অবৈধ ইটভাটার ধোঁয়া বন্ধের শঙ্কায় কলেজ

টাঙ্গাইল সংবাদদাতা
প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২১, ০৫: ১৫
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১৭: ৪৪

নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে টাঙ্গাইলে বেড়েই চলেছে অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা। এসব অবৈধ ভাটার বেশির ভাগ কৃষিজমি, বসতবাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে বন্ধ হওয়ার শঙ্কায় রয়েছে সখীপুরের পলাশতলী মহাবিদ্যালয়। একই চিত্র জেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা অবৈধ ইটভাটার আশপাশে।

সখীপুর উপজেলার পলাশতলী এলাকার মিতালি ইটভাটা পলাশতলী মহাবিদ্যালয়ের পেছনেই। ভাটার ট্রাকসহ যানবাহনের বিকট শব্দে পড়ালেখা ব্যাহত হয় শিক্ষার্থীদের। তার ওপর বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় সেখানে বসে থাকাই দায়।

ওই মহাবিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী চাদনী আক্তার বলে, ‘এই ইটভাটার শব্দে পড়ালেখা করা যায় না। তারপর বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় ক্লাসে বসে থাকা দায়। এক দিন ক্লাসে এলে পরের দিন মাথাব্যথা করে। আমরা চাই দ্রুত এই ইটভাটা অন্য কোথাও স্থানান্তর করা হোক।’

ওই মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ আবু সাঈদ সিদ্দিকী বলেন, ‘প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে এই অবৈধ ইটভাটা বন্ধের জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। এভাবে চলতে থাকলে একসময় এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’

আর যেসব ইটভাটার ছাড়পত্র আছে, তার মধ্যে অনেকগুলোই পরিবেশ আইন না মেনেই অনুমতি পেয়েছে বলে অভিযোগ করছেন পরিবেশবাদীরা। আর এ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ মানুষ।

টাঙ্গাইল পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে জেলায় মোট ২৮২টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ১২৯টির পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন রয়েছে; বাকি ১৫৩টির পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত ১৯৯২ সালের প্রজ্ঞাপনে কৃষিজমিতে ভাটা নির্মাণ দণ্ডনীয় অপরাধ। অথচ এসব ভাটায় দেদার ব্যবহৃত হচ্ছে কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি। এতে করে মাটির উর্বরতা কমে যাচ্ছে। বেশির ভাগ ভাটায় কয়লার বদলে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। মজুত করা হয়েছে বিশাল আকারের মাটির স্তূপ। এতে পরিবেশ দূষিত হওয়ার পাশাপাশি ফসলের উৎপাদন কমে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় লোকজন।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার সদুল্যাপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কৃষিজমিতেই গড়ে উঠেছে পাশাপাশি চারটি ইটভাটা। যেখানে বসতবাড়ির পাশাপাশি রয়েছে বাজার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ এসব জমিতে এখন আর আগের মতো ফসল হচ্ছে না।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রহমান বলেন, ‘আমাদের এলাকায় চারটি ইটভাটা রয়েছে। এখানে এর ফলে জমিতে আর আগের মতো ফসল হচ্ছে না। এখানে বাজার, বসতবাড়ির সঙ্গে একটি মাদ্রাসাও রয়েছে। তবু এখানে ইটভাটা রয়েছে। আমরা এই ভাটাগুলো অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার দাবি জানাই।’

বিষয়টি নিয়ে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এস এম সাইফুল্লাহ বলেন, জমির ওপরের দিকে ৪ থেকে ৬ ইঞ্চি পর্যন্ত মাটির উর্বরতা বেশি থাকে; যা ফসল উৎপাদনে খুবই সহায়ক। কৃষকদের অসচ্ছলতার সুযোগে ভাটামালিকেরা ইট তৈরির জন্য কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কিনছেন।

তিনি আরও বলেন, ‘এ কারণে জমির উর্বরতা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। আর কৃষকেরা জমিতে সারের মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছেন। এভাবে উপরিভাগের মাটি তুলে নেওয়া অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে জমিগুলো পরিত্যক্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কয়েক বছর ধরে আন্দোলন করেছি। আমরা চাই প্রশাসন দ্রুত এই অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখুক।’

টাঙ্গাইল জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন বলেন, ‘আমরাও চাই অবৈধ ইটভাটা বন্ধ হোক। সে কারণে আমরা সব ইটভাটা মালিকের সঙ্গে মিটিং করেছি। সেখানে অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করার জন্য সবাইকে বলা হয়েছে।’

টাঙ্গাইল পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জমির উদ্দিন বলেন, ‘গত বছর আমরা অনেকগুলো ইটভাটাকে জরিমানা করেছি। এ বছরও আমাদের অভিযান চলবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশের এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা করা যাবে না। যেসব ইটভাটা বসতবাড়ি, ফসলি জমি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে আছে, সেগুলোর ছাড়পত্র বাতিল করা হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত