রাজীব কুমার সাহা
বাংলা ভাষায় কারসাজি একটি অতি পরিচিত শব্দ। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই কারসাজি শব্দটি ব্যবহার করেছি, কখনো কখনো এর শিকারও হয়েছি। যদিও বর্তমানে স্পষ্টতই শব্দটির অর্থ নেতিবাচক। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা কেবল দ্রব্যমূল্যের কারসাজিতেই কুপোকাত নই, কখনো কখনো ব্যক্তিবিশেষের কারসাজিতেও কুপোকাত হই। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই কারসাজি কী? এটি কি বাংলা শব্দ? আমরা কি জানি কারসাজি শব্দের মূল অর্থ কী? তবে চলুন আজ জানব কারসাজির কুলঠিকানা।
কারসাজি বাংলা শব্দ নয়, এটি ফারসি শব্দ। ফারসি ‘কারসাজ’ থেকে কারসাজি শব্দটি বাংলা ভাষায় প্রবেশ করেছে। ফারসি কারসাজ শব্দটি বিশেষণ পদ। এর অর্থ হলো ভাঙাগড়ার নিয়ামক, চালাকচতুর বা ধূর্ত। আর বাংলা ভাষায় কারসাজি শব্দের মূল অর্থ হলো চালাকি, ধূর্ততা, কূটকৌশল, কৌশলে প্রতারণা, প্রতারণা, প্রবঞ্চনা প্রভৃতি। কারসাজি বিশেষ্য পদ। শব্দটির অর্থের নিরিখে বলা যায়, কারসাজি করা মানে হলো কারও সঙ্গে কৌশলে প্রতারণা বা প্রবঞ্চনা করা, যা স্পষ্টতই নেতিবাচক।
‘বাংলা একাডেমি বিবর্তনমূলক বাংলা অভিধান’-এ কারসাজি শব্দটি ‘কারসাজী’ বানানেও লিপিবদ্ধ হয়েছে ‘কূটকৌশল’ অর্থে ‘তাঁতি (১৭৯২)’ রচনা থেকে। এ ছাড়া ওসাঁর রচনায় শব্দটি রয়েছে ‘প্রবঞ্চনা’ অর্থে। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’-এ কারসাজি শব্দের একাধিক অর্থ লিপিবদ্ধ রয়েছে। এখানে লক্ষণীয়, ইতিবাচকরূপে কর্ম, সৃষ্টি, নির্মাণ, নৈপুণ্য, পটুতা প্রভৃতি অর্থে শব্দটির ব্যবহার রয়েছে। অনুরূপ নেতিবাচক অর্থেও শব্দটি যেমন: ছল, ধূর্ততা, চালাকি, কৌশল, ফিকির প্রভৃতি অর্থে লিপিবদ্ধ রয়েছে। জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাসের ‘বাঙ্গালা ভাষার অভিধান’-এ কারসাজি শব্দটি স্পষ্টতই নেতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এই অভিধানে কারসাজি শব্দের অর্থ লেখা হয়েছে চালাকি, চতুরতা, কপটতা, প্রবঞ্চনা, কূটকৌশল প্রভৃতি। বঙ্কিমচন্দ্রের ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’ রচনা থেকে এখানে একটি প্রয়োগবাক্যও লিপিবদ্ধ করা হয়েছে যেমন: ‘সেই হরা পাজীর কারসাজী।’
আবার মতিলাল রায়ের রচনা থেকে ‘কুহক বা কৌশল’ অর্থে প্রয়োগবাক্য দেওয়া হয়েছে ‘সব মায়ার কারসাজী ছায়াবাজী।’ পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি কর্তৃক প্রকাশিত ‘আকাদেমি বিদ্যার্থী অভিধান’-এ কারসাজি শব্দের অর্থ লেখা হয়েছে হাতের কায়দা, হাতের চতুর কৌশল, চালাকি, লোক ঠকানোর কায়দা প্রভৃতি। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও তাঁর ‘খাপছাড়া’ কবিতায় নেতিবাচক অর্থে ‘পাজি ময়রার কারসাজি’ প্রয়োগবাক্য রূপে শব্দটি ব্যবহার করেছেন। যদিও রবিঠাকুরের সামগ্রিক রচনায় ‘কারসাজি’ শব্দটি এই একবারই ব্যবহৃত হয়েছে। সুতরাং উপরিউক্ত পর্যবেক্ষণের আলোকে বলা যায়, অর্থের নিরিখে কারসাজি শব্দ স্পষ্টতই নেতিবাচক।
কালের বিবর্তনে ভাষার অর্থের পরিবর্তন ঘটে। আমরা বিবিধ অভিধান পর্যবেক্ষণে দেখতে পাই, এই কারসাজি শব্দ কখনো কখনো ইতিবাচক অর্থেও ব্যবহৃত হয়েছে। এর কারণ হলো, ফারসি ভাষায় ‘কারসাজ’ শব্দের মূল অর্থ ছিল যিনি কর্ম সম্পাদন করেন, ভাঙাগড়ার নিয়ামক বা বিধাতা। অর্থাৎ, আক্ষরিকভাবে পরম করুণাময়ের কর্মই হলো কারসাজি। সুতরাং কারসাজি যে সব সময় ইতিবাচকই হবে, তা হলফ করে বলা যায় না। পরম করুণাময়ের একান্ত ইচ্ছা কখনো ইতিবাচক ঘটনার ইঙ্গিত করে, আবার কখনো নেতিবাচক ঘটনারও ইঙ্গিত করে। এতে কেউ হন লাভবান আবার কেউ হন প্রবঞ্চিত। এই সূত্র ধরেই হয়তো কারসাজি শব্দ ইতিবাচক অর্থের গণ্ডি পেরিয়ে নেতিবাচক অর্থের দিকে ধাবিত হয়েছে।
লেখক: রাজীব কুমার সাহা
আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক
বাংলা ভাষায় কারসাজি একটি অতি পরিচিত শব্দ। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই কারসাজি শব্দটি ব্যবহার করেছি, কখনো কখনো এর শিকারও হয়েছি। যদিও বর্তমানে স্পষ্টতই শব্দটির অর্থ নেতিবাচক। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা কেবল দ্রব্যমূল্যের কারসাজিতেই কুপোকাত নই, কখনো কখনো ব্যক্তিবিশেষের কারসাজিতেও কুপোকাত হই। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই কারসাজি কী? এটি কি বাংলা শব্দ? আমরা কি জানি কারসাজি শব্দের মূল অর্থ কী? তবে চলুন আজ জানব কারসাজির কুলঠিকানা।
কারসাজি বাংলা শব্দ নয়, এটি ফারসি শব্দ। ফারসি ‘কারসাজ’ থেকে কারসাজি শব্দটি বাংলা ভাষায় প্রবেশ করেছে। ফারসি কারসাজ শব্দটি বিশেষণ পদ। এর অর্থ হলো ভাঙাগড়ার নিয়ামক, চালাকচতুর বা ধূর্ত। আর বাংলা ভাষায় কারসাজি শব্দের মূল অর্থ হলো চালাকি, ধূর্ততা, কূটকৌশল, কৌশলে প্রতারণা, প্রতারণা, প্রবঞ্চনা প্রভৃতি। কারসাজি বিশেষ্য পদ। শব্দটির অর্থের নিরিখে বলা যায়, কারসাজি করা মানে হলো কারও সঙ্গে কৌশলে প্রতারণা বা প্রবঞ্চনা করা, যা স্পষ্টতই নেতিবাচক।
‘বাংলা একাডেমি বিবর্তনমূলক বাংলা অভিধান’-এ কারসাজি শব্দটি ‘কারসাজী’ বানানেও লিপিবদ্ধ হয়েছে ‘কূটকৌশল’ অর্থে ‘তাঁতি (১৭৯২)’ রচনা থেকে। এ ছাড়া ওসাঁর রচনায় শব্দটি রয়েছে ‘প্রবঞ্চনা’ অর্থে। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’-এ কারসাজি শব্দের একাধিক অর্থ লিপিবদ্ধ রয়েছে। এখানে লক্ষণীয়, ইতিবাচকরূপে কর্ম, সৃষ্টি, নির্মাণ, নৈপুণ্য, পটুতা প্রভৃতি অর্থে শব্দটির ব্যবহার রয়েছে। অনুরূপ নেতিবাচক অর্থেও শব্দটি যেমন: ছল, ধূর্ততা, চালাকি, কৌশল, ফিকির প্রভৃতি অর্থে লিপিবদ্ধ রয়েছে। জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাসের ‘বাঙ্গালা ভাষার অভিধান’-এ কারসাজি শব্দটি স্পষ্টতই নেতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এই অভিধানে কারসাজি শব্দের অর্থ লেখা হয়েছে চালাকি, চতুরতা, কপটতা, প্রবঞ্চনা, কূটকৌশল প্রভৃতি। বঙ্কিমচন্দ্রের ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’ রচনা থেকে এখানে একটি প্রয়োগবাক্যও লিপিবদ্ধ করা হয়েছে যেমন: ‘সেই হরা পাজীর কারসাজী।’
আবার মতিলাল রায়ের রচনা থেকে ‘কুহক বা কৌশল’ অর্থে প্রয়োগবাক্য দেওয়া হয়েছে ‘সব মায়ার কারসাজী ছায়াবাজী।’ পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি কর্তৃক প্রকাশিত ‘আকাদেমি বিদ্যার্থী অভিধান’-এ কারসাজি শব্দের অর্থ লেখা হয়েছে হাতের কায়দা, হাতের চতুর কৌশল, চালাকি, লোক ঠকানোর কায়দা প্রভৃতি। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও তাঁর ‘খাপছাড়া’ কবিতায় নেতিবাচক অর্থে ‘পাজি ময়রার কারসাজি’ প্রয়োগবাক্য রূপে শব্দটি ব্যবহার করেছেন। যদিও রবিঠাকুরের সামগ্রিক রচনায় ‘কারসাজি’ শব্দটি এই একবারই ব্যবহৃত হয়েছে। সুতরাং উপরিউক্ত পর্যবেক্ষণের আলোকে বলা যায়, অর্থের নিরিখে কারসাজি শব্দ স্পষ্টতই নেতিবাচক।
কালের বিবর্তনে ভাষার অর্থের পরিবর্তন ঘটে। আমরা বিবিধ অভিধান পর্যবেক্ষণে দেখতে পাই, এই কারসাজি শব্দ কখনো কখনো ইতিবাচক অর্থেও ব্যবহৃত হয়েছে। এর কারণ হলো, ফারসি ভাষায় ‘কারসাজ’ শব্দের মূল অর্থ ছিল যিনি কর্ম সম্পাদন করেন, ভাঙাগড়ার নিয়ামক বা বিধাতা। অর্থাৎ, আক্ষরিকভাবে পরম করুণাময়ের কর্মই হলো কারসাজি। সুতরাং কারসাজি যে সব সময় ইতিবাচকই হবে, তা হলফ করে বলা যায় না। পরম করুণাময়ের একান্ত ইচ্ছা কখনো ইতিবাচক ঘটনার ইঙ্গিত করে, আবার কখনো নেতিবাচক ঘটনারও ইঙ্গিত করে। এতে কেউ হন লাভবান আবার কেউ হন প্রবঞ্চিত। এই সূত্র ধরেই হয়তো কারসাজি শব্দ ইতিবাচক অর্থের গণ্ডি পেরিয়ে নেতিবাচক অর্থের দিকে ধাবিত হয়েছে।
লেখক: রাজীব কুমার সাহা
আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে