কোরিয়ান ভাষায় ইসলামের ভাষ্যকার

ইজাজুল হক
প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮: ৪১

ড. চৈ ইয়াং কিল-হামেদ কোরিয়ান ইসলামি পণ্ডিত, অধ্যাপক ও গবেষক। কোরিয়ান ভাষায় পবিত্র কোরআন, বুখারি শরিফসহ ইসলামের বেশ কিছু মৌলিক বই অনুবাদ করে প্রশংসিত হয়েছেন। ২০২৩ সালে পেয়েছেন মুসলিম বিশ্বের নোবেলখ্যাত ‘বাদশাহ ফয়সাল আন্তর্জাতিক পুরস্কার’। তাঁর কথা লিখেছেন ইজাজুল হক

চৈ ইয়াং কিল-হামেদের জন্ম দক্ষিণ কোরিয়ায়, আনুমানিক ১৯৫০ সালে।

সিউলের হানকুক ইউনিভার্সিটি অব ফরেন স্টাডিজ থেকে ১৯৭৫ সালে আরবি ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক এবং পরের বছর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামের মৌলিক বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নেন। ১৯৮৬ সালে সুদানের উমদুর্মান ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোরিয়ায় ইসলামের দাওয়া বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।

অধ্যাপনা, গবেষণা ও লেখালেখিই ড. চৈ ইয়াংয়ের পেশা। সিউলের মিয়ংজি বিশ্ববিদ্যালয় ও হানকুক ইউনিভার্সিটি অব ফরেন স্টাডিজে আরবি ভাষা ও ইসলামিক স্টাডিজ পড়ান।

আরবি ভাষাভাষী না হয়েও আরবি ভাষা ও ইসলামের সেবায় তিনি অনুসরণীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন। পাণ্ডিত্য, উদার গবেষণা, মধ্যপন্থী চিন্তাধারা দিয়ে তিনি কোরিয়াসহ মুসলিম বিশ্বের বড় বড় ইসলামি পণ্ডিতের দৃষ্টি কাড়তে পেরেছেন।

মৌলিক ও অনুবাদ মিলিয়ে তাঁর রচনাসংখ্যা ৯০, তাতে ৩০টিই রয়েছে ইসলামির বিভিন্ন মৌলিক বইয়ের কোরিয়ান অনুবাদ। কোরিয়ান ভাষায় কোরআনের অনুবাদ নিঃসন্দেহে তাঁর সেরা কাজ। দীর্ঘ সাত বছরের কঠোর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে তিনি কাজটি সম্পন্ন করেন। এই অনুবাদ সৌদি আরবের বাদশাহ ফাহাদ পবিত্র কোরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স থেকে ছাপা হয়েছে।

এ ছাড়া তাঁর অনুবাদের মধ্যে রয়েছে—বুখারি শরিফ, রিয়াদুস সালিহিন, কোরআনের শব্দ অভিধান, আর-রাহিকুল মাখতুম ইত্যাদি। এর বাইরে আরবি ভাষা শেখার কয়েকটি বই লিখেছেন, যা কোরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠ্য। এর বাইরে রয়েছে ইসলামবিষয়ক তাঁর মৌলিক রচনাবলি।

বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছেন ড. চৈ। ওয়ার্ল্ড মুসলিম লীগের অন্যতম সদস্য তিনি। কোরিয়ান মুসলিম ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এবং দ্য কোরিয়ান ইসলামিক হিবা ফান্ডের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও উপসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন ইসলামি দাওয়াত ও মসজিদভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছেন।

ড. চৈ বিশ্বব্যাপী সাড়াজাগানো সিরাত বই আর-রাহিকুল মাখতুমের কোরীয় অনুবাদের জন্য তিনি ২০০৮ সালে অনুবাদে বাদশাহ আবদুল আজিজ আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন। ২০১৩ সালে পেয়েছেন কোরিয়া সরকারের রাষ্ট্রপতি পদক। ২০১৪ সালে শিক্ষা ও অধ্যাপনায় অবদানের জন্য পেয়েছেন কোরিয়া সরকারের বিশেষ পুরস্কার। ২০২৩ সালে এসেছে তাঁর সবচেয়ে বড় অর্জন ইসলামের সেবায় অবদানের জন্য মুসলিম বিশ্বের নোবেলখ্যাত বাদশাহ ফয়সাল আন্তর্জাতিক পুরস্কার।

ড. চৈকে বলা হচ্ছে কোরীয় মুসলিমদের জন্য আশীর্বাদ। কোরিয়ান ভাষায় তাঁর গবেষণা, লেখালেখি ও দাওয়াত এই অঞ্চলের মুসলমানদের মধ্যে নতুন প্রেরণার সৃষ্টি করেছে। কোরিয়ায় মুসলিমদের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে। কোরিয়ান মুসলিম ফেডারেশনের মতে, দেশটিতে আনুমানিক ২ লাখ মুসলমান রয়েছে, যা মোট জনসংখ্যার শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ।

তাঁদের মধ্যে তুর্কি, পাকিস্তানি, উজবেক ও কোরিয়ান নওমুসলিমরা রয়েছেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত