জয়ন্তী রায়
বাঙালি হিন্দুর প্রধান এবং সবচেয়ে বর্ণাঢ্য ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আনন্দময়ী দুর্গতিনাশিনী মা দুর্গার আগমনবার্তায় চরাচর আনন্দমুখর হয়ে ওঠে। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটছে না।
শারদীয় দুর্গোৎসবকে অকালবোধন বলা হয়। অর্থাৎ, অকালে দেবী দুর্গাকে জাগানো হয়। হিন্দু শাস্ত্রমতে সমস্ত বছরকে উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়ন—এ দুটি কালে ভাগ করা হয়। মাঘ থেকে আষাঢ় পর্যন্ত উত্তরায়ণ এবং শ্রাবণ থেকে পৌষ মাস পর্যন্ত সময়কে দক্ষিণায়ন কাল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। উত্তরায়ণ কালে দেবদেবীদের জাগ্রত কাল এবং দক্ষিণায়ন নিদ্রাকাল। রামচন্দ্র যুদ্ধের প্রয়োজনে অকালে দেবীকে বোধন, অর্থাৎ স্তব-স্তুতির মাধ্যমে জাগরণ ঘটিয়ে দুর্গাপূজা করেছিলেন। এ কারণে শারদীয় দুর্গাপূজাকে অকালবোধন বলা হয়।
আমরা দুর্গাপূজা বললেও আসলে এই পূজা মা দুর্গার একার নয়। সঙ্গে আরও অনেকেই আছেন। মা দুর্গা আসেন সবাইকে নিয়েই—ভালো-মন্দ, শত্রু-মিত্র, গাছ-প্রাণী। চালচিত্রে শিব আছেন, তো পায়ের নিচে অসুর। কলাগাছ বউ তো প্যাঁচা, হাঁস, ইঁদুর, ময়ূর বাহন।
দেবদেবী মানুষের কল্পনামাত্র। নিজের কল্যাণ কামনায় এবং অপশক্তি বধে মানুষ যুগে যুগে নানা দেবদেবীর কল্পনা করেছে। এই কল্পনার রূপটিই ধরা পড়ে দুর্গাপরিবারের চিত্র দেখলে। দুর্গাপরিবারের চিত্রের দিকে তাকালে দেখা যায়, মা দুর্গা মহিষাসুরের সঙ্গে ধুন্ধুমার লড়াই করছেন, অথচ তাঁর ছেলেমেয়েরা নিতান্ত উদাসীনভাবে পাশে দাঁড়িয়ে। সুদর্শন কার্তিক তাঁর অস্ত্র তোলেন না, গণেশের মুখে তো একটা হাসির আভাস, লক্ষ্মী নিজের ঝাঁপিটা আরও শক্ত করে চেপে ধরেন, সরস্বতীও বীণা হাতে দিব্যি দাঁড়িয়ে থাকেন।
আশ্বিন-কার্তিকে দুর্গাপূজার ব্যাপারটা একেবারেই এই অঞ্চলের কৃষির সঙ্গে জড়িত। এখানে আমন ধান আসার অনেক আগে থেকে আউশ ধানের প্রচলন ছিল, সেই ধান পাকার সময়েই এই পূজা। মহিষের ব্যাপারটা সম্পর্কে প্রচলিত মত হলো, এই প্রাণী নিচু জমিতে বাস করত। এই অঞ্চলে চাষের প্রসারের জন্য কৃষিজীবী মানুষ ক্রমশই মোষ তাড়িয়ে, মেরে জমি দখল করে। মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গার আরাধনা হয়তো এই মহিষ নির্মূল অভিযানকে একটা ধর্মীয় বৈধতা দেওয়ার কৌশল ছিল।
পৌরাণিক কাহিনি থেকে দুর্গাপূজার শুরু। কিন্তু ক্রমে দুর্গা যেন বাঙালির ঘরের মেয়ে হয়ে উঠেছে। সাধারণ মেয়ে, তবে দাপুটে। এই দাপুটে মেয়ের কত নাম! এক অঙ্গে বহুরূপ। এক রূপে বহু নামে চিহ্নিত আমাদের মা দুর্গা। শরৎ ঋতুতে আবাহন হয় বলে দেবীর আরেক নাম শারদীয়া। এ ছাড়া মহিষাসুরমর্দিনী, কাত্যায়নী, শিবানী, ভবানী, আদ্যাশক্তি, চণ্ডী, শতাক্ষী, দুর্গা, উমা, গৌরী, সতী, রুদ্রাণী, কল্যাণী, অম্বিকা, অদ্রিজা—এমন কত নাম আছে মায়ের! ঠিক যেমন বাড়ির আদরের মেয়েটির বাবার দেওয়া একটা নাম, মায়ের দেওয়া একটা নাম, স্কুলের জন্য একটা ভালো নাম। মা দুর্গারও তেমনি অনেক নাম।
মাকে যেমন একা হাতে অনেক কাজ করতে হয়, ঠিক তেমনি মা দুর্গাকে দশ হাতে যুদ্ধ করতে হয়েছিল মহিষাসুরবধের সময়। সব দেবতা অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছিলেন মা দুর্গাকে। অনেকগুলো দৈত্য, দানব, অসুরকে তিনি মেরেছিলেন। আমরা শুধু মহিষাসুরের নামটাই জানি। রক্তবীজ, চণ্ড, মুণ্ড, শুম্ভ, নিশুম্ভ, ধূম্রলোচন, মধু, কৈটভ আর মহিষাসুর—মোট ৯ জন অসুরকে মা দুর্গা বধ করেছিলেন।
এই একেকজন দুষ্টু অসুর আসলে সমাজের খারাপ লোকেদের প্রতীক। ধরে নেওয়া যায়, অসুরের একজন চোর, একজন ডাকাত, একজন মিথ্যাবাদী, একজন হিংসুটে, একজন মেয়েদের ওপর অত্যাচার করে, একজন অসৎ, একজন খুনি, একজন প্রতারক আর একজন নিষ্ঠুর লোক। এরা সবাই দুষ্টু আর সমাজের জন্য ক্ষতিকারক।
আমরা যেমন ঘর-সংসার, স্বামী-সন্তান, আত্মীয়-পরিজন ছাড়া কোনো কিছু চিন্তা করতে পারি না; দুর্গার ক্ষেত্রেও তা-ই দেখতে চেয়েছি। লৌকিক দুর্গা আমাদের মাঝে দেখা দেন সপরিবারে। বাঙালির আপন মনের মাধুরী মেশানো দুর্গা তাঁর সন্তান কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতীকে নিয়ে কৈলাস থেকে হিমালয়ে বাপের বাড়ি আসেন। বাঙালির ঘরের মেয়ের শ্বশুরবাড়ি থেকে বাপের বাড়ি আসার মতো আনন্দ। যেমন পরিবারে সবাই আপন, তেমনি জগজ্জননীর বিশ্বসংসারে আমরা শিক্ষিত, অশিক্ষিত, খেটে খাওয়া মানুষ, ব্যবসায়ী বৈশ্য, শাসনকর্তা সবাই বিশ্বজননীর সন্তান—সরস্বতী, কার্তিক, লক্ষ্মী ও গণেশের মতো সবাই আপন। সন্তানদের কল্যাণের জন্য মা দুর্গা সর্বদাই উদ্গ্রীব। তাই দশ দিক থেকে সন্তানদের রক্ষা করার জন্য তিনি দশ হাতে দশ অস্ত্র ধরেছেন।
দুর্গাপূজা করতে অনেক আড়ম্বর-আয়োজন করতে হয়। চলেও চার-পাঁচ দিন ধরে। বিপুল ব্যয়। আর্থিক সচ্ছলতা না থাকলে এই পূজা করা সম্ভব নয়। যাদের ঘরে চাল বাড়ন্ত, চার-পাঁচ দিনের পূজা তাদের চলবে কেন? অনেক দেবদেবীর একত্র অধিষ্ঠান বলে এখানে পূজার সংখ্যাও বেশি। মহাদেব-লক্ষ্মী-সরস্বতী-কার্তিক-গণেশের পাশে পূজা পায় কলাবউও। এমনকি মহিষাসুরকেও পূজা দিতে হয়। ফলে এই মহা আয়োজন করা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। ব্রিটিশ আমলে প্রতি গ্রামের দু-তিন ঘর সম্পন্ন পরিবার এই পূজা করত। দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে আর্থিকভাবে অসচ্ছল মানুষও আনন্দ পায় বটে, তবে সেটা প্রসাদ পাওয়ার আনন্দ, বাদ্য-বাজনা শোনার আনন্দ, দূর থেকে দেখার আনন্দ।
শারদীয় উৎসব ঘিরে ব্যবসা-বাণিজ্যেরও প্রসার ঘটে। কামার-কুমারেরা এটা-ওটা বানায় বিক্রি করে কিছু লাভের আশায়। ফুল-ফল, ঢাক, বাদ্য-বাজনা, কাপড় বিতরণ, অলংকরণ, মুদ্রণশিল্প, ভোগ্যপণ্য যেমন—চাল, ডাল, সবজি ক্রয়-বিক্রয়, কুমার, মৃতশিল্পী, ডেকোরেটর, খেলনা, মিষ্টি—সবকিছুর পেছনেই আর্থিক লেনদেন। আবার সামাজিক-সাংস্কৃতিক বলয়ে এই পূজার গুরুত্ব অপরিসীম। যেমন—শিল্পীদের ভক্তিমূলক গান, লক্ষ্মীবিলাস, নৌকাবিলাস, নিমাই সন্ন্যাস, যার সঙ্গেও তাদের আয়-উপার্জন জড়িত থাকে। প্রতি বছরই এই সময়ের জন্য ব্যবসায়ীরা অপেক্ষায় থাকেন, যা দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক উন্নয়নের নিদর্শন। পূজা উপলক্ষে গ্রামীণ মেলা বসে পূজামণ্ডপ ঘিরে।
শরতের শুভ্র আকাশ, কাশফুলের হাওয়ার নাচন আর আগমনী ঢাক-শাঁখের আওয়াজ যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় গ্রাম-নগর, ধনী-গরিব, ছোট-বড়নির্বিশেষে শরতের এই মহামিলন উৎসবে।
জয়ন্তী রায়, মুক্তিযোদ্ধা ও সমাজকর্মী
বাঙালি হিন্দুর প্রধান এবং সবচেয়ে বর্ণাঢ্য ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আনন্দময়ী দুর্গতিনাশিনী মা দুর্গার আগমনবার্তায় চরাচর আনন্দমুখর হয়ে ওঠে। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটছে না।
শারদীয় দুর্গোৎসবকে অকালবোধন বলা হয়। অর্থাৎ, অকালে দেবী দুর্গাকে জাগানো হয়। হিন্দু শাস্ত্রমতে সমস্ত বছরকে উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়ন—এ দুটি কালে ভাগ করা হয়। মাঘ থেকে আষাঢ় পর্যন্ত উত্তরায়ণ এবং শ্রাবণ থেকে পৌষ মাস পর্যন্ত সময়কে দক্ষিণায়ন কাল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। উত্তরায়ণ কালে দেবদেবীদের জাগ্রত কাল এবং দক্ষিণায়ন নিদ্রাকাল। রামচন্দ্র যুদ্ধের প্রয়োজনে অকালে দেবীকে বোধন, অর্থাৎ স্তব-স্তুতির মাধ্যমে জাগরণ ঘটিয়ে দুর্গাপূজা করেছিলেন। এ কারণে শারদীয় দুর্গাপূজাকে অকালবোধন বলা হয়।
আমরা দুর্গাপূজা বললেও আসলে এই পূজা মা দুর্গার একার নয়। সঙ্গে আরও অনেকেই আছেন। মা দুর্গা আসেন সবাইকে নিয়েই—ভালো-মন্দ, শত্রু-মিত্র, গাছ-প্রাণী। চালচিত্রে শিব আছেন, তো পায়ের নিচে অসুর। কলাগাছ বউ তো প্যাঁচা, হাঁস, ইঁদুর, ময়ূর বাহন।
দেবদেবী মানুষের কল্পনামাত্র। নিজের কল্যাণ কামনায় এবং অপশক্তি বধে মানুষ যুগে যুগে নানা দেবদেবীর কল্পনা করেছে। এই কল্পনার রূপটিই ধরা পড়ে দুর্গাপরিবারের চিত্র দেখলে। দুর্গাপরিবারের চিত্রের দিকে তাকালে দেখা যায়, মা দুর্গা মহিষাসুরের সঙ্গে ধুন্ধুমার লড়াই করছেন, অথচ তাঁর ছেলেমেয়েরা নিতান্ত উদাসীনভাবে পাশে দাঁড়িয়ে। সুদর্শন কার্তিক তাঁর অস্ত্র তোলেন না, গণেশের মুখে তো একটা হাসির আভাস, লক্ষ্মী নিজের ঝাঁপিটা আরও শক্ত করে চেপে ধরেন, সরস্বতীও বীণা হাতে দিব্যি দাঁড়িয়ে থাকেন।
আশ্বিন-কার্তিকে দুর্গাপূজার ব্যাপারটা একেবারেই এই অঞ্চলের কৃষির সঙ্গে জড়িত। এখানে আমন ধান আসার অনেক আগে থেকে আউশ ধানের প্রচলন ছিল, সেই ধান পাকার সময়েই এই পূজা। মহিষের ব্যাপারটা সম্পর্কে প্রচলিত মত হলো, এই প্রাণী নিচু জমিতে বাস করত। এই অঞ্চলে চাষের প্রসারের জন্য কৃষিজীবী মানুষ ক্রমশই মোষ তাড়িয়ে, মেরে জমি দখল করে। মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গার আরাধনা হয়তো এই মহিষ নির্মূল অভিযানকে একটা ধর্মীয় বৈধতা দেওয়ার কৌশল ছিল।
পৌরাণিক কাহিনি থেকে দুর্গাপূজার শুরু। কিন্তু ক্রমে দুর্গা যেন বাঙালির ঘরের মেয়ে হয়ে উঠেছে। সাধারণ মেয়ে, তবে দাপুটে। এই দাপুটে মেয়ের কত নাম! এক অঙ্গে বহুরূপ। এক রূপে বহু নামে চিহ্নিত আমাদের মা দুর্গা। শরৎ ঋতুতে আবাহন হয় বলে দেবীর আরেক নাম শারদীয়া। এ ছাড়া মহিষাসুরমর্দিনী, কাত্যায়নী, শিবানী, ভবানী, আদ্যাশক্তি, চণ্ডী, শতাক্ষী, দুর্গা, উমা, গৌরী, সতী, রুদ্রাণী, কল্যাণী, অম্বিকা, অদ্রিজা—এমন কত নাম আছে মায়ের! ঠিক যেমন বাড়ির আদরের মেয়েটির বাবার দেওয়া একটা নাম, মায়ের দেওয়া একটা নাম, স্কুলের জন্য একটা ভালো নাম। মা দুর্গারও তেমনি অনেক নাম।
মাকে যেমন একা হাতে অনেক কাজ করতে হয়, ঠিক তেমনি মা দুর্গাকে দশ হাতে যুদ্ধ করতে হয়েছিল মহিষাসুরবধের সময়। সব দেবতা অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছিলেন মা দুর্গাকে। অনেকগুলো দৈত্য, দানব, অসুরকে তিনি মেরেছিলেন। আমরা শুধু মহিষাসুরের নামটাই জানি। রক্তবীজ, চণ্ড, মুণ্ড, শুম্ভ, নিশুম্ভ, ধূম্রলোচন, মধু, কৈটভ আর মহিষাসুর—মোট ৯ জন অসুরকে মা দুর্গা বধ করেছিলেন।
এই একেকজন দুষ্টু অসুর আসলে সমাজের খারাপ লোকেদের প্রতীক। ধরে নেওয়া যায়, অসুরের একজন চোর, একজন ডাকাত, একজন মিথ্যাবাদী, একজন হিংসুটে, একজন মেয়েদের ওপর অত্যাচার করে, একজন অসৎ, একজন খুনি, একজন প্রতারক আর একজন নিষ্ঠুর লোক। এরা সবাই দুষ্টু আর সমাজের জন্য ক্ষতিকারক।
আমরা যেমন ঘর-সংসার, স্বামী-সন্তান, আত্মীয়-পরিজন ছাড়া কোনো কিছু চিন্তা করতে পারি না; দুর্গার ক্ষেত্রেও তা-ই দেখতে চেয়েছি। লৌকিক দুর্গা আমাদের মাঝে দেখা দেন সপরিবারে। বাঙালির আপন মনের মাধুরী মেশানো দুর্গা তাঁর সন্তান কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতীকে নিয়ে কৈলাস থেকে হিমালয়ে বাপের বাড়ি আসেন। বাঙালির ঘরের মেয়ের শ্বশুরবাড়ি থেকে বাপের বাড়ি আসার মতো আনন্দ। যেমন পরিবারে সবাই আপন, তেমনি জগজ্জননীর বিশ্বসংসারে আমরা শিক্ষিত, অশিক্ষিত, খেটে খাওয়া মানুষ, ব্যবসায়ী বৈশ্য, শাসনকর্তা সবাই বিশ্বজননীর সন্তান—সরস্বতী, কার্তিক, লক্ষ্মী ও গণেশের মতো সবাই আপন। সন্তানদের কল্যাণের জন্য মা দুর্গা সর্বদাই উদ্গ্রীব। তাই দশ দিক থেকে সন্তানদের রক্ষা করার জন্য তিনি দশ হাতে দশ অস্ত্র ধরেছেন।
দুর্গাপূজা করতে অনেক আড়ম্বর-আয়োজন করতে হয়। চলেও চার-পাঁচ দিন ধরে। বিপুল ব্যয়। আর্থিক সচ্ছলতা না থাকলে এই পূজা করা সম্ভব নয়। যাদের ঘরে চাল বাড়ন্ত, চার-পাঁচ দিনের পূজা তাদের চলবে কেন? অনেক দেবদেবীর একত্র অধিষ্ঠান বলে এখানে পূজার সংখ্যাও বেশি। মহাদেব-লক্ষ্মী-সরস্বতী-কার্তিক-গণেশের পাশে পূজা পায় কলাবউও। এমনকি মহিষাসুরকেও পূজা দিতে হয়। ফলে এই মহা আয়োজন করা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। ব্রিটিশ আমলে প্রতি গ্রামের দু-তিন ঘর সম্পন্ন পরিবার এই পূজা করত। দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে আর্থিকভাবে অসচ্ছল মানুষও আনন্দ পায় বটে, তবে সেটা প্রসাদ পাওয়ার আনন্দ, বাদ্য-বাজনা শোনার আনন্দ, দূর থেকে দেখার আনন্দ।
শারদীয় উৎসব ঘিরে ব্যবসা-বাণিজ্যেরও প্রসার ঘটে। কামার-কুমারেরা এটা-ওটা বানায় বিক্রি করে কিছু লাভের আশায়। ফুল-ফল, ঢাক, বাদ্য-বাজনা, কাপড় বিতরণ, অলংকরণ, মুদ্রণশিল্প, ভোগ্যপণ্য যেমন—চাল, ডাল, সবজি ক্রয়-বিক্রয়, কুমার, মৃতশিল্পী, ডেকোরেটর, খেলনা, মিষ্টি—সবকিছুর পেছনেই আর্থিক লেনদেন। আবার সামাজিক-সাংস্কৃতিক বলয়ে এই পূজার গুরুত্ব অপরিসীম। যেমন—শিল্পীদের ভক্তিমূলক গান, লক্ষ্মীবিলাস, নৌকাবিলাস, নিমাই সন্ন্যাস, যার সঙ্গেও তাদের আয়-উপার্জন জড়িত থাকে। প্রতি বছরই এই সময়ের জন্য ব্যবসায়ীরা অপেক্ষায় থাকেন, যা দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক উন্নয়নের নিদর্শন। পূজা উপলক্ষে গ্রামীণ মেলা বসে পূজামণ্ডপ ঘিরে।
শরতের শুভ্র আকাশ, কাশফুলের হাওয়ার নাচন আর আগমনী ঢাক-শাঁখের আওয়াজ যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় গ্রাম-নগর, ধনী-গরিব, ছোট-বড়নির্বিশেষে শরতের এই মহামিলন উৎসবে।
জয়ন্তী রায়, মুক্তিযোদ্ধা ও সমাজকর্মী
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে