পচা চাল বিতরণের তোড়জোড়

আনোয়ার হোসেন, মনিরামপুর
প্রকাশ : ২২ ডিসেম্বর ২০২১, ০৫: ২৩
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২১, ১১: ৫৯

করোনাকালে দুস্থদের জন্য বরাদ্দ চাল বিতরণ না করে যশোরের মনিরামপুরের খেদাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) গুদামে আটকে রেখে পচানো সেই ৫৫ বস্তা চাল বিতরণের তোড়জোড় চলছে।

চাল বিতরণের জন্য তালিকা তৈরি করতে ইতিমধ্যে ২৫৭ জনের জাতীয় পরিচয়পত্র জমা পড়েছে পরিষদের সচিবের দপ্তরে। এক সপ্তাহ আগে ইউনিয়নের সব ওয়ার্ড থেকে পরিচয়পত্রগুলো সংগ্রহ করা হয়।

এর আগে চাল বিতরণের অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেন চাল পচানো ঘটনার সঙ্গে জড়িত খেদাপাড়া ইউপির সদ্য পরাজিত চেয়ারম্যান এস এম আব্দুল হক। আবেদনের পর চাল বিতরণের অনুমতিও পান তিনি। খেদাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মৃণালকান্তি এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সচিবের দাবি, সব চাল পচেনি। ১০০ কেজি বা তার কম চাল পচেছে। একই বস্তার একপাশে কিছু চাল পচলেও অন্যপাশে চাল ভালো আছে।

ইউপি সচিব মৃণালকান্তি বলেন, ‘চেয়ারম্যানের আবেদনের ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক (ডিডিএলজি) মো. হুসাইন শওকত ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ জাকির হাসান চাল বিতরণের অনুমতি দিয়েছেন। তাঁরা সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, যে চাল পচে গেছে সেগুলো চেয়ারম্যান কিনে দেবেন। বাকি ভালো চালের সঙ্গে সেগুলো মিশিয়ে বিতরণ করা হবে। এ জন্য ২৭৩ জনের একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।’

ইউপি সচিব মৃণালকান্তি বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ২০০ জনের তালিকা দলীয়ভাবে (ক্ষমতসীন দলের) হবে। বাকি ৭৩ জনের তালিকা দেবেন চেয়ারম্যান আব্দুল হক। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত না মেনে স্থানীয়ভাবে কয়েকজন মিলে ২৫৭টি জাতীয় পরিচয়পত্র পরিষদে দিয়ে গেছেন। বাকিগুলো চেয়ারম্যানকে দিতে বলেছেন। যারা ২৫৭টা কার্ড জমা দিয়েছেন তাঁরা সেখান থেকে কমাতে চাচ্ছেন না। চেয়ারম্যানও সেটা মানতে চাচ্ছেন না। তিনি এখনো তালিকা জমা দেননি। চেয়ারম্যানের তালিকা পেলে দুই তালিকা সমন্বয় করে চাল বিতরণ করা হবে।’

গত জুলাই মাসে করোনাকালীন দুস্থদের মাঝে বিতরণের জন্য মনিরামপুর উপজেলার সব চেয়ারম্যানদের চাল বরাদ্দ দেয় সরকার। গত আগস্ট মাসের প্রথম ও শেষ সপ্তাহে দুই ধাপে ৫৫ বস্তা চাল তোলেন খেদাপাড়া ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুল হক। পরে চাল বিতরণ না করে পরিষদের গুদামে রেখে দেন তিনি। পরিষদের সচিব মৃণালকান্তিও চাল বিতরণে উদ্যোগী হননি। ফলে বাতাসে চালে পচন ধরে।

এ নিয়ে ৩১ অক্টোবর আজকের পত্রিকায় ‘গুদামে পচছে সরকারি চাল’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। জানাজানি হলে ওই দিন সকালে ৩০০ নারী–পুরুষকে পরিষদে জড়ো করে পচা চাল বিতরণের চেষ্টা করেন চেয়ারম্যান ও সচিব। খবর পেয়ে ইউএনও সৈয়দ জাকির হাসান পরিষদে হাজির হয়ে সেই চাল জব্দ করেন। সেই থেকে চালগুলো পরিষদের একটি কক্ষে তালাবদ্ধ রাখা আছে।

স্থানীয়রা বলছেন, ইউএনও চাল জব্দ করে পরিষদের কক্ষে আটকে রাখার প্রায় দুই মাস পার হচ্ছে। এত দিনে চালে আরও বেশি পচন ধরেছে। এখন সেই চাল বিতরণের তোড়জোড় চলছে। এ পচা চাল খেলে মানুষের ডায়রিয়া হবে। গুদামজাত করা এ চাল বাদ দিয়ে নতুন চাল বিতরণের দাবি স্থানীয়দের।

মনিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ জাকির হাসান বলেন, ‘চেয়ারম্যান একটা আবেদন করেছিলেন। তাঁকে অনুমতি দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই। আমি তাঁকে অনুমতি দিতেও পারি না। এটা চেয়ারম্যানকে নিজ দায়িত্বে সমাধান করে দিতে হবে।’

ইউএনও বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে সমন্বয় করে চাল বিতরণের জন্য চেয়ারম্যানকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বাকিটা তাঁরাই বলতে পারবেন।’

স্থানীয় সরকার বিভাগের যশোর অঞ্চলের উপপরিচালক (ডিডিএলজি) হুসাইন শওকত বলেন, ‘প্রকৃত উপযুক্তদের তালিকা করে চাল বিতরণ করতে হবে। কেউ যেন পচা চাল না পান সেটা নিশ্চিত করতে ইউএনওকে বলে দিচ্ছি।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত