হাসান মামুন
এই সময়টায় কাঁচা মরিচের দাম বাড়া তো বিচিত্র নয়। প্রায় প্রতিবছর বৃষ্টিবাদলের সময়ে এর দাম বেড়ে যায়। ক্রেতারা সেটা মেনেও নেন। কেননা মূল্যবৃদ্ধিটা থাকে মাত্রার মধ্যে। আর বাজার সামগ্রিকভাবে অশান্ত না হলে দু-একটা নিত্যব্যবহার্য পণ্যের দাম বাড়লেই বা কী! তবে পণ্যবাজার যখন সামগ্রিকভাবে অশান্ত, তখন কাঁচা মরিচের দাম লাফিয়ে বাড়লে এবং বাড়তে বাড়তে রেকর্ড করে ফেললে, সেটা মেনে নেওয়া কঠিন, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের মনে
তা ক্ষোভের জন্ম দেয়। সম্প্রতি ফেসবুকে মানুষ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে কাঁচা মরিচের কেজি ৬০০ থেকে ৮০০ হয়ে দেশের কোথাও কোথাও ১ হাজার টাকা হয়ে যাওয়ায়।
এটা আবার ঘটেছে ঈদের সময়ে, যখন মানুষ মোকাবিলা করছিল প্রায় সব ধরনের মসলার বড় মূল্যবৃদ্ধি এবং কোরবানির গরু-ছাগলের দাম নিয়ে অস্থিরতা। কাঁচা মরিচের দাম লাফিয়ে বাড়ছে দেখে সরকার অবশ্য এটি আমদানির সুযোগ করে দেয়। এর আমদানি গত বছরের আগস্ট থেকে বন্ধ ছিল। জরুরি না হলে এবং দেশীয় উৎপাদকদের জন্য লাভজনক দাম নিশ্চিতের প্রশ্ন থাকলে কৃষিপণ্যের আমদানি বন্ধ রাখাই উচিত। কিন্তু সরকারকে তো বিপুলসংখ্যক ভোক্তার স্বার্থও দেখতে হয়। তাই কোনো পণ্যের দাম মাত্রাছাড়া হয়ে গেলে সেটির আমদানি উন্মুক্ত করাটাও কাম্য।
এখানে সময়োচিত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রশ্ন রয়েছে। কারণ বেশি দেরি করে ফেললে পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে সময় লাগে না। কাঁচা মরিচের বেলায় সেটাই ঘটেছে। পেঁয়াজের ক্ষেত্রেও আমদানির সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করে ফেলেছিল কৃষি মন্ত্রণালয় তথা সরকার। তাতে এর দাম ৩০-৩৫ থেকে বাড়তে বাড়তে কেজি ৯০-১০০ টাকা হয়ে যায়। আর কাঁচা মরিচের ক্ষেত্রে যা ঘটল, তা বোধ হয় সরকারকেও বিস্মিত করেছে। এর দাম ৮০০-১০০০ টাকা অবশ্য হতো না যদি ঈদের ছুটিতে পড়ে না যেত আমদানি কার্যক্রমটি। ২৫ জুন ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। তাতে ছুটি শুরুর আগে সম্ভবত জুনের ২৬ তারিখেই কেবল কিছু কাঁচা মরিচ আনা গেছে উত্তরবঙ্গের স্থলসীমান্ত দিয়ে। এতে ভোক্তার কোনো লাভ হয়নি। এ পরিস্থিতিতে এমনও হয়ে থাকে, দেশব্যাপী অব্যাহত আলোচনার কারণেও পণ্যের দাম বেড়ে যায় অবিশ্বাস্যভাবে। যেসব এলাকা কাঁচা মরিচ উৎপাদনের জন্য খ্যাত, সেখানেও দেখা গেল দাম, এমনকি বড় শহরের চেয়ে বেশি হারে বেড়েছে। ঘটেছে ঘণ্টায় ঘণ্টায় দাম বাড়ার ঘটনাও।
সবচেয়ে বড় কথা, অন্যান্যবারের চেয়ে এবার কাঁচা মরিচ উৎপাদন বেশি মার খেয়েছিল। বর্ষা শুরুর আগে দফায় দফায় তাপপ্রবাহের চাপেও এর ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রশ্ন হলো, কৃষি মন্ত্রণালয় কি সময়মতো এটা জানতে পারেনি? বাণিজ্যমন্ত্রী ঠিকই বলেছেন, কাঁচা মরিচের উৎপাদন পরিস্থিতি দেখভাল ও জানার কথা কৃষি মন্ত্রণালয়ের। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি সেল রয়েছে, যার কাজ দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও এর পূর্বাভাস দেওয়া। কথা হলো, তারাও কি সর্বসাধারণের নিত্যব্যবহার্য পণ্য কাঁচা মরিচের উৎপাদন, চাহিদা, দাম ইত্যাদির দিকে নজর রাখেনি?
বর্ষা শুরুর আগে তাপপ্রবাহের কারণেও যে কাঁচা মরিচ উৎপাদন ব্যাহত—এ খবর তো তাদের পাওয়ার কথা। যেসব এলাকায় কাঁচা মরিচ বেশি ফলে, সেখানকার কৃষি কর্মকর্তারা কী করেছেন? তাঁরা কৃষকের সহায়তায় এগিয়ে আসতে পারেননি হয়তো; এর সুযোগও হয়তো ছিল না। কিন্তু উৎপাদন মার খাওয়ার খবর তো জায়গামতো পৌঁছাতে পারতেন। জানি না তাঁরা কী করেছেন। আন্দাজে কোনো পক্ষকে অভিযুক্ত করা ঠিক হবে না। তবে কাঁচা মরিচের দাম লাফিয়ে বাড়তে থাকার সময়, এমনকি ঠিক ঈদের ছুটির আগে আমদানির অনুমতি দেওয়ার ঘটনায় বোঝা যায় কোথাও একটা সমন্বয়হীনতা ছিল। এর সপ্তাহখানেক আগেও সিদ্ধান্তটি নেওয়া গেলে মনে হয় পরিস্থিতির এতটা অবনতি হতো না।
২০০-২৫০ টাকা কেজির কাঁচা মরিচ ৮০০ টাকা হয়ে যাওয়াটা তো কোনো কাজের কথা নয়। এটা স্বাভাবিকও নয়, বিশেষ করে যখন পাশের দেশ থেকে দ্রুত আমদানির সুযোগ রয়েছে। আমাদের পাশে শুধু ভারত নয়, মিয়ানমারও আছে এবং এ তিনটি দেশ ‘কমন’ বেশ কিছু কৃষিপণ্য ব্যাপকভাবে উৎপাদন ও ভোগ করে। সংকটের সময় পরস্পরের কাছ থেকে তারা এগুলো সহজে আমদানি করতে পারে। আমদানি ও রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীদের মধ্যে সম্পর্কও জোরালো। পাশের দেশ থেকে আমদানিতে পরিবহন খরচও পড়ে কম। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি পণ্যের দাম বাড়ার পর পরিবহন খরচ পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখছে, এটাও সত্য।
সরকার কি পারত না ঈদের ছুটিতে বিশেষ ব্যবস্থায় কাঁচা মরিচ আমদানি অব্যাহত রাখতে? একটিমাত্র পণ্য আমদানির জন্য এমন উদ্যোগ গ্রহণ অবশ্য কঠিন। আসলে উচিত ছিল কাঁচা মরিচ উৎপাদনের দিকে সজাগ দৃষ্টি রেখে এর বাজার স্বাভাবিক রাখতে উদ্যোগী হওয়া। আমরা তো প্রয়োজন অনুযায়ী কাঁচা মরিচ উৎপাদন করতে পারি না। সময়ে-সময়ে এটা আমদানি করতে হয় প্রধানত ভারত থেকে।
দেশটির অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে আমাদের পার্শ্ববর্তী পশ্চিমবঙ্গেও প্রচুর কাঁচা মরিচ ফলে। বিশাল ভারতের সব জায়গায় এ মুহূর্তে কাঁচা মরিচের দাম নিশ্চয়ই এক নয়। তবে কোনোখানেই পরিস্থিতি বাংলাদেশের মতো নয়। সংবাদপত্র প্রকাশ বন্ধ থাকার সময় একটি সহযোগী দৈনিকের অনলাইন সংস্করণের খবরে দেখা যাচ্ছে, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও কাঁচা মরিচের বাজারে নেই কোনো অস্থিরতা। বাংলাদেশেও অস্থিরতা রোখা বোধ হয় যেত সময়মতো আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়ে তা বাস্তবায়ন করা গেলে।
ভারতের যে রাজ্য থেকেই কাঁচা মরিচ আনা হোক, তাতে দাম অনেক কম পড়ার কথা। চেষ্টা থাকতে হবে যত কম দামে আর দ্রুত আমদানি করা যায়। মানসম্মত পণ্য আমদানির ব্যবস্থাও করতে হবে। পেঁয়াজের বেলায় কিন্তু দেখা গেছে, অনেক আমদানিকারক মানসম্মত পণ্য আনেননি। সেই সব পেঁয়াজে সরবরাহসংকট দূর হলেও তা পারেনি ক্রেতা আকর্ষণ করতে। এতে দামের ওপর প্রভাব ফেলাও ততটা সম্ভব হয়নি।
মানসম্মত দেশি পেঁয়াজের দাম খুব একটা কমেনি, এর মধ্যে বেশ কিছুদিন চলে গেলেও। তবে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি রোধ করা গেছে। কাঁচা মরিচের বেলায়ও প্রথম কর্তব্য হলো অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি থামানো। এরপর দাম কমিয়ে আনা। এ সময়টায় ঘরে ঘরে কোরবানি দেওয়া পশুর মাংস। যাঁদের মাংস কিনে খাওয়ার সামর্থ্য নেই, তাঁরাও কম-বেশি এর ভাগ পেয়েছেন। কিন্তু মাংস রান্নার প্রায় সব উপকরণের দামই তো বাড়তি। এ অবস্থায় কাঁচা মরিচের দাম কয়েক দিনেই চার গুণ হয়ে যাওয়াটা সামান্য ঘটনা নয়। সে জন্য এতে জনপ্রতিক্রিয়াও হয়েছে তীব্র।
অধিকাংশ সময় কাঁচা মরিচের দাম কিন্তু কমই থাকে। বাড়লেও অসহনীয় হতে সাধারণত দেখা যায় না। তাতে উৎপাদকদের ভেতর থেকে এ অভিযোগ বরং থাকে যে তাঁরা ভালো দাম পাচ্ছেন না। নানান হাত ঘুরে চূড়ান্ত ক্রেতার কাছে পণ্যটি যে দামে বিক্রি হয়, মাঠের কৃষক তো পান এর চেয়ে অনেক কম। এ কারণে কৃষক কাঁচা মরিচ ফলাতে নিরুৎসাহিতও হন। এক মৌসুমে ভালো দাম না পেলে পরের মৌসুমে এটা বেশি ঘটে থাকে। সে জন্য আমদানি নিয়ন্ত্রণ করে কৃষককে লাভজনক দাম দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় চোরাপথে আসা কাঁচা মরিচও উৎপাদকদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। এ অবস্থায় ভারসাম্য রেখে চলা নিশ্চয়ই সহজ নয়। কিন্তু সরকারকে তো সেটা করতে হবে এবং এটাই তার কাজ। এ জায়গাটায় আন্তমন্ত্রণালয় সমন্বয়ও জরুরি। তাদের অধীন প্রতিষ্ঠান ও সেলগুলো ঠিকমতো কাজ করছে কি না, সে প্রশ্ন তোলার অবকাশও তৈরি হলো কাঁচা মরিচের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধিতে।
কাঁচা মরিচকে যদি মসলা বিবেচনা করি, তবে এ ক্ষেত্রে একটা সুখবর তৈরি করেছিল মসলা গবেষণা কেন্দ্র। কাঁচা মরিচ গুঁড়া করে দুই বছর ঘরে রেখে ব্যবহারের উপায় এর একজন কৃষিবিজ্ঞানী উদ্ভাবন করেছেন বলে জানা গিয়েছিল। এতে কাঁচা মরিচের সরবরাহ বেশি থাকার সময় শুকিয়ে গুঁড়া করে রেখে সংকটকালে তা ব্যবহারের সম্ভাবনা তৈরি হয়। তাতে এর মানও নাকি অটুট থাকে। উত্তোলন, বাজারজাতকরণ ও সংরক্ষণের সংকটে কাঁচা মরিচের একটা বড় অংশ তো নষ্টও হয়। সব কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রেই আমাদের ‘অবচয়ের হার’ বেশি। যা-ই হোক, আশা জাগালেও কাঁচা মরিচ সংরক্ষণের ওই পদ্ধতির প্রয়োগ লক্ষ করা যায়নি।
বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানেরও তো এই সুযোগ লুফে নেওয়ার কথা। সেটা সম্ভব হলে কাঁচা মরিচের বাজারে অস্থিরতা কমে; কৃষক ভালো দাম পান এবং বিদেশি মুদ্রাও সাশ্রয় হয়। আমাদের রিজার্ভ পরিস্থিতি এখন এমন, যেখান থেকে যতটা সম্ভব আমদানি কমানো প্রয়োজন। রুপিতে ভারত থেকে আমদানির একটা উদ্যোগ অবশ্য রয়েছে। সেই আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলে কাঁচা মরিচের মতো পণ্যের আমদানি সীমিত রেখে তাতে রুপি ব্যবহারের চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে।
লেখক: সাংবাদিক, বিশ্লেষক
এই সময়টায় কাঁচা মরিচের দাম বাড়া তো বিচিত্র নয়। প্রায় প্রতিবছর বৃষ্টিবাদলের সময়ে এর দাম বেড়ে যায়। ক্রেতারা সেটা মেনেও নেন। কেননা মূল্যবৃদ্ধিটা থাকে মাত্রার মধ্যে। আর বাজার সামগ্রিকভাবে অশান্ত না হলে দু-একটা নিত্যব্যবহার্য পণ্যের দাম বাড়লেই বা কী! তবে পণ্যবাজার যখন সামগ্রিকভাবে অশান্ত, তখন কাঁচা মরিচের দাম লাফিয়ে বাড়লে এবং বাড়তে বাড়তে রেকর্ড করে ফেললে, সেটা মেনে নেওয়া কঠিন, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের মনে
তা ক্ষোভের জন্ম দেয়। সম্প্রতি ফেসবুকে মানুষ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে কাঁচা মরিচের কেজি ৬০০ থেকে ৮০০ হয়ে দেশের কোথাও কোথাও ১ হাজার টাকা হয়ে যাওয়ায়।
এটা আবার ঘটেছে ঈদের সময়ে, যখন মানুষ মোকাবিলা করছিল প্রায় সব ধরনের মসলার বড় মূল্যবৃদ্ধি এবং কোরবানির গরু-ছাগলের দাম নিয়ে অস্থিরতা। কাঁচা মরিচের দাম লাফিয়ে বাড়ছে দেখে সরকার অবশ্য এটি আমদানির সুযোগ করে দেয়। এর আমদানি গত বছরের আগস্ট থেকে বন্ধ ছিল। জরুরি না হলে এবং দেশীয় উৎপাদকদের জন্য লাভজনক দাম নিশ্চিতের প্রশ্ন থাকলে কৃষিপণ্যের আমদানি বন্ধ রাখাই উচিত। কিন্তু সরকারকে তো বিপুলসংখ্যক ভোক্তার স্বার্থও দেখতে হয়। তাই কোনো পণ্যের দাম মাত্রাছাড়া হয়ে গেলে সেটির আমদানি উন্মুক্ত করাটাও কাম্য।
এখানে সময়োচিত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রশ্ন রয়েছে। কারণ বেশি দেরি করে ফেললে পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে সময় লাগে না। কাঁচা মরিচের বেলায় সেটাই ঘটেছে। পেঁয়াজের ক্ষেত্রেও আমদানির সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করে ফেলেছিল কৃষি মন্ত্রণালয় তথা সরকার। তাতে এর দাম ৩০-৩৫ থেকে বাড়তে বাড়তে কেজি ৯০-১০০ টাকা হয়ে যায়। আর কাঁচা মরিচের ক্ষেত্রে যা ঘটল, তা বোধ হয় সরকারকেও বিস্মিত করেছে। এর দাম ৮০০-১০০০ টাকা অবশ্য হতো না যদি ঈদের ছুটিতে পড়ে না যেত আমদানি কার্যক্রমটি। ২৫ জুন ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। তাতে ছুটি শুরুর আগে সম্ভবত জুনের ২৬ তারিখেই কেবল কিছু কাঁচা মরিচ আনা গেছে উত্তরবঙ্গের স্থলসীমান্ত দিয়ে। এতে ভোক্তার কোনো লাভ হয়নি। এ পরিস্থিতিতে এমনও হয়ে থাকে, দেশব্যাপী অব্যাহত আলোচনার কারণেও পণ্যের দাম বেড়ে যায় অবিশ্বাস্যভাবে। যেসব এলাকা কাঁচা মরিচ উৎপাদনের জন্য খ্যাত, সেখানেও দেখা গেল দাম, এমনকি বড় শহরের চেয়ে বেশি হারে বেড়েছে। ঘটেছে ঘণ্টায় ঘণ্টায় দাম বাড়ার ঘটনাও।
সবচেয়ে বড় কথা, অন্যান্যবারের চেয়ে এবার কাঁচা মরিচ উৎপাদন বেশি মার খেয়েছিল। বর্ষা শুরুর আগে দফায় দফায় তাপপ্রবাহের চাপেও এর ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রশ্ন হলো, কৃষি মন্ত্রণালয় কি সময়মতো এটা জানতে পারেনি? বাণিজ্যমন্ত্রী ঠিকই বলেছেন, কাঁচা মরিচের উৎপাদন পরিস্থিতি দেখভাল ও জানার কথা কৃষি মন্ত্রণালয়ের। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি সেল রয়েছে, যার কাজ দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও এর পূর্বাভাস দেওয়া। কথা হলো, তারাও কি সর্বসাধারণের নিত্যব্যবহার্য পণ্য কাঁচা মরিচের উৎপাদন, চাহিদা, দাম ইত্যাদির দিকে নজর রাখেনি?
বর্ষা শুরুর আগে তাপপ্রবাহের কারণেও যে কাঁচা মরিচ উৎপাদন ব্যাহত—এ খবর তো তাদের পাওয়ার কথা। যেসব এলাকায় কাঁচা মরিচ বেশি ফলে, সেখানকার কৃষি কর্মকর্তারা কী করেছেন? তাঁরা কৃষকের সহায়তায় এগিয়ে আসতে পারেননি হয়তো; এর সুযোগও হয়তো ছিল না। কিন্তু উৎপাদন মার খাওয়ার খবর তো জায়গামতো পৌঁছাতে পারতেন। জানি না তাঁরা কী করেছেন। আন্দাজে কোনো পক্ষকে অভিযুক্ত করা ঠিক হবে না। তবে কাঁচা মরিচের দাম লাফিয়ে বাড়তে থাকার সময়, এমনকি ঠিক ঈদের ছুটির আগে আমদানির অনুমতি দেওয়ার ঘটনায় বোঝা যায় কোথাও একটা সমন্বয়হীনতা ছিল। এর সপ্তাহখানেক আগেও সিদ্ধান্তটি নেওয়া গেলে মনে হয় পরিস্থিতির এতটা অবনতি হতো না।
২০০-২৫০ টাকা কেজির কাঁচা মরিচ ৮০০ টাকা হয়ে যাওয়াটা তো কোনো কাজের কথা নয়। এটা স্বাভাবিকও নয়, বিশেষ করে যখন পাশের দেশ থেকে দ্রুত আমদানির সুযোগ রয়েছে। আমাদের পাশে শুধু ভারত নয়, মিয়ানমারও আছে এবং এ তিনটি দেশ ‘কমন’ বেশ কিছু কৃষিপণ্য ব্যাপকভাবে উৎপাদন ও ভোগ করে। সংকটের সময় পরস্পরের কাছ থেকে তারা এগুলো সহজে আমদানি করতে পারে। আমদানি ও রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীদের মধ্যে সম্পর্কও জোরালো। পাশের দেশ থেকে আমদানিতে পরিবহন খরচও পড়ে কম। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি পণ্যের দাম বাড়ার পর পরিবহন খরচ পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখছে, এটাও সত্য।
সরকার কি পারত না ঈদের ছুটিতে বিশেষ ব্যবস্থায় কাঁচা মরিচ আমদানি অব্যাহত রাখতে? একটিমাত্র পণ্য আমদানির জন্য এমন উদ্যোগ গ্রহণ অবশ্য কঠিন। আসলে উচিত ছিল কাঁচা মরিচ উৎপাদনের দিকে সজাগ দৃষ্টি রেখে এর বাজার স্বাভাবিক রাখতে উদ্যোগী হওয়া। আমরা তো প্রয়োজন অনুযায়ী কাঁচা মরিচ উৎপাদন করতে পারি না। সময়ে-সময়ে এটা আমদানি করতে হয় প্রধানত ভারত থেকে।
দেশটির অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে আমাদের পার্শ্ববর্তী পশ্চিমবঙ্গেও প্রচুর কাঁচা মরিচ ফলে। বিশাল ভারতের সব জায়গায় এ মুহূর্তে কাঁচা মরিচের দাম নিশ্চয়ই এক নয়। তবে কোনোখানেই পরিস্থিতি বাংলাদেশের মতো নয়। সংবাদপত্র প্রকাশ বন্ধ থাকার সময় একটি সহযোগী দৈনিকের অনলাইন সংস্করণের খবরে দেখা যাচ্ছে, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও কাঁচা মরিচের বাজারে নেই কোনো অস্থিরতা। বাংলাদেশেও অস্থিরতা রোখা বোধ হয় যেত সময়মতো আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়ে তা বাস্তবায়ন করা গেলে।
ভারতের যে রাজ্য থেকেই কাঁচা মরিচ আনা হোক, তাতে দাম অনেক কম পড়ার কথা। চেষ্টা থাকতে হবে যত কম দামে আর দ্রুত আমদানি করা যায়। মানসম্মত পণ্য আমদানির ব্যবস্থাও করতে হবে। পেঁয়াজের বেলায় কিন্তু দেখা গেছে, অনেক আমদানিকারক মানসম্মত পণ্য আনেননি। সেই সব পেঁয়াজে সরবরাহসংকট দূর হলেও তা পারেনি ক্রেতা আকর্ষণ করতে। এতে দামের ওপর প্রভাব ফেলাও ততটা সম্ভব হয়নি।
মানসম্মত দেশি পেঁয়াজের দাম খুব একটা কমেনি, এর মধ্যে বেশ কিছুদিন চলে গেলেও। তবে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি রোধ করা গেছে। কাঁচা মরিচের বেলায়ও প্রথম কর্তব্য হলো অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি থামানো। এরপর দাম কমিয়ে আনা। এ সময়টায় ঘরে ঘরে কোরবানি দেওয়া পশুর মাংস। যাঁদের মাংস কিনে খাওয়ার সামর্থ্য নেই, তাঁরাও কম-বেশি এর ভাগ পেয়েছেন। কিন্তু মাংস রান্নার প্রায় সব উপকরণের দামই তো বাড়তি। এ অবস্থায় কাঁচা মরিচের দাম কয়েক দিনেই চার গুণ হয়ে যাওয়াটা সামান্য ঘটনা নয়। সে জন্য এতে জনপ্রতিক্রিয়াও হয়েছে তীব্র।
অধিকাংশ সময় কাঁচা মরিচের দাম কিন্তু কমই থাকে। বাড়লেও অসহনীয় হতে সাধারণত দেখা যায় না। তাতে উৎপাদকদের ভেতর থেকে এ অভিযোগ বরং থাকে যে তাঁরা ভালো দাম পাচ্ছেন না। নানান হাত ঘুরে চূড়ান্ত ক্রেতার কাছে পণ্যটি যে দামে বিক্রি হয়, মাঠের কৃষক তো পান এর চেয়ে অনেক কম। এ কারণে কৃষক কাঁচা মরিচ ফলাতে নিরুৎসাহিতও হন। এক মৌসুমে ভালো দাম না পেলে পরের মৌসুমে এটা বেশি ঘটে থাকে। সে জন্য আমদানি নিয়ন্ত্রণ করে কৃষককে লাভজনক দাম দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় চোরাপথে আসা কাঁচা মরিচও উৎপাদকদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। এ অবস্থায় ভারসাম্য রেখে চলা নিশ্চয়ই সহজ নয়। কিন্তু সরকারকে তো সেটা করতে হবে এবং এটাই তার কাজ। এ জায়গাটায় আন্তমন্ত্রণালয় সমন্বয়ও জরুরি। তাদের অধীন প্রতিষ্ঠান ও সেলগুলো ঠিকমতো কাজ করছে কি না, সে প্রশ্ন তোলার অবকাশও তৈরি হলো কাঁচা মরিচের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধিতে।
কাঁচা মরিচকে যদি মসলা বিবেচনা করি, তবে এ ক্ষেত্রে একটা সুখবর তৈরি করেছিল মসলা গবেষণা কেন্দ্র। কাঁচা মরিচ গুঁড়া করে দুই বছর ঘরে রেখে ব্যবহারের উপায় এর একজন কৃষিবিজ্ঞানী উদ্ভাবন করেছেন বলে জানা গিয়েছিল। এতে কাঁচা মরিচের সরবরাহ বেশি থাকার সময় শুকিয়ে গুঁড়া করে রেখে সংকটকালে তা ব্যবহারের সম্ভাবনা তৈরি হয়। তাতে এর মানও নাকি অটুট থাকে। উত্তোলন, বাজারজাতকরণ ও সংরক্ষণের সংকটে কাঁচা মরিচের একটা বড় অংশ তো নষ্টও হয়। সব কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রেই আমাদের ‘অবচয়ের হার’ বেশি। যা-ই হোক, আশা জাগালেও কাঁচা মরিচ সংরক্ষণের ওই পদ্ধতির প্রয়োগ লক্ষ করা যায়নি।
বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানেরও তো এই সুযোগ লুফে নেওয়ার কথা। সেটা সম্ভব হলে কাঁচা মরিচের বাজারে অস্থিরতা কমে; কৃষক ভালো দাম পান এবং বিদেশি মুদ্রাও সাশ্রয় হয়। আমাদের রিজার্ভ পরিস্থিতি এখন এমন, যেখান থেকে যতটা সম্ভব আমদানি কমানো প্রয়োজন। রুপিতে ভারত থেকে আমদানির একটা উদ্যোগ অবশ্য রয়েছে। সেই আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলে কাঁচা মরিচের মতো পণ্যের আমদানি সীমিত রেখে তাতে রুপি ব্যবহারের চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে।
লেখক: সাংবাদিক, বিশ্লেষক
পর্দার নায়িকারা নিজেদের বয়স আড়ালে রাখা পছন্দ করেন। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আজমেরী হক বাঁধন। প্রতিবছর নিজের জন্মদিনে জানান দেন তাঁর বয়স। গতকাল ছিল বাঁধনের ৪১তম জন্মদিন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেই জানালেন এই তথ্য।
২ দিন আগে১০ বছরের বেশি সময় ধরে শোবিজে কাজ করছেন অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। নাটকের পাশাপাশি ওটিটিতে দেখা গেছে তাঁকে। সরকারি অনুদানের ‘দেবী’ নামের একটি সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। প্রশংসিত হলেও সিনেমায় আর দেখা মেলেনি তাঁর। ছোট পর্দাতেও অনেক দিন ধরে অনিয়মিত তিনি। এবার শবনম ফারিয়া হাজির হচ্ছেন নতুন পরিচয়ে। কমেডি রিয়েলিটি
২ দিন আগেআমাদের লোকসংস্কৃতির অন্যতম ঐতিহ্য যাত্রাপালা। গণমানুষের সংস্কৃতি হিসেবে বিবেচিত এই যাত্রাপালা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করছে ‘যাত্রা উৎসব-২০২৪’। আগামী ১ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে শুরু হবে ৭ দিনব্যাপী এই উৎসব।
২ দিন আগে‘বঙ্গবন্ধু’ পদবি বিলীন হবে না। হতে পারে না। যেমনটি ‘দেশবন্ধু’ চিত্তরঞ্জন দাশের পদবি বিলীন হয়নি। ইতিহাসে এসব পদবি অম্লান ও অক্ষয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্ব ছিল অনন্যসাধারণ। আপনজনকে তো অবশ্যই, শত্রুপক্ষের লোকেরাও ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হতেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উচ্চপদের
২ দিন আগে