ঠাকুরগাঁওয়ে ঠান্ডায় বাড়ছে শিশু রোগী, ওষুধ ও শয্যার সংকট

সাদ্দাম হোসেন, ঠাকুরগাঁও
Thumbnail image

ঠাকুরগাঁওয়ে শিশুদের নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, জ্বরসহ ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। অভিভাবকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ। হাসপাতালে হঠাৎ করে রোগীর চাপ বাড়ায় ওষুধ, স্যালাইন ও শয্যার সংকট দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রোগীর স্বজনেরা।

সদর জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২৫০ শয্যার এ হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে শয্যা রয়েছে ৪৫টি। বর্তমানে ভর্তি আছে মোট ১৮৫টি শিশু। তাদের মধ্যে অন্তত ৭১ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। এ ছাড়া গত এক মাসে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে এখানে ১২ শিশুর মৃত্যু হয়। মারা যাওয়া শিশুদের মধ্যে প্রিম্যাচিউরড বা ওজন কম থাকা অপরিপক্ব রয়েছে আটটি, যাদের বয়স ছিল এক থেকে দুই দিন। আর ঠান্ডাজনিত রোগে দুই, হৃদ্‌যন্ত্রের সমস্যা নিয়ে এক ও খিঁচুনিসহ জ্বর নিয়ে এক শিশুর মৃত্যু হয়।

গত বুধবার হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, শিশু ওয়ার্ডের শয্যাগুলোর একটিও ফাঁকা নেই। কোনো কোনো শয্যায় একাধিক রোগী রেখে চিকিৎসা চলছে। শয্যা সংকুলান না হওয়ায় অনেক শিশুকে মেঝেতে রেখে স্যালাইনসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। 

পীরগঞ্জ উপজেলার লোহাগেড়া গ্রামের গৃহবধূ আঁখি মণি তাঁর জ্বর ও কাশিতে আক্রান্ত সন্তান আহাদ ইসলামকে নিয়ে চার দিন ধরে হাসপাতালে আছেন। তিনি বলেন, ‘ওষুধ কেনার টাকা নেই। ডাক্তার ওষুধ লিখে দিছেন, ওই ওষুধ হাসপাতালে নাই। বাহির থেকে কিনে যে আনব, সে টাকাও নাই। তাই বাবুর চিকিৎসা বন্ধ আছে।’ আরেক শিশুর মা লায়লী বেগম বলেন, তাঁর সন্তানকে শয্যার অভাবে মেঝেতে শয্যা পেতে থাকতে হচ্ছে। এতে করে শিশুটি আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

বালিয়াডাঙ্গী থেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত মেয়েকে নিয়ে গত মঙ্গলবার বিকেলে হাসপাতালে আসেন উত্তম কুমার। তিনি জানান, এ পর্যন্ত ১ হাজার টাকার ওষুধ কিনতে হয়েছে। হাসপাতাল থেকে তেমন কোনো ওষুধ দেয়নি। রফিকুল ইসলাম নামের আরেক অভিভাবক বলেন, ‘দিনমজুরি করে সংসার চালাই। হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে বাহির থেকে ওষুধ কিনতে হচ্ছে। টাকা নেই, কষ্ট হয়, তবুও সন্তানকে তো বাঁচাতে হবে।’

শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স শিল্পী আখতার জানান, ১৫ জন নার্স ও তিন চিকিৎসক দিয়ে দৈনিক প্রায় ২০০ ভর্তি শিশু রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন শিশু ওয়ার্ডে ৪৫ শয্যার বিপরীতে ১০০ জনের বেশি নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছে। বিপুলসংখ্যক রোগী সামাল দিতে তাঁদের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে।

হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সাজ্জাদ হায়দার শাহীন বলেন, শীতের এ সময়ে ভাইরাসের প্রবণতা বেড়ে যায়। ফলে শিশুরা ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ ছাড়া শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা কম বলে তারা সহজে আক্রান্ত হয়। এসব রোগের হাত থেকে রক্ষা পেতে শিশুদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি ধুলাবালু এড়িয়ে চলতে হবে। আর প্রয়োজনীয় সব টিকা দিতে হবে। সেই সঙ্গে শিশুর শরীর ঘামলে তা মুছে দিতে এবং যাতে ঠান্ডা না লাগে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত