মেডিকেল কলেজে ভর্তি: শেষ সময়ের প্রস্তুতি নিয়ে পাঁচটি পরামর্শ

শতাব্দী রায়
আপডেট : ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১২: ০৮
Thumbnail image

প্রতিবছর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার আবেদন গ্রহণ শুরু হলেই তৈরি হয় নতুন নতুন রেকর্ড। বিগত বছরগুলোতে প্রতিবার আবেদনের সংখ্যা লাখ ছাড়াচ্ছে। অথচ দেশের মেডিকেল কলেজগুলোর আসনসংখ্যা খুব সীমিত। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে সরকারি মেডিকেলগুলোতে ১ হাজার ৩০টি নতুন আসন যোগ হওয়ার পরেও মোট আসনের সংখ্যা ১২ হাজার পেরোতে পারেনি। এগুলোর মধ্যে ৫ হাজার ৩৮০টি আসন সরকারি মেডিকেলে আর বাকিটা বেসরকারি। এই হাতে গোনা আসনগুলোর একটিকে নিজের করে নেওয়াটা সোনার হরিণ ধরার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। আর আবেদনকারী প্রত্যেকেই কোমর বেঁধে বেরোন এই সোনার হরিণের খোঁজে। কিন্তু কার মাথায় উঠবে জয়ের মুকুট? উত্তরটা হলো—যাঁর প্রস্তুতি ছিল সুচিন্তিত ও কার্যকরী। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে সবার জন্য রইল শেষ সময়ের প্রস্তুতি নিয়ে পাঁচটি পরামর্শ।

সুস্থ থাকুক শরীর ও মন
জীবনের যেকোনো ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকা ভীষণ জরুরি। ভর্তিযুদ্ধও এর ব্যতিক্রম নয়। শারীরিক অসুস্থতা কিংবা মানসিক অস্থিরতার জন্য অনেক ভালো প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও নিজের সেরাটা দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে এই সময়টায় খেয়াল রাখতে হবে স্বাস্থ্যের দিকেও। সময়মতো সুষম খাবার এবং রাতে নিয়মমাফিক ঘুম—এ দুটো ব্যাপারে আপস করা যাবে না কোনোভাবেই। শীতের এ সময়টায় ঠান্ডা-কাশি এড়াতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। আর মানসিকভাবে অস্থির করে কিংবা আত্মবিশ্বাসে ভাঙন ধরায়—এমন বিষয়গুলো থেকে রাখতে হবে নিরাপদ দূরত্ব।

প্রশ্নের প্যাটার্ন থাকুক আয়ত্তে
আমাদের একাডেমিক পরীক্ষাগুলোর সঙ্গে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার একটা মৌলিক পার্থক্য হলো—এর মূল উদ্দেশ্য শুধু ভালো শিক্ষার্থী নয়, বরং ভবিষ্যতের একজন ভালো চিকিৎসক খুঁজে বের করা। একজন ভালো চিকিৎসকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হলো শক্তিশালী ‘ক্লিনিক্যাল আই’, আর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে এমন সম্ভাবনাময় ক্লিনিক্যাল আইগুলোকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলে, প্রশ্নের প্যাটার্ন তৈরি হয় সেই উদ্দেশ্যেই। কিন্তু একজন উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীর জন্য নিজের পাঠ্যবই থেকে সেই গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো নিজে নিজে চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। সে জন্য দরকার ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নগুলোর ব্যাপারে ধারণা রাখা। নিশ্চয় এরই মধ্যে প্রশ্নব্যাংক সমাধান হয়েছে, সেই সঙ্গে বইতে চিহ্নিত করে রেখেছেন সেসব প্রশ্নের বিষয়। কাজেই শেষ সময়ের রিভিশনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে সেই বিষয়গুলোতে, যেন কোথাও বিন্দুমাত্র ফাঁক না থেকে যায়।

অনুশীলনের বিকল্প নেই
ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করার জন্য বেসিক পড়াগুলো বুঝে আত্মস্থ করা যেমন জরুরি, তেমনিভাবে সেগুলোর নিয়মিত অনুশীলন। শেষ সময়ের প্রস্তুতিতে প্রতিদিন নিজে নিজে অন্তত একটা করে পূর্ণাঙ্গ প্রশ্ন সমাধান করা, ভুলগুলো চিহ্নিত করা এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়টি আরেকবার রিভিশন দেওয়ার অভ্যাস প্রস্তুতিকে আরও বেশি শাণিত করে তুলবে।

 সময়ের সঙ্গে হোক বন্ধুত্ব
অ্যাডমিশন টেস্টের মতো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলোতে সময় ব্যবস্থাপনা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। প্রস্তুতির পুরো সময়টায় নিশ্চয়ই ঘড়ির কাঁটাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ানোর অভ্যাস করেছেন। শেষ সময়েও এটা চালিয়ে যেতে হবে, মডেল টেস্ট অনুশীলনের সময় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে সময় ব্যবস্থাপনায়।

নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে স্নায়ু
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা প্রত্যেক পরীক্ষার্থীরই বড় প্রত্যাশার জায়গা, তাই স্বাভাবিকভাবে এ সময় উঁচুতে থাকে উত্তেজনার পারদটাও। কিন্তু জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত ফল পেতে মাথা ঠান্ডা রেখে পরীক্ষা দেওয়াটা অনেক জরুরি। অনেক ভালো প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও কেবল অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে নিজের সেরাটা দিয়ে আসা সম্ভব ওঠে না অনেকের ক্ষেত্রে। এমন পরিস্থিতি এড়াতে প্রয়োজন স্নায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করতে শেখা। আকস্মিক প্যানিক অ্যাটাক যেন কারও স্বপ্নকে ধুলোয় মিশিয়ে দিতে না পারে, সে জন্য নিয়মিত অনুশীলনের সঙ্গে সঙ্গে ব্রিদিং এক্সারসাইজ কিংবা মেডিটেশন করা যেতে পারে। আর অবশ্যই মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে পরীক্ষার সময় যেকোনো চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি মোকাবিলায়।

শতাব্দী রায়, শিক্ষার্থী, ঢাকা মেডিকেল কলেজ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত