।

রাজশাহী মহানগরীর বিলশিমলা থেকে কাশিয়াডাঙ্গা পর্যন্ত সড়কটি চারলেনে উন্নীত করেছে সিটি করপোরেশন। মাঝে দৃষ্টিনন্দন সড়ক ডিভাইডার। সেই ডিভাইডারের ওপরে চলতি বছরের জানুয়ারিতে বসানো হয়েছিল সড়কবাতির ১৭৪টি খুঁটি। ১১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

‘হ্যারো ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই বাতিগুলো বসানোর কাজ করে। সড়কবাতির খুঁটি ও বাতি আনা হয় চীন থেকে। ব্যয় হয় পাঁচ কোটি ২২ লাখ টাকা। ৪ এপ্রিল বিকেলে মাত্র ৬৫ কিলোমিটার গতিবেগের ঝড়ে লন্ডভন্ড হয় খুঁটিগুলো। সেদিন মোট ৮৬টি পোল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিছু হেলে পড়েছিল, আর কিছু পড়ে ছিল সড়কে।

তখন অভিযোগ ওঠে, এ প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্নীতি হয়েছে। ডিভাইডারের ভেতর যে পরিমাণ ফাউন্ডেশনে খুঁটিগুলো পোঁতার কথা ছিল, তা করা হয়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার আশরাফুল হুদা টিটোও বিষয়টি স্বীকার করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বেশি করে পুঁতলে ডিভাইডারের ভেতরে হারিয়ে যাচ্ছিল খুঁটির কারুকাজ। তাই অল্প করে পোঁতা হয়। তবে দুর্নীতির কথা অস্বীকার করেন তিনি।

ঘটনার পর সরেজমিনে পরিদর্শনে যান সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। এ সময় তিনি নির্দেশ দেন, সবগুলো খুঁটিই যেন তুলে বেশি করে ফাউন্ডেশন দিয়ে বসানো হয়। নির্দেশ অনুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সব খুঁটি তুলেও নিয়ে যায়। কিন্তু তা আর বসানো হচ্ছিল না। অবশেষে গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে খুঁটি স্থাপনের কাজ। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকেও সড়কটিতে খুঁটি বসানোর কাজ করতে দেখা গেছে। তবে কথা বলার জন্য ঠিকাদার আশরাফুল হুদা টিটোকে ফোন করা হলে তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে সম্প্রতি তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেছিলেন, ক্রেন সংকটের কারণে খুঁটিগুলো নতুন করে বসানো যাচ্ছে না। ক্রেন পেলেই শুরু হবে কাজ।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নূর ইসলাম তুষার গতকাল শুক্রবার দুপুরে বলেন, ক্রেন না পাওয়ার কারণেই খুঁটি বসাতে সময় লাগল। সম্ভবত বাইরে থেকে ক্রেন এনে কাজ শুরু করা হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা। এবার খুঁটি স্থাপনে আগের চেয়ে বেশি করে ফাউন্ডেশন দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।