সংযমের মাস রমজানের শুরুতে অসংযমী ব্যবসায়ীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ১২ মার্চ ২০২৪, ০৮: ১৬
আপডেট : ১২ মার্চ ২০২৪, ০৮: ১৮

পশ্চিম আকাশে চাঁদ উঠেছে সন্ধ্যায়। শুরু হলো সংযমের মাস রমজান। তার আগেই রোজার কেনাকাটা সেরে রাখতে গতকাল সোমবার সকাল থেকেই বাজারে ভিড় করতে থাকে মানুষ। সেই সুযোগে মুনাফা কামাতে অসংযমী হয়ে ওঠেন ব্যবসায়ীরা। বাড়তি চাহিদা দেখে প্রায় সব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন তাঁরা। এ নিয়ে বেশ বিরক্ত ক্রেতারা।

গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে রোজার বাজার করতে এসেছিলেন গৃহিণী লাবণী শিকদার। তিনি বলেন, ‘একটু কম দামের আশায় কারওয়ান বাজারে কেনাকাটা করতে আসি। রোজার বাজার করতে গিয়ে দেখি সবকিছুর দাম ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।’ তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ি এলাকায় কথা হয় আরেক ক্রেতা আবুল কাশেমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সবকিছুর দাম বেশি। এত দাম হইলে মানুষ খাইবে কী?’

রোজার কারণে বাজারে নিত্যপণ্যের দামে কেমন পরিবর্তন এসেছে তা জানতে ১০ দিন আগের বাজার পরিস্থিতির সঙ্গে গতকালের বাজারের চিত্র মিলিয়ে দেখেছে আজকের পত্রিকা। এতে দেখা যায়, পণ্য ও বাজারভেদে দাম ৫ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তবে ডিমের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।

গতকাল রাজধানীর কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগি কেজিপ্রতি ২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ ১০ দিন আগেও ২০০ টাকা দামে বিক্রি হয়েছিল। অন্যদিকে দেশি মুরগি ৬৮০ টাকা দামে বেচতে দেখা গেছে, যা ১০ দিন আগে ছিল ৬৫০ টাকা। গরুর মাংস কোনো বাজারে ৭৫০ টাকা, আবার কোথাও ৮০০ টাকা দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে। কিছুদিন আগেও গরুর মাংসের দাম ছিল ৭০০ টাকা কেজি। রোজা আসায় খাসির মাংসের দাম ৫০ টাকা বেড়ে কেজি ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে গতকাল।

দাম বেড়েছে মাছেরও। মাঝারি সাইজের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৪০০ টাকা কেজি। গত সপ্তাহেও একই সাইজের রুই মাছ ৩০০-৩২০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। 

 ইফতার সামগ্রীর দামও চড়া
রোজায় ইফতারের প্রয়োজনে কয়েকটি পণ্যের চাহিদা বেশ বেড়ে যায়—ছোলা, খেসারির ডাল, বেগুন, শসা ও লেবু। গতকাল বাজার ঘুরে দেখা যায়, এসব পণ্যের দামও বাড়তি। গতকাল ছোলা বিক্রি হতে দেখা গেছে ১১০ টাকা কেজি। কয়েক দিন আগেও তা ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এ ছাড়া ১০ দিন আগে ১০০ টাকায় বিক্রি হওয়া খেসারির ডাল ১১০-১২০ টাকায় এবং ৩০ টাকার গোল আলু ৩৫ টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে।

চিনির দাম ১৪৫ টাকা থেকে বেড়ে ১৫০ টাকা হয়েছে। পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজি ১০০-১১০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৯০-৯৫ টাকা। কাঁচা মরিচ ১০০ টাকা থেকে বেড়ে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শসা কেজিপ্রতি ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকায়। বড় লেবুর (হালি) দাম ১০ টাকা বেড়ে ৬০ টাকা হয়েছে। লম্বা বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়, যা কয়েক দিন আগেও ৮০ টাকার কম দামে বিক্রি হয়েছিল। 

প্রতিবছর রোজাকে কেন্দ্র করে বাড়তি দামে নিত্যপণ্য বিক্রি ব্যবসায়ীদের কারসাজি বলে মন্তব্য করেছেন ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নিম্ন-মধ্য আয়ের মানুষেরা। অতি মুনাফা লাভের জন্য ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে এমনটা হচ্ছে। দায়িত্বশীল সরকারি সংস্থাগুলোকে আরও তৎপর হতে হবে।

জানতে চাইলে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘খালি দাম বাড়া দেখলেন, কিছু পণ্যের দাম তো কমেছে। সয়াবিন তেলের দাম কমেছে। আলুর দামও কম রয়েছে। গরুর মাংসসহ অন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সমন্বিত মনিটরিং করছি। স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতি ও বাজার সমিতির প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করছি।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত