অরুণ কর্মকার
গণ-আন্দোলনের অনেক ঘটনাবহুল দীর্ঘ এক মাস পর মাত্র দুই দিন আগে একটি নির্দলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। দেশ পরিচালনায় যখন যে সরকারই আসুক, তাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ থাকে। এই অন্তর্বর্তী সরকারেরও আছে; বরং একটু বেশিই আছে। কারণ রাষ্ট্র ও সমাজে দীর্ঘকাল ধরে জমে ওঠা অনেক জঞ্জাল তাদের সাফ করতে হবে, যাকে রাষ্ট্রের সংস্কারও বলা যায়। এটিই হবে অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। একইভাবে দেশের জন্য তাদের অনেক কিছু অর্জন করারও আছে। জঞ্জালগুলো সাফ না করে সেই অর্জন সম্ভব হবে না।
আমাদের যুগ যুগের অভিজ্ঞতা হলো, প্রচলিত ধারার কোনো রাজনৈতিক দল বা শক্তি এই জঞ্জালগুলো কোনো দিনই কার্যকরভাবে পরিষ্কার কিংবা অপসারণ করে না। তারা যেটুকু করে তা একপেশে, নিজেদের গা বাঁচিয়ে করে। তাতে রাষ্ট্রব্যবস্থার কিংবা দেশের কোনো লাভ হয় না। এ জন্যই অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দেশবাসীর প্রত্যাশা অনেক বেশি। সেই প্রত্যাশা পূরণ করার জন্য সময় দরকার। কাজেই সাধারণভাবে অন্তর্বর্তী সরকার বলতে যেমন ধারণা করা হয় যে স্বল্পকালীন কয়েক মাসের একটি সরকার, যার প্রধান দায়িত্ব একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে বিদায় নেওয়া, এবার তেমন হলে কাজের কাজ কিছুই হবে না। আাবার সেই পুরোনো ধারাই বহাল হবে এবং চালু থাকবে। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যকালটা যত দীর্ঘ হবে, ততই ভালো।
দেশবাসী দেখেছে, শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পরই গণভবনে গণলুটপাট হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জাতীয় সংসদ ভবন এবং আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে। ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ভস্মীভূত করা হয়েছে। এসব জায়গার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব ছিল। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও শুধু ধর্মীয় সংখ্যালঘু হওয়ার কারণে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, উপাসনালয় ও সহায়-সম্পদের ওপরও হামলা এবং লুটপাট চালানো হয়েছে। এগুলো দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।
এই সব ঘটনার মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে একটি বার্তা পৌঁছেছে। সে বার্তাটি হচ্ছে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে নির্বাসনে পাঠানোর সেই পুরোনো ধারা প্রতিষ্ঠার, যা ১৯৭৫-পরবর্তী সময়েও করা হয়েছে। রাষ্ট্রের প্রচ্ছন্ন ছত্রচ্ছায়ায় সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘৃণিত অতীত পুনঃপ্রতিষ্ঠার বার্তা গেছে দেশবাসীর কাছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম দায়িত্বগুলোর একটি হচ্ছে, শুধু কথায় নয়, কাজের মাধ্যমে এসব ঘটনাবলি সম্পর্কে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করা। একই সঙ্গে দেশবাসীর কাছে পৌঁছানো বার্তাটি যে ভুল, তা প্রমাণ করা এবং ভেঙে পড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি এবং লুটপাট ও নাশকতার ঘটনাবলির নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত করে অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করাও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রাথমিক দায়িত্ব। অন্যথায় অন্তর্বর্তী সরকার সম্পর্কে জনগণের মধ্যে আস্থার অভাব দেখা দেবে। যদিও গত দু-তিন দিনে পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সেনাবাহিনীর প্রধান স্পষ্ট করেই বলেছিলেন যে তিনি, অর্থাৎ সেনাবাহিনী দায়িত্ব নিচ্ছেন। সে হিসেবে প্রাথমিক পরিস্থিতি সামলানোর দায়িত্ব তাঁদেরই ছিল। তবে এই সময়ে পুলিশ বাহিনী দায়িত্ব পালনে বিরত থাকায় সেনাবাহিনীর পক্ষে যে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হয়নি, তা অবশ্য সেনাপ্রধান ব্যাখ্যা করে বলেছেন। এরপর অন্তর্বর্তী সরকার যেটি গঠিত হয়েছে, সেখানে সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ নেই। তবে রাষ্ট্রীয় জঞ্জাল সাফ করার যে কথা আগে বলেছি, তা করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদকাল দীর্ঘতর করতে হলে সেনাবাহিনীকে নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করতে হবে।
এরপরই অন্তর্বর্তী সরকারের বড় চ্যালেঞ্জের বিষয় হচ্ছে, অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কারণে তিন বছর ধরে অর্থনীতিতে ভাটার টান চলেছে। সাম্প্রতিক ছাত্র-গণ-আন্দোলন তার ওপর আরও একটি বড় আঘাত হয়ে এসেছে। বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যেমন সংকটজনক পর্যায়ে রয়েছে, তেমনি মূল্যস্ফীতি জনজীবনকে বিপন্ন করে তুলেছে। দীর্ঘদিন ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের উচ্চমূল্য নিম্নবিত্ত ও সীমিত আয়ের মানুষকে দিশেহারা করে দিয়েছে। ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান ক্রমাগতভাবে কমে যাচ্ছে। রপ্তানিতে মন্দা চলছে। রেমিট্যান্স প্রবাহে স্থবিরতা। এর পাশাপাশি রয়েছে বিদেশে অর্থ পাচার, বিপুল অঙ্কের খেলাপি ঋণসহ নানা অনিয়ম অধিকাংশ ব্যাংককে দেউলিয়ার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। এই অবস্থা থেকে অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার নিঃসন্দেহে অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ। কিন্তু এ কাজটি এড়িয়ে যাওয়া কিংবা শর্টকাট কোনো পথে এর সমাধান পাওয়া সম্ভব হবে নয়। এই কাজের জন্যও অন্তর্বর্তী সরকারের অনেক সময় প্রয়োজন হবে।
অর্থনীতি পুনরুজ্জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত আরও যে বড় একটি জঞ্জাল সাফ করায় অন্তর্বর্তী সরকারকে হাত দিতে হবে তা হলো, দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং ঘটে যাওয়া দুর্নীতির বিচার। যার কয়েকটির প্রক্রিয়া সদ্য সাবেক সরকারের সময় শুরু হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদকাল যতই দীর্ঘায়িত হোক না কেন, যেহেতু এটি কোনো নির্বাচিত সরকার নয়, সেহেতু শেষ পর্যন্ত একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান ও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের বাধ্যবাধকতা তাদের রয়েছে। শেখ হাসিনার সরকারের অন্যতম প্রধান দুর্বলতা ছিল বিগত তিনটি নির্বাচনেরই জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা না পাওয়া। কাজেই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো, সেই নির্বাচনে দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মতো একটি রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি। এ জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো দেশে গণতান্ত্রিক বিধিবিধান ও মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করা, যা বিগত এক-দেড় দশকে একেবারে ভঙ্গুর অবস্থায় পৌঁছে গেছে।
সুশাসনের অভাব, গণতন্ত্রহীনতা ও দুর্নীতি দেশে যে সামাজিক বৈষম্য সৃষ্টি করেছে; ধর্মাধর্মের বিভেদের কারণে যে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা সৃষ্টি হয়েছে, তার নিরসনও একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য জরুরি। এসব কাজ রাজনৈতিক সরকার করার মতো পরিবেশ দেশে কবে তৈরি হবে, সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। কাজেই এর যতটা করা সম্ভব অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেই করতে হবে। সে জন্য অবশ্যই তাদের সময় প্রয়োজন।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
গণ-আন্দোলনের অনেক ঘটনাবহুল দীর্ঘ এক মাস পর মাত্র দুই দিন আগে একটি নির্দলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। দেশ পরিচালনায় যখন যে সরকারই আসুক, তাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ থাকে। এই অন্তর্বর্তী সরকারেরও আছে; বরং একটু বেশিই আছে। কারণ রাষ্ট্র ও সমাজে দীর্ঘকাল ধরে জমে ওঠা অনেক জঞ্জাল তাদের সাফ করতে হবে, যাকে রাষ্ট্রের সংস্কারও বলা যায়। এটিই হবে অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। একইভাবে দেশের জন্য তাদের অনেক কিছু অর্জন করারও আছে। জঞ্জালগুলো সাফ না করে সেই অর্জন সম্ভব হবে না।
আমাদের যুগ যুগের অভিজ্ঞতা হলো, প্রচলিত ধারার কোনো রাজনৈতিক দল বা শক্তি এই জঞ্জালগুলো কোনো দিনই কার্যকরভাবে পরিষ্কার কিংবা অপসারণ করে না। তারা যেটুকু করে তা একপেশে, নিজেদের গা বাঁচিয়ে করে। তাতে রাষ্ট্রব্যবস্থার কিংবা দেশের কোনো লাভ হয় না। এ জন্যই অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দেশবাসীর প্রত্যাশা অনেক বেশি। সেই প্রত্যাশা পূরণ করার জন্য সময় দরকার। কাজেই সাধারণভাবে অন্তর্বর্তী সরকার বলতে যেমন ধারণা করা হয় যে স্বল্পকালীন কয়েক মাসের একটি সরকার, যার প্রধান দায়িত্ব একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে বিদায় নেওয়া, এবার তেমন হলে কাজের কাজ কিছুই হবে না। আাবার সেই পুরোনো ধারাই বহাল হবে এবং চালু থাকবে। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যকালটা যত দীর্ঘ হবে, ততই ভালো।
দেশবাসী দেখেছে, শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পরই গণভবনে গণলুটপাট হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জাতীয় সংসদ ভবন এবং আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে। ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ভস্মীভূত করা হয়েছে। এসব জায়গার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব ছিল। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও শুধু ধর্মীয় সংখ্যালঘু হওয়ার কারণে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, উপাসনালয় ও সহায়-সম্পদের ওপরও হামলা এবং লুটপাট চালানো হয়েছে। এগুলো দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।
এই সব ঘটনার মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে একটি বার্তা পৌঁছেছে। সে বার্তাটি হচ্ছে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে নির্বাসনে পাঠানোর সেই পুরোনো ধারা প্রতিষ্ঠার, যা ১৯৭৫-পরবর্তী সময়েও করা হয়েছে। রাষ্ট্রের প্রচ্ছন্ন ছত্রচ্ছায়ায় সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘৃণিত অতীত পুনঃপ্রতিষ্ঠার বার্তা গেছে দেশবাসীর কাছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম দায়িত্বগুলোর একটি হচ্ছে, শুধু কথায় নয়, কাজের মাধ্যমে এসব ঘটনাবলি সম্পর্কে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করা। একই সঙ্গে দেশবাসীর কাছে পৌঁছানো বার্তাটি যে ভুল, তা প্রমাণ করা এবং ভেঙে পড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি এবং লুটপাট ও নাশকতার ঘটনাবলির নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত করে অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করাও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রাথমিক দায়িত্ব। অন্যথায় অন্তর্বর্তী সরকার সম্পর্কে জনগণের মধ্যে আস্থার অভাব দেখা দেবে। যদিও গত দু-তিন দিনে পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সেনাবাহিনীর প্রধান স্পষ্ট করেই বলেছিলেন যে তিনি, অর্থাৎ সেনাবাহিনী দায়িত্ব নিচ্ছেন। সে হিসেবে প্রাথমিক পরিস্থিতি সামলানোর দায়িত্ব তাঁদেরই ছিল। তবে এই সময়ে পুলিশ বাহিনী দায়িত্ব পালনে বিরত থাকায় সেনাবাহিনীর পক্ষে যে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হয়নি, তা অবশ্য সেনাপ্রধান ব্যাখ্যা করে বলেছেন। এরপর অন্তর্বর্তী সরকার যেটি গঠিত হয়েছে, সেখানে সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ নেই। তবে রাষ্ট্রীয় জঞ্জাল সাফ করার যে কথা আগে বলেছি, তা করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদকাল দীর্ঘতর করতে হলে সেনাবাহিনীকে নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করতে হবে।
এরপরই অন্তর্বর্তী সরকারের বড় চ্যালেঞ্জের বিষয় হচ্ছে, অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কারণে তিন বছর ধরে অর্থনীতিতে ভাটার টান চলেছে। সাম্প্রতিক ছাত্র-গণ-আন্দোলন তার ওপর আরও একটি বড় আঘাত হয়ে এসেছে। বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যেমন সংকটজনক পর্যায়ে রয়েছে, তেমনি মূল্যস্ফীতি জনজীবনকে বিপন্ন করে তুলেছে। দীর্ঘদিন ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের উচ্চমূল্য নিম্নবিত্ত ও সীমিত আয়ের মানুষকে দিশেহারা করে দিয়েছে। ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান ক্রমাগতভাবে কমে যাচ্ছে। রপ্তানিতে মন্দা চলছে। রেমিট্যান্স প্রবাহে স্থবিরতা। এর পাশাপাশি রয়েছে বিদেশে অর্থ পাচার, বিপুল অঙ্কের খেলাপি ঋণসহ নানা অনিয়ম অধিকাংশ ব্যাংককে দেউলিয়ার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। এই অবস্থা থেকে অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার নিঃসন্দেহে অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ। কিন্তু এ কাজটি এড়িয়ে যাওয়া কিংবা শর্টকাট কোনো পথে এর সমাধান পাওয়া সম্ভব হবে নয়। এই কাজের জন্যও অন্তর্বর্তী সরকারের অনেক সময় প্রয়োজন হবে।
অর্থনীতি পুনরুজ্জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত আরও যে বড় একটি জঞ্জাল সাফ করায় অন্তর্বর্তী সরকারকে হাত দিতে হবে তা হলো, দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং ঘটে যাওয়া দুর্নীতির বিচার। যার কয়েকটির প্রক্রিয়া সদ্য সাবেক সরকারের সময় শুরু হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদকাল যতই দীর্ঘায়িত হোক না কেন, যেহেতু এটি কোনো নির্বাচিত সরকার নয়, সেহেতু শেষ পর্যন্ত একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান ও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের বাধ্যবাধকতা তাদের রয়েছে। শেখ হাসিনার সরকারের অন্যতম প্রধান দুর্বলতা ছিল বিগত তিনটি নির্বাচনেরই জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা না পাওয়া। কাজেই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো, সেই নির্বাচনে দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মতো একটি রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি। এ জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো দেশে গণতান্ত্রিক বিধিবিধান ও মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করা, যা বিগত এক-দেড় দশকে একেবারে ভঙ্গুর অবস্থায় পৌঁছে গেছে।
সুশাসনের অভাব, গণতন্ত্রহীনতা ও দুর্নীতি দেশে যে সামাজিক বৈষম্য সৃষ্টি করেছে; ধর্মাধর্মের বিভেদের কারণে যে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা সৃষ্টি হয়েছে, তার নিরসনও একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য জরুরি। এসব কাজ রাজনৈতিক সরকার করার মতো পরিবেশ দেশে কবে তৈরি হবে, সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। কাজেই এর যতটা করা সম্ভব অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেই করতে হবে। সে জন্য অবশ্যই তাদের সময় প্রয়োজন।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
৪ দিন আগেগাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪দেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২০ নভেম্বর ২০২৪