নাটোরে বিএনপি গণ-অনশন কর্মসূচিতে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ, সাংবাদিক ও বিএনপির নেতা-কর্মীসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। গতকাল সোমবার সকালে শহরের আলাইপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও বিএনপিদলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ তাঁকে বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল সোমবার সকালে নাটোর শহরের আলাইপুরের বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন নেতা-কর্মীরা। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা রুহুল কুদ্দুস দুলুর স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন ছবির নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি কিছু দূর যাওয়ার পর পুলিশ তাতে বাধা দেয়। এ সময় দলের নেতা-কর্মীদের শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করতে বললে তাঁরা ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশের ওপর চড়াও হন। পুলিশ লাঠিপেটা করলে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এ সময় সাবিনা ইয়াসমিনসহ বিএনপির ৩০ জনের বেশি নেতা-কর্মী আহত হন বলে দলটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।

পরে বিএনপির নেতা-কর্মীরা বিক্ষিপ্তভাবে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এ সময় নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুনছুর রহমান ও সাংবাদিকসহ বিএনপির ২৫ নেতা-কর্মী আহত হন। আহত চার গণমাধ্যমকর্মী হলেন শহিদুল হক সরকার, কামরুল ইসলাম, শরিফুর ইসলাম শরিফ ও বোরহান উদ্দিন বনি।

রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন ছবি অভিযোগ করেন, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ শুরুর আগেই তাঁদের নেতা-কর্মীদের ওপর পুলিশ নির্বিচারে লাঠিপেটা, গুলিবর্ষণ ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু ঘটনার পর সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা চালানো হয়েছে। এ হামলায় তাঁর স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন ছবি, জেলা বিএনপির সদস্যসচিব রহিম নেওয়াজ, ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাজ্জাদ হোসেন সোহাগ, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবুল হোসেন, ছাত্রদল নেতা কামরুল ইসলাম, বনপাড়া পৌর কাউন্সিলর বেলাল হোসেন, বিএনপি নেতা আব্দুল আজিজসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মারুফ ইসলাম গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

দুলু আরও বলেন, ‘বিএনপি সরকার পতনের কোনো আন্দোলন করছে না। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে সুচিকিৎসার দাবিতে আয়োজিত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বিনা উসকানিতে হামলা চালানো হয়েছে। বিএনপি সরকারের আমলে শান্তিশৃঙ্খলা ভঙ্গ হয়, এমন কোনো কাজ হতে দেওয়া হয়নি। অথচ শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে আতঙ্কিত করতেই এই হামলা চালানো হয়েছে।’ এই অশান্ত ও আতঙ্কিত পরিবেশ সৃষ্টির সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের জন্য বিএনপিকে বলা হয়েছিল। কিন্তু বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশের শান্তিপূর্ণ অবস্থানকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় আবারও শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের কথা বলতে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ করা হয়। পুলিশ লাঠিপেটা করেনি। ধাওয়া করেছে মাত্র। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৫ রাউন্ড টিয়ার শেল ছোড়া হয়েছে।