কোটি টাকার রাজস্ব আয়েও নেই উন্নয়ন

শিপুল ইসলাম, তারাগঞ্জ
আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২২, ১৪: ৫৩
Thumbnail image

এক যুগ আগে হাটের রাজস্ব আয় ছিল লাখ টাকার কোটায়। তখন হাটে কৃষকদের উৎপাদিত ফসল বিক্রির জন্য ছিল ফাঁকা জায়গা। তাঁরা সরাসরি ভোক্তাপর্যায়ে পণ্য বিক্রি করতেন। এখন রাজস্ব আয় কয়েক কোটি টাকা হলেও কৃষকেরা জায়গার অভাবে হাটে ভোক্তার কাছে যেতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে কমমূল্যে পাইকার ও আড়তদারদের কাছে বিক্রি করতে হচ্ছে। ফলে ক্রেতা ও উৎপাদকের চেয়ে মধ্যস্বত্বভোগীরাই লাভবান হচ্ছেন বেশি।

তারাগঞ্জ হাটের চিত্র এটি। ক্রেতা-বিক্রেতাদের অভিযোগ, হাট থেকে সরকারের রাজস্ব আয় লাখ থেকে কোটি টাকা পেরোলেও জায়গা সংকটের কারণে কৃষকেরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে পণ্য বিক্রি করেন। হাটে আগতদের জন্য শৌচাগার থাকলেও তা নষ্ট। ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য নেই নির্দিষ্ট জায়গা। দীর্ঘদিন ধরে ময়লা জমে নালাগুলো ভরাট হওয়ায় ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। বৃষ্টির দিনে ময়লা পানি উপচে সড়ক ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকছে।

হাটে কৃষকেরা সরাসরি ভোক্তাপর্যায়ে পণ্য বিক্রি করতে না পারায় ৫০ গজের মধ্যে দ্বিগুণ দামে সেই পণ্য খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। দুই টাকার লেবু নিতে হচ্ছে ১০ টাকায়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত তারাগঞ্জে হাটবাজারের সংখ্যা ১৮টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় হাট তারাগঞ্জ। উপজেলার একমাত্র এ পশুর হাট বসে প্রতি সোম ও শুক্রবার। প্রতি হাটে ৭০০ থেকে ৮০০ পশু কেনাবেচা হয়। এ ছাড়া ধান, পাট, আলুসহ নানা রকম সবজি কেনাবেচা হয়। চলতি বছর ২ কোটি ৪০ লাখ টাকায় হাটটি ইজারা দেওয়া হয়েছে।

গত শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে, হাটটিতে সবজি ও চাল বিক্রির জন্য কোনো শেড নির্মাণ করা হয়নি। কৃষকদের আদা, হলুদ, ধান, পাট, সবজি, মাটির তৈরি হাঁড়ি-পাতিল, ডালি-কুলা, মাদুর বিক্রিরও জায়গা নেই। স্থান সংকুলান না হওয়ায় কৃষকেরা কিশোরগঞ্জ-তারাগঞ্জ সড়কের ওপর পণ্য বিক্রি করছেন। ক্রেতার ভিড়ে এক কিলোমিটার সড়ক হাটে পরিণত হয়েছে। এরে মধ্যে দিয়ে ঠেলাঠেলি করে অতি কষ্টে চলাচল করছে যানবাহন।

হাটে কথা হয় ছুট মেনানগর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক মোফাজ্জল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এক থেকে দেড় যুগ আগে হাটে তাঁবু টাঙিয়ে কুপি জ্বলে কৃষকেরা ফসল বিক্রি করত। আমরা টাটকা সবজি কম মূল্যে কিনতাম। কিন্তু এখন সে সুযোগ নেই। কৃষকেরা হাটে এসে ফসল বিক্রির জায়গা পাচ্ছেন না। পাইকারের কাছে বিক্রি করছেন। পাইকারেরা খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন। খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে আমরা কিনে খাচ্ছি। এতে কয়েক হাত ঘুরে পণ্যের দাম দ্বিগুণেরও বেশি গুনতে হচ্ছে।’

সবজির খুচরা বাজারে কথা হাড়িয়ারকুঠি গ্রামের কৃষক জোবেদুল ইসলামের সঙ্গে। সেখান থেকে আঙুল উঁচিয়ে ৫০ গজ দূরে নির্দেশ করে তিনি বলেন, ‘ওই যে লোকজন দেখতেছেন, ওটা সবজির পাইকারি বাজার। এক মণ বেগুন ওখানে এক হাজার ২০০ টাকায় বেচলাম। সেই বেগুন এখানে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা কেজি। সেই হিসেবে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ টাকা মণ। রোদে পুড়ে চাষ করে এক মণ বেগুনে ৫০ টাকা লাভ হয় না। আর এক মিনিটের পথে তাঁরা ৬০০ টাকা লাভ করছেন। আমাদের কষ্ট করে ফসল ফলানোই হবে, ন্যায্য মূল্য পাব না! হাটে যদি খুচরা বিক্রি করতে পারতাম তাহলে ৩০০ টাকা লাভ থাকত। এতে ক্রেতাও লাভবান হতো।’

তারাগঞ্জ ক্ষুদ্র বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহব্বত হোসেন জানান, তারাগঞ্জবাসীর এ দুরবস্থা দীর্ঘদিনের। ২০০৭ সালে দোকানপাট উচ্ছেদের পর ব্যবসায়ীরা বাজারটির ভেতরে ধান, পাট, গমসহ কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রির নির্দিষ্ট জায়গা রাখার অনুরোধ স্থানীয় প্রশাসনকে করেছিলেন কিন্তু শোনেনি। জায়গার অভাবে কৃষক এখন রাস্তার ওপর হাট বসায়। ফলে যানবাহন, পথচারী ও স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের পড়তে হয় সমস্যায়।

হাটের ইজারাদার স্বপন চৌধুরী জানান, শুধু কৃষকদের ফসল বিক্রির জায়গার সংকটই নয়, হাটটি নানা সমস্যায় জরাজীর্ণ। সামান্য বৃষ্টিতে কাদাপানির সৃষ্টি হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে শৌচাগারটি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। বিষয়গুলো উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান বলেন, ‘হাটের সমস্যা সমাধানের জন্য পরিকল্পনা করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই ব্যবসায়ীদের নিয়ে বসা হবে। সবার সঙ্গে কথা বলে হাটের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত