সবুজ কারখানায় অনন্য উচ্চতায় বাংলাদেশ

নাদিম নেওয়াজ, ঢাকা
প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২২, ০৮: ১৯
আপডেট : ১১ অক্টোবর ২০২২, ১০: ০৬

যে দেশের পোশাক কারখানার বদনাম ছিল বিশ্বজুড়ে; সে দেশের পোশাক কারখানাই এখন সুনামের শীর্ষে। অনিরাপদ শিল্পের শীর্ষ দেশটিই এখন বিশ্বের সবার কাছে পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ কারখানার অনন্য উদাহরণ। গত প্রায় ১০ বছরে পুরো বদলে গেছে বাংলাদেশের কারখানার কর্মপরিবেশ। মাত্র এক দশক আগেও দেশে পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানার সংখ্যা ছিল মাত্র ১টি। এখন সেই সংখ্যা বেড়ে ১৭৩টিতে দাঁড়িয়েছে। সবুজ কারখানার তালিকায় বিশ্বে শীর্ষে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। যা এই খাতের রপ্তানি বাড়াতে অবদান রাখছে বলে জানিয়েছেন রপ্তানিকারকেরা। তালিকায় বাংলাদেশের পরের অবস্থানে রয়েছে ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়া।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংগঠন ‘ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের (ইউএসজিবিসি) এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ডিজাইন (এলইইডি)’ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কারখানাগুলোকে সার্টিফিকেট দিয়ে থাকে। সর্বশেষ তথ্য বলছে, বাংলাদেশে সবুজ কারখানা বা গ্রিন ফ্যাক্টরির সংখ্যা এখন ১৭৩টি। এর মধ্যে প্লাটিনাম ক্যাটাগরিতে রয়েছে ৫৪টি, গোল্ড ক্যাটাগরিতে ১০৫টি, সিলভারে ১০টি, আর সার্টিফায়েড ৪টি। এ ছাড়া গ্রিন ফ্যাক্টরি হতে রেজিস্ট্রেশন বা পাইপলাইনে রয়েছে আরও ৫৫০টির বেশি কারখানা।

সাধারণ স্থাপনার চেয়ে পরিবেশবান্ধব স্থাপনায় ৫-২০ শতাংশ খরচ বেশি হয়। এ ছাড়া ইউএসজিবিসি লিড সনদ পেতে স্থাপনা নির্মাণে অন্তত ৯টি শর্ত পরিপালন করতে হয়। এদিকে, বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ এবং সবুজ পোশাক কারখানার দেশ হিসেবে মর্যাদা পেয়েছে বাংলাদেশ। ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টারের (আইটিসি) সর্বশেষ প্রকাশনায় এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ও বিশ্বের অন্যতম একটি শীর্ষ তালিকার গ্রিন কারখানা প্লামি ফ্যাশনসের উদ্যোক্তা ফজলুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, আইটিসির এই স্বীকৃতি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য একটি মাইলফলক। এর ফলে দেশের ভাবমূর্তি আরও অনেক উজ্জ্বল হবে, যা এই খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উৎসাহিত করবে। সবুজ কারখানা স্থাপনে খরচ বেশি তারপরও এই সংখ্যা কেন বাড়ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে বিভিন্ন কারণে ক্রেতা দেশগুলোর কাছে বাংলাদেশের নেগেটিভ ইমেজ তৈরি হয়েছে। এই দুর্নাম ঘোচানো অন্যতম একটা কারণ। বহির্বিশ্বকে জানানো বাংলাদেশের কর্মপরিবেশ শ্রমিকবান্ধব। এসব কারণেই ব্যয়বহুল সত্ত্বেও দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে সবুজ কারখানা।

এর আগে গত বছর সবুজায়নে ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের (ইউএসজিবিসি) পক্ষ থেকে লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড তথা বিশ্বে প্রথম ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল অ্যাওয়ার্ড পায় বিজিএমইএ। বৈশ্বিক পোশাকশিল্পজগতে বিজিএমইএ-ই হচ্ছে একমাত্র সংগঠন, যারা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই পদক অর্জন করে। এ ছাড়াও বিশ্বের শীর্ষ ১০ পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানার মধ্যে ৯টির মালিক বাংলাদেশ।

পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তা সাজ্জাদুর রহমান মৃধার হাত ধরে ২০১২ সালে প্রথম পরিবেশবান্ধব কারখানার যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশে। পাবনার ঈশ্বরদী ইপিজেডে তিনি স্থাপন করেন ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও। তাঁর দেখানো পথ ধরেই দেশে একটার পর একটা পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানা গড়ে উঠছে।

এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, বিদেশি ক্রেতাদের আস্থা বাড়াতে সবুজ কারখানায় বিনিয়োগ করছেন আমাদের উদ্যোক্তারা। পাশাপাশি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে কাজটি করছেন উদ্যোক্তারা। এর ফলে দেশের পোশাকশিল্প বর্তমানে একটি নিরাপদ শিল্প হিসেবে বিশ্বে রোল মডেল তৈরি করেছে। 
ফারুক হাসান বলেন, ‘আমাদের আরও ৫৫০টিরও বেশি কারখানা সবুজ কারখানার স্বীকৃতি পাওয়ার পাইপলাইনে রয়েছে।’ এখন থেকে প্রতি মাসে কমপক্ষে ২-৩টি প্রতিষ্ঠান সবুজ কারখানার স্বীকৃতি পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ফারুক হাসান। সবুজ কারখানার করপোরেট কর ২ শতাংশ থেকে আরও কমানো এবং ব্যাংক থেকে কম সুদে ঋণ দেওয়ারও দাবি জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আবু সাঈদকে ৪–৫ ঘণ্টা পরে হাসপাতালে নেওয়া হয়—শেখ হাসিনার দাবির সত্যতা কতটুকু

মেট্রোরেল থেকে আমলাদের বিদায়, অগ্রাধিকার প্রকৌশলীদের

সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার সময় বাড়ল

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

ব্যাংক খাতে নতুন নীতিমালা: আটকে গেল ২৫৮ কর্মকর্তার জিএম পদে পদোন্নতি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত