শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নির্মাণকাজের ধীর গতিতে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। তিনতলা ভবনের নির্মাণকাজ দেড় বছরের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও তিন বছরেও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাজের এখনো প্রায় ৩০ ভাগ বাকি।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ফান্ড না থাকায় কাজে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। নির্মাণকাজ চলছে। চলতি মে মাসের মধ্যে কাজ শেষ হবে।

আর জেলা প্রকৌশল অফিস থেকে বলা হয়েছে, প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ বন্ধ ছিল। এক মাস আগে সেই জটিলতা শেষ হয়েছে। শিগগিরই নির্মাণকাজ শেষ হবে।

এলাকাবাসী ও গণপূর্ত বিভাগ সূত্র জানা গেছে, উপজেলার বাঘবেড় ইউনিয়নের রাণীগাঁও গ্রামে এই মডেল মসজিদের কাজ চলছে। দেশের প্রতিটি জেলা সদর ও উপজেলা পর্যায়ে একটি করে মডেল মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। জেলা গণপূর্ত বিভাগ এর বাস্তবায়ন করছে। দেশের অন্যান্য স্থানের মতো রাণীগাঁও গ্রামেও একটি মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই মসজিদের নির্মাণকাজের ব্যয় ধরা হয় ১১ কোটি ৮৯ লাখ ৮ হাজার ২৩১ টাকা।

ঢাকা মোহাম্মদী হাউজিং সোসাইটি নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সাব-ঠিকাদার হিসেবে জামালপুরের ইনায়া কনস্ট্রাকশন লিঃ ২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু করে। ২০২০ সালের জুন মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের পর আরও ২০ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো প্রায় ৩০ ভাগ কাজ বাকি রয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ৭-৮ জন লোক নির্মাণকাজে শ্রমিকের দায়িত্বে রয়েছেন। দুই শ্রমিক কাজ করছেন। মসজিদের ভেতরে পানির হাউসের কাজ করা হচ্ছে। নিচের ঢালাই শেষ করা হয়েছে। তবে হাউসের চার পাশে সেন্টার করতে কাঠ ও ঢালাই করতে পাথর প্রয়োজন। কিন্তু কাঠ ও পাথর না থাকায় বাকি শ্রমিকেরা বসে অলস সময় পার করছেন। গত বুধবার দুপুরে প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী ও গণপূর্তের কোনো কর্মকর্তাকে সেখানে পাওয়া যায়নি।

একজন শ্রমিক বলেন, কাঠ না থাকায় সেন্টার করা যাচ্ছে না। সেন্টার শেষ করে ঢালাই করতে হবে। কিন্তু ঢালাইয়ে যে পরিমাণ পাথর দরকার তা নেই। তাই বসে আছি। তিনি আরও বলেন, কাজটি শেষ হতে আরও দুই বছর সময়ের দরকার।

রানীগাঁও গ্রামের কৃষক আজগর আলী বলেন, ‘এই কাজের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোনো তদারকি নেই। ঠিকাদারের মন মত কাজ চলছে। দেড় বছরের এই কাজ তিন বছরেও শেষ হয় নাই। এভাবে চললে আরও দুই বছর লাগবে কাজ শেষ হতে। দেরি হওয়ায় এই কাজে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ।’

এ ব্যাপারে ইনাইয়া কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী মো. ইয়াকুব আলী বলেন, ফান্ড না থাকায় কাজের কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। ১২ কোটি টাকার বরাদ্দের কাজে এই পর্যন্ত টাকা পাওয়া গেছে ২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এখন সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। তবুও নির্মাণকাজ চালিয়ে গেছি। এখনো কাজ চলছে। আশা করছি মে মাসে কাজটি শেষ করা যাবে।

উপজেলার বাঘবেড় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আবদুস সবুর বলেন, ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্থানে মডেল মসজিদ মুসল্লিদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে আমাদের মসজিদের কাজ এখনো শেষ হয়নি। এ নিয়ে এলাকাবাসী ও মুসল্লিদের মধ্যে কিছুটা ক্ষোভ রয়েছে।

শেরপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ‘এই প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ বন্ধ ছিল। এক মাস আগে সেই জটিলতা শেষ হয়েছে। এটা শুধু নালিতাবাড়ীতে নয় সারা দেশে কাজের স্থবিরতা ছিল। এখন পুরোদমে কাজ চলমান রয়েছে। আশা করছি দ্রুত কাজ শেষ করা যাবে।’