অবৈধ জেটিঘাট বহাল উজাড় হচ্ছে প্যারাবন

পেকুয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১১ মার্চ ২০২২, ০৮: ১৯
আপডেট : ১১ মার্চ ২০২২, ১৩: ৫৩

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পূর্বিতা চাকমার কাছে লোহার তৈরি অবৈধ একটি জেটিঘাট উচ্ছেদে সহযোগিতা চেয়ে পত্র দেন উপকূলীয় বন বিভাগের ছনুয়া রেঞ্জের মগনামা বনবিট কর্মকর্তা হোসনে মোবারক। জনবলসংকটের কারণ দেখিয়ে গত ১৮ অক্টোবর দেওয়া এ পত্রের সাড়া আজ অবধি মেলেনি। তাই নিরুপায় বন বিভাগ জেটিঘাটটি উচ্ছেদ করতে পারছে না। ফলে, প্যারাবন উজাড়ও ঠেকানো যাচ্ছে না।

বন বিভাগ সূত্র জানায়, মগনামা উপকূলীয় বন বিটের অধীনে ২০১১-১২ অর্থবছরে মগনামা লঞ্চঘাটের উভয় পাশে ৫০ হেক্টর বনায়ন সৃজন করা হয়েছিল। বন বিভাগ ও ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত সুইচগেইট সংলগ্ন খালের পাড়ের ওপর এক বছর পূর্বে অবৈধভাবে একটি জেটি নির্মাণ করা হয়। অবৈধ জেটিটি নির্মাণ করেছেন মগনামা ইউনিয়নের সিকদার পাড়া গ্রামের কলিম উল্লাহ চৌধুরীর ছেলে ও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ ওয়াসিম। নিজের বরফ মিলে ব্যবহারের জন্য প্যারাবনের ক্ষতি সাধন করে ২৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৪ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট জেটিটি নির্মাণ করা হয়। জেটি তৈরির শুরু থেকেই বন বিভাগ বাঁধা দিয়ে আসলেও কোন ধরনের কর্ণপাত করেনি তারা।

উপকূলীয় বন বিভাগের মগনামা বনবিট কর্মকর্তা হোসনে মোবারক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি ইউএনও কার্যালয়ে সশরীরে হাজির হয়ে লিখিত আবেদনটি দাখিল করি। জনবল সংকটের কারণে অভিযান চালিয়ে অবৈধ জেটি উচ্ছেদ করা সম্ভব হচ্ছে না বিধায় সরকারি সম্পদ রক্ষার স্বার্থে ইউএনও সহযোগিতা কামনা করেছিলাম। কিন্তু চার মাস পেরিয়ে গেলেও তিনি অবৈধ জেটিটি উচ্ছেদে উদ্যোগ নেননি। কোন সহযোগিতাও করেননি।’

স্থানীয় পরিবেশবাদী মাসউদ বিন জলিল বলেন, ‘অবৈধ জেটিঘাট উচ্ছেদে বন বিভাগকে সহযোগিতা না করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একজন প্রভাবশালীর পক্ষপাত আচরণ করছেন। প্যারাবন রক্ষায় অবৈধ জেটিঘাটটি আমরা দ্রুত উচ্ছেদ চাই।’

মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনুস চৌধুরী বলেন, ‘অবৈধ জেটি ঘাটটি শুধুমাত্র প্যারাবনের ক্ষতি করছে না। রাজস্বও ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে। অবৈধ এই জেটি ঘাট দিয়ে নৌযানে সরবরাহ করা বরফ ও অন্যান্য মালামালের জন্য টোল আদায় করা হচ্ছে না। যা সরকারি রাজস্ব জমায় প্রভাব পড়ছে। বিধি মতে মগনামা লঞ্চঘাটের ইজারাদার মালামাল পরিবহনের বা পারাপারের জন্য নির্দিষ্ট একটি টোল পাওয়ার কথা। কিন্তু অদৃশ্য কারণে তা হচ্ছে না।’

এসব ব্যাপারে জানতে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পূর্বিতা চাকমার সঙ্গে দুই দিন ধরে মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে প্রশ্ন এড়িয়ে যান।

উপকূলীয় বন বিভাগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. আবদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জনবল সংকটের কারণে উচ্ছেদ, জব্দের মতো বিষয়গুলোতে প্রায় সময় আমরা স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে থাকি। বিশেষ কারণে স্থানীয় প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা না করলে করার কিছুই থাকে না।’

স্থানীয় সরকার বিভাগ কক্সবাজারের উপপরিচালক শ্রাবস্তী রায় আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অবৈধ জেটিঘাট উচ্ছেদ সম্পূর্ণ স্থানীয় প্রশাসনের সদিচ্ছার বিষয়। বন বিভাগ উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে এটি করতে পারে। আর টোল ফাঁকির বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত