অরুণ কর্মকার
একাধিক কারণে বিদ্যুতের বিষয়টি বারবার আলোচনায় আসছে। প্রথমত, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আবারও তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে এবং তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে বিদ্যুতের চাহিদা সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠবে এবং দেশের অনেক জায়গায় অসহনীয় লোডশেডিংয়ের আশঙ্কা রয়েছে। দ্বিতীয়ত, আসন্ন জাতীয় বাজেট সম্পর্কে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের আলাপ-আলোচনায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আমদানি করা সব ধরনের জ্বালানির ওপর শুল্ক বসাতে এবং বাড়াতে চায় বলে একটি কথা শোনা যাচ্ছে। তৃতীয়ত, মার্কিন ডলারের সরকারনির্ধারিত দাম একলাফে সাত টাকা বাড়িয়ে দেওয়ায় টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন হয়েছে, যার প্রভাব বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে অবধারিতভাবে পড়বে। চতুর্থত, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত হিসেবে এ খাতে সরকারের ভর্তুকি তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
এই কারণগুলো বিদ্যুৎ খাতে সরকারের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। আর সরকার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ায় বিদ্যুতের গ্রাহকেরাও বিপাকে পড়তে যাচ্ছেন। অবশ্য গ্রাহকেরা এখনো যে খুব স্বস্তিতে আছেন, তা নয়। কেননা ২০১০ থেকে ২০২০ পর্যন্ত বিদ্যুতের দাম বেড়েছে নয়বার। আর গত দেড় বছরে বেড়েছে চারবার। সামনে যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে তারও অন্তর্নিহিত বিষয় দাম বৃদ্ধি। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ইতিমধ্যে গণমাধ্যমের কাছে বলেছেন, ডলারের দাম এবং সরকারের ভর্তুকি সমন্বয় করতে গিয়ে বিদ্যুতের দাম বছরে চার-পাঁচবার সমন্বয় করা হতে পারে। এরই প্রেক্ষাপটে বিদ্যুৎ খাতে সরকারের যে চ্যালেঞ্জগুলো গ্রাহকদেরও বিপাকে ফেলবে, সেগুলোর প্রতি দৃষ্টিপাত করা প্রয়োজন।
সরকারের প্রথম চ্যালেঞ্জ, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন। এ জন্য প্রথমেই প্রয়োজন প্রকৃত চাহিদা নিরূপণ করা। এটি করা হয়নি বলেই রেকর্ডভাঙা বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরও বাস্তবে অনেক এলাকায় লোডশেডিং করা হয়। কিন্তু খাতাপত্রে কোনো লোডশেডিং থাকে না। চাহিদা অনুযায়ী, বিদ্যুৎ উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত থাকে জ্বালানির প্রাপ্যতার ব্যাপারটিও। বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। তবে প্রয়োজনীয় জ্বালানির (বিশেষ করে গ্যাস) অভাবে প্রায় চার হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হয় বলে এখন সবাই জানেন।
দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ, নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ। এ বিষয়টি জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) অংশ। সরকার এসডিজিতে স্বাক্ষর করে এই লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের সঙ্গে যুক্ত সঞ্চালন ও বিতরণব্যবস্থার সক্ষমতা। আমরা জানি, সঞ্চালনব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার জন্য মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের পূর্ণ উৎপাদন ক্ষমতা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রেও একই সমস্যা হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর শহরাঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নয়ন হলেও গ্রামাঞ্চলের সর্বত্র এখনো তা হয়নি। এটি না হলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না।
তৃতীয় চ্যালেঞ্জ, বিদ্যুতের দাম। দাম মানে সব শ্রেণির গ্রাহকের কাছে বহনযোগ্য দাম (অ্যাফোর্ডেবল প্রাইস)। এই অ্যাফোর্ডেবল প্রাইসও এসডিজির অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু আমাদের দেশে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রবণতা সব শ্রেণির গ্রাহকের কাছে বহনযোগ্য বলা যাবে না। এখানে ২০১০ সালে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড় দাম ছিল ৩ টাকা ৭৩ পয়সা। ২০২৪ সালে তা হয়েছে ৮ টাকা ৯৫ পয়সা। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর উপরোল্লিখিত বক্তব্য থেকে পরিষ্কার যে প্রতিবছর বিদ্যুতের দাম আরও বাড়বে (সমন্বয় করা হলে)। তারপরও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির মতো অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান দিয়ে হয়তো চেষ্টা করা হবে দাম বৃদ্ধি এবং অ্যাফোর্ডেবল প্রাইসের যৌক্তিকতা প্রতিষ্ঠার। কিন্তু বাস্তবতা হবে ভিন্নতর।
অবশ্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে টাকার অবমূল্যায়নজনিত ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। কারণ বিদ্যুৎ ও জ্বালানির আমদানি ছাড়াও অবকাঠামো নির্মাণে যে বিনিয়োগ করা হয়, এর একটি বড় অংশ করা হয় মার্কিন ডলারে। কিন্তু গ্রাহকের কাছ থেকে বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম নেওয়া হয় দেশীয় মুদ্রা টাকায়। ফলে টাকার অবমূল্যায়নের সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ-জ্বালানির দামও পুনর্নির্ধারণ করা প্রয়োজন হয়। না হলে তো বিনিয়োগই ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়। এটিও এক বাস্তবতা, যা সরকারকে বিরাট চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
চতুর্থ চ্যালেঞ্জ, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রভাব মোকাবিলা। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট অসহনীয় গরমে কেবল যে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ে তা নয়; বিদ্যুৎ উৎপাদনব্যবস্থার দক্ষতাও কমিয়ে ফেলে। বিদ্যুতের উৎপাদন যন্ত্রাদি, ট্রান্সফরমার, তারসহ সঞ্চালন ও বিতরণব্যবস্থার সামগ্রিক দক্ষতা প্রচণ্ড গরমে হ্রাস পায়। বিকল হওয়ার ঘটনাও বাড়ে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন হয়; যার সঙ্গে জড়িত বাড়তি বিনিয়োগের বিষয়। বৈশ্বিক উষ্ণতা ক্রমাগতভাবে বাড়বে বলেই ধারণা করা হয়। অন্তত কমবে যে না, তা নিশ্চিত। কারণ উষ্ণতা কমানোর আন্তর্জাতিক উদ্যোগে বলার মতো সাফল্য নেই। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য এ এক বড় সমস্যা, যা সৃষ্টি করেছে তথাকথিত উন্নত বিশ্ব।
পঞ্চম চ্যালেঞ্জ, বৈদেশিক মুদ্রার প্রাপ্যতা। দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্পর্শকাতর পর্যায়ে নেমে গেছে। ব্যবহারযোগ্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ১৩ বিলিয়ন ডলারেরও কম। অথচ জ্বালানি (জ্বালানি তেল, এলএনজি, কয়লা এবং এলপি গ্যাস) আমদানি, বিদ্যুৎ আমদানি এবং বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্রের (আইপিপি) বিল পরিশোধের জন্য ডলারের প্রয়োজন ক্রমাগতভাবে বেড়ে চলেছে। রপ্তানি আয় এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো ডলার (রেমিট্যান্স) দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সমৃদ্ধ করা বর্তমান বাস্তবতায় যথেষ্টই কঠিন একটি বিষয়। অথচ আমদানির এমন কোনো বিকল্প আমরা তৈরি করিনি, যাতে সংকটকালীন স্থবিরতা সৃষ্টি না হয়। দেশের নিজস্ব জ্বালানি সম্পদ উন্নয়ন হতে পারত সেই বিকল্প, যা সংকটের সময় সুরক্ষা দিত।
ষষ্ঠ চ্যালেঞ্জ, ক্যাপাসিটি পেমেন্ট ও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ। বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের যেকোনো বড় অবকাঠামো নির্মাণের জন্য বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঋণ নেওয়া সারা পৃথিবীতে গ্রহণযোগ্য একটি পন্থা। এই ঋণ দেশের ব্যাংক থেকেও নেওয়া হয়। বৈদেশিক ঋণও নেওয়া হয়। বিনিয়োগের জন্য নেওয়া এই ঋণ পরিশোধের পদ্ধতি হলো ক্যাপাসিটি পেমেন্ট। সরকারি-বেসরকারি দুই ধরনের প্রকল্পেই এই ক্যাপাসিটি পেমেন্টের ব্যবস্থা থাকে। ক্যাপাসিটি পেমেন্টের টাকা কোনো ব্যক্তি বা কোম্পানির পকেটে যায় না। যায় ঋণদানকারী ব্যাংকে। আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা দ্রুত এবং প্রয়োজনের তুলনায় কিছু বেশি (?) বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্যাপাসিটি পেমেন্টের অঙ্কটাও বেশ বড়। তা ছাড়া জ্বালানির অভাবে বন্ধ রাখতে হচ্ছে এমন কেন্দ্রের জন্যও ক্যাপাসিটি পেমেন্ট পরিশোধ বিদ্যুৎ খাতের ওপর বিশাল চাপ সৃষ্টি করেছে। এরপর শুরু হবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য নেওয়া ঋণ পরিশোধের পালা। সব মিলিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের যে আর্থিক দায়-দেনা দাঁড়িয়েছে, তা এই খাতের পক্ষে বহন করা কঠিন।
ফলে সরকার সব সময় যেটা করে, ক্রমাগতভাবে দাম বাড়িয়ে গ্রাহকের কাঁধের বোঝাটা আরও বেশি ভারী করে তোলে। তাতে বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি পূরণ অবশ্য সম্ভব
হয় না। কিন্তু সেই ঘাটতি এখন বিরাট চ্যালেঞ্জ এবং বড় দুশ্চিন্তার বিষয়।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
একাধিক কারণে বিদ্যুতের বিষয়টি বারবার আলোচনায় আসছে। প্রথমত, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আবারও তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে এবং তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে বিদ্যুতের চাহিদা সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠবে এবং দেশের অনেক জায়গায় অসহনীয় লোডশেডিংয়ের আশঙ্কা রয়েছে। দ্বিতীয়ত, আসন্ন জাতীয় বাজেট সম্পর্কে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের আলাপ-আলোচনায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আমদানি করা সব ধরনের জ্বালানির ওপর শুল্ক বসাতে এবং বাড়াতে চায় বলে একটি কথা শোনা যাচ্ছে। তৃতীয়ত, মার্কিন ডলারের সরকারনির্ধারিত দাম একলাফে সাত টাকা বাড়িয়ে দেওয়ায় টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন হয়েছে, যার প্রভাব বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে অবধারিতভাবে পড়বে। চতুর্থত, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত হিসেবে এ খাতে সরকারের ভর্তুকি তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
এই কারণগুলো বিদ্যুৎ খাতে সরকারের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। আর সরকার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ায় বিদ্যুতের গ্রাহকেরাও বিপাকে পড়তে যাচ্ছেন। অবশ্য গ্রাহকেরা এখনো যে খুব স্বস্তিতে আছেন, তা নয়। কেননা ২০১০ থেকে ২০২০ পর্যন্ত বিদ্যুতের দাম বেড়েছে নয়বার। আর গত দেড় বছরে বেড়েছে চারবার। সামনে যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে তারও অন্তর্নিহিত বিষয় দাম বৃদ্ধি। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ইতিমধ্যে গণমাধ্যমের কাছে বলেছেন, ডলারের দাম এবং সরকারের ভর্তুকি সমন্বয় করতে গিয়ে বিদ্যুতের দাম বছরে চার-পাঁচবার সমন্বয় করা হতে পারে। এরই প্রেক্ষাপটে বিদ্যুৎ খাতে সরকারের যে চ্যালেঞ্জগুলো গ্রাহকদেরও বিপাকে ফেলবে, সেগুলোর প্রতি দৃষ্টিপাত করা প্রয়োজন।
সরকারের প্রথম চ্যালেঞ্জ, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন। এ জন্য প্রথমেই প্রয়োজন প্রকৃত চাহিদা নিরূপণ করা। এটি করা হয়নি বলেই রেকর্ডভাঙা বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরও বাস্তবে অনেক এলাকায় লোডশেডিং করা হয়। কিন্তু খাতাপত্রে কোনো লোডশেডিং থাকে না। চাহিদা অনুযায়ী, বিদ্যুৎ উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত থাকে জ্বালানির প্রাপ্যতার ব্যাপারটিও। বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। তবে প্রয়োজনীয় জ্বালানির (বিশেষ করে গ্যাস) অভাবে প্রায় চার হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হয় বলে এখন সবাই জানেন।
দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ, নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ। এ বিষয়টি জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) অংশ। সরকার এসডিজিতে স্বাক্ষর করে এই লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের সঙ্গে যুক্ত সঞ্চালন ও বিতরণব্যবস্থার সক্ষমতা। আমরা জানি, সঞ্চালনব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার জন্য মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের পূর্ণ উৎপাদন ক্ষমতা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রেও একই সমস্যা হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর শহরাঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নয়ন হলেও গ্রামাঞ্চলের সর্বত্র এখনো তা হয়নি। এটি না হলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না।
তৃতীয় চ্যালেঞ্জ, বিদ্যুতের দাম। দাম মানে সব শ্রেণির গ্রাহকের কাছে বহনযোগ্য দাম (অ্যাফোর্ডেবল প্রাইস)। এই অ্যাফোর্ডেবল প্রাইসও এসডিজির অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু আমাদের দেশে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রবণতা সব শ্রেণির গ্রাহকের কাছে বহনযোগ্য বলা যাবে না। এখানে ২০১০ সালে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড় দাম ছিল ৩ টাকা ৭৩ পয়সা। ২০২৪ সালে তা হয়েছে ৮ টাকা ৯৫ পয়সা। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর উপরোল্লিখিত বক্তব্য থেকে পরিষ্কার যে প্রতিবছর বিদ্যুতের দাম আরও বাড়বে (সমন্বয় করা হলে)। তারপরও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির মতো অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান দিয়ে হয়তো চেষ্টা করা হবে দাম বৃদ্ধি এবং অ্যাফোর্ডেবল প্রাইসের যৌক্তিকতা প্রতিষ্ঠার। কিন্তু বাস্তবতা হবে ভিন্নতর।
অবশ্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে টাকার অবমূল্যায়নজনিত ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। কারণ বিদ্যুৎ ও জ্বালানির আমদানি ছাড়াও অবকাঠামো নির্মাণে যে বিনিয়োগ করা হয়, এর একটি বড় অংশ করা হয় মার্কিন ডলারে। কিন্তু গ্রাহকের কাছ থেকে বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম নেওয়া হয় দেশীয় মুদ্রা টাকায়। ফলে টাকার অবমূল্যায়নের সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ-জ্বালানির দামও পুনর্নির্ধারণ করা প্রয়োজন হয়। না হলে তো বিনিয়োগই ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়। এটিও এক বাস্তবতা, যা সরকারকে বিরাট চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
চতুর্থ চ্যালেঞ্জ, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রভাব মোকাবিলা। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট অসহনীয় গরমে কেবল যে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ে তা নয়; বিদ্যুৎ উৎপাদনব্যবস্থার দক্ষতাও কমিয়ে ফেলে। বিদ্যুতের উৎপাদন যন্ত্রাদি, ট্রান্সফরমার, তারসহ সঞ্চালন ও বিতরণব্যবস্থার সামগ্রিক দক্ষতা প্রচণ্ড গরমে হ্রাস পায়। বিকল হওয়ার ঘটনাও বাড়ে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন হয়; যার সঙ্গে জড়িত বাড়তি বিনিয়োগের বিষয়। বৈশ্বিক উষ্ণতা ক্রমাগতভাবে বাড়বে বলেই ধারণা করা হয়। অন্তত কমবে যে না, তা নিশ্চিত। কারণ উষ্ণতা কমানোর আন্তর্জাতিক উদ্যোগে বলার মতো সাফল্য নেই। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য এ এক বড় সমস্যা, যা সৃষ্টি করেছে তথাকথিত উন্নত বিশ্ব।
পঞ্চম চ্যালেঞ্জ, বৈদেশিক মুদ্রার প্রাপ্যতা। দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্পর্শকাতর পর্যায়ে নেমে গেছে। ব্যবহারযোগ্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ১৩ বিলিয়ন ডলারেরও কম। অথচ জ্বালানি (জ্বালানি তেল, এলএনজি, কয়লা এবং এলপি গ্যাস) আমদানি, বিদ্যুৎ আমদানি এবং বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্রের (আইপিপি) বিল পরিশোধের জন্য ডলারের প্রয়োজন ক্রমাগতভাবে বেড়ে চলেছে। রপ্তানি আয় এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো ডলার (রেমিট্যান্স) দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সমৃদ্ধ করা বর্তমান বাস্তবতায় যথেষ্টই কঠিন একটি বিষয়। অথচ আমদানির এমন কোনো বিকল্প আমরা তৈরি করিনি, যাতে সংকটকালীন স্থবিরতা সৃষ্টি না হয়। দেশের নিজস্ব জ্বালানি সম্পদ উন্নয়ন হতে পারত সেই বিকল্প, যা সংকটের সময় সুরক্ষা দিত।
ষষ্ঠ চ্যালেঞ্জ, ক্যাপাসিটি পেমেন্ট ও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ। বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের যেকোনো বড় অবকাঠামো নির্মাণের জন্য বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঋণ নেওয়া সারা পৃথিবীতে গ্রহণযোগ্য একটি পন্থা। এই ঋণ দেশের ব্যাংক থেকেও নেওয়া হয়। বৈদেশিক ঋণও নেওয়া হয়। বিনিয়োগের জন্য নেওয়া এই ঋণ পরিশোধের পদ্ধতি হলো ক্যাপাসিটি পেমেন্ট। সরকারি-বেসরকারি দুই ধরনের প্রকল্পেই এই ক্যাপাসিটি পেমেন্টের ব্যবস্থা থাকে। ক্যাপাসিটি পেমেন্টের টাকা কোনো ব্যক্তি বা কোম্পানির পকেটে যায় না। যায় ঋণদানকারী ব্যাংকে। আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা দ্রুত এবং প্রয়োজনের তুলনায় কিছু বেশি (?) বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্যাপাসিটি পেমেন্টের অঙ্কটাও বেশ বড়। তা ছাড়া জ্বালানির অভাবে বন্ধ রাখতে হচ্ছে এমন কেন্দ্রের জন্যও ক্যাপাসিটি পেমেন্ট পরিশোধ বিদ্যুৎ খাতের ওপর বিশাল চাপ সৃষ্টি করেছে। এরপর শুরু হবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য নেওয়া ঋণ পরিশোধের পালা। সব মিলিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের যে আর্থিক দায়-দেনা দাঁড়িয়েছে, তা এই খাতের পক্ষে বহন করা কঠিন।
ফলে সরকার সব সময় যেটা করে, ক্রমাগতভাবে দাম বাড়িয়ে গ্রাহকের কাঁধের বোঝাটা আরও বেশি ভারী করে তোলে। তাতে বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি পূরণ অবশ্য সম্ভব
হয় না। কিন্তু সেই ঘাটতি এখন বিরাট চ্যালেঞ্জ এবং বড় দুশ্চিন্তার বিষয়।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে