রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার ৪ নম্বর কাপ্তাই ইউনিয়নের দুর্গম হরিণছড়া, ভাইবোনছড়া, গাছকাটাছড়া, পাংখোয়া পাড়া। এসব ইউনিয়নের বিভিন্ন পাড়ায় চাকমা, মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা ও পাংখোয়া সম্প্রদায়ের বসবাস। কৃষি ও জুমচাষের ওপর নির্ভরশীল এসব এলাকার জনগোষ্ঠীরা। উপজেলা সদর থেকে সড়কপথে ১৫ কিলোমিটার আর নৌপথে কাপ্তাই লেকের ১৫-২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এসব এলাকায় পৌঁছাতে হয়।

অতিদরিদ্রের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) প্রকল্পের মাধ্যমে এখন এসব এলাকায় বদলে যাচ্ছে গ্রামীণ অবকাঠামো। বিশেষ করে যেখানে গ্রামীণ সড়কগুলো চলাচলের অনুপযোগী ছিল, সেখানে ইজিপিপি প্রকল্পের মাধ্যমে সড়কগুলো চলাচলের উপযুক্ত করা হচ্ছে। সড়কের আশপাশে জঙ্গল কেটে রাস্তা প্রশস্ত করা হচ্ছে।

চলতি সপ্তাহে এসব এলাকায় প্রকল্প পরিদর্শনে যান রাঙামাটি জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. রোকনজ্জামান। এ সময় কাপ্তাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান মণ্ডল, ওই ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাগ অফিসার উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নাজমুল হোসেন, কাপ্তাই প্রেসক্লাব সভাপতি কবির হোসেনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, কারবারি এবং সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আব্দুল হান্নান জানান, কাপ্তাই উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ইজিপিপির আওতায় ১৪টি প্রকল্পের ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচি ৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে কাপ্তাই উপজেলায় এ প্রকল্পের মোট বরাদ্দ পরিমাণ ৫৮ লাখ ৫৬ হাজার টাকা।

এই ৪ নম্বর কাপ্তাই ইউনিয়নের দুর্গম ৩টি ওয়ার্ডে প্রথমবারের মতো এ প্রকল্পের অধীন গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নকাজ চলছে। তিনি আরও জানান, এ প্রকল্পের আওতায় এসব এলাকায় আগে দৈনিক মজুরি ২০০ টাকা হওয়ায় জনবলসংকট দেখা দিত। বর্তমানে দৈনিক মজুরি জনপ্রতি ৪০০ টাকা হওয়ায় এখন শ্রমিকের সংকট আর হচ্ছে না। তাঁদের মধ্যে কাজের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে।

উপজেলা পিআইও দপ্তর থেকে জানা গেছে, কাপ্তাই উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে চলমান এ প্রকল্পের উপকারভোগীর সংখ্যা ৩৬৬ জন। তার মধ্যে ২ নম্বর রাইখালী ইউনিয়নের দুর্গম নারাছড়া, ডংনালাসহ ১৪টি প্রকল্পের মাধ্যমে এই কর্মসৃজন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

রাঙামাটি জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রোকনজ্জামান জানান, এসব প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ সড়কের চিত্র পাল্টে যাচ্ছে। দৈনিক মজুরি ৪০০ টাকা থেকে ৫০ টাকা হারে জামানত রেখে ৩৫০ টাকা জিটুপি পদ্ধতিতে (সরকার টু পারসন) বিকাশের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট শ্রমিককে পরিশোধ করা হচ্ছে। এখানে এ প্রকল্পের মাধ্যমে নগদ টাকা লেনদেন বা কোনো অনিয়মের সুযোগ নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।

দুর্গম পাহাড়ে ওই কর্মসৃজনের আওতায় এবারেই প্রথম কোনো কাজ পেয়ে খুশি হতদরিদ্র। শ্রমিক রতিকান্ত, শ্যামল, উচিমং জানায়, পাহাড়ি মেঠো পথে খুব সুন্দরভাবে এই প্রকল্পের অধীন কাজ করছেন শ্রমিকেরা। বিকাশের মাধ্যমে এখানকার শ্রমিকেরা পারিশ্রমিক পাচ্ছে।

ভাইবোনছড়া, গাছকাটাছড়া, পাংখোয়া পাড়া প্রকল্পের সভাপতি ইউপি সদস্য সুজন বিকাশ চাকমা, অংসাচিং মারমা ও নবীন কুমার তঞ্চঙ্গ্যা জানান, এ এলাকায় বিগত বছরে এ ধরনের কাজ পাওয়া যায়নি। বর্তমানে এ প্রকল্পের আওতায় হতদরিদ্র কাজ পেয়ে খুব খুশ।

৪ নম্বর কাপ্তাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আবদুল লতিফ জানান, অতিদরিদ্রদের জন্য ৪০ দিনের কর্মসূচিতে আগে মজুরি কম হওয়ায় দুর্গম ওয়ার্ডগুলোতে শ্রমিক খুঁজে পাওয়া যেত না। বর্তমানে মজুরি ৪০০ টাকা করায় শ্রমিকসংকট হচ্ছে না। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে দুর্গম এ এলাকায় অবকাঠামোগত উন্নয়নের চিত্র দিন দিন পাল্টে যাচ্ছে।