Ajker Patrika

‘জনসমুদ্রের উত্তাল জোয়ার’

এ আর চন্দন, ঢাকা
‘জনসমুদ্রের উত্তাল জোয়ার’

একাত্তরের এই দিনে বিকেলে ধানমন্ডির বাসভবনে সমবেত জনতার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বলেন, বুলেট-বেয়নেট দিয়ে কখনো সাড়ে সাত কোটি বাঙালির দাবিকে স্তব্ধ করা যাবে না। তিনি গুজব ও বিভেদ সৃষ্টিকারীদের সম্পর্কে সতর্ক থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধুর সেই আহ্বান পরদিন দৈনিক পাকিস্তানে প্রধান শিরোনামের নিচে ছাপা হয় ‘বুলেট দিয়ে স্তব্ধ করা যাবে নাঃ মুজিব’ শিরোনামে। ‘আন্দোলন অব্যাহত থাকিবে’ শিরোনামে ছাপা হয় দৈনিক ইত্তেফাকে প্রথম কলামে।

এর আগে সকালে প্রেসিডেন্ট ভবনে বঙ্গবন্ধু ও ইয়াহিয়া খানের পঞ্চম দফা বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিস্তারিত কিছু জানাননি বঙ্গবন্ধু। তিনি বলেন, আগের বৈঠকের আলোচনায় উদ্ভূত কিছু বিষয়ের ব্যাখ্যার জন্য এই বৈঠক। এই বৈঠকের খবরটিই পরদিন বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রধান প্রতিবেদন হিসেবে প্রকাশ করা হয়। ইত্তেফাকের প্রধান শিরোনাম করা হয়, ‘ইয়াহিয়া-মুজিব অনির্ধারিত বৈঠক’। এতে জানানো হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রেসিডেন্ট জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান ২১ মার্চ সকালে ঢাকায় প্রেসিডেন্ট ভবনে এক অনির্ধারিত বৈঠকে মিলিত হন। প্রায় ৭০ মিনিট স্থায়ী এই বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ। বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য এবং ইয়াহিয়ার সঙ্গে বৈঠক মিলিয়ে প্রধান প্রতিবেদন সাজায় আজাদ।

এর আগে ধানমন্ডিতে নিজ বাসভবনে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের প্রখ্যাত আইনজীবী ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম কৌঁসুলি এ কে ব্রোহির সঙ্গে আলোচনায় বসেন। ওই সময় এ কে ব্রোহি বলেন, সামরিক আইন প্রত্যাহার ও শাসনতন্ত্র প্রণয়নের আগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার ব্যাপারে আইনগত কোনো বাধা নেই। পরদিন ইত্তেফাকে ব্রোহির এই অভিমত প্রধান শিরোনামের পাশে দুই কলাম বক্সে ছাপা হয়। দৈনিক পাকিস্তানেও প্রধান শিরোনামের নিচে ছাপা হয় এক কলামে।

ইয়াহিয়া খানের আমন্ত্রণে এ দিন করাচি থেকে ঢাকায় আসেন পিপিপি চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো। তিনি ঢাকায় এসে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে হোটেলে ফিরেই ভুট্টো নিজের উপদেষ্টাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। এর আগে হোটেল লাউঞ্জে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের ভুট্টো বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমি এটুকু বলতে পারি যে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।’ এরপরই তিনি সোজা লিফটে উঠে পড়েন। ওই সময় সাংবাদিকেরা পিছু নিলে ভুট্টোর ব্যক্তিগত প্রহরীরা অস্ত্র উঁচিয়ে বাধা দেন। কড়া সামরিক প্রহরায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে তাঁর ঢোকার তিন কলাম ছবি পরদিন দৈনিক পাকিস্তানে প্রধান প্রতিবেদনের নিচে ছাপা হয়। ছবির নিচে দুই কলাম শিরোনাম ছিল ‘কড়া সামরিক প্রহরায় ভুট্টো ঢাকায় এসেছেন’। শোল্ডারে ছিল ‘হোটেলের পথে শুধু বিক্ষোভ আর বিক্ষোভ’। এর পাশে এক কলাম আরেকটি শিরোনাম ছিল ‘ইয়াহিয়া-ভুট্টো বৈঠক’। ইত্তেফাকের শিরোনাম ছিল ‘সব কুছ ঠিক হো যায়েগা’। শোল্ডারে ছিল ‘হঠ যাও’।

অসহযোগ আন্দোলনের ২০তম দিনে মুক্তিপাগল হাজারো মানুষের দফায় দফায় মিছিলে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে ঢাকা। একের পর এক মিছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার অভিমুখে এগিয়ে চলে। সেখানে মুক্তি অর্জনের শপথ নিয়ে মিছিল যায় বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে। বিক্ষোভ চলে সারা দেশেই। ঢাকার বাইরের আন্দোলন নিয়ে পরদিন আজাদে প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘বাংলার গ্রামে-গঞ্জে বন্দরে শহরে জনসমুদ্রের উত্তাল জোয়ার’।

এ দিন বিকেলে ন্যাপপ্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী চট্টগ্রামে পোলো গ্রাউন্ডে এক বিশাল জনসভায় বলেন, ‘আলোচনায় ফল হবে না। এ দেশের হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি থেকে চাপরাশি পর্যন্ত যখন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে মানে না, তখন শাসনক্ষমতা শেখ মুজিবের হাতে দেওয়া উচিত।’ ভাসানীর ওই জনসভার খবর পরদিন দৈনিক পাকিস্তান প্রথম পাতায় ছাপে। সংবাদে শিরোনাম করা হয় ‘মুজিবের নেতৃত্বে সরকার গঠন করিয়া বাংলা ত্যাগ করুন: ইয়াহিয়ার প্রতি মওলানা ভাসানী’।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আমিনুল ইসলাম নন, শিক্ষা উপদেষ্টা হচ্ছেন অধ্যাপক আবরার

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোঁড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

উপদেষ্টা হচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আমিনুল ইসলাম

বসুন্ধরায় ছিনতাইকারী সন্দেহে ২ বিদেশি নাগরিককে মারধর

বিএনপির দুই পেশাজীবী সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত