Ajker Patrika

বিসিকেও লোডশেডিং কমেছে উৎপাদন

নাটোর প্রতিনিধি
আপডেট : ০২ আগস্ট ২০২২, ১৪: ০৪
বিসিকেও লোডশেডিং কমেছে উৎপাদন

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে সরকারের নেওয়া সব ধরনের পদক্ষেপ নাটোরে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। জেলা শহরে লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও ভয়াবহ অবস্থা দুই পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন এলাকাগুলোতে। চাহিদা বিবেচনায় বিদ্যুতের পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ ও ২-এর গ্রাহকেরা দিনে ৩ থেকে ৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, লোডশেডিংয়ের আঁচ লেগেছে কৃষি ও শিল্পক্ষেত্র। অনাবৃষ্টিতে আমন আবাদে তীব্র সেচসংকট ও শিল্পপণ্য উৎপাদনে ধীরগতি অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের।

নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ কর্তৃপক্ষ জানায়, সমিতির আওতাধীন গ্রাহকদের জন্য প্রতিদিন ১১০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহী কাটাখালী এলাকার জন্য ১৩ মেগাওয়াট এবং অবশিষ্ট এলাকার জন্য ৯৭ মেগাওয়াটের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এখন প্রতিদিন ৬৫-৭০ মেগাওয়াট পাওয়া যাচ্ছে। ফলে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

অন্যদিকে নেসকো প্রাইভেট লিমিডেট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নাটোর শহর এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১৪ মেগাওয়াট। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে ৯-১০ মেগাওয়াট। ফলে এলাকাভিত্তিক এবং পর্যায়ক্রমে ১ ঘণ্টা করে লোডশেডিং করা হচ্ছে।

গত মাসে সূচিভিত্তিক লোডশেডিং শুরু হওয়ার পর থেকেই লোকসানের কবলে পড়েছেন নাটোর বিসিক শিল্পনগরীর উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা। লোডশেডিংয়ের কারণে বিসিক নগরীর নাটোর জুটমিলসহ বেশ কয়েকটি কারখানার যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। এসব কারখানা মালিকদের অভিযোগ, শিল্পনগরীতে বিদ্যুৎ সরবরাহে নিয়োজিত নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ কর্তৃপক্ষ কোনোরূপ পূর্বঘোষণা বা সূচি ছাড়াই ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখছে। এতে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার কারণে চাহিদামতো পণ্য সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নিত্য সচল যন্ত্রাংশ প্রতিদিন ৩ থেকে ৫ ঘণ্টা অচল থাকায় কার্যকারিতা হারাচ্ছে। একই সঙ্গে উৎপাদনে নিয়োজিত শ্রমিকদের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের সময় অলস বসিয়ে রাখা হচ্ছে। এতে উৎপাদন কম সত্ত্বেও কারখানার শ্রমিকদের মজুরি ও স্থায়ী ব্যয়ভার বহন করতে হচ্ছ মালিকদের।

নাটোর জুটমিলের পরিচালক প্রদীপ কুমার আগওয়ালা বলেন, বিসিক শিল্পনগরীতে প্রায় ২৫টি ছোট-বড় কারখানা রয়েছে। এই নগরীতে এখন অঘোষিতভাবে প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা লোডশেডিং করা হচ্ছে। গত দুই সপ্তাহে গড় উৎপাদন কমেছে প্রতিটি কারখানায়। এই অবস্থায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারলে দীর্ঘমেয়াদে শিল্পপণ্যের ক্রেতা হারাতে হবে।

এ ব্যাপারে বিসিক শিল্পনগরীর উপব্যবস্থাপক দিলরুবা দিপ্তি জানান, নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-বিসিক শিল্পনগরীর জন্য লোডশেডিংয়ের সূচির ঘোষণা করেনি। ক্ষতিগ্রস্ত মালিকেরা লোডশেডিংয়ের সময় নির্ধারণ করে আগাম ঘোষণা দেওয়ার দাবি করেছেন।

অপরদিকে জেলায় বর্তমানে আমন ধানের চাষ শুরু হয়েছে। আমন ধানের আবাদ বৃষ্টিনির্ভর, অথচ দীর্ঘদিন অনাবৃষ্টির কারণে আবাদ নিয়ে শঙ্কায় আছেন কৃষকরা।

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক মো. ইয়াছিন আলী বলেন, জেলায় বর্তমানে আমন ধানের আবাদ শুরু হয়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত নেই। এতে সেচ দেওয়ার জন্য জ্বালানি তেল বা বিদ্যুতের প্রয়োজন হচ্ছে।

নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী এমদাদুল হক বলেন, বিসিক শিল্পনগরীতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিদ্যুৎ সরবরাহের সিদ্ধান্ত রয়েছে। তবে কী কারণে সেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় তা জানা নেই।

নেসকো প্রাইভেট লিমিডেট নাটোরের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকৌশলী এনামুল আজীম বলেন, নাটোর শহর এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা ও জোগানের ঘাটতি চার থেকে পাঁচ মেগাওয়াট। এতে আমাদের দিনে ১ ঘণ্টা বা তারও কম লোডশেডিং করতে হচ্ছে, যা অনেকটাই সহনীয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত