Ajker Patrika

বেতন না দেওয়ায় স্কুল বন্ধ

আনোয়ার হোসেন, মনিরামপুর
আপডেট : ১৪ এপ্রিল ২০২২, ১২: ২৯
বেতন না দেওয়ায় স্কুল বন্ধ

মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্পের (৬৪ জেলা) নামে ছয় মাসমেয়াদি বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত মনিরামপুরের শিক্ষকদের অনেকেই বেতন পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাঁদের মধ্যে অনেকে বেতন না পাওয়ায় স্কুল বন্ধ করে দিয়েছেন।

তবে কয়েকজন শিক্ষক বেতনের আশায় এখনো স্কুল চালু রেখেছেন। যদিও সেখানে ঠিকমতো উপস্থিত হচ্ছে না শিক্ষার্থীরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও নিয়োগপত্র দিয়ে ২০২০ সালের ২৮ মার্চ দীপ শিখা বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে মনিরামপুরে শুরু হয় মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্প (৬৪ জেলা) নামের বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রম। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহযোগিতায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আওতায় এ কার্যক্রম চালু হয়। তখন ৩২০ জন পুরুষ ও ৩২০ জন নারী মোট ৬৪০ জন শিক্ষককে ৪-৫ দিন করে প্রশিক্ষণ দিয়ে উপজেলাব্যাপী ৩২০ স্কুল চালু করা হয়। প্রতি শিক্ষকের আওতায় ৩০ জন শিক্ষার্থীর তালিকা করা হয়।

করোনার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গত বছরের ৮ ডিসেম্বর শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতে ৩২০টি গুচ্ছে বিভক্ত করে কাছের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কক্ষে এ শিক্ষার কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকেরা রাজি না হওয়ায় বিভিন্ন বাড়িতে শুরু হয় শিক্ষাদানের কাজ। প্রতি শিক্ষকের মাসিক বেতন ধরা হয় ২ হাজার ৪০০ টাকা। ৬ মাসের এ প্রকল্পের কেন্দ্রগুলো দেখভালের জন্য ২ হাজার ৫০০ টাকা সম্মানীতে ১৬ জন তদারককারী (সুপারভাইজার) নিয়োগ দেওয়া হয়। আর উপজেলাব্যাপী এ শিক্ষা কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য আজহারুল ইসলাম নামে একজন উপজেলা প্রোগ্রাম কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ প্রকল্পের ৬৪০ জন শিক্ষকের অধিকাংশ বেতন না পেয়ে স্কুল বন্ধ করে দিয়েছেন। যারা কাজ করছেন তারা ভাতা পাচ্ছেন না নিয়মিত।

সুপারভাইজাররা ঠিকমতো সম্মানী না পাওয়ায় তাঁরা নিয়মিত স্কুল তদারকি করছেন না। স্কুল চলছে কি না তার খোঁজ রাখেন না উপজেলা প্রোগ্রাম কর্মকর্তা আজহারুল নিজেও।

উপজেলার মশিয়াহাঁটি বাজারে অবস্থিত দীপ শিখার (রেজি. নম্বর-য-৫৫৫/৯৮) পরিচালক প্রকাশ চন্দ্রের মাধ্যমে মনিরামপুরে বয়স্ক শিক্ষার কার্যক্রম চালু রয়েছে। শিক্ষকদের ভাতার শিটে স্বাক্ষর নিয়ে বেতন না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এ পরিচালকের বিরুদ্ধে। কোনো কেন্দ্রে শিক্ষক কাজ করতে অনাগ্রহ দেখালে সেখানে বিকল্প শিক্ষক নেওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও তা করতে ব্যর্থ হয়েছেন প্রকাশ চন্দ্র।

মাবিয়া রহমান নামে এ প্রকল্পের এক শিক্ষক বলেন, ‘ফেদায়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামের কেন্দ্রের শিক্ষক আমি। ২-৩ মাস পড়ানোর পর বেতন পাইনি। তাই বন্ধ করে দিছি। আমার বেতন শিটে স্বাক্ষর নিয়েছেন সুপারভাইজার, কিন্তু বেতন দেননি।’

গোপালপুর কেন্দ্রের শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘শুরু থেকে দীপ শিখা আমাদের সঙ্গে প্রতারণা শুরু করে। ঠিকমতো শিক্ষা উপকরণ দেয় না। সুপারভাইজার খোঁজ নেয় না। ডিসেম্বরে আমাদের বেতন দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু দেয়নি। জানুয়ারি পর্যন্ত পড়াইছি। তাও বেতন পাইনি। চাপাচাপি করলে একদিন বেতন শিটে আমার স্বাক্ষর নিয়েছেন, কিন্তু টাকা দেয়নি। তারপর আমি স্কুল বন্ধ করে দিয়েছি।’

গোপালপুর কেন্দ্রের নারী শিক্ষক রোজিনা খাতুন বলেন, ‘বেতন দিচ্ছিল না। আমি ইউএনওকে জানাব বলায় আমাকে দুই মাসের বেতন দিয়েছে।’

রঘুনাথপুর কেন্দ্রের শিক্ষক মিনু মণ্ডল বলেন, ‘৪ মাস হয়ে গেছে। মাত্র ১ মাসের বেতন দিয়েছে।’

এদিকে সোমবার সরেজমিন দীপ শিখার কার্যালয়ে দেখা গেছে, বেতন না পেয়ে স্কুল বন্ধ করে দিলেও কাগজে কলমে এখনো সাইফুল ইসলাম ও আলমগীর হোসেনের নাম শিক্ষক হিসেবে আছেন।

জানতে চাইলে খানপুর ইউনিয়নের সুপারভাইজার আসলাম হোসেন বলেন, ‘মাবিয়ার পরিবর্তে ওই কেন্দ্রে কে শিক্ষক হয়েছেন বলতে পারব না। আমি যশোরে একটা কাজে এসেছি।’

দীপ শিখার পরিচালক প্রকাশ চন্দ্র বলেন, ‘আগামী ৭ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। সাড়ে চার মাসে এ পর্যন্ত দুই মাসের বেতন দিতে পেরেছি।’

জানতে চাইলে উপজেলা প্রোগ্রাম কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘দুই মাসের বেতন পেয়েছেন শিক্ষকেরা। তবে কোন শিক্ষক বেতন পাননি বা কোন স্কুল বন্ধ আছে এমন তথ্য আমার কাছে নেই।’

মনিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ জাকির হাসান বলেন, ‘বয়স্ক শিক্ষার স্কুল বন্ধ বা শিক্ষকদের বেতন না পাওয়ার বিষয়টি জানা নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত