মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী
রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবে অবরোধের প্রচলন ঘটিয়েছে জামায়াত ও বিএনপি ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে। তখন এর বীভৎস চিত্র দেশের মানুষ দেখেছিল। ঢাকা থেকে দেশের অন্যান্য অঞ্চলকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছিল। জামায়াত ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা পেট্রলবোমার ব্যাপক অপব্যবহার করেছিল। রাস্তাঘাট, গাছ কেটে চলাচলের অনুপযুক্ত করে রেখেছিল। কোথাও কোথাও রাস্তা কেটে গর্তও করেছিল। ফলে স্বাভাবিকভাবে যান চলাচল করতে পারেনি। বিশেষ করে ২০১৫ সালে টানা ৯৩ দিন হরতাল ও অবরোধ ডেকে মানুষকে অনেকটাই ঘরবন্দী করে রেখেছিল। মানুষের কাজকর্ম প্রায় বন্ধই ছিল। ছোটখাটো বহু ব্যবসায়ী পথে বসে গিয়েছিলেন। এরপর একসময় অবরোধ ভেঙে মানুষ বের হতে থাকে। বিএনপি-জামায়াতের নেতারা হাল ছেড়ে দিয়ে ঘরে ঢুকে যান। মানুষ মনে করেছিল আর কখনো এই কর্মসূচি রাজনীতিতে কেউ প্রয়োগ করবে না।
কিন্তু কে কার কথা শোনে! ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে বিএনপির নেতা-কর্মীরা উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেছিলেন। একজন পুলিশ কনস্টেবলকে পিটিয়ে-কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল, ৪০ জনের বেশি পুলিশ আহত হয়েছিল, ৩০ জনের বেশি সাংবাদিক বিএনপির উচ্ছৃঙ্খল কর্মীদের দ্বারা নিগৃহীত হয়েছেন, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে রাখা অ্যাম্বুলেন্স, গাড়ি পুড়িয়ে বিনষ্ট করা হয়েছে, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতির বাড়ি, বিচারপতিদের লাউঞ্জ আক্রান্ত হয়েছে। ২৮ তারিখ কথা ছিল শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করে বিএনপির নেতারা ফিরে যাবেন। কিন্তু পরে বোঝা গেল ওটা ছিল তাদের মুখের কথা। বাস্তবটা ছিল সরকারের পতন না না হওয়া পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত নেতারা মাঠ ত্যাগ করবেন না।
একই সঙ্গে জামায়াত-শিবিরও ওই দিনের মহাসমাবেশে অংশ নিয়েছিল, তারাও তাণ্ডবে যুক্ত হয়েছিল। এ ছাড়া বিএনপি অফিসে মিয়া আরেফিকাণ্ড সবাইকে হতবাক করেছে। বিএনপি আসলেই ২৮ অক্টোবর থেকে মহাযাত্রার নামে এমন কিছু করতে চেয়েছিল, যার স্বরূপ পুরোটা দেখার সুযোগ হয়নি। কারণ সভা শুরুর আগেই উচ্ছৃঙ্খল কর্মীরা ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে সমাবেশ পণ্ড করে দিয়েছিল।
বিএনপি মনে করেছিল, সরকার যেহেতু তাদের সভা শুরু করার আগেই পণ্ড করে দিয়েছে, তাই এর প্রতিবাদে পরদিন দেশব্যাপী হরতাল ডাকে। হরতাল শেষ হতে না হতেই তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা হলো। ইতিমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ২৮ তারিখের হত্যাকাণ্ড ও আক্রমণাত্মক ঘটনার নানা সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার করে বিএনপির মহাসচিবসহ বেশ কয়েকজন নেতাকে আটক করে। মিয়া আরেফিকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য মিয়া আরেফিসহ লে. জে. (অব.) সারওয়ার্দীকেও আটক করা হয়। এর ফলে অনেক কিছুই বের হতে থাকে, যা বিএনপির ২৮ তারিখের আন্দোলন সম্পর্কে এত দিনকার ধারণার বিপরীত চিত্র ফুটে ওঠে।
বাইডেনের কথিত উপদেষ্টাকে নিয়ে বিএনপি যে সরকারকে জুজু দেখাচ্ছিল, তারও কিছু ধারণা পাওয়া গেল। হরতাল ঢিলেঢালাভাবেই হলো। অবরোধে কয়েকটি যানবাহনে বোমা নিক্ষেপ, পেট্রল জ্বালিয়ে গাড়ি পোড়ানোর কারণে রাস্তায় বাস, ট্রাক, লরি কমে গেল।
বিএনপির কর্মসূচিকে এবার আগাগোড়াই জামায়াত-শিবির সমর্থন জানালেও তাদের রাস্তায় খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে পুলিশ হত্যা, পুলিশ ও সাংবাদিকের ওপর আক্রমণ, গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদির জন্য অনেককেই আটক করা হয়েছে। ফলে বিএনপির নেতা-কর্মীদের অবস্থান মাঠেঘাটে কমে গেছে।
চোরাগোপ্তা হামলা ঢাকা, চট্টগ্রামসহ কিছু কিছু জায়গায় ঘটলেও শহরগুলোতে ছোট-বড় যানবাহন এখন প্রায় অবাধেই যাতায়াত করছে। দূরপাল্লার বাস কিছুটা কমে গেছে। কারণ যাত্রীবেশে কেউ কেউ পেট্রল ঢেলে গাড়িতে আগুন ধরানোর ঘটনা যেহেতু ঘটিয়েছে, তাই মালিকেরা ভয়ে গাড়ি নামাচ্ছেন না। এতে দুর্ভোগে পড়ছে সাধারণ মানুষ। তবে ট্রেন ও লঞ্চযোগে যাতায়াতের ব্যবস্থা থাকায় এ দুই বাহন ব্যবহারে অনেকেই নির্ভরশীল হচ্ছে।
অবরোধের কর্মসূচি বিএনপি-জামায়াত সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে একের পর এক দিয়ে যাচ্ছে। সরকারকে এই কর্মসূচি দিয়ে রোধ করার কোনো সুযোগ আছে কি? সরকার ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালের অবরোধ কর্মসূচিতেই যেখানে অবস্থানের পরিবর্তন করেনি, সেখানে এবারের ঢিলেঢালা অবরোধে পদত্যাগ করবে, কেউ বোধ হয় সেটা মনে করে না। তা ছাড়া, অবরোধে যে শতাধিক গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, তা নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনকারীদের প্রতি সহানুভূতিশীল পশ্চিমা বিশ্ব খুব একটা মুখ খুলছে না। তারাও জ্বালাও-পোড়াও কর্মসূচির বাইরে গিয়েই সমঝোতার কথা বলছে। কিন্তু সরকারের সঙ্গে কোনো সমঝোতায় যাবে না, এটি যেভাবে বলা হয়েছে, এরপর আর সমঝোতায় বসার অবস্থা বিএনপি-জামায়াতের বোধ হয় নেই।
অন্যদিকে একের পর এক অবরোধ ডেকে কিছু ফটোসেশন আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেওয়ার বাইরে মাঠে দীর্ঘক্ষণ কাউকে খুব একটা দেখতে পাওয়া যায় না। মনে হচ্ছে, অবরোধ ডেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা নিজেরাই অবরুদ্ধ হয়ে গেছেন। অন্যদিকে, জামায়াত কৌশলে বিএনপির অবরোধকে সমর্থন জানালেও তাদের কোথাও অবরোধ পালনে মিছিল বা শোভাযাত্রা করতে দেখা যাচ্ছে না। গ্রামাঞ্চলের খবর হলো, ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা ভীষণভাবে উদ্দীপিত ছিলেন। রাস্তাঘাট কেটে কিংবা গাছপালা ফেলে মানুষের চলাচলও বন্ধ করে রেখেছিলেন। কিন্তু এবার ওই সবের ধারেকাছেও বিএনপির নেতা-কর্মীরা খুব একটা যাচ্ছেন না। দুই-এক জায়গায় খবর হলো, যানবাহনে ঢিল ছুড়তে গিয়ে যাত্রীদের হাতে ধরা পড়ে গণপিটুনির শিকারও কেউ কেউ হয়েছে। গ্রামাঞ্চলের মানুষ অবরোধকে এখন মোটেও গ্রাহ্য করছে না। বাস, লরি শহর থেকে ঠিকমতো না আসায় পণ্যসামগ্রী অনেক জায়গায় ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না, আবার অনেক জায়গায় উৎপাদনকারীরা পণ্য শহরে পাঠাতে পারছেন না। এর জন্য সরকারের চেয়ে বিরোধীদেরই তাঁরা বেশি দায়ী করছেন।
এ ধরনের অবরোধের মানে কী দাঁড়ায়, সেটাই অনেকের কাছে বড় জিজ্ঞাসার বিষয়। মানুষের চলাচল, পথরোধ কিংবা যানবাহন চলাচলে বাধা দেওয়া, সরকারি স্থাপনা ঘিরে ফেলার নামই তো অবরোধ হতে পারে। কিন্তু এ ধরনের কর্মসূচি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে কেউ কোথাও ২০১৩-এর আগে প্রয়োগ করেনি। এখন আবার বিএনপি-জামায়াত একের পর এক অবরোধ কর্মসূচি ডেকে যাচ্ছে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের অনেকেই গাড়ি ভাঙচুর ও পোড়াপুড়ির কারণে আটক হচ্ছেন। অন্যরা সেই ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
অথচ ২৮ অক্টোবরের আগে যুগপৎ আন্দোলনকারীরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে নিজেদের কর্মীদের চাঙা করতে পেরেছিল। সাধারণ মানুষের মধ্যেও একধরনের আস্থার ভাব ফিরিয়ে আনতে পেরেছিল যে বিএনপি হয়তো শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেবে। এবার নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপির লাভ যত বেশি হতো, ২৮ অক্টোবর-পরবর্তী কর্মসূচি দিয়ে তার অনেকটাই হাতছাড়া হওয়ার অবস্থা। বিএনপি বিদেশিদের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। অবশ্য পশ্চিমা বিশ্ব কী করবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তারা কোনো দলের পক্ষে বা বিপক্ষে নয়, তাদের অবস্থান সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে।
এবার সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ অনেক কারণেই দৃশ্যমান আছে। নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য অবশ্যই বড় বাহন। কিন্তু বিরোধী ও সরকারি দল যখন সমানভাবে মাঠে থাকে, তখন নির্বাচনের ওপর এক পক্ষের পক্ষে কালিমা লেপন করা সহজ হয় না। ২০১৪ কিংবা ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে যেসব বিতর্ক করা হয়, তা নির্মোহভাবে করলে বলতে হবে, উভয় নির্বাচনেই এক পক্ষ ছিল নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিপক্ষে। আরেক নির্বাচনে এক পক্ষের ছিল প্রস্তুতির অভাব, অন্য পক্ষের ছিল প্রতিপক্ষের দুর্বলতার সুযোগ নেওয়া। এবার পরিস্থিতি অনেকটাই সুষ্ঠু নির্বাচনের অনুকূলে আছে। তা ছাড়া, বিদেশি পর্যবেক্ষণও আগের চেয়ে এবার অনেক ক্রিয়াশীল। ফলে নির্বাচনে কারচুপি কিংবা বিতর্কিত কিছু করে পার পাওয়ার সুযোগ খুব একটা নেই। কিন্তু এত সব জানার পরও ২৮ অক্টোবর কেন বিএনপি এত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটতে দিল কিংবা নিয়ন্ত্রণ করল না? এখন একের পর এক অবরোধ ডেকে নিজেরাই যেভাবে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে, তা আখেরে তাদের জন্য কতটা সুফল এনে দেবে বলা মুশকিল। বর্তমান অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার উপায় বিএনপিকেই খুঁজে বের করতে হবে।
মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী, অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট
রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবে অবরোধের প্রচলন ঘটিয়েছে জামায়াত ও বিএনপি ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে। তখন এর বীভৎস চিত্র দেশের মানুষ দেখেছিল। ঢাকা থেকে দেশের অন্যান্য অঞ্চলকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছিল। জামায়াত ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা পেট্রলবোমার ব্যাপক অপব্যবহার করেছিল। রাস্তাঘাট, গাছ কেটে চলাচলের অনুপযুক্ত করে রেখেছিল। কোথাও কোথাও রাস্তা কেটে গর্তও করেছিল। ফলে স্বাভাবিকভাবে যান চলাচল করতে পারেনি। বিশেষ করে ২০১৫ সালে টানা ৯৩ দিন হরতাল ও অবরোধ ডেকে মানুষকে অনেকটাই ঘরবন্দী করে রেখেছিল। মানুষের কাজকর্ম প্রায় বন্ধই ছিল। ছোটখাটো বহু ব্যবসায়ী পথে বসে গিয়েছিলেন। এরপর একসময় অবরোধ ভেঙে মানুষ বের হতে থাকে। বিএনপি-জামায়াতের নেতারা হাল ছেড়ে দিয়ে ঘরে ঢুকে যান। মানুষ মনে করেছিল আর কখনো এই কর্মসূচি রাজনীতিতে কেউ প্রয়োগ করবে না।
কিন্তু কে কার কথা শোনে! ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে বিএনপির নেতা-কর্মীরা উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেছিলেন। একজন পুলিশ কনস্টেবলকে পিটিয়ে-কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল, ৪০ জনের বেশি পুলিশ আহত হয়েছিল, ৩০ জনের বেশি সাংবাদিক বিএনপির উচ্ছৃঙ্খল কর্মীদের দ্বারা নিগৃহীত হয়েছেন, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে রাখা অ্যাম্বুলেন্স, গাড়ি পুড়িয়ে বিনষ্ট করা হয়েছে, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতির বাড়ি, বিচারপতিদের লাউঞ্জ আক্রান্ত হয়েছে। ২৮ তারিখ কথা ছিল শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করে বিএনপির নেতারা ফিরে যাবেন। কিন্তু পরে বোঝা গেল ওটা ছিল তাদের মুখের কথা। বাস্তবটা ছিল সরকারের পতন না না হওয়া পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত নেতারা মাঠ ত্যাগ করবেন না।
একই সঙ্গে জামায়াত-শিবিরও ওই দিনের মহাসমাবেশে অংশ নিয়েছিল, তারাও তাণ্ডবে যুক্ত হয়েছিল। এ ছাড়া বিএনপি অফিসে মিয়া আরেফিকাণ্ড সবাইকে হতবাক করেছে। বিএনপি আসলেই ২৮ অক্টোবর থেকে মহাযাত্রার নামে এমন কিছু করতে চেয়েছিল, যার স্বরূপ পুরোটা দেখার সুযোগ হয়নি। কারণ সভা শুরুর আগেই উচ্ছৃঙ্খল কর্মীরা ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে সমাবেশ পণ্ড করে দিয়েছিল।
বিএনপি মনে করেছিল, সরকার যেহেতু তাদের সভা শুরু করার আগেই পণ্ড করে দিয়েছে, তাই এর প্রতিবাদে পরদিন দেশব্যাপী হরতাল ডাকে। হরতাল শেষ হতে না হতেই তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা হলো। ইতিমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ২৮ তারিখের হত্যাকাণ্ড ও আক্রমণাত্মক ঘটনার নানা সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার করে বিএনপির মহাসচিবসহ বেশ কয়েকজন নেতাকে আটক করে। মিয়া আরেফিকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য মিয়া আরেফিসহ লে. জে. (অব.) সারওয়ার্দীকেও আটক করা হয়। এর ফলে অনেক কিছুই বের হতে থাকে, যা বিএনপির ২৮ তারিখের আন্দোলন সম্পর্কে এত দিনকার ধারণার বিপরীত চিত্র ফুটে ওঠে।
বাইডেনের কথিত উপদেষ্টাকে নিয়ে বিএনপি যে সরকারকে জুজু দেখাচ্ছিল, তারও কিছু ধারণা পাওয়া গেল। হরতাল ঢিলেঢালাভাবেই হলো। অবরোধে কয়েকটি যানবাহনে বোমা নিক্ষেপ, পেট্রল জ্বালিয়ে গাড়ি পোড়ানোর কারণে রাস্তায় বাস, ট্রাক, লরি কমে গেল।
বিএনপির কর্মসূচিকে এবার আগাগোড়াই জামায়াত-শিবির সমর্থন জানালেও তাদের রাস্তায় খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে পুলিশ হত্যা, পুলিশ ও সাংবাদিকের ওপর আক্রমণ, গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদির জন্য অনেককেই আটক করা হয়েছে। ফলে বিএনপির নেতা-কর্মীদের অবস্থান মাঠেঘাটে কমে গেছে।
চোরাগোপ্তা হামলা ঢাকা, চট্টগ্রামসহ কিছু কিছু জায়গায় ঘটলেও শহরগুলোতে ছোট-বড় যানবাহন এখন প্রায় অবাধেই যাতায়াত করছে। দূরপাল্লার বাস কিছুটা কমে গেছে। কারণ যাত্রীবেশে কেউ কেউ পেট্রল ঢেলে গাড়িতে আগুন ধরানোর ঘটনা যেহেতু ঘটিয়েছে, তাই মালিকেরা ভয়ে গাড়ি নামাচ্ছেন না। এতে দুর্ভোগে পড়ছে সাধারণ মানুষ। তবে ট্রেন ও লঞ্চযোগে যাতায়াতের ব্যবস্থা থাকায় এ দুই বাহন ব্যবহারে অনেকেই নির্ভরশীল হচ্ছে।
অবরোধের কর্মসূচি বিএনপি-জামায়াত সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে একের পর এক দিয়ে যাচ্ছে। সরকারকে এই কর্মসূচি দিয়ে রোধ করার কোনো সুযোগ আছে কি? সরকার ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালের অবরোধ কর্মসূচিতেই যেখানে অবস্থানের পরিবর্তন করেনি, সেখানে এবারের ঢিলেঢালা অবরোধে পদত্যাগ করবে, কেউ বোধ হয় সেটা মনে করে না। তা ছাড়া, অবরোধে যে শতাধিক গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, তা নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনকারীদের প্রতি সহানুভূতিশীল পশ্চিমা বিশ্ব খুব একটা মুখ খুলছে না। তারাও জ্বালাও-পোড়াও কর্মসূচির বাইরে গিয়েই সমঝোতার কথা বলছে। কিন্তু সরকারের সঙ্গে কোনো সমঝোতায় যাবে না, এটি যেভাবে বলা হয়েছে, এরপর আর সমঝোতায় বসার অবস্থা বিএনপি-জামায়াতের বোধ হয় নেই।
অন্যদিকে একের পর এক অবরোধ ডেকে কিছু ফটোসেশন আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেওয়ার বাইরে মাঠে দীর্ঘক্ষণ কাউকে খুব একটা দেখতে পাওয়া যায় না। মনে হচ্ছে, অবরোধ ডেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা নিজেরাই অবরুদ্ধ হয়ে গেছেন। অন্যদিকে, জামায়াত কৌশলে বিএনপির অবরোধকে সমর্থন জানালেও তাদের কোথাও অবরোধ পালনে মিছিল বা শোভাযাত্রা করতে দেখা যাচ্ছে না। গ্রামাঞ্চলের খবর হলো, ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা ভীষণভাবে উদ্দীপিত ছিলেন। রাস্তাঘাট কেটে কিংবা গাছপালা ফেলে মানুষের চলাচলও বন্ধ করে রেখেছিলেন। কিন্তু এবার ওই সবের ধারেকাছেও বিএনপির নেতা-কর্মীরা খুব একটা যাচ্ছেন না। দুই-এক জায়গায় খবর হলো, যানবাহনে ঢিল ছুড়তে গিয়ে যাত্রীদের হাতে ধরা পড়ে গণপিটুনির শিকারও কেউ কেউ হয়েছে। গ্রামাঞ্চলের মানুষ অবরোধকে এখন মোটেও গ্রাহ্য করছে না। বাস, লরি শহর থেকে ঠিকমতো না আসায় পণ্যসামগ্রী অনেক জায়গায় ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না, আবার অনেক জায়গায় উৎপাদনকারীরা পণ্য শহরে পাঠাতে পারছেন না। এর জন্য সরকারের চেয়ে বিরোধীদেরই তাঁরা বেশি দায়ী করছেন।
এ ধরনের অবরোধের মানে কী দাঁড়ায়, সেটাই অনেকের কাছে বড় জিজ্ঞাসার বিষয়। মানুষের চলাচল, পথরোধ কিংবা যানবাহন চলাচলে বাধা দেওয়া, সরকারি স্থাপনা ঘিরে ফেলার নামই তো অবরোধ হতে পারে। কিন্তু এ ধরনের কর্মসূচি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে কেউ কোথাও ২০১৩-এর আগে প্রয়োগ করেনি। এখন আবার বিএনপি-জামায়াত একের পর এক অবরোধ কর্মসূচি ডেকে যাচ্ছে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের অনেকেই গাড়ি ভাঙচুর ও পোড়াপুড়ির কারণে আটক হচ্ছেন। অন্যরা সেই ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
অথচ ২৮ অক্টোবরের আগে যুগপৎ আন্দোলনকারীরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে নিজেদের কর্মীদের চাঙা করতে পেরেছিল। সাধারণ মানুষের মধ্যেও একধরনের আস্থার ভাব ফিরিয়ে আনতে পেরেছিল যে বিএনপি হয়তো শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেবে। এবার নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপির লাভ যত বেশি হতো, ২৮ অক্টোবর-পরবর্তী কর্মসূচি দিয়ে তার অনেকটাই হাতছাড়া হওয়ার অবস্থা। বিএনপি বিদেশিদের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। অবশ্য পশ্চিমা বিশ্ব কী করবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তারা কোনো দলের পক্ষে বা বিপক্ষে নয়, তাদের অবস্থান সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে।
এবার সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ অনেক কারণেই দৃশ্যমান আছে। নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য অবশ্যই বড় বাহন। কিন্তু বিরোধী ও সরকারি দল যখন সমানভাবে মাঠে থাকে, তখন নির্বাচনের ওপর এক পক্ষের পক্ষে কালিমা লেপন করা সহজ হয় না। ২০১৪ কিংবা ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে যেসব বিতর্ক করা হয়, তা নির্মোহভাবে করলে বলতে হবে, উভয় নির্বাচনেই এক পক্ষ ছিল নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিপক্ষে। আরেক নির্বাচনে এক পক্ষের ছিল প্রস্তুতির অভাব, অন্য পক্ষের ছিল প্রতিপক্ষের দুর্বলতার সুযোগ নেওয়া। এবার পরিস্থিতি অনেকটাই সুষ্ঠু নির্বাচনের অনুকূলে আছে। তা ছাড়া, বিদেশি পর্যবেক্ষণও আগের চেয়ে এবার অনেক ক্রিয়াশীল। ফলে নির্বাচনে কারচুপি কিংবা বিতর্কিত কিছু করে পার পাওয়ার সুযোগ খুব একটা নেই। কিন্তু এত সব জানার পরও ২৮ অক্টোবর কেন বিএনপি এত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটতে দিল কিংবা নিয়ন্ত্রণ করল না? এখন একের পর এক অবরোধ ডেকে নিজেরাই যেভাবে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে, তা আখেরে তাদের জন্য কতটা সুফল এনে দেবে বলা মুশকিল। বর্তমান অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার উপায় বিএনপিকেই খুঁজে বের করতে হবে।
মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী, অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৪ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৪ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৪ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৪ দিন আগে