শরতের সাদা মেঘের ভেলা

আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর (মানিকগঞ্জ)
Thumbnail image

শরৎ এসে গেছে। স্বচ্ছ নীল আকাশ। তাতে উড়ে বেড়ায় সাদা সাদা মেঘ। আর নদীর জলে স্পষ্ট প্রতিবিম্ব দেখা যায়। দুই ধারে ফোটা সাদা কাশফুল হাওয়া-বাতাসে দোল খায়। নদীর বুকে পালতোলা নৌকা। গলা ছেড়ে গেয়ে ওঠেন মাঝি-মাল্লারা।

বিল-ঝিলে এ সময় শত শত শাপলা ফুল ফোটে। বাড়ির আঙিনায় ঝরে পড়ে শিউলি ফুল। বাংলার প্রকৃতি অপরূপ রূপে সাজে এই সময়। জানিয়ে দেয় শরৎকাল ঋতুর রানি। কবি, শিল্পী, সাহিত্যিকেরা এই রূপের মাধুরী ফুটিয়ে তোলেন কবিতা, রংতুলি আর কথামালায়।

ভাদ্র-আশ্বিন দুই মাস শরৎকাল। এখন চলছে ভাদ্রের দ্বিতীয় সপ্তাহ। আকাশে উড়ে বেড়ানো মেঘ বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে। আবার পরক্ষণেই ঝিলিক দিয়ে ওঠে সোনা রোদ। নদীর ওপারে দিগন্তের কাছে ফুটে ওঠে রংধনু। আর তখন নীলাকাশে উড়ে বেড়ায় সাদা মেঘের ভেলা। মানিকগঞ্জে পদ্মা, যমুনা, ধলেশ্বরী, ইছামতী আর কালীগঙ্গা নদীর বিস্তীর্ণ জলরাশিতে স্পষ্ট হয় নীলাকাশের প্রতিচ্ছবি।

গতকাল শুক্রবার সকালে একপশলা বৃষ্টি হয়। এরপর আকাশ ধোয়ামোছা হয়ে যায়। পেখম মেলে শরৎ।

ঘিওর উপজেলার তরা এলাকা থেকে কালীগঙ্গা নদীর পাড় ধরে এগোতেই চোখে পড়ে আকাশ-জলে এক মোহনীয় দৃশ্য। নির্মল বাতাস বয়ে যায়। নদীর কলতান শোনা যায়। কয়েকটি পালতোলা ছোট নৌকা চোখে পড়ে। তীরে ফুটে আছে কাশফুল।

ঘিওর সদরের বুক চিরে বয়ে চলা ধলেশ্বরী নদীর পানি অন্য বছরের তুলনায় এবার একটু কম। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, আর কিছুদিনের মধ্যেই নদীর ধার ভরে উঠবে কাশফুলে। এরই মধ্যে অকস্মাৎ কানে ভেসে আসে গোখাদ্য সংগ্রহ করে ফেরার পথে কৃষকের দরাজ কণ্ঠে গান।

ঘিওর উত্তরপাড়া, বাটরাকান্দি, আশাপুর, নালী, বালিয়াখোড়া, পেঁচারকান্দা, রামকান্তপুর, তরা, মির্জাপুর, নকীববাড়ি এলাকায় গেলে চোখে পড়ে শরতের রূপ। অপেক্ষাকৃত নিচু জমির বিস্তীর্ণ মাঠে দেখা যায় কিশোর-কিশোরীদের ছোট ডিঙিতে করে শাপলা তোলার দৃশ্য।

যমুনা নদীর জাফরগঞ্জ এলাকায় নদীর ঢেউ, নৌকা আর নীল আকাশের এক মেলবন্ধনের সৌন্দর্য উপভোগ করছে মানুষজন। বিকেল হলেই বাড়ছে ভিড়। ইলা ও নুসরাত নামের দুজন গৃহবধূর সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা মানিকগঞ্জ শহর থেকে সপরিবার এখানে এসেছেন বেড়াতে। দুজনই বলেন, শত ব্যস্ততার মধ্যেও সময়টা খুব উপভোগ করেন। শরতের মোহনীয় সৌন্দর্যে তাঁদের ছেলেমেয়েরা খুব আনন্দ পায়।

ঘিওরের সাবেক স্কুলশিক্ষক দোলা রায় বলেন, ‘শরৎ মানেই শিউলি ফোটার দিন। নদীর পাড়ে কাশফুল দোলার দিন। মাথার ওপর গাঢ় নীল আকাশ, আর জলে তার ছায়া পড়ে। শাপলা হাসে শত শত। বাংলার প্রকৃতি যেন সবটুকু রূপ মেলে ধরে এই শরৎ ঋতুতে। আমার খুব ভালো লাগে।’

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গিনি আলম বলেন, এ সময় মানিকগঞ্জে গ্রামবাংলার আদি সংস্কৃতির অন্যতম অনুষঙ্গ নৌকাবাইচের আয়োজন করা হয়। নৌকাবাইচ উপলক্ষে মানুষের মিলনমেলা বসে। এ ছাড়া নাটক-সিনেমার শুটিং বেশি চলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত মানিকগঞ্জের বিভিন্ন লোকেশনে। শরতের এই রূপ দেখতে শহরের অনেক মানুষ ছুটে আসে। তারা প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত