জাহীদ রেজা নূর, উপসম্পাদক আজকের পত্রিকা
বিদেশি রাষ্ট্রনায়কদের সঙ্গে সাক্ষাতে রানি এলিজাবেথ কখনোই রাজনীতি টেনে আনেননি; বরং তা ছিল একেবারেই আনুষ্ঠানিক। রাষ্ট্রনীতি সামলাবে রাজনৈতিক সরকার। রাজা অষ্টম এডওয়ার্ডের কথা ভোলেননি রানি এলিজাবেথ। রাজা অষ্টম এডওয়ার্ড তারিফ করেছিলেন অ্যাডলফ হিটলারের।
২০২২ সালে সিংহাসনে আরোহণ করার ৭০ বছর পূর্ণ করেছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। ফেব্রুয়ারি, মানে ৯৬ বছর বয়সী রানি বলেছিলেন, শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। হাঁটতে অসুবিধা হচ্ছে।
রানির সহচরেরা বলে থাকেন, ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে প্রিন্স ফিলিপ মারা যাওয়ার পর থেকেই তাঁর ভেতরে পরিবর্তনগুলো বেশি করে ধরা পড়েছে। বলে রাখা দরকার, এলিজাবেথ-ফিলিপ দম্পতি ৭০ বছর একত্র-জীবন কাটিয়েছেন।
রানি এলিজাবেথ ছিলেন শান্ত প্রবহমান নদীর মতো। দশকের পর দশকজুড়ে তিনি ছিলেন ব্রিটেনের রানি। এই পুরো সময়ে ব্রিটেনে এবং গোটা পৃথিবীতে নানা ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে, কিন্তু কোনো সময় তিনি ব্রিটেনের রাজনীতির পুরোধা ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে চাননি। তিনি ভালোভাবেই বুঝতেন, ব্রিটেন হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীশাসিত দেশ বা রানি এখানে প্রতীকী শাসক। রানি এলিজাবেথ প্রমাণ করেছেন, রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাহীন হয়েও কতটা ক্ষমতাবান থাকা যায় জনগণের হৃদয়ে।
এলিজাবেথ ক্ষমতায় এসেছিলেন যখন, তার কয়েক বছরের মধ্যেই সুয়েজ খাল সংকট তৈরি হয়েছিল। সুয়েজ খাল নিয়ে চলা সংকট এখনো মানুষকে আলোড়িত করে। সে সময়টা পার করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে ১৯৫৬ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত সময় ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের অর্গল থেকে বেরিয়ে এসেছিল আরও অনেকগুলো দেশ, যার মধ্যে আফ্রিকা মহাদেশের দেশগুলোই ছিল বেশি (ভারত ভাগের কথা এখানে বলছি না, কারণ ভারত উপনিবেশমুক্ত হয়েছিল এলিজাবেথের বাবার শাসনামলে)। সত্তরের দশকে ব্রিটেন অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে গেছে, এরপর মার্গারেট থ্যাচারের শাসনামলে খনিশ্রমিকদের ধর্মঘট হয়েছে, শ্রেণিসংঘাত বড় আকার ধারণ করেছে, জাতীয় মুদ্রা পাউন্ডের অবমূল্যায়ন হয়েছে, ব্রিটিশরা বিশ্ব মোড়লের স্থানচ্যুত হয়েছে—এসবই ঘটেছে রানি এলিজাবেথের চোখের সামনে।
কোনো সন্দেহ নেই বিশ্বের পরাশক্তি হিসেবে তত দিনে জায়গা করে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়নসহ বিপরীতমুখী অনেকগুলো দেশ। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বিশ্ব মোড়ল পরিবর্তিত হলেও রানি এলিজাবেথকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেনি কোনো দেশ, তাঁকে সবাই সম্মানের চোখেই দেখেছে। স্থিতি, সুন্দর ভবিষ্যৎ ইত্যাদি নিয়ে রানি এলিজাবেথ ছিলেন ব্রিটেনবাসীর মনের মুকুরে।
অস্বীকার করা যাবে না, রাজপরিবারেও নানা ধরনের স্ক্যান্ডালের সৃষ্টি হয়েছে। রানি চেষ্টা করেছেন তাতে নাক না গলাতে। প্রিন্সেস ডায়ানার ব্যাপারে তিনি আরও মনোযোগী হতে পারতেন বলে অনেকেই তাঁকে দোষী করে থাকেন। কিন্তু ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পারিবারিক সংকটগুলোর সময় রানি স্থির থাকারই চেষ্টা করেছেন। কারও কারও উচ্চাকাঙ্ক্ষা, নানা দিকের অবহেলা ইত্যাদি যে বিষয় রাজপরিবারে ছিল, তাতে রানির অবস্থান নিয়ে ওঠা প্রশ্ন পরে বাতিল হয়েছে।
আগেই বলেছি, ব্রিটেনের রানির রাজনৈতিক ক্ষমতা নেই বললেই চলে। তিনি ব্রিটেনের প্রত্যেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক রাখার চেষ্টা করেছেন। তাঁর জীবদ্দশায় ১৬ জন প্রধানমন্ত্রীকে তিনি ক্ষমতায় দেখেছেন। রানি এলিজাবেথের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন উইনস্টন চার্চিল। মার্গারেট থ্যাচারের সঙ্গে রানির সম্পর্কটি খুব একটা সুখকর ছিল না, কিন্তু সেটা কখনোই রানি সাধারণ জনগণকে বুঝতে দেননি। তিনি তাঁর ঐতিহ্যগত জায়গায় অনড় ছিলেন।
রাজনৈতিক ক্ষমতাহীন রাজারা যখন রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামান, তখন তাঁদের পরিণতি কী হয়, সে ব্যাপারে রানি এলিজাবেথ অজ্ঞ ছিলেন না। ষাটের দশকে গ্রিসের রাজা দ্বিতীয় কনস্টান্টিন প্রধানমন্ত্রীকে অগ্রাহ্য করে সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে মিলেমিশে নিজের ক্ষমতা প্রদর্শন করতে চেয়েছিলেন। সেটা কাজে লাগেনি। তিনি তাঁর সীমিত রাজত্বের ক্ষমতাটুকু হারিয়েছিলেন এবং গ্রিসে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটেছিল, দেশটি পরিণত হয়েছিল প্রজাতন্ত্রে। রানি এলিজাবেথের জন্য সম্ভবত এটা ছিল রাজনীতিতে নাক না গলানোর একটা সিগন্যাল। রাজনীতিতে নাক না গলিয়েই বরং সূক্ষ্মভাবে তিনি রাজনীতিবিদদের অভিভাবক হিসেবে দেখা দিয়েছেন। এ কারণেই কারও প্রতি তিনি অনুরক্ত কিংবা কারও প্রতি তিনি বিরক্ত, তা নিয়ে হাওয়ায় নানা রকম গুজব ভেসে বেড়ালেও প্রকৃতই রানি ঘটনা নিয়ে কী ভাবছেন, তা কখনোই জানা যেত না।
বিদেশি রাষ্ট্রনায়কদের সঙ্গে সাক্ষাতে রানি এলিজাবেথ কখনোই রাজনীতি টেনে আনেননি; বরং তা ছিল একেবারেই আনুষ্ঠানিক। রাষ্ট্রনীতি সামলাবে রাজনৈতিক সরকার। রাজা অষ্টম এডওয়ার্ডের কথা ভোলেননি রানি এলিজাবেথ। রাজা অষ্টম এডওয়ার্ড তারিফ করেছিলেন অ্যাডলফ হিটলারের।
বলেছিলেন, ‘এ রকম নেতা পুরো ইউরোপে মেলা ভার। কীভাবে লোকটা সাধারণ মানুষ-শ্রমিকের সঙ্গে মেলামেশা করে।’ এ ছাড়া তিনি বিয়ে করেছিলেন মার্কিন এক সাধারণ নাগরিককে। তিনি সিংহাসনচ্যুত হয়েছিলেন। এরপর থেকে পঞ্চম জর্জ কিংবা রানি এলিজাবেথ কেউই আর রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে জড়াননি।
আগেই বলেছি, ব্রিটেনের রানির কোনো রাজনৈতিক ক্ষমতা ছিল না। কিন্তু বর্তমান পৃথিবীতে যে চাপ নিয়ে চলতে হয়, যে গতিতে এগিয়ে চলেছে জীবন, তাতে কাউকে না কাউকে আঁকড়ে না ধরলে এই পথ থেকে ছিটকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ব্রিটেনবাসীর জন্য এই ‘কাউকে না কাউকে’র একজন নির্ভরযোগ্য প্রতিনিধি ছিলেন রানি এলিজাবেথ কিংবা বলা যায়, ব্রিটিশ রাজত্বে সিংহাসনে উপবিষ্ট ঢাল-তলোয়ারবিহীন মানুষটি হতে পারেন সহায়।
ব্রিটেনবাসী দেখেছে, বিভিন্ন সংকটের সময় কতটা শান্তভাবে, উত্তেজিত না হয়ে রানি সময় কাটাচ্ছেন, নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাঁর এই আচরণ দিয়ে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করার জন্যই প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়, তাঁরাই সেই সংকট মোকাবিলা করবেন, তাঁদেরই নিশ্চিন্তে নিজের মতো করে কাজ করতে দিতে হবে।
ব্রিটেনবাসী মানুষদের মুখোমুখি হলে, তাদের সঙ্গে কথা বললে, এমন মানুষদের দেখা মিলবে যাঁরা বলবেন, এখন আর রাজতন্ত্রের প্রয়োজন নেই। পরিবর্তিত সময়ের সঙ্গে এই রাজতন্ত্র যায় না। রাজপরিবারের জন্য কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ ব্যয় হয়। আবার সেই মানুষদের মুখ থেকেই শোনা যায়, ব্রিটেন হচ্ছে ঐতিহ্যের দেশ, ব্রিটেনের রাজতন্ত্র সেই ঐতিহ্য উৎসারিত। সেই ঐতিহ্য মেনে চলার চেষ্টা করেছেন রানি এলিজাবেথ। এমনকি পারিবারিক দ্বন্দ্ব, টানাপোড়েনের সময়ও তিনি স্থির থাকার চেষ্টা করেছেন। প্রিন্স হ্যারির সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোতেও ব্রিটেনবাসী রানির পক্ষ নিয়েছেন। মেগান মারকেলের পক্ষে আর দ্বিতীয় ডায়ানা হওয়ার সুযোগ ঘটেনি। ব্রিটেনবাসীর জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারা বাকিংহাম প্যালেসে এখনো রাজা বা রানিকে দেখতে চায়।
এই ডিজিটাল যুগে ঢাল-তলোয়ারবিহীন রাজা বা রানির প্রয়োজন আছে কি নেই, সেটা ভিন্ন বিতর্ক, কিন্তু রানি এলিজাবেথকে হারিয়ে ব্রিটেনবাসী যে সত্যিই ব্যথিত, তা বোঝা যাচ্ছে। বোঝা যাচ্ছে, ঐতিহ্য তাদের কাছে এখনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বিদেশি রাষ্ট্রনায়কদের সঙ্গে সাক্ষাতে রানি এলিজাবেথ কখনোই রাজনীতি টেনে আনেননি; বরং তা ছিল একেবারেই আনুষ্ঠানিক। রাষ্ট্রনীতি সামলাবে রাজনৈতিক সরকার। রাজা অষ্টম এডওয়ার্ডের কথা ভোলেননি রানি এলিজাবেথ। রাজা অষ্টম এডওয়ার্ড তারিফ করেছিলেন অ্যাডলফ হিটলারের।
২০২২ সালে সিংহাসনে আরোহণ করার ৭০ বছর পূর্ণ করেছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। ফেব্রুয়ারি, মানে ৯৬ বছর বয়সী রানি বলেছিলেন, শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। হাঁটতে অসুবিধা হচ্ছে।
রানির সহচরেরা বলে থাকেন, ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে প্রিন্স ফিলিপ মারা যাওয়ার পর থেকেই তাঁর ভেতরে পরিবর্তনগুলো বেশি করে ধরা পড়েছে। বলে রাখা দরকার, এলিজাবেথ-ফিলিপ দম্পতি ৭০ বছর একত্র-জীবন কাটিয়েছেন।
রানি এলিজাবেথ ছিলেন শান্ত প্রবহমান নদীর মতো। দশকের পর দশকজুড়ে তিনি ছিলেন ব্রিটেনের রানি। এই পুরো সময়ে ব্রিটেনে এবং গোটা পৃথিবীতে নানা ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে, কিন্তু কোনো সময় তিনি ব্রিটেনের রাজনীতির পুরোধা ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে চাননি। তিনি ভালোভাবেই বুঝতেন, ব্রিটেন হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীশাসিত দেশ বা রানি এখানে প্রতীকী শাসক। রানি এলিজাবেথ প্রমাণ করেছেন, রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাহীন হয়েও কতটা ক্ষমতাবান থাকা যায় জনগণের হৃদয়ে।
এলিজাবেথ ক্ষমতায় এসেছিলেন যখন, তার কয়েক বছরের মধ্যেই সুয়েজ খাল সংকট তৈরি হয়েছিল। সুয়েজ খাল নিয়ে চলা সংকট এখনো মানুষকে আলোড়িত করে। সে সময়টা পার করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে ১৯৫৬ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত সময় ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের অর্গল থেকে বেরিয়ে এসেছিল আরও অনেকগুলো দেশ, যার মধ্যে আফ্রিকা মহাদেশের দেশগুলোই ছিল বেশি (ভারত ভাগের কথা এখানে বলছি না, কারণ ভারত উপনিবেশমুক্ত হয়েছিল এলিজাবেথের বাবার শাসনামলে)। সত্তরের দশকে ব্রিটেন অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে গেছে, এরপর মার্গারেট থ্যাচারের শাসনামলে খনিশ্রমিকদের ধর্মঘট হয়েছে, শ্রেণিসংঘাত বড় আকার ধারণ করেছে, জাতীয় মুদ্রা পাউন্ডের অবমূল্যায়ন হয়েছে, ব্রিটিশরা বিশ্ব মোড়লের স্থানচ্যুত হয়েছে—এসবই ঘটেছে রানি এলিজাবেথের চোখের সামনে।
কোনো সন্দেহ নেই বিশ্বের পরাশক্তি হিসেবে তত দিনে জায়গা করে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়নসহ বিপরীতমুখী অনেকগুলো দেশ। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বিশ্ব মোড়ল পরিবর্তিত হলেও রানি এলিজাবেথকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেনি কোনো দেশ, তাঁকে সবাই সম্মানের চোখেই দেখেছে। স্থিতি, সুন্দর ভবিষ্যৎ ইত্যাদি নিয়ে রানি এলিজাবেথ ছিলেন ব্রিটেনবাসীর মনের মুকুরে।
অস্বীকার করা যাবে না, রাজপরিবারেও নানা ধরনের স্ক্যান্ডালের সৃষ্টি হয়েছে। রানি চেষ্টা করেছেন তাতে নাক না গলাতে। প্রিন্সেস ডায়ানার ব্যাপারে তিনি আরও মনোযোগী হতে পারতেন বলে অনেকেই তাঁকে দোষী করে থাকেন। কিন্তু ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পারিবারিক সংকটগুলোর সময় রানি স্থির থাকারই চেষ্টা করেছেন। কারও কারও উচ্চাকাঙ্ক্ষা, নানা দিকের অবহেলা ইত্যাদি যে বিষয় রাজপরিবারে ছিল, তাতে রানির অবস্থান নিয়ে ওঠা প্রশ্ন পরে বাতিল হয়েছে।
আগেই বলেছি, ব্রিটেনের রানির রাজনৈতিক ক্ষমতা নেই বললেই চলে। তিনি ব্রিটেনের প্রত্যেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক রাখার চেষ্টা করেছেন। তাঁর জীবদ্দশায় ১৬ জন প্রধানমন্ত্রীকে তিনি ক্ষমতায় দেখেছেন। রানি এলিজাবেথের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন উইনস্টন চার্চিল। মার্গারেট থ্যাচারের সঙ্গে রানির সম্পর্কটি খুব একটা সুখকর ছিল না, কিন্তু সেটা কখনোই রানি সাধারণ জনগণকে বুঝতে দেননি। তিনি তাঁর ঐতিহ্যগত জায়গায় অনড় ছিলেন।
রাজনৈতিক ক্ষমতাহীন রাজারা যখন রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামান, তখন তাঁদের পরিণতি কী হয়, সে ব্যাপারে রানি এলিজাবেথ অজ্ঞ ছিলেন না। ষাটের দশকে গ্রিসের রাজা দ্বিতীয় কনস্টান্টিন প্রধানমন্ত্রীকে অগ্রাহ্য করে সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে মিলেমিশে নিজের ক্ষমতা প্রদর্শন করতে চেয়েছিলেন। সেটা কাজে লাগেনি। তিনি তাঁর সীমিত রাজত্বের ক্ষমতাটুকু হারিয়েছিলেন এবং গ্রিসে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটেছিল, দেশটি পরিণত হয়েছিল প্রজাতন্ত্রে। রানি এলিজাবেথের জন্য সম্ভবত এটা ছিল রাজনীতিতে নাক না গলানোর একটা সিগন্যাল। রাজনীতিতে নাক না গলিয়েই বরং সূক্ষ্মভাবে তিনি রাজনীতিবিদদের অভিভাবক হিসেবে দেখা দিয়েছেন। এ কারণেই কারও প্রতি তিনি অনুরক্ত কিংবা কারও প্রতি তিনি বিরক্ত, তা নিয়ে হাওয়ায় নানা রকম গুজব ভেসে বেড়ালেও প্রকৃতই রানি ঘটনা নিয়ে কী ভাবছেন, তা কখনোই জানা যেত না।
বিদেশি রাষ্ট্রনায়কদের সঙ্গে সাক্ষাতে রানি এলিজাবেথ কখনোই রাজনীতি টেনে আনেননি; বরং তা ছিল একেবারেই আনুষ্ঠানিক। রাষ্ট্রনীতি সামলাবে রাজনৈতিক সরকার। রাজা অষ্টম এডওয়ার্ডের কথা ভোলেননি রানি এলিজাবেথ। রাজা অষ্টম এডওয়ার্ড তারিফ করেছিলেন অ্যাডলফ হিটলারের।
বলেছিলেন, ‘এ রকম নেতা পুরো ইউরোপে মেলা ভার। কীভাবে লোকটা সাধারণ মানুষ-শ্রমিকের সঙ্গে মেলামেশা করে।’ এ ছাড়া তিনি বিয়ে করেছিলেন মার্কিন এক সাধারণ নাগরিককে। তিনি সিংহাসনচ্যুত হয়েছিলেন। এরপর থেকে পঞ্চম জর্জ কিংবা রানি এলিজাবেথ কেউই আর রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে জড়াননি।
আগেই বলেছি, ব্রিটেনের রানির কোনো রাজনৈতিক ক্ষমতা ছিল না। কিন্তু বর্তমান পৃথিবীতে যে চাপ নিয়ে চলতে হয়, যে গতিতে এগিয়ে চলেছে জীবন, তাতে কাউকে না কাউকে আঁকড়ে না ধরলে এই পথ থেকে ছিটকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ব্রিটেনবাসীর জন্য এই ‘কাউকে না কাউকে’র একজন নির্ভরযোগ্য প্রতিনিধি ছিলেন রানি এলিজাবেথ কিংবা বলা যায়, ব্রিটিশ রাজত্বে সিংহাসনে উপবিষ্ট ঢাল-তলোয়ারবিহীন মানুষটি হতে পারেন সহায়।
ব্রিটেনবাসী দেখেছে, বিভিন্ন সংকটের সময় কতটা শান্তভাবে, উত্তেজিত না হয়ে রানি সময় কাটাচ্ছেন, নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাঁর এই আচরণ দিয়ে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করার জন্যই প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়, তাঁরাই সেই সংকট মোকাবিলা করবেন, তাঁদেরই নিশ্চিন্তে নিজের মতো করে কাজ করতে দিতে হবে।
ব্রিটেনবাসী মানুষদের মুখোমুখি হলে, তাদের সঙ্গে কথা বললে, এমন মানুষদের দেখা মিলবে যাঁরা বলবেন, এখন আর রাজতন্ত্রের প্রয়োজন নেই। পরিবর্তিত সময়ের সঙ্গে এই রাজতন্ত্র যায় না। রাজপরিবারের জন্য কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ ব্যয় হয়। আবার সেই মানুষদের মুখ থেকেই শোনা যায়, ব্রিটেন হচ্ছে ঐতিহ্যের দেশ, ব্রিটেনের রাজতন্ত্র সেই ঐতিহ্য উৎসারিত। সেই ঐতিহ্য মেনে চলার চেষ্টা করেছেন রানি এলিজাবেথ। এমনকি পারিবারিক দ্বন্দ্ব, টানাপোড়েনের সময়ও তিনি স্থির থাকার চেষ্টা করেছেন। প্রিন্স হ্যারির সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোতেও ব্রিটেনবাসী রানির পক্ষ নিয়েছেন। মেগান মারকেলের পক্ষে আর দ্বিতীয় ডায়ানা হওয়ার সুযোগ ঘটেনি। ব্রিটেনবাসীর জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারা বাকিংহাম প্যালেসে এখনো রাজা বা রানিকে দেখতে চায়।
এই ডিজিটাল যুগে ঢাল-তলোয়ারবিহীন রাজা বা রানির প্রয়োজন আছে কি নেই, সেটা ভিন্ন বিতর্ক, কিন্তু রানি এলিজাবেথকে হারিয়ে ব্রিটেনবাসী যে সত্যিই ব্যথিত, তা বোঝা যাচ্ছে। বোঝা যাচ্ছে, ঐতিহ্য তাদের কাছে এখনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে